নায়কের মা হব না

নিরুচ্চারে এমনটাই বলছেন ঐশ্বর্যা। নিজের পরের ছবিতে তিনি তো প্রধান চরিত্রে। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।কেউ ডাকসাইটে পুলিশ অফিসার। কেউ বা ছদ্মবেশধারী গোয়েন্দা। বিয়ে হয়েছে মানেই নায়কের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে, এমন প্রস্তাবকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন বলিউডের নায়িকারা। নতুন নতুন চরিত্রে মেলে ধরছেন নিজেদের। ঝুঁকি নিচ্ছেন মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতেও। চার বছর আগে তাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘গুজারিশ’য়ে। তার পর মাতৃত্ব নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০০:০০
Share:

কেউ ডাকসাইটে পুলিশ অফিসার। কেউ বা ছদ্মবেশধারী গোয়েন্দা। বিয়ে হয়েছে মানেই নায়কের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে, এমন প্রস্তাবকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন বলিউডের নায়িকারা। নতুন নতুন চরিত্রে মেলে ধরছেন নিজেদের। ঝুঁকি নিচ্ছেন মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতেও।

Advertisement

চার বছর আগে তাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘গুজারিশ’য়ে। তার পর মাতৃত্ব নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন। মাঝে মধ্যে ঝড় উঠেছে তিনি অমুক ছবিতে কামব্যাক করতে চলেছেন বলে। তবে ঝড় যতটা না তাড়াতাড়ি উঠেছে, তার থেকে আরও বেশি তাড়াতাড়ি অ্যাশের তরফ থেকে ছবি করবেন না বলে পাঠানো হয়েছে প্রেস স্টেটমেন্ট। কিন্তু এ বার প্রথম ঘোষণা করা হয়েছে যে ঐশ্বর্যা সত্যি সত্যি কামব্যাক করছেন। আর সে কামব্যাক নাকি এমন এক ছবিতে, যেখানে তাঁর মূলধন শুধুমাত্র চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য নয়!

ছবির নাম ‘জস্‌বা’। শ্যুটিং শুরু হবে আগামী বছরের গোড়ার দিকে। বিয়ে, মাতৃত্ব পেরিয়ে এসে ঐশ্বর্যা নাকি নিজেকে একদম অন্য ভাবে মেলে ধরতে চান পর্দায়। ছবিটি নারীকেন্দ্রিক না হলেও পরিচালক সঞ্জয় গুপ্তর ভাষায় ঐশ্বর্যাই ছবির ‘নায়ক’!

Advertisement

খুদে আরাধ্যা আর মা বৃন্দাকে নিয়ে ঐশ্বর্যা আপাতত পাড়ি দিয়েছেন কান চলচ্চিত্র উত্‌সবে। ফরাসি ছবি ‘দ্যুজু, উ ন্যুই’-য়ের প্রিমিয়ারে রেড কার্পেটে হাঁটছেন তিনি। স্বামী অভিষেক অবশ্য শ্যুটিং নিয়েই এ দেশে ব্যস্ত। বৃহস্পতিবার অভিষেক পৌঁছে যাবেন কান-এ। বচ্চন দম্পতি তার পর হোস্ট করবেন আমফা নিবেদিত ‘সিনেমা এগেনস্ট এডস’য়ের নৈশভোজন। সে সব সেরে ঐশ্বর্যা চলে যাবেন লন্ডন। সেখানে এক এনজিও সংক্রান্ত একটি কাজে তিনি কিছু দিন ব্যস্ত থাকবেন। তার পর লন্ডনে ছুটি কাটিয়ে দেশে ফিরবেন জুন নাগাদ। ফেরার পর শুরু হবে ‘জস্‌বা’ ছবির প্রস্তুতি।

তবে অ্যাশ যে ছবিটি দিয়ে তাঁর কামব্যাক করছেন, সেটা একটা অফিশিয়াল রিমেক। “এক স্টুডিয়ো থেকে আমার কাছে এই অফারটা আসে। সেই স্টুডিয়োর লোকেরা আমার তৈরি ‘কাঁটে’ আর ‘শ্যুটআউট অ্যাট ওয়াডালা’ দেখেছেন। তাঁদের মনে হয়েছিল যে এই বিদেশি ভাষার ছবির রিমেকটা আমি ঠিক মতো হ্যান্ডল করতে পারব। আমার চিত্রনাট্যে, গল্পতে একদম ভারতীয় একটা ছোঁয়া আনছি। ছবিটির পটভূমি থাকছে মুম্বই,” জানাচ্ছেন পরিচালক যিনি ইতিমধ্যেই শুরু করতে চলেছেন ‘মুম্বই সাগা’ নামে আরও একটি ছবি।

গল্পটা অ্যাশকে শোনাতেই নাকি তাঁর ভাল লেগে যায়। “এত দিন সবাই তো অ্যাশকে গ্ল্যামার অভিনেত্রী হিসেবেই দেখে এসেছেন। তা ছাড়া হয়তো দেখেছেন ‘ধুম ২’-তে অ্যাকশন করতে। কিন্তু ‘জস্‌বা’র চিত্রনাট্য অ্যাশকে সুযোগ দেবে একটা জোরালো চরিত্রে দাঁত ফোটাতে,” জানাচ্ছেন ‘কাঁটে’ আর ‘শ্যুটআউট অ্যাট ওয়াডালা’র পরিচালক। তবে এই যে সব গুজব ছড়িয়েছে যে অ্যাশ না কি এই ছবির জন্য দারুণ সব স্টান্ট করে তাক লাগিয়ে দেবেন, সেটা কিন্তু ঠিক নয় বলেই দাবি করছেন সঞ্জয়। তাঁর মতে ‘জস্‌বা’ কিন্তু অ্যাশের লরা ক্রফ্ট নয়। ছবিটার শ্যুটিং অ্যাশের পক্ষে শারীরিক এবং মানসিক দিক দিয়েও যথেষ্ট ডিম্যান্ডিং হবে ঠিকই। “ছবি তৈরির সময় চেষ্টা করি যাতে আমার অভিনেতারা নিজেদের কমফর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে কাজ করেন। এ বারও সেটাই করব। ছবিতে ফিজিক্যাল অ্যাকশন এমন ভাবে থাকবে, যেটা চিত্রনাট্যের সঙ্গে মানিয়ে যাবে,” বলছেন তিনি। এই ছবিটি পরিচালনা শেষ করেই সঞ্জয় আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বেন অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে একটি ছবি ‘খোট্টে সিক্কে’ নির্মাণের কাজে।

অনেক পরিচালকই তো এ যাবত্‌ অ্যাশকে নিয়ে ছবি করার স্বপ্ন দেখেছেন। সঞ্জয় নিজেও অ্যাশের অভিনীত সিনেমা দেখেছেন। কোনও দিন কি মনে হয়েছে যে অ্যাশের মধ্যে এমন একটা দিক রয়েছে যেটা পরিচালক বা অভিনেত্রী নিজেও একদমই নাড়াঘাঁটা করেননি? “কাজ করার সময় অনেক ক্ষেত্রেই অ্যাশের সৌন্দর্য আর স্টেচারের প্রতি ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা নিয়েই পরিচালকেরা মেতে থাকেন। হয়তো সেই কারণেই তাঁরা ওঁর প্রতিভার অন্যান্য দিকের প্রতি আর বেশি নজর দেন না। তবে আমি যে চরিত্রটা ওঁকে করতে বলেছি, সেখানে ওঁর সৌন্দর্য মূলধন নয়,” উত্তরে বলছেন সঞ্জয়।

অ্যাশের মতো বিদ্যা অবশ্য কোনও দিন সৌন্দর্যকে পুঁজি করেই ছবি করেননি। বিয়ের আগে থেকেই তাঁর অভিনীত ছবির আলোচনার বিষয় সব ক্ষেত্রেই হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর পারফরম্যান্স। বিয়ের পরেও সেই একই পথে হেঁটে চলেছেন বিদ্যা। অভিনয় করেছেন দু’টি ছবিতে। তার মধ্যে একটি ছিল ‘শাদি কী সাইড এফেক্টস’। ছবিটি তেমন চলেনি। তবে বিদ্যার চরিত্রটি জোরালো না হলেও সেখানে অভিনয় করার সুযোগ যে একদমই ছিল না, সেটা বলা যায় না।

‘ববি জাসুস’ ছবিতে বিদ্যা বালন।

জুলাই মাসে মুক্তি পাচ্ছে বিদ্যার ‘ববি জাসুস’। সেখানে তিনি গোয়েন্দা। ছবির ফার্স্ট লুক (যেখানে বিদ্যা ছদ্মবেশ নিয়ে পরেছেন লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি) দেখে অনায়াসেই বলা যেতে পারে এ ছবিতেও বিদ্যাই নায়ক! ‘ববি জাসুস’য়ে অভিনয় করার আগে তিনি নাকি দিল্লির প্রচুর মহিলা গোয়েন্দার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মহিলা গোয়েন্দার চরিত্রটি আরও দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করার হোমওয়ার্ক ছিল সেটা। যদিও শারীরিক কারণে সুজয় ঘোষের পরের ছবি করবেন না বলে ঠিক করেছেন বিদ্যা বালন তবে ফিল্মি কেরিয়ারে ইতি টানার মোটেও ইচ্ছে নেই তাঁর। সুস্থ হয়েই সেপ্টেম্বর নাগাদ তিনি শুরু করবেন মোহিত সুরি পরিচালিত ‘হামারি অধুরি কহানি’। ইচ্ছে আছে এমএস শুভলক্ষ্মীকে নিয়েও একটা বায়োপিকের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার।

বিয়ের পরে অবশ্য করিনা কপূরকে এখনও পর্যন্ত সাঙ্ঘাতিক কোনও চোখ ধাঁধানো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘রাম লীলা’ করতে রাজি হননি তিনি। এমনকী জোয়া আখতারের পরবর্তী ছবিও তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। তবে তার মানে এই নয় যে, আলস্যে ভুগছেন করিনা। কিছ ুদিন আগে ভাইরাল ফিভার হয়েছিল তাঁর। জ্বর সারতে না সারতেই তিনি প্লেন ধরে চলে গিয়েছিলেন গোয়া। শ্যুটিং করতে শুরু করেছেন রোহিত শেঠির ‘সিঙ্ঘম রিটার্নস্‌’।

বিয়ের পরে মুক্তি পাবে রানি মুখোপাধ্যায়ের ‘মর্দানি’। ছবিতে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের এক জবরদস্ত পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় থাকছেন রানি। এমন এক চরিত্র যা তিনি এর আগে কোনও দিন করেননি।

নিঃসন্দেহে কিছু বাণিজ্যিক ছবির অভিনেত্রীরা এখনও রয়েছেন, যাঁরা বিয়ের পর পাকাপাকি ভাবে বলিউডে কাজ করেননি। সে তালিকায় রয়েছেন শিল্পা শেঠি, কাজল আর টুইঙ্কল খন্না। তবে এই তালিকার পাশে আবার জ্বলজ্বল করছে শ্রীদেবী (‘ইংলিশ ভিংলিশ’), জুহি চাওলা আর মাধুরী দীক্ষিত নেনে (‘গুলাব গ্যাং’)-এর নাম। তাঁরা স্বমহিমায় ফিরে আসছেন বড় পর্দায়। নায়কের দুঃখিনী মায়ের চরিত্রে নন। মেক আপ ছাড়াই ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছল তাঁরা। দর্শককে একদম চমকে দিচ্ছেন অভিনয় দিয়েই।

চল্লিশেও থাকুন রূপবতী

• প্রতিদিনের খাবারে সবুজ শাকসব্জি আর ফল থাকা দরকার। ফ্রুট জুসের বদলে সরাসরি ফল খাওয়াই আমার মতে ভাল। সঙ্গে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নিলে মন্দ হবে না।

• নিয়ম করে সপ্তাহে পাঁচ দিন জিম করতে হবে। ঘাম ঝরিয়ে এক্সারসাইজ করলে ওজন কমবে। আর তাতেই দেখতে অনেক ইয়ং লাগবে।

• ধূমপান ছাড়তেই হবে। মদ্যপানও কন্ট্রোলে আনতে হবে। সপ্তাহে দু’দিন ড্রিঙ্ক করা চলতে পারে।

• পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম একান্ত দরকার। মনকে সতেজ রাখার জন্য যোগব্যায়াম করতে হবে। অফিসের স্ট্রেস অফিসেই ফেলে আসতে হবে। সুযোগ পেলেই উইকএন্ডে বেরিয়ে পড়লে বয়সের ছাপ শরীরে পড়বে না।

• তরুণদের সঙ্গে মিশতে হবে। যুবক মনের সাহচর্য পেলে চল্লিশেও দেখাবে কুড়ির মতো।

পরামর্শ: ডা. সুব্রত মৈত্র।

সতেরো বছর পরে আবার অভিনয়ে ফিরছেন সঙ্গীতা বিজলানি। অভিনয় করছেন অনির-এর হিন্দি ছবি ‘শাব’য়ে। যেখানে তিনি অভিনয় করছেন ফ্যাশন দুনিয়ার হোমড়াচোমড়া এক ব্যক্তিত্বের ভূমিকায়। “কোনও মা বা বোনের চরিত্রে অভিনয় করবেন না সঙ্গীতা। ছবিতে উনি অন্যতম প্রধান চরিত্রের ভূমিকায়। আমার খুব ভাল লাগছে এই ভেবে যে, আজকাল আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০-পেরনো অভিনেত্রীরা কত সুন্দর সুন্দর চরিত্র করছেন,” বলছেন অনির।

আর ৩০ পেরোলেই যে তাঁদের জেল্লা কমে যাচ্ছে, তা-ও কিন্তু নয়। জুহিকে নিয়ে যখন অনির ‘আই অ্যাম’ করেছিলেন, তখন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’য়ের হিরোইনের বয়স ৪৩। ম্যাচিওরিটির সঙ্গে তাঁর সৌন্দর্যও এক অন্য মাত্রা পায় সেখানে। “তবে একটা নেগেটিভ দিকও রয়েছে। যদি ৩০ পেরনো অভিনেত্রীরা মায়ের

রোল শুনেই নাকচ করে দেন, তা হলে ভাল চরিত্রে জোরালো অভিনয় দেখার সুযোগ হারাব,” বলছেন অনির।

তবে অনিরের আশঙ্কা এখনও বাস্তবে পরিণত হয়নি। কিছু দিন আগেই ৫৯ বছরের রেখা সই করেছেন অভিষেক কপূরের ‘ফিতুর’।

ছবিটি চালর্স ডিকেন্সের ‘গ্রেট এক্সপেক্টেশনস্‌’ উপন্যাসের ভারতীয় সংস্করণ হিসেবে তৈরি হচ্ছে। ছবিতে রেখার চরিত্রের যথেষ্ট গুরুত্ব থাকছে চিত্রনাট্যে। শোনা যাচ্ছে মূল উপন্যাসের মিস হ্যাভিশমের চরিত্রের আদলে লেখা হচ্ছে রেখার চরিত্রটি!

পঞ্চাশের দশকে যখন মীনা কুমারী বাণিজ্যিক ছবি করেছিলেন, তখন পুরুষ ও নারীর সমানসমান জায়গা

থাকত। শর্মিলা ঠাকুর, রাখী, স্মিতা পাতিল, শাবানা আজমি একের পর এক দারুণ কাজ করেছেন বিয়ের পরেও। আস্তে আস্তে হিন্দি সিনেমার ধাঁচ পাল্টালো। অ্যাকশন সিনেমায় নায়িকাদের জায়গা হয়ে উঠল শৌখিন ফুলদানির মতো। অ্যাশ, বিদ্যা, রানি, শ্রীদেবী, জুহি, মাধুরীর হাত ধরে কি সেই মীনা কুমারীর যুগটা আবার ফিরে আসছে বলিউডে? উত্তরে অনির বলছেন, “হয়তো বা তাই। বা হয়তো হলিউডি কায়দায় এমন একটা জায়গা তৈরি হচ্ছে যেখানে ৩০ পেরনো নায়িকাদের জন্য খোলা রয়েছে নতুন ময়দান। জুলিয়া রবার্টস, মেরিল স্ট্রিপ-এর বয়স বা মাতৃত্ব নিয়ে কেউ তো মাথা ঘামায় না। আশা করি আমাদের ফিল্মেও এমনটাই হবে।”

অপেক্ষায় শুধু অনির নন। হিন্দি চলচ্চিত্রের আপামর দর্শকও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement