পিজ্জার মধ্যে ভূত

তামিল ছবির হিন্দি রিমেক প্রযোজনা থেকে রহমানের মিউজিক ভিডিয়োর পরিচালনা। এর পর অমিতাভ-ফারহানকে নিয়ে ছবি। পরিচালক বিজয় নাম্বিয়ার-এর মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ততামিল ছবির হিন্দি রিমেক প্রযোজনা থেকে রহমানের মিউজিক ভিডিয়োর পরিচালনা। এর পর অমিতাভ-ফারহানকে নিয়ে ছবি। পরিচালক বিজয় নাম্বিয়ার-এর মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০০:০২
Share:

প্রথম ছবি ‘শয়তান’ বানিয়ে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

তার পর তৈরি করলেন ‘ডেভিড’। পরিচালক বিজয় নাম্বিয়ারের পরের ছবির অভিনেতা ঠিক হয়ে গিয়েছে। অভিনয় করবেন অমিতাভ বচ্চন আর ফারহান আখতার। শোনা গিয়েছিল যে করিনা কপূরও ছবিতে থাকতে পারেন। তবে পরে জানা গিয়েছে যে করিনা ছবিটি করছেন না। নতুন গুজব, ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় থাকছেন অদিতি রাও হায়দারি।

আপাতত বিজয় বেশ ব্যস্ত। সামনেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর প্রযোজিত হিন্দি ছবি ‘পিজ্জা’। তামিল ছবির রিমেক সেটি। টলিউডে যে ছবির রিমেক করেছেন বিরসা দাশগুপ্ত। নাম ‘গল্প হলেও সত্যি’। অভিনয়ে রয়েছেন সোহম আর মিমি চক্রবর্তী।

Advertisement

মুম্বইয়ের গোরেগাঁওতে বিজয়ের ফ্ল্যাটে বসে সে নিয়েই কথা হচ্ছিল। ৪২ তলার ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। বসার ঘরের সামনেই একটা বারান্দা। সেখানে দাঁড়িয়ে নীচে তাকালে মনে হয় সব যেন লিলিপুট। ছিমছাম গোছানো ঘর। তবে সাক্ষাৎকার দেওয়ার আগে বিজয় একটু সময় চেয়ে নিলেন। দু’জন অতিথি বসেছিলেন তাঁর অপেক্ষায়। একটি অল্পবয়সি মেয়ে ও তাঁর মা। “চলুন, পাশের ঘরে একটা ভিডিয়ো দেখবেন,” বলে সবাইকে নিয়ে গেলেন ছোট্টখাটো একটা ঘরোয়া সিনেমা দেখার অডিটোরিয়ামে।

২০১৪-তে এ আর রহমান একটা অ্যালবাম প্রেজেন্ট করছেন। নাম ‘রৌনক’। সেই অ্যালবামের একটা ভিডিয়ো ডিরেক্ট করেছেন বিজয়। একটা মেয়ের সোচ্চার হওয়ার গল্প। স্ক্রিনে ফুটে ওঠে নিষ্পাপ এক চেহারা। পাশে সোফায় বসে থাকা মেয়েটির সঙ্গে অদ্ভুত মিল তাঁর। ভিডিয়ো স্ক্রিনিং শেষ হওয়ার পর মেয়েটি দারুণ উৎফুল্ল। যেই বিজয় জিজ্ঞেস করেন ভিডিয়োটি আর একবার চালাবেন কিনা, অমনি চোখ চিকচিক করে ওঠে। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানান।

স্ক্রিনিংয়ের শেষে জানা গেল মেয়েটির নাম বৈদেহী। মুম্বইতে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন। বললেন, রহমানের প্রেজেন্ট করা ওই ভিডিয়োতে তিনিই অভিনয় করেছেন। আর সেটাই প্রথম বার দেখতে এসেছিলেন তিনি।

বৈদেহী চলে যাওয়ার পরে বিজয়ের সঙ্গে শুরু হল আড্ডা। রহমানের ভিডিয়ো থেকে তামিল ছবির রিমেক প্রযোজনা— এ রকম ভিন্ন মেরুর প্রজেক্টে হাত দিলেন কেন? প্রশ্ন শুনেই বিজয় হেসে ওঠেন। বলেন, “রহমানের প্রেজেন্ট করা ভিডিয়ো। ও রকম একটা অফার পেলে আমি যে সেটা করতে রাজি হব, সেটা তো একদম স্বাভাবিক ঘটনা। আর রিমেক? আমার তামিল ছবিটা দেখতে ভাল লেগেছিল। ভেবেছিলাম হিন্দি দর্শককেও এ রকম একটা সিনেমা উপহার দিলে মন্দ হয় না। তাই প্রজেক্টে হাত দিলাম।”

হিন্দি ‘পিজ্জা’ পরিচালনা করেছেন অক্ষয় আক্কিনেনি। বিখ্যাত ফিল্ম এডিটর শ্রীকর প্রসাদের পুত্র অক্ষয়। ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘গুরু’, ‘কামিনে’, ‘ককটেল’— ছবিগুলি এডিট করেছেন তিনি। ছেলের পরিচালিত হিন্দি ‘পিজ্জা’ এডিটিংয়ের ভারও রয়েছে তাঁর উপর। বিজয় নিজে ‘শয়তান’ আর ‘ডেভিড’-এর মতো সিনেমা পরিচালনা করেছেন। তাঁর পরিচালিত এই দু’টো ছবির মেকিং, গান নিয়ে বেশ অনেক আলোচনা হয়েছে ফিল্মি করিডরে। সেই তিনি আবার রিমেক প্রযোজনায় গেলেন কেন? “এই হিন্দি ছবিটা করে আমরা কিন্তু কোনও প্রতিযোগিতায় যাচ্ছি না। নিজেদের মতো করে অ্যাডাপ্ট করেছি। হরর এমন একটা ধারা, যার পোটেনশিয়াল সাঙ্ঘাতিক। কিন্তু সেই ধারাটা আমাদের এখানে এক্সপ্লোর করা হয়নি,” বলছেন তিনি।

এটাও কি তিনি মেনে নেন যে অনেক সময় আমাদের দেশে এমন ভাবে হরর বিষয়টা নিয়ে কাজ হয় যে দর্শক তা দেখে ভয় না পেয়ে বরং খিলখিলিয়ে হাসতে থাকেন? “এটা সব জায়গায় হয়। আমার মনে আছে ‘ভূত’ রিলিজ করার পর দর্শকের প্রতিক্রিয়া। প্রত্যেকটা ভয়ের দৃশ্যের পরে অনেককেই হাসতে দেখেছি। কিন্তু এই হাসিটা এই বিষয়টাকে ঠিকঠাক হ্যান্ডেল না করার কারণেই আসে তা নয়। আসল কারণটা হল দর্শক যে ছবি দেখে ভয় পাচ্ছেন, তা তাঁরা স্বীকার করতে চান না। হাসিটা তখন তাঁরা ব্যবহার করেন নিজেদের প্রোটেক্ট করার জন্য। এই একই রিঅ্যাকশন হলিউড ছবির ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে,” বলেন পরিচালক।

সঙ্গে এ-ও বলেন যে এ দেশে ‘হরর’ নিয়ে কাজ করার অনেক স্কোপ আছে। “এটা অনেকটা বাচ্চাদের ছবি তৈরি করার মতো ক্ষেত্র। আগে বাচ্চাদের জন্য কত ভাল ছবি তৈরি হয়েছে! কিন্তু সেই সংখ্যাটা অনেকটাই কমেছে। যারা চেষ্টা করেছে, তারাও যে দারুণ সাফল্য পেয়েছে, তা নয়। তার ফলে অনেকে বলে ওটা অ্যাটেম্প্ট করে লাভ কী? ওটা তো জিঙ্কসড্। কিন্তু আমার মনে হয় চেষ্টাটা চালিয়ে যাওয়া দরকার। ‘হরর’য়ের ক্ষেত্রেও তাই। আমি বলছি না ‘পিজ্জা’ একেবারে টর্চবেয়ারার হবে। তবে নতুন কিছু করার প্রয়াসটা থাকা জরুরি।”

আপনি কি জানেন যে বাংলাতেও ‘পিজ্জা’র একটা রিমেক হচ্ছে?

“ওহ্, তাই না কি? এটা তো আমি জানতাম না। তবে কোনও সমস্যা হবে না। আমরা একদম নিজেদের মতো করে ছবিটা অ্যাডাপ্ট করেছি। তাই বাংলাতে বানালেও আমার ছবির সঙ্গে ওটার কোনও ক্ল্যাশ নেই। হিন্দিতে আমি ছবিটা থ্রিডি আর টুডি দু’টো ভার্সানেই বানাচ্ছি,” সাফ জানিয়ে দেন তিনি।

‘পিজ্জা’র পরেও আরও একটা ছবি প্রযোজনা করছেন বিজয়। নাম ‘ফোকাস’। মূলত রোড ছবি, যার অনেকটা অংশেই রয়েছে ড্রামা আর কমেডি। মুখ্য ভূমিকায় রাজকুমার রাও। কিন্তু সে ছবির পরিচালক কে হবেন, তা নিয়ে প্রথমেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। ছবিটি প্রথমে পরিচালনা করার কথা ছিল আকর্ষ খুরানার। বিজয়ের সঙ্গে ক্রিয়েটিভ সংঘাত হওয়াতে তিনি প্রজেক্ট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন নতুন পরিচালক হিরজ মারফতিয়া।

নিজের প্রযোজনায় পরিচালক নিয়ে সমস্যা। এ সব দেখে ইচ্ছে করে না নিজেই পরিচালনা করতে যাতে এ সব গণ্ডগোল না হয়? কষ্ট করে একটা প্রজেক্ট লালন করার পর অন্যকে তা ছেড়ে দিতে অসুবিধে হয় না তাঁর? “দেখুন, আমি একের পর এক শুধু ডিরেক্ট করেই যেতে পারি না। আমার দর্শনটা সহজ। অন্যের হাতে কাজ দাও। তাতে ভুল হোক ক্ষতি নেই। কিন্তু এই ভুলভ্রান্তির মধ্যেও তো শেখা যায়। আই লাইক ইনভেস্টিং ইন পিপল,” জানান তিনি। এতদিনে একটা কোর গ্রুপ তৈরি করেছেন। “ফ্লপ হতে পারে। তবে তার সঙ্গে শেখারও সুযোগ রয়েছে। এই ধরনের কাজ করে যাওয়ার জন্য নিজেকে দু’বছর সময় দিয়েছি। এর মধ্যে ভুল করার অধিকারও আমার আছে। তবে এ সব করার সঙ্গে নিজের লক্ষ্যটা ঠিক রেখেছি। বছরে একটা ফিল্ম নিজে পরিচালনা করব,” বলেন তিনি।

নিজের আনটাইটেলড্ ছবি প্রিপ্রোডাকশনের কাজটাও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। সে ছবির প্রযোজক বিধুবিনোদ চোপড়া। সেখানে না কি অমিতাভ বচ্চন অভিনয় করবেন এক পঙ্গু দাবাড়ুর ভূমিকায়। তবে তা নিয়ে বিজয়ের মুখে কুলুপ। শুধু এটুকু জানাচ্ছেন, “এই ছবি নিয়ে বেশ কিছু মাস যাবৎ বিধুবিনোদ চোপড়ার সঙ্গে কাজ করছি। ওঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটাই অন্য রকম। তবে ছবির বিষয় বা চরিত্র নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। ছোটবেলা থেকেই অমিতাভ বচ্চনের ফ্যান। এটুকু বলতে পারি যে তাঁকে ডিরেক্ট করার স্বপ্নটা পূর্ণ হবে ভেবে আনন্দ হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement