কণ্ঠ ছাড়ো জোরে

হঠাৎ যদি এক জনপ্রিয় আরজে-র গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে? চেনা কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে যায়? এই নিয়েই নন্দিতা-শিবপ্রসাদের পরের ছবি। খবর দিচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

Advertisement

হঠাৎ যদি এক জনপ্রিয় আরজে-র গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে? চেনা কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে যায়? এই নিয়েই নন্দিতা-শিব

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ২১:৩৫
Share:

শিবপ্রসাদ ও নন্দিতা

মনে করুন আপনার প্রিয় আরজে-র কথা। যাঁর শো শুনতে শুনতে আপনি রোজ সকালে অফিস যান। যাঁর পছন্দের গান শুনতে শুনতে রোজ রাতে ঘুম আসে আপনার চোখে। যাঁর গলার স্বর আপনাকে নিমেষের মধ্যে চাঙ্গা করে দিতে পারে ক্লান্ত একটি দিনের পর।

Advertisement

আর হঠাৎ যদি শোনেন যে, সেই আরজে-র গলায় ক্যানসার ধরা পড়েছে! যার চিকিৎসা হিসেবে তাঁকে করাতে হবে ল্যারিংজেকটমি। অর্থাৎ অপারেশন করে সাউন্ড বক্সটা বাদ দিয়ে দিতে হবে।

কী মনে হবে তখন? সেই আরজে তো আর শোয়ে মজা করতে পারবেন না। খুনসুটি করতে পারবেন না রোজ সন্ধের শোতে। তখন? শ্রোতা হিসেবে আপনার খানিকটা ফাঁকা লাগবে নিশ্চয়ই। তবে আপনার জীবনের শূন্যতাও কেটে যাবে। নতুন কোনও আরজে এসে অন্য ধরনের শো করবেন। সেই পুরনো আরজে-র চেনা গলা বন্দি হয়ে থাকবে আপনার স্মৃতিতে। নতুন এক আরজে, অন্য এক গলার সঙ্গে পরিচিতি বাড়বে। তারপর সখ্য।

Advertisement

কিন্তু পুরনো সেই আরজে? যাঁর অস্তিত্ব শুধুমাত্র তাঁর গলার স্বর। শ্রোতাদের সঙ্গে যাঁর পরিচিতি তাঁর চেহারা দিয়ে নয়। শুধুমাত্র তাঁর গলার আওয়াজ দিয়ে। কথা না বলতে পারার দুঃখ কি ধীরে ধীরে তাঁর অস্তিত্বের মৃত্যু ঘটাবে?

নাকি বেঁচে থাকা, ভাল ভাবে বেঁচে থাকার অন্য কোনও পথ খুঁজে পাবেন তিনি?

এমনই একটা প্লট নিয়ে গল্প লিখেছেন পরিচালক নন্দিতা রায়। গল্পের ইংরেজি নাম ‘সাউন্ড অব সায়লেন্স’। অর্থাৎ নৈঃশব্দ্যের শব্দ বা নিঃশব্দের তর্জনী। আর সেই গল্পের আধারে নির্মিত হতে চলেছে নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরবর্তী ছবি।

ছ’সপ্তাহ আগে শিবু-নন্দিতার ‘রামধনু’ মুক্তি পেয়েছিল। “বেশ কয়েকটা হলে ছবিটা এখনও চলছে। এর মাঝেই আমরা পরের ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। ‘রামধনু’র প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী এই ছবির প্রযোজনা করবেন। এ বছরের শেষে আমরা এই ছবির শু্যটিং শুরু করব,” বলছেন শিবপ্রসাদ।

তবে সিনেমার নাম এখনও ঠিক হয়নি। ‘রামধনু’তে লাল্টু দত্তের চরিত্রে অভিনয় করার পরেও শিবপ্রসাদ জোর দিয়ে বলছেন না যে পরের ছবিতে তিনিই আরজে-র ভূমিকায় অভিনয় করবেন।

ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায়ই শোনা যায় যে নন্দিতা-শিবপ্রসাদ এমন বিষয় নিয়ে ছবি করেন যেটা অনেকেই সহজে কানেক্ট করতে পারেন। স্কুলের অ্যাডমিশন সমস্যা, ডাক্তারদের অবহেলায় পেশেন্টদের দুর্গতি, মায়ের সন্তানকে নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এমন সব বিষয় নিয়ে ছবি করে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎ এক রেডিয়ো জকিকে নিয়ে ছবি করার সিদ্ধান্ত কেন? “কেউ কেউ বলেন যে, নিউজ চ্যানেলের অ্যাঙ্করদের জনপ্রিয়তা রেডিয়ো জকিদের থেকে বেশি। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে রেডিয়ো ব্যাপারটা অনেক বেশি আপন। মুখটা অচেনা কিন্তু কণ্ঠস্বরটা আপন। ব্যক্তিগত জীবনে আমরা এমন এক ক্যানসার পেশেন্টকে চিনি যিনি ল্যারিংজেকটমি করার পরেও কী সুন্দর ভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। তবে পেশায় তিনি রেডিয়ো জকি নন। অপারেশন করার পর অন্য এক পদ্ধতি দিয়ে তিনি কথাও বলতে শুরু করেন। কত পেশেন্টকে উদ্বুদ্ধ করেছেন এই ব্যক্তি,” বলছেন শিবপ্রসাদ।

ছবির মুখ্য চরিত্রও কি ওই পেশেন্টের মতোই আবার ফিরে আসবেন তাঁর স্বাভাবিক জীবনে? পরিচালকেরা বলছেন যে সেটাই ছবির আসল চমক। প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধজয়ের গল্প বলতে চলেছেন তাঁরা।

গলার স্বর ফিরে পেলেও তা কি চেনা কণ্ঠের মতোই শোনাতে পারে? আর তা যদি না হয় এই নতুন কণ্ঠস্বর দিয়ে কি আবার একটা আইডেনটিটি তৈরি করার যাত্রাটাই বা কেমন হবে সেই আরজে-র? এ প্রশ্নের উত্তর এখনই পাওয়া যাবে না। পরিচালকরা শুধুমাত্র এটুকুই বলছেন যে মুখ্যচরিত্রের জীবনযুদ্ধ দেখে দর্শক বলবেন এ ভাবেও ফিরে আসা যায়!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement