তিনি বিপন্মুক্ত। বাঁ হাতে কাচ ঢুকে জখম হয়েছিলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তাঁকে রবিবার সকালে ছেড়ে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেলেঘাটা কানেক্টরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে হাতে অস্ত্রোপচার হয়েছিল স্বস্তিকার।
তবে কোথায় কী ভাবে স্বস্তিকা আহত হলেন, তা নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি। স্বস্তিকার বোন অজপা মুখোপাধ্যায় শনিবার টুইট করেছিলেন, “এক বন্ধুর বাড়িতে স্বস্তিকার বাঁ হাত ও মাথায় সামান্য চোট লেগেছে। তিনি এখন ভাল আছেন।” অথচ স্বস্তিকা ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের আগের বয়ান অনুযায়ী, গল্ফ গার্ডেনে তাঁর নিজের বাড়িতেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। আবার যাদবপুর থানা সূত্রের খবর, গল্ফ গার্ডেনের বাড়িতে শুক্রবার রাত বা শনিবার সকালে স্বস্তিকা উপস্থিতই ছিলেন না। পুলিশের একাংশের দাবি, ঘটনাটি ঘটে নিউ টাউনের একটি হোটেলে। ভোররাতে হাতে সেখানেই কাচ ঢুকে স্বস্তিকা জখম হন। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে স্বস্তিকার এক ঘনিষ্ঠ নাট্যব্যক্তিত্ব ও চিত্রপরিচালক বন্ধু তাঁর সঙ্গে ছিলেন বলেও জানাচ্ছে পুলিশ। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ থেকেও এ ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। রবিবার রাতে নিউটাউন থানায় পুলিশ ওই চিত্রপরিচালকের সঙ্গে কথাও বলেছে।
স্বস্তিকার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, শনিবার রাতে ওই চিত্রপরিচালক বন্ধুর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় স্বস্তিকার। তিনি চলে যাওয়ার পরেও ফোনে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় দু’জনের। এর ঘণ্টা দুয়েক বাদেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। স্বস্তিকার ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলেছে পুলিশ। যুধাজিৎ দত্ত নামে স্বস্তিকার এক বন্ধু স্বস্তিকাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে পুলিশের দাবি। কোথায় কী ভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটে, যুধাজিৎ তা জানেন না বলে দাবি করেছেন। দুর্ঘটনা নিয়ে নানা জল্পনা থাকলেও খাতায়-কলমে পুলিশে অভিযোগ রুজু হয়নি। পুলিশের বক্তব্য, স্বস্তিকা এই দুর্ঘটনা নিয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি।
স্বস্তিকার অস্ত্রোপচার করেছেন প্লাস্টিক সার্জন কৌশিক নন্দী। তিনি এ দিন জানান, “স্বস্তিকা ভাল আছেন। তবে ওঁর হাতের চিকিৎসা আরও বেশ কিছু দিন ধরে চলবে।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, স্বস্তিকার বাঁ হাতের শিরার পাশে ক্ষতটি যথেষ্ট গভীর। প্লাস্টিক সার্জারি করা হলেও ক্ষতের দাগ পুরোপুরি মিলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
তবে অস্ত্রোপচারের পরে খোশমেজাজেই ছিলেন স্বস্তিকা, দাবি ঘনিষ্ঠদের। শনিবার রাতে আইপিএলে কেকেআর-এর খেলাও দেখেছেন। স্বস্তিকার তখনকার ফেসবুক স্টেটাস-আপডেট বলছে, ‘পাঠান, পাঠান, পাঠান।’ কিন্তু ইরফান পাঠানের ধুন্ধুমার ব্যাটিং নিয়ে উচ্ছ্বাসের ওই পোস্টেও স্বস্তিকার ভক্তেরা অনেকেই কী ভাবে তিনি জখম হলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন।
টালিগঞ্জের ইন্ডাস্ট্রির জগতের মধ্যেও দিনভর চলেছে জল্পনা। স্বস্তিকার একদা ঘনিষ্ঠ সহ-অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “পুরো বিষয়টাই মিডিয়ার থেকে জেনেছি। শুনেছি, ও (স্বস্তিকা) ভাল আছে! ওর মেয়ের কথা ভেবেও খারাপ লাগছে। আশা করি, সমস্যা মিটে যাবে।” চিত্রপরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, স্বস্তিকার সঙ্গে তাঁর অনেক দিন যোগাযোগ নেই। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। স্বস্তিকার বন্ধু-পরিচালক মৈনাক ভৌমিকের দাবি, “স্বস্তিকা সুস্থ। নির্ধারিত সময়ে শ্যুটিংয়ে ফিরতে কোনও সমস্যা হবে না ওর।”
কলকাতায় রাস্তায় শ্যুটিংয়ে কুনাল খেমু। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।