ফেলুদা...ব্যোমকেশ...ঠিকানা হরিপদ দত্ত লেন

এক জন বাবা। অন্য জন ছেলে। একজন ফেলুদা। অন্য জন ব্যোমকেশ। সব্যসাচী চক্রবর্তী ও গৌরব চক্রবর্তীর মুখোমুখি সংযুক্তা বসু। এক জন বাবা। অন্য জন ছেলে। একজন ফেলুদা। অন্য জন ব্যোমকেশ। সব্যসাচী চক্রবর্তী ও গৌরব চক্রবর্তীর মুখোমুখি সংযুক্তা বসু।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share:

রজনী সেন রোড নয়। কেয়াতলা লেন নয়। হ্যারিসন রোডও নয়। ফেলু মিত্তির আর ব্যোমকেশ বক্সীর ঠিকানা এখন এক বাড়িতে...

Advertisement

সব্যসাচী: হ্যাঁ। আমাদের ঠিকানা এখন হরিপদ দত্ত লেন। গল্ফ গার্ডেন্সেও বলা যায়।

Advertisement

এই যে ব্যোমকেশ আর ফেলুর ঠিকানাটা বাবা ছেলেতে মিলে এক বাড়িতে হয়ে গেল, এই অনুভূতিটা ঠিক কেমন?

সব্যসাচী: দুর্দান্ত। আমি যখন ফেলু ছিলাম, তখন ভীষণই আনন্দ হত। গর্ববোধ করতাম আমাকে এই রোলটা দেওয়া হয়েছে বলে। তার পর ছেড়ে যখন দিলাম, তখন মনে হল কমবয়েসি যদি কেউ করে বেশ হয়। আর এখন এই ফেলু মিত্তিরের বাড়িতে আমার ছেলে ব্যোমকেশ হয়ে আসায় খুবই আনন্দ বোধ করছি।

আর গৌরব, আপনার অনুভূতিটা ঠিক কেমন?

গৌরব: ন্যাচারালি বাবার সঙ্গে আরেক গোয়েন্দা হয়ে এক বাড়িতে থাকছি, এটা তো মজার ব্যাপারই। আলাদা একটা থ্রিল আছে। মনে পড়ে খুব ছোটবেলার কথা। আমার বয়স তখন সাত কি আট। আমাদের লেক গাডের্র্ন্সের বাড়িতে তখন বাবার কাছে ফেলুদা চরিত্র করার অফারটা এসেছিল। তখন থেকেই আমি ফেলুদার ফ্যান। এখনও তাই। কিন্তু ব্যোমকেশ করার সুযোগ পেয়ে এখন আমি সত্যি খুব এক্সাইটেড। বাবার পর আবিরদা (চট্টোপাধ্যায়) ফেলুদা করছে। আবার আবিরদার পর আমি ব্যোমকেশ করছি (ছোট পর্দায়)। সব মিলিয়ে একটা মজার লিঙ্ক হয়েছে। বলা যেতে পারে এটা একটা কোইন্সিডেন্স। ব্যোমকেশ বক্সীকে কী ভাবে ছোট পর্দায় পপুলার করে তোলা যায়, এখন সেই কথাই ভাবছি। বাড়িতে যখন ফেলুর মতো গোয়েন্দা আছে, তখন ব্যোমকেশকে জনপ্রিয় করার কথা ভাবতেই হয়। এটাই আমার অনুভূতি।

এক বাড়িতে দুই গোয়েন্দা। ফেলুদা-ব্যোমকেশ, তাদের চরিত্র—এই সব নিয়ে কী ধরনের কথাবার্তা হয়?

গৌরব: ফেলুদার বইয়ের সব ঘটনা, প্রত্যেকটা শব্দ আমার মুখস্থ। কিন্তু ব্যোমকেশ করার সময় কী ভাবে চরিত্রটাকে অ্যাপ্রোচ করব, তা নিয়ে বাবার সঙ্গে অবশ্যই কথা হয়েছে। বাবা বলেছিলেন, “এখন আর নতুন করে অন্যদের কাজগুলো দেখো না। নিজের মতো করে বইগুলো পড়ে যেমন মনে হয়, সেই ভাবে ব্যোমকেশকে বিচার করো।” আমি সেটাই করছি।

ব্যোমকেশের এই রমরমা বাজারেও নিশ্চয়ই বলা যায় আপনার কাছে ফেলুই বেশি প্রিয়?

সব্যসাচী: অবশ্যই। আমি ছোটবেলা থেকে নিজেকে ফেলু হিসেবেই ভেবে এসেছি। তার পর যখন ছোট পর্দায় ফেলু করার সুযোগ পেলাম, মনে হয়েছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ চরিত্রটা করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছি। আর কোনও চরিত্রে অভিনয় করার দরকার নেই। আলটিমেটলি বড় পর্দায় যখন আমি ফেলু করলাম, দর্শকের রেসপন্স দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। তবে আমার ফেলুর সাফল্যের সিংহভাগ কৃতিত্ব পরিচালক সন্দীপ রায়ের।

হরিপদ দত্ত লেনের বাড়িতে বাবা ছেলে দু’জনেই গোয়েন্দা। বাড়ির কোনও জিনিস খোয়া গেলে, কিংবা গোয়েন্দাগিরির দরকার পড়লে বাড়ির লোকে কতটা ভরসা করেন আপনাদের?

সব্যসাচী: মনে হয় না গোয়েন্দা হিসেবে কেউই আমরা বাস্তবে খুব দক্ষ। আমার বাড়িতে যখন ভিসিআর চুরি হল, তখন আনন্দবাজার পত্রিকায় বেরিয়েছিল, “ফেলুর বাড়িতে চুরি’। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “আপনার বাড়িতে চুরি হল আর আপনি কিছু করতে পারলেন না? আপনি না গোয়েন্দা?” বলেছিলাম আমি পুলিশে কাজ করি না। ফেলুও নই। ফেলু চরিত্রে অভিনয় করি মাত্র। আর ফেলুও ছিঁচকে চোর ধরে না। এটা আমার কথা। এ বার ব্যোমকেশবাবু কী বলবেন, উনিই জানেন।

গৌরব: আমরা গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করি মাত্র। বাড়িতে গোয়েন্দাগিরির ব্যাপারে আমাদের কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। আসলে ফেলুদা বা ব্যোমকেশের প্রয়োজন আমাদের সংসারে সে ভাবে নেই। (হাসি)

অজস্র সিরিয়াল এবং সিনেমার দৌলতে সব্যসাচী আপনি এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত ফেলুদা। কোনও দিন ব্যোমকেশ হওয়ার সাধ জেগেছিল?

সব্যসাচী: না। ফেলুদা হওয়ার পর আমি ঠিকই করে নিয়েছিলাম যে আর কোনও দিন অন্য কোনও গোয়েন্দা হব না। তার আগে অঞ্জন দত্তের পরিচালনায় রুদ্র সেন নামে এক গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। তার আগে কাকাবাবুও করেছি। কিন্তু সে সব ফেলু পর্বের আগের কথা। ব্যোমকেশ চরিত্রে আবির যখন অভিনয় করল, ভাল লেগেছিল। কিন্তু নিজে ব্যোমকেশ হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করিনি কখনও। আমি ফেলু, ফেলুই থাকব। ফেলু হয়েই রিটায়ার করব। এই ছিল ইচ্ছে। আর সেটাই করেছি।

আপনি কখনও ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করার কথা ভেবেছেন?

গৌরব: কেউ যদি এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, না তো বলতে পারব না। ফেলুদার গল্পের এত ফ্যান, সত্যজিত্‌ রায়ের লেখার এত অনুরাগী যখন নিজেকে মনে মনে ফেলুদা ভাবতে তো ইচ্ছে করেই। বাবা যখন ফেলুদা করলেন, নিজের সঙ্গে ফেলুদার একটা লিঙ্ক খুঁজে পেলাম। কিন্তু মুশকিল এক জায়গাতেই। সত্যজিত্‌ রায় ফেলুদার চেহারার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তার সঙ্গে আমার চেহারা মেলে না। ফেলুদা ছ’ফুট দু’ইঞ্চি। বাবার সঙ্গে মিলে যায়। আবিরদার সঙ্গেও মিলে যায়। কিন্তু আমার গঠনের সঙ্গে মেলে না। এর পর যিনি ফেলু বানাবেন, তার ওপর নির্ভর করবে কেমন ফেলু তার পছন্দ। আমি তো লম্বা নই।

এখন তো গোয়েন্দাদের ছড়াছড়ি। বলিউডে পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ করছেন। তা ছাড়া ‘জগ্গা জাসুস’, ‘ববি জাসুস’ এই রকম কত গোয়েন্দা! বাংলায় ফেলু-ব্যোমকেশের পাশে এসে পড়েছে শবর দাশগুপ্তও। হঠাত্‌ এ দেশে গোয়েন্দারা উঠে পড়ে লাগল কেন? কী মনে হয়?

সব্যসাচী: গোয়েন্দারা চিরকালই উঠে পড়ে লেগে আছে। সত্যজিত্‌ রায় ব্যোমকেশ, ফেলুদা দুই গোয়েন্দাকে নিয়েই ছবি করেছেন। তার আগেও অনেক গোয়েন্দা চরিত্র হয়েছে। এটাকে কোনও নতুন ট্রেন্ড বলে মনে করি না।

গৌরব: শশী কপূর হিন্দিতে ফেলুদা করেছেন। ফেলু করেছেন রাহুল বসু। বিবিসি রেডিও সিরিজে।

গৌরব অভিনীত ব্যোমকেশ দেখে কেমন লাগছে?

সব্যসাচী: আমার তো মনে হচ্ছে ও যেটা করছে ঠিকই করছে। কখনও কখনও জিজ্ঞেস করে ফেলি, আচ্ছা এই শটটা এ ভাবে নেওয়া হল কেন? গৌরব তখন বলে, পরিচালকের প্রেরোগেটিভ যেমন ছিল সে ভাবেই করেছি। সিনেমাটোগ্রাফারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হয়েছে। এই সব আলোচনা হয় আর কি! আর এই সব আলোচনা করতে করতে আমিও কিছু শিখি।

বাবা-ছেলে দু’ জনই গোয়েন্দা। ইন্ডাস্ট্রির এমন একটা খবর দিতে পারবেন, যা আর কেউ জানে না?

সব্যসাচী: রাস্তায় একটা ছেলে, একটা মেয়ে কী কথা বলছে আমি আড়ি পেতে শুনি না। প্রেমের গল্প পড়তেও আমার ভাল লাগে না। আমার মনে হয় ভালবাসা দুটো মানুষের নিজস্ব অনুভূতি। তা নিয়ে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আমার কিছু জানার থাকতে পারে না। ঠিক সে ভাবেই ইন্ডাস্ট্রির লোকজনেরা আমাদের বন্ধু। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত জীবনে আমি বা আমার স্ত্রী নাক গলাই না। আশা করি আমাদের ছেলেরাও নাক গলাবে না। আমরা শুধু ছবিতেই গোয়েন্দা হয়ে থাকতে চাই।

আচ্ছা সব্যসাচী-ফেলু মিত্রকে কোনও চ্যালেঞ্জ করতে ইচ্ছে করে? যখন ঠিকানা এক বাড়িতেই। তার ওপর বাবা-ছেলের সম্পর্ক...

গৌরব: না, একদমই না। আমি বাবার অভিনীত ফেলুদার ফ্যান। একান্ত ভক্ত। কোনও চ্যালেঞ্জ করার ব্যাপারই নেই। বাবা যে আর ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করবেন না, এর জন্য আমার মন খারাপ হয়। তবে এর মানে এই নয় যে আমি আবিরদার ফেলুদা দেখব না। কিন্তু বাবাকে খুব মিস করব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement