দোল আসার আগের কয়েক দিন যেন প্রকৃতিটাই বদলে যায়। দিনে গরম লাগলেও, রাতটা যেন কেমন শিরশিরে ঠান্ডা। তাপমাত্রা ওঠা নামা করছে দ্রুত।
এ দিকে উত্সবের কিন্তু কমতি নেই। রমরমিয়ে চলছে বিয়ের মরসুম। আর একের পর এক গার্ডেন পার্টি! আজকাল তো বিয়ের অনুষ্ঠানও এক দিনে শেষ হয় না। বৌভাত, রিসেপশন, সঙ্গীত সব মিলিয়ে জমজমাট প্রত্যেকটা দিন।
কিন্তু কী পরবেন, পরপর রোজই যদি কোনও না কোনও অনুষ্ঠান থাকে? মনে রাখতে হবে দুটো দিকই। প্রথমত সাজ হতে হবে নজরকাড়া। যেন আপনাকে দেখামাত্র দ্বিতীয় বার নজর ঘুরে যায় তাঁর যিনি আপনাকে দেখছেন। দ্বিতীয়ত পোশাকআশাক পরার সময় একটু একটু শীত শীত ভাবটাও যেন গায়ে না লাগে। আবহাওয়ার খেয়ালখুশিটা মানিয়ে নিয়েই যা কিছু সাজসজ্জা।
নইলে মুশকিল। রাতের অনুষ্ঠানে ফিনফিনে ঠান্ডাটাও লেগে যেতে পারে চট করে। এমন সুন্দর সময়ে অসুখ হওয়াটা কিন্তু মোটেই সুখের নয়...
অ্যাদ্দিনে নিশ্চয়ই শালটাল আলমারির তাকে তুলেছেন...
তবুও বলব বেনারসিই হোক বা নানা ধরনের কাপড় জুড়ে তৈরি ডিজাইনার শাড়ি, সঙ্গে ম্যাচ করা পশমিনাটা কিন্তু জড়াতেই পারেন। কী ভাবছেন? আবার পশমিনা কেন? পশমিনা মানেই তো ফের গায়ে সেই চাদরই জড়ানো হল। ডিজাইনার শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে তৈরি ভারী নকশার চোলিটা চাইছেন সবাই দেখুক? সেটাকে কি পশমিনায় ঢাকা যায় নাকি?
অসুবিধে নেই। শালের মতো করে না জড়ালেই হল। উজ্জ্বল রঙের পশমিনা ভাঁজ করে নামিয়ে দিন কাঁধের ওপর দিয়ে। আর যদি পশমিনাটা গায়ে চড়াতে মোটেই ইচ্ছে না করে, ইভনিং পার্সের মধ্যে ভাঁজ করে রাখা থাক। পার্টি কিংবা অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলে যদি ঠান্ডা-ঠান্ডা লাগে, ব্যাগ থেকে বের করে চড়িয়ে নিলেই হল।
হাল্কা শাল কিন্তু খুব সুন্দর একটা সাজ। কিন্তু সৌন্দর্যটা নির্ভর করছে কেমন ভাবে আপনি তা ব্যবহার করছেন তার ওপর। একরঙা সিল্ক বা অরগ্যাঞ্জা শাড়ির ওপর হাল্কা কাশ্মীরি চাদর যেমন চলে, তেমনই ইন্দো-ওয়েস্টার্ন পোশাকের সঙ্গে চলতে পারে কারুকার্য করা পাতলা চাদর।
কিংবা লাইট স্টোল বা পশমিনার বদলে ব্যবহার করতে পারেন নানা রঙের সুতোয় জমাট নকশা করা কাঁথা চাদরও। সাদা বাংলায় বললে নকশি কাঁথা। একরঙা শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করা কাঁথাকাজের চাদরও পরলেও দেখতে ভাল লাগে। আরামও আছে। কাঁথার সান্নিধ্যটাই যে আসলে খুব নরম। তবে শাড়ির সঙ্গে কাঁথার নকশার রঙে কনট্রাস্ট হলে ভাল হয়। ‘বাইলুম’ জাতীয় শো-রুমে দু’তিন রকম রঙের কম্বিনেশন করে হাল্কা উলের স্টোলও পাওয়া যাচ্ছে। রঙের মধ্যে থাকছে কমলা, গোলাপি, বেগুনি এই সব উজ্জ্বল রঙের লেয়ার। এই ধরনের স্টোল ঘাড়ে আলতো ভাবে ফেলে রাখতে পারেন।
বসন্ত খুব রঙিন ঋতু। পোশাকআশাকে রঙের বৈচিত্রটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু গরমটা সে ভাবে এখনও কাবু করছে না, তাই তসর, লিনেন, খাদির শাড়ি পরা যায়। পরা যায় এই সব মেটেরিয়াল দিয়ে সেলাই করা পোশাকও। ব্রোকেড, বেনারসি বা চান্দেরি কাপড়ে তৈরি পোশাক খুব আরামদায়ক। বিদ্যা বালন ডিজাইনার সব্যসাচীর সাজে যেমন সেজেছেন, সেই রকমটা পরলে কেমন হয়? ভারী নকশার লম্বা হাতা চোলি। ঊর্ধ্বাঙ্গের অনেকটাই ঢাকা থাকবে, তাতে উষ্ণতাও থাকবে। দেখাবেও জমকালো।
ডিজাইনারেরা তো আজকাল এ ভাবেই পোশাক বানাচ্ছেন।
কিছু দিন আগে কলকাতায় হয়ে গেল বেঙ্গল ফ্যাশন উইক। ডিজাইনার মোনাপালির ‘ব্রহ্মকমল’ কালেকশনটা আমার চোখে লেগে আছে। সারা পোশাক জুড়ে ব্যবহার হয়েছে পদ্মের মোটিফ। সবই এমব্রয়ডারি। লিনেন নেট দিয়ে তৈরি ঢিলে প্যান্টের সঙ্গে শরীরস্বচ্ছ লম্বা জ্যাকেট। লিনেন নেটেরই। তাতেও পদ্মের নকশা। জ্যাকেটের দৈর্ঘ্য প্রায় গোড়ালি পর্যন্ত। মোনাপালি লম্বা জ্যাকেটের সঙ্গে শাড়ি কী ভাবে পরা যায় তাও দেখিয়েছিলেন এই শোয়ে। সাধারণত সব ডিজাইনারের কালেকশনেই থাকে নানা ধরনের আঙরাখা। ঘিয়ে ও সোনালি আঙরাখা ওয়ার্ড্রোবে থাকলেও এই সময় পরা যায়।
লেয়ার করা পোশাক পরলেও ঠান্ডাটা কম লাগে সন্ধে বা রাতের অনুষ্ঠানে। বিশেষ করে সেই অনুষ্ঠান যদি খোলা লনে হয়। এই ধরনের অনুষ্ঠানে আঙরাখার নীচে পরা যেতে পারে স্কার্ট অথবা ঘেরওয়ালা সারারা।
আমার বান্ধবী সুনীতা কুমার প্যারিসের ডিজাইনার সংস্থা ‘হারমেজ’-য়ের শাড়ি পরতে খুব ভালবাসে। সুনীতা আবার শাড়ির সঙ্গে টুপিও পরে। ওর টুপির দারুণ স্টাইলিশ ডিজাইন করে দিয়েছেন সব্যসাচী। ব্রোকেডের তৈরি টুপি ইচ্ছে হলে আপনিও পরতে পারেন অনুুষ্ঠানে। চেনা-পরিচিত বড় দর্জিকে ডিজাইন দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন টুপি। তার আগে নেটে দেখে নিন টুপির ডিজাইন। অনেক রকম নকশার হদিশ পাবেন। এই সময়টা হিম পড়ে। রঙিন কাপড়ের পাগড়িও পরা যেতে পারে শাড়ি বা অন্য যে-কোনও পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে। মাথাটা বাঁচাতে হবে তো! শিশির এড়াতেই এই বন্দোবস্ত।
ঠান্ডা লাগার ধাত আমারও। গলা ঢাকতে হাল্কা পোলোনেক ব্লাউজের সঙ্গে ভারী সোনালি পাড় দেওয়া কাঞ্জিভরম শাড়িও প্রায়ই পরি রাত-পার্টিতে। পোলোনেকের জায়গাটা আড়াল করতে পরি সোনা বা মুক্তোর চোকার। ঋতুবদলের ঠান্ডা ভাব যাতে না ধরে, তাই আমিও টুপি পরি। শাড়ির সঙ্গে। অন্য পোশাকের সঙ্গেও। মাথায় আঁট করে বসানো কালো রঙের রেশমি টুপিটা তৈরি করে দিয়েছে আমার বান্ধবী ইতি মিশ্র। টুপিতে স্পার্কল থাকায় রাত পার্টির আলোর রোশনাইয়ে ঝিলমিলও করে বেশ। পাথর বসানো ক্লিপ দিয়ে টুপিটা চুলের সঙ্গে এঁটে নিই। লোকজন দেখে ভাবে, কী দুর্দান্ত স্টাইলটাই না করেছি! আসলে তো সবটাই ঠান্ডা আটকাবার ছল।
আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন টুপির স্টাইল।
ব্রোকেড বা জারদৌসির ব্লাউজ, অথবা জমকালো পোশাকআশাক যা আছে এই বেলা পরে নিন বসন্তে। গরম পড়লে আবার অন্য রকম ফ্যাশনের কথা ভাবতে হবে।