এ মাসে দু’বার ভাইরাল ফিভারে ভুগলেন। সে দিন বলছিলেন গলার স্বরটা গোরিলার মতো শোনাচ্ছে। আপনার শরীরের হলটা কী?
মুম্বইতে সব্বার জ্বর হচ্ছে। ওয়েদার চেঞ্জ। এ সবের মধ্যে ছবির প্রোমোশন চলছে। একজন সাংবাদিক ভাইরাল ফিভার নিয়ে সাক্ষাত্কার নিতে এলেন। ওখান থেকে আমারও জ্বর শুরু হল। তা ছাড়া বিশ্রাম নিতে পারছি না। তবে ছবির প্রচারে যেতে ভালই লাগে।
‘ববি জাসুস’ ছবিতে তো আপনার ১২টা ছদ্মবেশ রয়েছে। কলকাতায় যদি ছদ্মবেশে কারও বাড়ি যেতে হত, তা হলে কার বাড়িতে ঢুঁ মারতেন?
(একটু ভেবে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পিয়ন সেজে চলে যেতাম। বলতাম বিদ্যা বালনের কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়ে এসেছি। যেখানে লেখা থাকবে, ‘আমাকে দয়া করে বাংলার সম্মাননীয় বাসিন্দা করে দিন’ (হেসে)! ফিল্মের দুনিয়া থেকে বলতে গেলে বুম্বাদার বাড়িতে যেতাম। আরে ‘ম’ দিয়ে ওর একটা ছবি আছে না?
‘মিশর রহস্য’?
না।
‘মনের মানুষ’?
হ্যাঁ। ‘মনের মানুষ’য়ে বুম্বাদার যে লালন ফকিরের লুকটা ছিল, সে রকম সেজে যেতাম। গেটে দরওয়ানকে বলতাম, ‘বুম্বাদাকে বাউল গান শোনাব’। যদি ঢুকতে দিত, তা হলে ওকে গিয়ে গান শোনাতাম। তারপর বলতাম, ‘অটোগ্রাফ প্লিজ’। আরও একটা ইচ্ছে আছে। কালীঘাট আমার ভীষণ প্রিয় জায়গা। কিন্তু অভিনেত্রী হওয়ার ঝক্কি আছে। চাইলেও ওখানে গিয়ে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারি না। ইচ্ছে করে বহুরূপী সেজে কালীঘাট চত্বরে ঘুরে বেড়াতে। বা ওই দোকানগুলোতে বসে শোলার তৈরি মা কালীর মুখ বিক্রি করতাম।
কলকাতায় তো শনিবার আসছেন। যে কোনও একটা ছদ্মবেশ চেষ্টা করে দেখতে পারেন...
(হাসি) সেটাই ভাবছি।
কলকাতায় গোয়েন্দা ছবি বলতেই ফেলুদা আর ব্যোমকেশের কথা ওঠে। আপনি ফেলুদা বা ব্যোমকেশ দেখেছেন?
রজত কপূর অভিনীত বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সী টেলিসিরিজটা দেখেছি। ফেলুদা ইংরেজি অনুবাদে পড়েছি।
এক সময় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। ওঁকে ফেলুদা হিসেবে ছবিতে দেখেছেন?
না। মনে আছে ‘ভাল থেকো’র জন্য সৌমিত্রদার সঙ্গে আমার প্রথম শট দেওয়া। একটা বিজ্ঞাপনের জন্য সৌমিত্রদা আর মাধবীদির সঙ্গে শ্যুট করেছিলাম। এ বার কলকাতা গেলে সৌমিত্রদা অভিনীত ফেলুদার ডিভিডিগুলো নিয়ে আসব।
‘কহানি’তে আবির চট্টোপাধ্যায় আপনার সহ-অভিনেতা ছিলেন। জানেন কি ব্যোমকেশ আর ফেলুদা দু’টো চরিত্রেই উনি করেছেন?
ওমা, তাই নাকি? তবে এটা বলব যে, ‘ববি জাসুস’য়ের ববি কিন্তু ফেলুদা বা ব্যোমকেশের মতো গোয়েন্দা নয়। হায়দরাবাদের মেয়ে। বাড়ির সবাই চায়, ওকে বিয়ে দিয়ে দিতে। কিন্তু ওর গোয়েন্দা হওয়ার বড় শখ। তবে ও একেবারে আনকোরা। মাঝে মধ্যেই ভুলভাল করে ফেলে। ফেলুদা, ব্যোমকেশ বা শার্লক হোমসের মতো ডিটেকটিভরা তো নিজেদের মাথাতেই অর্ধেক প্রবলেম সল্ভ করে ফেলেন। কিন্তু ববির ক্ষেত্রে মনে হবে দর্শক যেন ববির সঙ্গেই কেসটা সল্ভ করছেন। আপনি, আমি যদি গোয়েন্দাগিরি করতাম তা হলে ববি আমাদের থেকে মাত্র দু’ধাপ এগিয়ে থাকত। মাইলখানেক নয়। গোয়েন্দা ছবিতে একটা সিরিয়াস ব্যাপার থাকে। তবে আমার ছবির ববির মধ্যে বালখিল্যতা রয়েছে, সারল্য রয়েছে। তার সঙ্গে বেশ স্ট্রিট-স্মার্টও বটে। আবার গো-গেটারও।
‘ববি জাসুস’য়ে আলি ফজলের সঙ্গে বিদ্যা।
আপনি কি মনে করেন যে, মহিলারা ছেলেদের থেকে বেশি ভাল গোয়েন্দাগিরি করতে পারেন?
হ্যাঁ। মেয়েরা স্বভাবত বেশি কৌতূহলী। আমাদের সিক্সথ্ সেন্সটাও বেশি কাজ করে। তাই মনে হয় মেয়েরা গোয়েন্দাগিরিতে বেশ পারদর্শী হবে।
অনেক জায়গায় শুনেছি আপনি বলেন যে, স্বামী সিদ্ধার্থের উপর কোনও দিন গোয়েন্দাগিরি করেননি। তা না করলেও বিয়ের পরে ওঁর সম্পর্কে এমন কিছু জেনেছেন যা প্রেম করার সময় জানতেন না?
দিনে ২৪ ঘণ্টা থাকলে ২৬ ঘণ্টাই ও বই পড়ে। আর এক-একটা বই দু’বার করে পড়তে ভালবাসে। আমাদের বাড়িতে যত বই আছে, তার অর্ধেক আমি পড়িনি। আর একই বই দু’বার করে পড়া তো আমার দ্বারা হবে না।
প্রেগনেন্ট হচ্ছেন কি না আর বিয়েটা টিকে আছে কি না এটাই কি আপনার মতো অভিনেত্রীর জীবনে ‘শাদি কী সাইড এফেক্টস্’?
হ্যাঁ। সেটাই তো দেখছি। কিন্তু এটা খুব আনফেয়ার। অভিনেত্রী বলে লোকে ধরেই নেয় যে, যা ইচ্ছে তাকে নিয়ে বলে যেতে পারে। কই কখনও তো কোনও নায়ককে কেউ জিজ্ঞেস করে না যে কবে তিনি তাঁর স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা করবেন! আরে প্রেগনেন্সি ব্যাপারটা তো ভীষণ প্রাইভেট। ওটা আমার স্বামীর ওপর ছেড়ে দিক না লোকে। খবরের কাগজে দেখি প্রত্যেক ১০ মাসেই আমি নাকি প্রেগনেন্ট হচ্ছি। কেউ লিখছে আমার নাকি মাথা ঘুরে গেল কোথাও গিয়ে। কেউ বলছে আমি নাকি গ্লো করছি। বেঁচে গিয়েছি যে আমার রসবোধটা আছে। তাই এ সবকে পাত্তা দিই না।
কিন্তু বাড়িতে তো একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে...
ভাগ্য ভাল আমার বাবা-মা বা শ্বশুরবাড়ির কেউ এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। তবে আমি বুঝি এ সব লেখালেখি হলে ওদের পক্ষে বেশ এমব্যারাসিং হয়ে যেতে পারে। কিছু দিন আগে আমার মায়ের এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। উনি দেখলাম সর্বক্ষণ শুধুমাত্র আমার পেটের দিকে তাকিয়েই কথা বলে গেলেন! আরেক বার ফিল্মি পার্টিতে গিয়েছি। একজন বললেন: ‘আপনি গ্লো করছেন। আমরা কিন্তু জানি এটা কেন হচ্ছে!’ উত্তরে বললাম আপনারা জানেন না।
চিনতে পারছেন?
নিজের সম্পর্কে এমন একটা সিক্রেট বলুন যেটা বলিউডের কোনও ডিটেকটিভ বের করতে পারেননি...
পনেরো বছর বয়সে আমি প্রথম অভিনয় করি। আর সেখানে এক পুরুষ চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম পৃথ্বী থিয়েটারে। পরিচালক ছিলেন রামনাথ থরওয়াল। এক বুড়ো বিজ্ঞানীর চরিত্রে (পাশের ছবিতে)। ওটা বাচ্চাদের নাটক ছিল। নাম ‘ধিং পতাপত ডিংরি পোকো’। বলা হয়েছিল মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে।
সেলিব্রিটিদের জীবনে যাঁরা ‘জাসুসি’ করে মিডিয়াতে খবর ফাঁস করেন, তাঁদের কী বলবেন?
বলব ভুলভাল খবর না দিয়ে ববিকে কাজে লাগান। ও আপনাদের থেকে অনেক বেশি অথেন্টিক।
কেরিয়ারে আপনাকে অনেক রকম সমালোচনা শুনতে হয়েছে। তবে বিয়ে ভাঙতে বসেছে এই গুজবটা ছড়ানোর পরে আপনাকে সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হতে দেখা গিয়েছিল।
ন’বছরে প্রথম এত রেগে গিয়েছিলাম।
ব্যঙ্গ করে আপনাকে এর আগে কখনও বলতে শোনা যায়নি যে, সবাইকে হতাশ করে বলতে চান আপনার বিয়েতে অশান্তি নেই...
সত্যি। তখন শরীরও ভাল ছিল না। তার পর অবশ্য ভাবি যে আমার পরিবার আর সিদ্ধার্থ জানে সত্যিটা কী। দু’দিন পর রাগ পড়ে যায়।
গোয়েন্দা হতে গেলে বিদ্যার টিপস
• শারীরিক ভাবে ফিট থাকতে হবে যাতে তাড়াতাড়ি ছোটা যায়
• ভাল জামা ধার দেওয়ার লোক জেনে রাখা দরকার
• বিশ্বাস করতে হবে যে, কোনও কেস ছোট নয়
আপনার ছবির ইউনিক প্রোমোশন স্ট্র্যাটেজি কী হবে, তা ঠিক করার জন্য আপনি কতটা সময় দেন?
প্রোমোশন ব্যাপারটা আমার দারুণ লাগে। নিজে মার্কেটিং টিমের সঙ্গে বসতে পছন্দ করি। এ ছবির ক্ষেত্রে রিলায়্যান্স দারুণ কাজ করেছে।
‘ইশকিয়া’, ‘দ্য ডার্টি পিকচার’য়ের সময় তো আপনাকে চরিত্রের লুকেই দেখা যেত প্রোমোশনের সময়...
হুঁ। তবে এ বার আমি সব সময় ববির লুকে থাকছি না। সালোয়ার কামিজ পরেই যাচ্ছি। সিটি ভিজিট করার সময় আমি কেডস্ পরে ববির লুকে থাকব।
আমির খান ওঁর ছবির প্রচারের জন্য নানা ইউনিক ব্যাপার করে থাকেন। আপনি কি ওঁকে দেখে অনুপ্রাণিত?
‘থ্রি ইডিয়টস’য়ে আমির ছদ্মবেশে নানা শহরে গিয়েছিল। ও অনেক নতুন জিনিস করে। সেটা আমার পছন্দ। তবে এ ক্ষেত্রে ছদ্মবেশ ব্যবহার করাটাই প্রোমোশনের স্বাভাবিক চয়েস।
একটা ফিল্ম নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে যাওয়ার ঝক্কি কতটা? ক্লান্তি হয় না?
একদম না। আমি জানি না নায়কদের এই প্রশ্নটা কেন কখনও করা হয় না! আমি যদি একটা ছবির মুখ্য চরিত্র হই, তা হলে আমাকে তো সেটা প্রোমোট করতেই হবে। এমনিতেই লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে আমার ভাল লাগে। তা ছাড়া এই ছবির ক্ষেত্রে আমি তো একা নই। বর্ন ফ্রি (প্রযোজক দিয়া মির্জা এবং সাহিল সংগা), ছবির কাস্ট অ্যান্ড ক্রু, রিলায়্যান্স আর আমি আমরা মিলে চারমিনার তৈরি করেছি। এই ছবির চারটে পিলার।
আপনি ছবিতে থাকলে সেখানে কে হিরো, সেটা ম্যাটার করে না। নায়িকা হিসেবে এটা কতটা সুবিধের জায়গা?
এই ছবিতে অনেক ইন্টারেস্টিং চরিত্র রয়েছে। আমরা সকলেই ছবির ইন্টিগ্রাল পার্ট। তবে এটা ঠিক যে এই ধরনের ইন্টারেস্টিং মুখ্য চরিত্র করতে পেরে আমার দারুণ লাগে। পাঁচ বছর আগে এ রকম তো হত না। এখন ফিল্ম দুনিয়াটা এক্সপ্লোড করেছে। তবু বলব পঁচানব্বই শতাংশ ছবিতে মেয়েদের এখনও স্টিরিওটিপিক্যাল চরিত্রে দেখা যায়। পাঁচ শতাংশ ক্ষেত্রে অন্য ধরনের কাজ হচ্ছে। আমি খুশি যে আমার কাছে ভাল অফার আসছে। অনেক স্ক্রিপ্ট পড়ছি। একটাই ছবি সই করেছি। মোহিত সুরির ‘হমারি অধুরি কহানি’।
এই পাঁচ শতাংশ ফিগারটা দশ শতাংশ হতে কত দিন লাগবে?
এই পাঁচ শতাংশ ছবিগুলো যখন হিট করবে, তখন বেশি সংখ্যায় ওই ধরনের ছবি তৈরি হবে। তবে আমি এটাও বলছি না যে সংখ্যাটা পঞ্চাশ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াক। সব ধরনের ছবি তৈরি হওয়া উচিত। আপাতত যা কাজ হচ্ছে, তাতে বলব দ্য বেবি ইজ ইন দ্য টডলার স্টেজ। কিছু দিনেই ঝপ করে বড় হয়ে যাবে।
এটা কি ঠিক যে ছবিতে যে ক’টা ছদ্মবেশ আছে, তার একটা আপনার ‘কহানি’র লুকের মতো?
এটুকু বলব একটা ছদ্মবেশে আমি প্রেগনেন্ট মহিলার চেহারায়।
‘কহানি’ বলতেই আরও একটা প্রশ্ন এসেই যায়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আপনি ‘দুর্গারানি সিংহ’ করতে পারেননি। এখন শোনা যাচ্ছে কঙ্গনা রানাওত বা করিনা কপূর ছবিটা করছেন না...
‘কহানি’ টিমটার ওই ছবিটা করার কথা ছিল। আপনি ভাবতে পারবেন না আমার কী অবস্থা হয়েছিল যখন সুজয়কে আমাকে ‘না’ করতে হয়েছিল। নিজেও বিশ্বাস করতে পারিনি কথাগুলো আমি ওকে বলছি। অসুস্থ ছিলাম। জানতাম সুজয়ের সব কিছু রেডি হয়ে গিয়েছে। তখন ওকে বলতে পারিনি যে আমার জন্য অপেক্ষা করো। কঠোর হলেও আমাকে ওকে বলতে হয়েছিল ছবিটা আমি করব না।
এখনও তো ছবিটা শুরু হয়নি।
আপনি আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ। তা হলে কি আপনাকে এই ছবিটা এখন করতে দেখা যেতে পারে?
এ বিষয়ে কোনও কমেন্ট করতে পারব না। আমি জানি সুজয় হ্যাজ মুভড্ অন। আর ও সেটা ঠিকই করেছে। শুধু এটুকু বলতে পারি, যে কোনও সময় সুজয় আমাকে ফোন করতেই পারে।
যদি ফোনটা আসে, তা হলে কি আপনি ছবিটা করতে রাজি হবেন?
এটুকু বলব সেতুর কাছে এসে তবেই সেটা পার করার কথা ভাবা ভাল।
প্রীতি জিন্টার বিতর্কিত কেস নিয়ে আপনার কী মত?
প্রীতিকে সোশ্যালি চিনি। একমাত্র ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর পরিবারের লোকেরা এই নিয়ে কথা বলতে পারে। এটা অত্যন্ত ব্যক্তিগত ও ডেলিকেট ব্যাপার। ওর যা মনে হয়েছে, ওর সেটা করার অধিকার থাকা দরকার। এটুকু বলতে পারি সেলিব্রিটিদের বিয়ে, ডিভোর্স, প্রেগনেন্সি সব কিছু নিয়েই লোকের খুব সহজেই রায় দেওয়া উচিত নয়।
এটা কি মহিলা সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে বেশি হয়?
দুর্ভাগ্যবশত সেটাই হয়ে থাকে।