কেবল চ্যানেলের দরদাম নিয়ে মাল্টি সার্ভিস অপারেটরদের (এমএসও) সঙ্গে স্টার টিভি সংস্থার মতানৈক্যের জেরে সারা দেশেই টিভির পর্দা থেকে তাদের সব ক’টি চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমএসও সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, এই চ্যানেলগুলির জন্য গ্রাহককে দিতে হবে অনেক বেশি টাকা। কিন্তু স্টার সংস্থা জানিয়েছে, তাদের নতুন ব্যবস্থা মতো চুক্তি না করলে সম্প্রচার করা হবে না চ্যানেল। এর ফলে স্টার জলসা, জলসা মুভিজ থেকে স্টার ক্রিকেট, স্টার স্পোর্টস, স্টার মুভিজের মতো চ্যানেল সোমবার থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমএসও সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, এর ফলে মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, পুণের মতো বড় মেট্রো শহরেও বন্ধ হয়ে যেতে পারে চ্যানেলগুলি। তবে এর মধ্যে স্টারের একটি সহযোগী এমএসও সংস্থা ডেন কেবল নেই।
গোলমালের সূচনা গত এপ্রিলে। দেশের বৃহত্তম এমএসও সংস্থা হ্যাথওয়ের সঙ্গে দরদাম নিয়ে স্টার টিভি সংস্থার মতানৈক্যের ফয়সলায় দু’পক্ষই দরবার করে ‘টেলিকম ডিসপিউট্স সেট্লমেন্ট অ্যান্ড অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল’ বা সংক্ষেপে টিডিস্যাট-এ। হ্যাথওয়ের বক্তব্য, স্টার সংস্থা অত্যন্ত চড়া দরে চ্যানেল কিনতে চাপ দিচ্ছে। এ দিকে স্টারের বক্তব্য, তারা চ্যানেলের দর রেখেছে সাধারণ মানুষের আয়ত্বের মধ্যেই। কিন্তু এমএসও সংস্থাটি বেশি দামে বিক্রি করছে বলেই গোলমাল দেখা দিয়েছে। এই টানাপোড়েনে টিডিস্যাট রায় দেয়, দেশের আইন অনুযায়ী স্টার সংস্থাকে সব এমএসও-র সঙ্গেই এক ভাবে ব্যবসা করতে হবে।
আরও গোলমাল দেখা দেয় যখন স্টার সংস্থা টিভিতে তাদের বিভিন্ন চ্যানেলের জন্য দর ঘোষণা করতে শুরু করে। স্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট পুলক বাগচি বলেন, “একটি সেট টপ বক্সের জন্য একজন এমএসও-র কাছ থেকে মাসে বাংলা স্টার জলসার জন্য ৬, জলসা মুভিজের জন্য ৭, ও স্টার প্লাসের জন্য ৯ টাকা করে নিই। অর্থাত্ আমাদের এই সব চ্যানেল দেখতে গেলে একটি সেট টপ বক্সের জন্য একজন দর্শককে দৈনিক গড়ে ২২ পয়সা খরচ করতে হয়। আমরা সেই দরই জানাচ্ছি। এর উপর এমএসও-রা কত দাম চাপাচ্ছে, আমাদের তা জানার কথা নয়।” স্টার কর্তা আরও জানান, তাঁরা এমএসও-দের তৈরি প্যাকেজ ব্যবস্থারও বিরোধী। দর্শকেরা যাতে নিজেদের পছন্দের চ্যানেলগুলি বেছে নিতে পারেন, তার উপরেও জোর দিচ্ছেন স্টার কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এমএসওদের বক্তব্য, স্টার সংস্থা যে দাম প্রকাশ্যে ঘোষণা করছে, সেটা পাইকারি দর। চ্যানেলগুলি দর্শকের টিভিতে পৌঁছে দিতে খরচ বহন করতে হয় এমএসও-দের। স্থানীয় কেবল অপারেটরকেও ব্যবসা চালানোর খরচ বহন করতে হয়। সেই খরচ তুলতে এমএসও-কে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের ঘোষিত দরের উপর প্রায় দ্বিগুণ দর চাপাতে হয়। এই ব্যবস্থা ট্রাইয়ের নির্দেশেই করা হয় বলে জানিয়েছে এমএসওগুলি।
মন্থন এমএসও-র সুদীপ ঘোষ বলেন, “ট্রাইয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এমএসও এবং কেবল অপারেটরদের খরচ জুড়লে ৯ টাকার চ্যানেলের দাম হয় ১৭-১৮ টাকা। নিজেদের পাইকারি দাম প্রচার করে স্টার সংস্থা বেআইনি কাজ করছে।” সিটি কেবলের প্রধান সুরেশ শেঠিয়া বলেন, “স্টারের কথা শুনে মানুষ জানতে চাইতে পারেন ৯ টাকার চ্যানেলের দাম কেন বেশি নিচ্ছি। অথচ ভারত সরকারের নির্দেশ মেনেই টাকা নিচ্ছি।”
এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে শহরে অভিনেতা সিদ্ধার্থ মলহোত্র ও ইয়ামি গৌতম। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে