কলকাতার বইমেলায় তিনি কোনও দিন আসেননি। তবে এ বার তিনি আসছেন বিশেষ এক কারণে। পঞ্চমের স্মৃতিতে প্রকাশ হচ্ছে এক অ্যালবাম। সেই পঞ্চম যিনি তাঁর কেরিয়ারে সত্তর শতাংশ গানে সুর দিয়েছেন। অ্যালবামের নাম ‘মেমোরিজ।’ তাতে থাকছে উষা উত্থুপের গাওয়া আটটা নতুন গান। যন্ত্রসঙ্গীতে রয়েছেন পঞ্চমের সঙ্গে কাজ করেছেন এমন কিছু বিশেষ শিল্পী। সুর করেছেন মুন্না-রাজ। এর আগেও যাঁরা সুর দিয়েছেন কুমার শানু, অমিত কুমার থেকে অভিজিতের গানে। কথাগুলো লিখেছিলেন উৎপল ও সিরাজ মিত্র। গীতিকারদের অনুপ্রেরণা হিসেবে রয়েছে আরডি-র জনপ্রিয় গানের কথা। তাই গানের কথার মধ্যে কখনও ফিরে এসেছে ‘মনিকা’, কখনও বা ‘রুবি রায়’, কখনও বা ‘অনুরাধা।’
৬ ফেব্রুয়ারি অ্যালবাম প্রকােশ জিনাত ছাড়াও থাকবেন পরিচালক রমেশ সিপ্পি। উষা ফোন করে অ্যালবামের কথা জিনাতকে জানানোর সময় ‘হরে রামা হরে কৃষ্ণ’ গানটা গেয়ে শুনিয়েছিলেন। তখনও জিনাত জানতেন না তাঁর কেরিয়ারে প্রায় সত্তর শতাংশ গানের সুরকার হলেন পঞ্চম। ‘‘উষাজিই প্রথম এটা বলেন। কী সব সুর! কী পিকচারাইজেশন। ভেবে দেখুন ‘দম মারো দম’, ‘হম কিসিসে কম নহি’, ‘চুরা লিয়া’...,’’ জিনাত নস্টালজিয়া-আক্রান্ত।
বইমেলায় কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে আসছেন। নতুন বইয়ের গন্ধ কখনও কি তাঁকে আত্মজীবনী লেখার তাগিদ দেয়? ‘‘অনেক প্রস্তাব পাই। লিখব কি না জানি না। বই যে খুব পড়ি, তা নয়। তবে যদি টেলিভিশন দেখা আর বই পড়ার মধ্যে বেছে নিতে হয়, বইটাই তুলে নেব।’’
আচ্ছা, পঞ্চমের সঙ্গে ব্যক্তিগত সব অভিজ্ঞতার কথা মনে ভিড় করে আসে না? ‘‘তখন পরিচালক-প্রযোজকদের সঙ্গে সুরকারদের বেশি যোগাযোগ ছিল। ওঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে দেখা হয় অনেক পরে। আশির দশকের শেষে। আমার ছেলে ছোট...’’ দেখে কেমন লেগেছিল? ‘‘ওকে দেখে আমার বেশ ভারাক্রান্ত লেগেছিল। হি লুকড স্যাড। জানি না সত্যি মন খারাপ ছিল, না আমার ওটা মনে হয়েছিল।’’
অনেকেই বলেন সৃজনশীলতার সঙ্গে শিল্পীর মানসিক ভাল-মন্দের যোগ থাকে। তাই কি? ‘‘অনেকে দুঃখকে নান্দনিক ভাবে ব্যবহার করতে পারে। আমি নিজেও করেছি। আবার অনেকেই সেটা পারে না।’’ এমন কোনও পঞ্চমের গান আছে যেটার শ্যুটিং করার সময় তিনি ভঙ্গুর ছিলেন? ‘‘হ্যাঁ ছিলাম। ‘আবদুল্লা’র সময়...’’ চোখের সামনে ভেেস ওঠে সঞ্জয় খানের সঙ্গে জিনাতের সেই ছবি থেকে ‘ম্যয়নে পুছা চাঁদ সে’ বা ‘ভিগা বদন জ্বলনে লাগা’.... সঙ্গে ঘুরেফিরে আসে ‘আবদুল্লা’র সময় জিনাতের ব্যক্তিগত জীবনের সব গুজবের কথা।
এই অ্যালবামে ‘চুরা লিয়া’ বলে একটা গান তাঁকেই উৎসর্গ করেছেন উষা। তা জেনে জিনাত সম্মানিত। ‘‘তবে শ্যুটিংয়ের সময় একটা গান কালজয়ী হবে কি না ভাবতাম না। আজ যখন দেখি হাঁটুর বয়সি ছেলেমেয়েরাও এই গানটা গাইছে, তখন ভাল লাগে।’’
মন খারাপ হলে পঞ্চমের গান শোনেন? ‘‘শুধু চিয়ারফুল গান শুনি। আরডি-র এত গান! কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব?’’ মনে হয় না আবার ক্যামেরার সামনে ফিরে যেতে? ‘‘ছেলেদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি। তবে ‘নেভার সে নেভার।’ বাংলাতে যদি ভাল কোনও চিত্রনাট্য থাকে আমার জন্য, তা হলে আমি আগ্রহী।’’
আর বিয়ে? এই যে তেষট্টিতম জন্মদিনে ঘোষণা করেছেন সাত পাকে বাঁধাতে তার আপত্তি নেই... সত্যিই তাই? হেসে ফেলেন জিনাত। বলেন, ‘‘ব্রিজের সামনে পৌঁছই, তার পর তো সেটা পেরনোর কথা। উই উইল ক্রস দ্য ব্রিজ হোয়েন উই গেট দেয়ার!’’
মনে পড়ে...
• ১৯৬৯ সাল। আর ডি বর্মনের সঙ্গে আমার একটা অ্যালবাম করার কথা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল হিন্দি আর ইংরেজিতে অ্যালবামটা হবে।
• কিন্তু ইচ্ছে পূরণ হয়েছিল পঞ্চম মারা যাবার আগের বছর। সেটা ১৯৯৩ সাল। ‘বাতি নেই বাতি নেই’ বলে একটা অ্যালবাম রেকর্ড করেছিলাম। নন ফিল্ম পুজোর অ্যালবাম। পঞ্চমের সুর। ওই অ্যালবাম থেকে ‘আগামী শিশুরা’ গানটা খুব হিট করেছিল।
• যখন মুন্না-রাজের কাছ থেকে ‘মেমোরিজ’ করার প্রস্তাব পাই, আমি আনন্দে আত্মহারা। মনে পড়ছিল মুম্বইতে একটা শো-এর কথা। পঞ্চমদা দর্শকাসনে। ‘আজা মেরি জান’ গেয়েছি। দেখি পঞ্চমদা উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন। মনে আছে বলতেন ‘আগামী শিশুরা’ শুনলে ওঁর গায়ে কাঁটা দেয়।
• ‘মেমোরিজ’য়ের গানের সুর, বাস প্যাটার্ন, রিদম প্যাটার্ন- সবই যেন ‘বর্মনেস্ক’। পরতে পরতে নস্টালজিয়ার ছোঁয়া।