উপহার কেনার আগে কী পছন্দ জেনে নিন

গৃহপ্রবেশের মুহূর্তটা স্মরণীয় করে রাখবেন কী ভাবে? পরামর্শ দিলেন ঋতা ভিমানি।বড় বড় সব হোর্ডিং, বা খবরের কাগজের পাতায় বড় করে এখন সুখী গৃহকোণের বিজ্ঞাপন। আধুনিক, ঝাঁ-চকচকে সব আবাসনে দুর্দান্ত জীবনযাত্রার প্রলোভন আপনাকে আকৃষ্ট করবেই। সেই আবাসনগুলোতে কী নেই!

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০০:০০
Share:

নতুন বাড়িতে প্রবেশ বিক্রম-জয়ার

বড় বড় সব হোর্ডিং, বা খবরের কাগজের পাতায় বড় করে এখন সুখী গৃহকোণের বিজ্ঞাপন।

Advertisement

আধুনিক, ঝাঁ-চকচকে সব আবাসনে দুর্দান্ত জীবনযাত্রার প্রলোভন আপনাকে আকৃষ্ট করবেই। সেই আবাসনগুলোতে কী নেই! জগিং ট্র্যাক, সুইমিং পুল, কমিউনিটি সেন্টার... আর সব চেয়ে বড় কথা এমন একটা বৃত্ত আপনি পাবেন, যেখানে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্য আর নিরাপত্তা যেন দোসর।

নতুন বাড়ি সাজিয়ে গুছিয়ে তাতে শিফ্ট করার পর প্রথম কাজটাই বোধহয় দাঁড়ায় বন্ধুবান্ধব, পরিজন বা আপনার কাজের জায়গার মানুষদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করা। ওঁরা সবাই পার্টি চান আপনার নতুন বাড়িতে আসার আনন্দে। কাজেই গৃহপ্রবেশের একটা প্ল্যান তো আপনাকে করে রাখতেই হবে। কিন্তু একবারে কি তা আপনি করে ফেলতে পারবেন?

Advertisement

ব্যাপারটা বোধ হয় অতটা সোজা নয়। আপনার পরিচিতরা একে অন্যের থেকে এতটাই অন্য রকম যে আলাদা আলাদা ভাবে তাঁদের আপ্যায়ন করার কথা আপনাকে ভেবে রাখতেই হবে। নাহ্‌, এতে মাথা খারাপ করার কিছু হয়নি। আমি তো বলব এই সুযোগটা কাজে লাগানো উচিত। সবাইকে আলাদা আলাদা ভাবে খাতির করুন আর সাধের বাড়িটা ভাল মতো দেখার সুযোগ দিন তাঁদের।

আমাদের বন্ধু মজুমদারদের কথা এই প্রসঙ্গে না বললেই নয়। আলিপুরের প্রাণকেন্দ্রে এক প্রাসাদপ্রতিম বাংলো বানিয়েছেন তাঁরা যা দেখে আমাদের অবাঙালি বন্ধুবান্ধবেরা মুগ্ধ। সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন এত আভিজাত্য পূর্ণ, শিল্পমনস্ক ভাবে সাজানো, এত প্রাচুর্যময় বাঙালি বাড়ি সত্যিই আগে তাঁরা দেখেননি কখনও। বহু দশক ধরে জমানো শিল্পসংগ্রহ দিয়ে আস্ত একটা গ্যালারিও বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। নেমন্তন্নটাও ওঁরা দারুণ করেছিলেন। ওঁদের বিশাল বাগানে এক একদিন এক এক দলের মানুষদের নিমন্ত্রণ ছিল। সঙ্গে ছিল খাবারদাবারের এলাহি আয়োজন। যেদিন সন্ধেয় আমরা গেলাম ওঁদের বাড়িতে, আমাদের এক পরিপূর্ণ কাশ্মীরি ‘ওয়াজওয়ান’ দিলেন তাঁরা। দারুণ সব গুসতবা ছাড়াও অসাধারণ সুস্বাদু সব পদও ছিল মেনুতে। নিরামিষাশী অবাঙালি বন্ধুদের জন্যও প্রচুর পরিমাণে নিরামিষ কাশ্মীরি পদ রাখা হয়েছিল। বেশ অনেকগুলো উইক-এন্ড জুড়ে চলেছিল বিভিন্ন অতিথিদের জন্য ওঁদের নৈশভোজ পর্ব।

আপনি অ্যাপার্টমেন্টে থাকলে নিশ্চয়ই এত লোককে একসঙ্গে নেমন্তন্ন করতে পারবেন না। এক কাজ করুন, অফিস থেকে যাঁদের নেমন্তন্ন করতে চান, তাঁদের একটা তালিকা বানিয়ে নিন। ঘনিষ্ঠ পারিবারিক আত্মীয়স্বজনদের রাখুন আর একটা তালিকায়। বাদবাকি বন্ধুদের নিয়ে আরও একটা তালিকা বানিয়ে ফেলুন। আর একটা কথা এই প্রসঙ্গে না বললেই নয়। অতিথিরা কিন্তু নতুন বাড়ির সব ঘরগুলোই ঘুরে ঘুরে দেখতে চান। কাজেই সব ঘরই সাধ্যমতো সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। বাথরুমেও পরিষ্কার তোয়ালে, সাবান রাখতে ভুলবেন না। বাইরে থেকে কেটারার আনতে পারলে ভাল। তবে তাঁদের এমন পদ রাঁধতে বলুন, যাতে ঘরে বানানো খাবারের স্বাদের ছোঁয়া থাকে। বা বছরের কোন সময় অনুষ্ঠান করছেন, তা মাথায় রেখে কিছু এক্সোটিক তাই, বার্মিজ বা মোগলাই পদও রেঁধে ফেলতে পারেন। বাইরের কেটারার এই কারণেই আনতে বলছি যাতে ঘরদোরের মতো আপনার রান্নাঘরটাও পরিষ্কার এবং গোছানো থাকে।

অতিথিরা শুধু আপনার নতুন বাড়িই দেখতে আসছেন না। আপনার বাড়ির খাবার চাখার ইচ্ছেটাও কিন্তু তাঁদের ষোলোআনা থাকে। আর সে কারণেই বাড়িতে রাঁধা খাবার অতিথিদের খাইয়ে যে আনন্দ পাবেন, অন্য কোনও উপায়েই তা আসবে না। আমি তো অভ্যাগতদের বেশির ভাগ সময়ই ঘরে তৈরি খাবার দিয়ে আপ্যায়নের চেষ্টাই করি। আর নিজেদের বাড়ির এমন কিছু সিগনেচার পদ মেনুতে রাখি, যা তাঁরা খেয়ে অনেক দিন মনে রাখেন। তবে এমন ভাবে প্ল্যান করুন যে অতিথিরা আসার আগেই যেন আপনার রান্না শেষ হয়। সবাই বাড়িতে আসছেন, এ দিকে হেঁসেল থেকে রান্নার গন্ধ আসছে ব্যাপারটা মোটেই ভাল দেখায় না।

খুব ভাল হয় যদি আপনি ককটেল পার্টির ব্যবস্থা রাখতে পারেন। এখনকার দিনে সবারই হাতে সময় বেশ কম। যাঁরা সারা সন্ধেটা আপনার গৃহপ্রবেশের নিমন্ত্রণে আটকে থাকতে পারবেন না, তাঁদের জন্য এই ব্যবস্থার জবাব নেই। আর ভিড়টাও এড়াতে পারবেন।

রোববারেও সুন্দর একটা লাঞ্চের ব্যবস্থা করতে পারেন। রিল্যাক্সড্ মুডে বিয়ার বা ব্লাডি মেরি হাতে আড্ডাটা কিন্তু জমে যাবে। সিজন অনুযায়ী মাছ বা মাংসের পদ রাখবেন পছন্দের পানীয়ের সঙ্গে।

হল তো সবই। নিমন্ত্রণ বাড়িতে উপহার কী নেবেন ভাবলেন কিছু? আগেভাগে এটা নিয়ে একটু চিন্তা কিন্তু করে রাখতেই হবে আপনাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাবনাচিন্তা না করে যে উপহারটা সব চেয়ে সহজে নিয়ে যাওয়া যায়, তা হল ওয়াইনের বোতল। তবে আমি বলব ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিস দিন। যেমন টেবল লিনেন সেট, ছোট্ট পটে বাঁশগাছ বা সুন্দর কোনও চারাগাছ, মোমবাতি, একগোছা সুগন্ধি, ফোটো ফ্রেম, বা চাইলে সুন্দর অভিনব কিচেনওয়্যারও। মানে আমি বলতে চাইছি ঘরে ব্যবহার করার জিনিস দেওয়াটাই বেশি ভাল হবে। উপহার দেওয়ার বিষয়টা যদিও অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। যেমন আপনি যদি গৃহকর্ত্রীর খুব ঘনিষ্ঠ হন, তা হলে অনায়াসে উপহার দেওয়া যায় রুপোর মুদ্রা, শাড়ি বা অন্য যে কোনও ধরনের পোশাক। যাঁদের বাড়িতে নেমন্তন্নে যাচ্ছেন, সব চেয়ে ভাল হয় তাঁদের একটা মতামত নিয়ে নিলে, কী কিনবেন সে বিষয়ে। জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন কী ধরনের ঘর সাজানোর জিনিস তাঁরা পছন্দ করবেন। তা না হলে আপনার দেওয়া উপহার অন্য কোনও অনুষ্ঠানে বিলি করে দেবেন তাঁরা অনায়াসে। চকোলেটও গিফ্ট্ হিসেবে মন্দ নয়। তবে এই উপহারটাও দিতে দিতে সবাই বিরক্ত হয়ে গিয়েছেন। তেমনই মিষ্টি উপহার দেওয়াটাও একঘেয়ে ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপহার হিসেবে এগুলো নষ্টই হয় বেশি। তাই মিষ্টি কেনার বদলে ভেবেচিন্তে এমন একটা উপহার কিনুন যেটার উপযোগিতা থাকবে।

নিমন্ত্রণ পাঠানোর ব্যাপারটাও কিন্তু যথেষ্ট শৈল্পিক ভাবে করা যায়। হয়তো নেমন্তন্নের কার্ডে ছোট্ট একটা ছড়া লিখলেন। বা এমন ভাবে কার্ডটা বানালেন, যা পড়েই আপনার নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশের ব্যাপারটা বোঝা যায়। আর এই ধরনের ফর্ম্যালিটি করতে না চাইলে ফোন করে নিন সোজাসুজি। আর রিমাইন্ডার হিসেবে পাঠিয়ে দিন একটা এসএমএস-ও।

আপনার গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখুন। প্ল্যানিং, খরচাপাতি, বা অনুষ্ঠানের পর বাড়িঘর সাফসুতরো করার মাথাব্যথাটা তো থাকবেই।

তা বলে নতুন বাড়িকে ঘিরে উত্‌সবে মেতে ওঠার আনন্দটা তো আর বারবার আসবে না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement