২০১৪-টা বোধহয় প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার কেরিয়ারের অন্যতম বৈচিত্রময় বছর। এক দিকে ‘মেরি কম’য়ের মতো সিনেমার মুখ্য চরিত্রে তিনি। মেক আপের কোনও চিহ্ন নেই। আবার অন্য দিকে ব্রিটেনের এক পোল-এ তাঁকেই দেওয়া হয়েছে ‘এশিয়াজ সেক্সিয়েস্ট ওম্যান’ উপাধি। গত বছর ওই একই পোল-এ বিজয়িনী হয়েছিলেন ক্যাটরিনা কইফ। এর মাঝে আবার মুম্বইয়ে তাঁর এক ফ্ল্যাট লিজ দেওয়া নিয়ে নানা গণ্ডগোল। যিনি লিজ নিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে মধুচক্র চালানোর অভিযোগ ওঠার পর প্রিয়ঙ্কা তাঁকে পত্রপাঠ আইনি নোটিস পাঠিয়ে দেন। এ সবের মধ্যে ইউনিসেফের জন্য জন লেননের বিখ্যাত ‘ইমাজিন’ গানটার এক নতুন ভিডিয়োতে তিনিও গলা মেলালেন।
এ সবের মধ্যে শ্যুটিং শেষ করেছেন জোয়া আখতারের নতুন ছবি ‘দিল ধড়কনে দো’র। তার পরেই ৫০০ বছর পিছিয়ে গিয়ে শ্যুটিং করছেন বনশালির ‘বাজিরাও মাস্তানি’র। ছবিতে তিনি কাশী বাঈ-য়ের ভূমিকায়। তারই ফাঁকে আড্ডায় বসলেন তিনি। কিন্তু গোড়ায় গণ্ডগোল। নাম নিয়ে বিভ্রাট। অতঃপর নিজেই হেসে বললেন, “দু’টো প্রিয়ঙ্কা নিয়ে গণ্ডগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আপনি আমাকে পিসি বলেই ডাকুন!”
আচ্ছা পিসি, প্রথমেই একটা কথা জেনে নিই। আপনি টাইম ম্যানেজমেন্ট ব্যাপারটা শিখলেন কোথা থেকে?
হা হা হা।
এক দিকে গান। অন্য দিকে অভিনয়। তার মধ্যে আরও কত কী! এত সব সামলান কী করে?
সত্যি বলব? মাঝে মধ্যে নিজের অবাক লাগে যে আমি কী করে এত সব করি। ইট রিয়েলি ব্যাফলস্ মি।
ব্রিটেনের একটা পোল-এ আপনাকে ‘এশিয়াজ সেক্সিয়েস্ট ওম্যান’ বলা হয়েছে। এ বছরে এত ধরনের ব্যাপারের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেললেন কী করে?
হা হা হা হা। আমি সত্যি ও ভাবে ভাবিনি। কিন্তু যখন আপনি সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বেশ ভাল লাগছে। আমি সব সময় চেয়েছি যেন নিজেকে নানা ভাবে মেলে ধরতে পারি। ভার্সেটালিটি ইজ সামথিং আই হ্যাভ অলওয়েজ এইমড্ ফর। সেক্সিয়েস্ট এশিয়ান খেতাবটা পেয়ে বেশ ফ্ল্যাটার্ড লেগেছে। সব থেকে যেটা ভাল ব্যাপার, তা হল এটা ঠিক হয়েছে মানুষের পোলের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষ আমাকে এই সম্মানের যোগ্য মনে করে ভোট দিয়েছেন বলে এটা আমার কাছে আরও ভাল লাগার বিষয়।
আপনি নিজে সেক্স অ্যাপিল ব্যাপারটাকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করেন?
আমার মতে সেক্সি ইজ হোয়াট সেক্সি ডাজ। সেটা আপনি তখনই হতে পারবেন যখন আপনি নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে গ্রহণ করতে পারবেন। আপনার সব দোষগুণ সমেত। আর এই গ্রহণযোগ্যতা তখনই আসে যখন আপনি নিজেকে নিয়ে দারুণ কনফিডেন্ট। এমনিতেও চারপাশে তাকালে আপনি বুঝবেন যে সেই মানুষেরাই আত্মবিশ্বাসী যাঁরা নিজেদের একদম সাবলীল ভাবেই সব দোষত্রুটি নিয়েই গ্রহণযোগ্যতা খোঁজেন।
আপনাকে যেহেতু এশিয়ার সেক্সিয়েস্ট বলা হয়েছে, তার মানে আপনি বলছেন যে সেটার উত্স আপনার নিজের সব দোষত্রুটি নিয়েই নিজেকে গ্রহণ করার ক্ষমতা?
একদম তাই।
তার মানে কিন্তু এটাও বোঝায় যে, আপনি স্বীকার করছেন যে আপনার ত্রুটি রয়েছে...
নিশ্চয়ই আছে। সব মানুষের থাকে। থাকে না? আমি আলাদা কেন হব? আর সেগুলো থাকে বলেই তো আমরা সব্বাই স্বতন্ত্র ব্যক্তি।
একটা ত্রুটি বলুন যেটা আমাদের একদম জানা নেই...
(একটু ভেবে) ভীষণ বেশি সেন্সিটিভ। যাকে বলে এক্সট্রা সেন্সিটিভ। অভিনেত্রী হিসেবে স্পশর্র্কাতর হওয়া ভাল। ওটা আমার কর্মক্ষেত্রে সাহায্য করে। কিন্তু বেশি স্পর্শকাতর হলে মানুষ হিসেবে অসুবিধা হয়। আমি হলাম গিয়ে যাকে বলে ভেরি ভেরি সেন্সিটিভ।
মানে, আপনি কি সিনেমায় দুঃখের দৃশ্যে কাঁদেন? আপনার কি সহজেই চোখে জল এসে যায়?
হ্যাঁ, আমি খুব সহজেই কেঁদে ফেলি। কিন্তু আমি কাউকে সেটা দেখতে দিই না।
ওহ্! কান্না পেলেও অভিনয় করে যান...
হুমমম্।
আপনার চোখে পৃথিবীর সব থেকে সেক্সি পুরুষ কে?
এখনও তো ওটার রেজাল্ট বেরোয়নি। কত জন প্রতিযোগীই তো আছেন...
না, না। ওই রেজাল্টটা ছেড়ে দিন। আপনার চোখে দেখা সব চেয়ে সেক্সি পুরুষ—তা সে এশিয়ান হোন বা আমেরিকান—কে?
দু’টো নাম বলব। ব্রুশ স্প্রিন্সটেন। আর অমিতাভ বচ্চন।
আর সেক্সিয়েস্ট মহিলা?
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। কী আত্মবিশ্বাস! দারুণ সেক্সি। অ্যাচিভার। এলিগেন্ট। কী ভাল কথা বলেন! তার ওপর পরিবারের জন্যও কত সময় দেন। একদম ফ্যামিলি ওম্যান যাকে বলে। কী সাহসী! সেক্সিয়েস্ট মহিলা বলতে গেলে ওঁকেই প্রথমে রাখব।
মাঝখানে আপনার এক প্রপার্টি লিজ নেওয়া নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল...
(পাশ থেকে তাঁর ম্যানেজার বলেন এ প্রশ্ন করা যাবে না) এ নিয়ে যা বলার আমি ইতিমধ্যে বলেছি।
জানি যে আপনি লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছিলেন। তবে জানতে চাই যে আপনার কি মনে হয় অভিনেত্রীরা খুব ইজি টার্গেট হয়ে যান এই সব বিতর্ক হলে...
(ম্যানেজার আবার বাধা দেন) এ প্রসঙ্গে যা বলার, আমি আগেই বলেছি। ইন্টারনেটে পেয়ে যাবেন। অন্য কথা বলি?
আচ্ছা, শোনা যাচ্ছে সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘বাজিরাও মাস্তানি’ ছবিতে নাকি আপনার ‘মেরি কম’য়ের থেকেও বেশি কঠিন রোল...
আমি কখনওই দু’টো চরিত্রের তুলনা করব না। কারণ দু’টো চরিত্রের স্কোপ আর রেঞ্জ একদম আলাদা। পটভূমিও আলাদা। এমনিতেই আমি আমার কেরিয়ারে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। সেগুলো করতে গিয়ে কোনও দিন মেপে দেখিনি কোনটা বেশি ভাল বা কোনটা নয়। ‘বাজিরাও মাস্তানি’ ছবিতে আমি কাশী। বাজিরাও-এর প্রথম স্ত্রী। সে ছবির গল্প প্রায় ৫০০ বছর পুরনো। শুধু যে এটা একটা পিরিয়ড ফিল্ম তা নয়। এই ছবিটার মধ্যে এমন একটা কালচার দেখানো হয়েছে, যেটার সঙ্গে আমি সে ভাবে পরিচিত নই। অনুভূতির দিক দিয়ে ছবিটা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে।
এই ধরনের একটা ছবি, যেখানে আপনার ব্যক্তিগত অনুভূতিও কিছুটা নাড়া দিচ্ছে, সেটা অভিনয় করার সময় কী করেন? যখন ক্যামেরার সামনে, তখন সুইচ অন। আর কাট বললেই সুইচ অফ?
না, না। কোনও চরিত্র করতে গেলেই আমার কাছে সুইচ-অন সুইচ-অফ ব্যাপারটা হয় না। প্রত্যেকটা ছবির ক্ষেত্রেই, কাট বলার পরেও আমি কিছুটা অনুভূতি নিজের মধ্যে তুলে দিই। বা বলতে পারেন আমার কিছুটা অনুভূতি চরিত্রের মধ্যে দিয়ে আসে। তবে এই ছবিটার বিউটিটা কী জানেন? এখানে সব ক’টা চরিত্রের অনুভূতিকেই সম্মান জানানো হয়েছে। খুব মর্মস্পর্শী ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ছবিতে তো আপনি বাজিরাওয়ের প্রথম স্ত্রী। তা-ও বাজিরাও অন্য একটি মহিলার প্রতি আকৃষ্ট হন। কেউ কেউ বলবেন এটা ঠিক নয়। এই গোটা ব্যাপারটাকে আপনি কী ভাবে দেখেন?
এই ফিল্মের বিউটি হল যে এখানে কেউ ভুল নয়। তাই গল্পটা এতটাই হৃদয়স্পর্শী। হার্টব্রেকিং। কোনও ভার্চুয়াস স্ট্যান্ড নেওয়া হয়নি। আর এমনিতেও মনের বিষয়ে এ রকম ভাবে কোনও ঠিক-ভুল দাঁড়ি টানার পক্ষপাতিত্ব আমার নেই।
কেরিয়ারের প্রথম দিকে আপনি নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আবার ফিরে যেতে চান নাকি ওই ধরনের চরিত্রে?
এটা তো আমি সব সময় চেয়ে এসেছি। কিন্তু যে নেগেটিভ চরিত্রগুলো আমাকে অফার করা হয়েছিল, সেগুলো আমার ভাল লাগেনি।
অমৃতা প্রীতমের বায়োপিকে কি আপনি অভিনয় করেছেন?
এটুকু বলব আমি শুনছি অনেক কিছুই। আপাতত মধুর ভাণ্ডারকরের ‘ম্যাডামজি’র জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন যা শেডিউল রয়েছে তাতে আগামী বছরের মাঝামাঝির আগে আমি নতুন কোনও কাজের শ্যুটিং শুরু করতে পারব না।
সিনেমার অফারের মধ্যে কোনটা বেছে নেবেন, সেটা কেমন করে ঠিক করেন? নিজের জন্য কোনও কেরিয়ারপাথ ঠিক করেছেন?
না না। আমি হলাম ‘ডেস্টিনিজ চাইল্ড’। আমি ভাগ্যের সন্তান। সব কিছু ইন্সটিঙ্কট দিয়ে করি। কোনও দিন কিছু প্ল্যান করি না যে, ও ভাবে এগোতে হবে বা ও ভাবে কাজ করতে হবে।
আর গান? আবার নতুন কোলাবরেশন কবে করবেন?
কিছু মাস আমি গান থেকে বিরতি নিয়েছিলাম। জোয়া আখতারের ছবির শ্যুটিং করলাম। ইচ্ছে আছে জানুয়ারি নাগাদ আবার শুরু করার। এর মধ্যে অবশ্য ‘ইউনিসেফ’-এর হয়ে জন লেননের ‘ইমাজিন’ গানটার ভিডিয়ো-তে আমি গাইলাম। দারুণ একটা কারণের জন্য ভিডিয়োটা করা হয়েছিল। বিদেশের কত সঙ্গীতশিল্পী গাইলেন। এ রকম একটা কাজ করতে পেরে দারুণ ভাল লেগেছে।
এর মধ্যে তো টুক করে কলকাতাতেও ঘুরে গেলেন ইন্ডিয়ান সুপার লিগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে!
ও তো একটা ইভেন্ট ছিল বলে। তবে কলকাতার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জুড়ে আছে। আমার মা গড়গড় করে বাংলা বলতে পারেন।
কী করে?
আরে মা তো জামশেদপুরে থেকেছেন। তাই বাংলাতে যথেষ্ট সড়গড়। ওখানে বন্ধু-বান্ধবেরা রয়েছেন।
‘গুন্ডে‘-র শ্যুটিং করেছেন বাংলায়। ‘বরফি’র শ্যুটিং করেছেন। এখনও কিছু বাংলা শব্দ মনে আছে?
একটা বাক্য মন দিয়ে শিখেছি।
কী সেটা?
আমি জানি বাংলায় কেমন করে ‘আই লাভ ইউ‘ বলতে হয়।
আমি তোমাকে ভালবাসি, এটা মনে রেখেছেন?
(হাসি) হ্যাঁ। ওটা ভুলিনি।