বেশ আন্তর্জাতিক কাজ
অঞ্জন দত্ত
অঞ্জন দত্ত
টিজারটা বেশ ভাল লেগেছে। পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। নতুনত্ব রয়েছে। পিরিয়ডটা খুব ভালো করে ধরেছে। আমরা যখন ব্যোমকেশ বানিয়েছি, তখনও তো পিরিয়ডটা ধরেছি। কিন্তু বাজেটের অভাবে দিবাকরের মতো স্কেলে ধরা সম্ভব হয়নি। থাকলে, সেটা নিশ্চয়ই আরও স্ট্রংলি ধরার চেষ্টা করতাম। তবে এটাও ঠিক আমাদের দর্শকের বেসটা অত বড় নয় যে বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করে ছবি তৈরি করা যায়। আরও একটা ব্যাপার রয়েছে। ব্যোমকেশকে বাঙালিদের মধ্যে আটকে রাখার দরকার নেই। দিবাকর যে গল্পগুলো বেছেছে, সেগুলোর মধ্যে প্রচ্ছন্ন ভাবে অনেক ধরনের রেফারেন্স রয়েছে। রেঙ্গুন থেকে পালিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছোঁয়া। ব্যোমকেশকে তো অনেক বার বল্লভভাই পেটেল ডেকে পাঠাতেন। অনেক ক্ষেত্রে ব্যোমকেশ দিল্লি চলে যেত। তাই এটা ভাবলে ভুল হবে যে ব্যোমকেশ শুধুমাত্র এক বাঙালি ডিটেকটিভ যে মানিকতলার জমিদার বাড়ির খুনি ধরে বেড়ায়। ভাল লেগেছে যে ধুতি পরা এক বাঙালি একটা আন্তর্জাতিক কেসের কিনারা করছে। কেউ কেউ হয়তো ব্যোমকেশের এই আন্তর্জাতিক ফ্লেভারটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। খুঁত ধরছেন। কেউ কেউ শুনেছি বন্ডের সঙ্গে এই টিজারের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। আমার সেটা মনে হয়নি। বরং ছবি দেখে আমি যদি গায় রিচির শার্লক হোমসের ফ্লেভারটা পাই, তা হলে আমার সেটা মন্দ লাগবে না।
ব্যোমকেশ ডিটেকটিভ ছিল না
আবির চট্টোপাধ্যায়
আবির চট্টোপাধ্যায়
টিজারটা আমি দেড়বার দেখেছি। হাইলি স্টাইলাইজড ব্যোমকেশ। হলিউডি ভাব। লার্জ স্কেলে করা। কিছু চোখ ধাঁধানো গ্রাফিক্স রয়েছে সেখানে। বিভিন্ন সূত্র থেকে আমি ছবির গল্পটা অনেকটাই জানি। টিজার দেখে আমার গাই রিচি-শার্লক হোমসের কথাই বেশি মনে পড়েছে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ নয়। তবে সর্বভারতীয় স্তরে ব্যোমকেশকে জনপ্রিয় করতে গেলে বোধহয় এই স্ট্র্যাটেজিটা নিতেই হয়েছে। আরও একটা কথা। ইন্ট্রোডাকশনের সময় সুশান্ত (সিংহ রাজপুত) বলছে ‘ব্যাকশি। ব্যোমকেশ ব্যাকশি’। এটা অনেকটাই সেই জেমস বন্ডের মতো লাগছে শুনতে। বক্সী উচ্চারণ করতে গিয়েও য-ফলার ওপর আলাদা করে একটা স্ট্রেস দেওয়া হয়েছে। এটাও বোধহয় একটা ওয়েল থট-আউট স্ট্র্যাটেজি। ছবির নামটা নিয়ে আমার একটা প্রশ্ন রয়েছে। ব্যোমকেশ খুব পরিষ্কার ছিল একটা বিষয়ে যে ও গোয়েন্দা নয়। ও সত্যান্বেষী। এটা শুধুমাত্র একটা নামের রকমফের নয়। এখানে একটা মনস্তত্ত্ব কাজ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যোমকেশ অপরাধীকে ছেড়েও দিয়েছে। তাই ব্যোমকেশের গল্পগুলো শুধুমাত্র ক্রাইম ডিটেকটিভ স্টোরি নয়। ব্যোমকেশ সত্যিটা খুঁজে বের করতে চেয়েছে। ছবির নামটা বদলে দিলে এই দর্শনটা আঘাত পায়। টিজারে যেটুকু দেখলাম, আর একটা কথা বলব। আমাদের স্বস্তিকা (মুখোপাধ্যায়) একদম ফাটিয়ে দিয়েছে।
‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’র টিজারে সুশান্ত-স্বস্তিকা।
চেনা ব্যোমকেশ কোথায়
শৈবাল মিত্র
শৈবাল মিত্র
ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘শজারুর কাঁটা’র শ্যুটিং শেষ করে ফেলেছি। ডাবিং শুরু করার আগে ইউটিউবে দিবাকরের ব্যোমকেশ বক্সীর টিজারটা দেখলাম। এই টিজারে ব্যোমকেশকে পাওয়া যায়নি। অন্তত বাঙালি যে ব্যোমকেশকে চেনে, সেটা একদমই আসেনি। যেটা মনে হল, ব্যোমকেশকে একটা সর্বভারতীয় চেহারা দিতে গিয়ে ছবিতে ব্যোমকেশের হয়তো চরিত্রভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেটা হয়তো বলিউডের কতগুলো শর্তের কারণে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ব্যোমকেশ করতে গিয়ে তার সঙ্গে আবার আমাদের পরিচিত ব্যোমকেশের ধুতি এবং মোজা-জুতো কতটা যাবে, সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু টিজারের কিছু ব্যাপার আমার ভাল লেগেছে। পিরিয়ড হিসেবে সিনেমাটা তৈরি হলেও ছবির মধ্যে ওই সময়ের রাজনৈতিক আর সামাজিক পারস্পেকটিভটা হয়তো রাখা হয়েছে। ১৯৪৬-এর কলকাতা। তখনকার দাঙ্গা। সেটা দেখে ভাল লেগেছে। তবে এই টিজার দেখে নিজের ছবি নিয়ে আমার কোনও ইনসিকিওরিটি নেই। আমার ব্যোমকেশ একদম অন্য রকমের। এই টিজারের সঙ্গে আমার ছবির কোনও তুলনা চলে না।
বাঙালিয়ানাটা পেলাম না
উষসী চক্রবর্তী
উষসী চক্রবর্তী
তিনটে ব্যোমকেশে অভিনয় করেছি। দিবাকরের টিজারটা দেখেছি। সব মিলিয়ে ভাল লেগেছে। তবে এটা নিয়ে উত্তেজিত বা হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। কোনও আর্টিস্টকেই এখনও দেখতে পাচ্ছি না। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটা শুনে আমার বেনেডিক্টের শার্লক হোমসের কথা মনে পড়েছে। ওই শার্লক হোমসটা আমার খুব প্রিয়। তাই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটাও খুব পরিচিত। যেটা ভাল লেগেছে, তা হল টিজারের মধ্যে একটা বিদেশি ছবির আমেজ রয়েছে। গতি রয়েছে। এত দিন টলিউডে যে ভাবে ব্যোমকেশ দেখে এসেছি, তার থেকে এটা একদম আলাদা। কিন্তু যেটা আমি টিজারে মিস করেছি, সেটা হল ব্যোমকেশের বাঙালিয়ানা। শরদিন্দুর ব্যোমকেশে আমরা সেটা পেয়েছি। বাঙালিয়ানাটা আবিরের মধ্যে আছে। বাঙালিরা ব্যোমকেশকে নিয়ে খুব পজেসিভ। এই বাঙালিয়ানাটা আমি টিজারে পেলাম না। অবশ্য সেটা সিনেমায় থাকতেও পারে।