উধাও

শারীরিক ভাবে উধাও নন। বেহালার বাড়িতেই আছেন। অথচ শ্রাবন্তী টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে থেকেও নেই। তাঁকে খুঁজতে গেলেন সংযুক্তা বসুশারীরিক ভাবে উধাও নন। বেহালার বাড়িতেই আছেন। অথচ শ্রাবন্তী টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে থেকেও নেই। আগে যাঁকে ফোন করলেই নানা মজা করতেন, অন্য গলা করে লোককে চমকাতেন, আজকে তাঁকে ফোন করলেই বেশির ভাগ সময় ফোনই তোলেন না। হলটা কী মেয়েটার!

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share:

হলটা কী মেয়েটার!

Advertisement

আগে যাঁকে ফোন করলেই নানা মজা করতেন, অন্য গলা করে লোককে চমকাতেন, আজকে তাঁকে ফোন করলেই বেশির ভাগ সময় ফোনই তোলেন না।

আগে ছবির প্রচারে সব সময় তাঁকে দেখা যেত। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই নিজের ছবির প্রচারেও সেই ভাবে দেখা যায় না। যেমন হয়েছিল ‘বুনো হাঁস’ আর ‘বিন্দাস’য়ের মুক্তির সময়।

Advertisement

এ ছাড়া বিবাহবিচ্ছেদের খবর মিডিয়াতে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তাঁর উপর এমনিতেই নানা চাপ। তার উপর ছেলের দায়িত্ব।

হাতে এখন শুধু তিনটে ছবি।

‘কাটমুণ্ডু’, যার পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, ‘নবজীবন বীমা কোম্পানি’: পরিচালক স্বরূপ ঘোষ এবং ‘শেষ সংবাদ’ যার পরিচালক পল্লব গুপ্ত।

নায়িকা শ্রাবন্তীর ২০১৫ শুরু হতে চলেছে এই তিনটে ছবি দিয়ে। রাজ চক্রবর্তী বাদে বাকি দু’জন পরিচালককে দর্শক এখনও চেনেন না। এই সব ছবিতে দেব-জিতের মতো নায়কও নেই। এগুলো না শহুরে নিউ এজ ছবি, না মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি।

কী হল শ্রাবন্তীর যে তিনি হঠাৎ ইন্ডাস্ট্রির লাইমলাইট থেকে দূরে সরে গেলেন? বিবাহবিচ্ছেদের পর কি তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন? না কি নতুন পুরুষ সঙ্গীর পরামর্শ মতো ছবিতে কাজ করছেন বলেই ভিন্ন পথে হাঁটতে হচ্ছে?

একটু অতীতে ফিরলেই মনে পড়ে যায় সেই গানটা।

যতই বলো না আমি বোকা ভোলা
কাল হবি তুই আমার কোকাকোলা..
’’

এই গানের লাস্যময় ইমেজ মুছে রাতারাতি ২০১৩-র মাঝামাঝি অন্য ইমেজে শহুরে দর্শক চিনেছিল শ্রাবন্তীকে।

‘গয়নার বাক্স’ আর তার পর ‘বুনো হাঁস’-এ অভিনয় করে শহুরে দর্শকের মনে দাগ কেটেছিলেন নায়িকা শ্রাবন্তী। দর্শক বুঝেছিলেন এ মেয়ে কেবল মশলা ছবির গ্ল্যামারাস নায়িকা নন, তাঁর মধ্যে লুকিয়ে আছে ভাল অভিনয়ের বারুদ। তেমন পরিচালকের হাতে পড়লে জ্বলে উঠবে উষ্ণ অভিনয়ের শিখা।

কিন্তু আলাদা হয়েও কি সেই আগুনের আঁচ বইতে পারছেন তিনি?

‘‘কেন পারব না। আমি তো দু’ ধরনের ছবিতেই কাজ করব। এখনও আমার হাতে অনেক সময় নিজেকে প্রমাণ করার,’’ বলছেন শ্রাবন্তী। কিন্তু তাঁর আচরণ সে কথা বলছে না।

১৯৯৭ সালে ন’ বছর বয়সে ‘মায়ার বাঁধন’ ছবি নিয়ে প্রথম বড় পদার্য় কাজ। তেরো বছরের কেরিয়ারে তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা ষোলো। বেশির ভাগ ছবিই বাণিজ্যসফল। মিষ্টি চেহারা, প্রাণবন্ত অভিনয়ের জন্যই তিনি বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেন।

কিন্তু এ সবই কি আজ ইতিহাস?

শেষ তিন

• সিনেমার নাম

• বক্স অফিস

মজনু

সুপারফ্লপ

বুনো হাঁস

মাঝারি

বিন্দাস

মাঝারি

চারটে ছবিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছেন দেব। শেষ ছবি ‘বিন্দাস’ মাঝারি চললেও শ্রাবন্তীকে নিয়ে কিন্তু আশাবাদী দেব। বলছেন, ‘‘হেসে খেলে আরও পাঁচ-ছ’বছর কাজ করবে শ্রাবন্তী। যথেষ্ট ভাল অভিনয় করে। দেখতে সুন্দর।
একটা ছবি ‘বিন্দাস’ তেমন চলেনি বলে শ্রাবন্তীর সঙ্গে অভিনয় করব না এটা ভাবি না।’’

দেব এই কথা বললেও তাঁর সঙ্গে একমত নন প্রয়োজক অশোক ধানুকা। তাঁর এসকে মুভিজের হয়ে শ্রাবন্তী বেশ ক’টি হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘দু’জনে’, ‘ওয়ান্টেড’, ‘ইডিয়ট’, কানামাছি’র মতো ছবি। তা সত্ত্বেও তিনি কেন নিচ্ছেন না আজ শ্রাবন্তীকে? তাঁর বদলে অভিনয় করিয়েছেন নুসরত আর মাহিকে দিয়ে।

অশোক ধানুকা বলছেন, ‘‘শ্রাবন্তীর মতো ভাল মেয়ে হয় না। তবে সাত-আট বছর নায়িকাদের পিক-টাইম থাকে।
শ্রাবন্তীর সেই মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে, দর্শক এখন নতুন মুখ চাইছে।
তাই নতুন নায়িকাদের নিচ্ছি। তা ছাড়া শ্রাবন্তী এখন ম্যাচিওরড রোলে অভিনয় করছে। এই অবস্থায় ওকে গ্ল্যামারাস রোলে ফিরিয়ে আনা কঠিন। আমি‘শত্রু’ করার সময় ওকে ডেকেছিলাম। কিন্তু ও তখন অন্য হাউজের ছবি নিয়ে ব্যস্ত ছিল।’’

এখানে প্রশ্ন ওঠে ‘বুনো হাঁস’-এর পর আর তো এই ধরনের কোনও ছবিতে তাঁকে দেখা গেল না। রাজ চক্রবর্তীর ‘কাটমুণ্ডু’ ছবিতে আবারও ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়ের চরিত্রে। কেন এই পুনরাবৃত্তি? শ্রাবন্তী বললেন, “বুনো হাঁস’-এর চরিত্রের থেকে ‘কাটমুণ্ডু’র মেয়েটির চরিত্র আলাদা। সে এক জন উচ্ছল মেয়ে যে কিনা মজা করতে ভালবাসে, ক্যান্সারে ভুগেও।”

এত ভাল অভিনয় করা সত্ত্বেও নিউ এজ পরিচালক যেমন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, মৈনাক ভৌমিক, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেন না কেন? যোগ্যতা প্রমাণ করেও তাঁদের ছবি থেকে বাদ পড়ছেন কেন? “আমার সঙ্গে সৃজিতদার কথা হয়েছে, যখন সময় আসবে তখন ঠিকই কাজ পাব। নিউ এজ পরিচালকেরা যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন নিশ্চয়ই নেবেন। এই বিশ্বাস আমি রাখি। ‘বুনো হাঁস’ আর ‘গয়নার বাক্স’-তে অভিনয় করে আমি নতুন দর্শক পেয়েছি। অন্য দিকে বাণিজ্যিক মশলা ছবির হিরোইন হিসেবেও আমি সাধারণ দর্শকের কাছে অ্যাকসেপটেড। আমি এই দু’ধরনের দর্শকেরই মন জয় করতে চাই,” উত্তরে বলেন শ্রাবন্তী।

শ্রাবন্তী চাইলেই কি ভিন্ন ধারার ছবির নামী পরিচালকেরা তাঁকে সত্যিই নেবেন? সেই নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। ‘বুনো হাঁস’-এর পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘শ্রাবন্তীর ইমেজের সঙ্গে যদি আমার ছবির গল্পের চরিত্র মানায় তা হলে ওকে নিশ্চয়ই নেব। জীবনে চড়াই–উতরাই আসতেই পারে। শ্রাবন্তী যদি কোনও ‘ডাউন’ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়, সেটা ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার ছবিতে ওকে নেওয়া নিয়ে কোনও অসুবিধে নেই।’’

শ্রাবন্তী সম্পর্কে আরও শোনা যায়, তিনি নাকি রাজীব বিশ্বাসের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর এখন তাঁর নতুন পুরুষ সঙ্গীর কথা অনুসারেই কাজ করেন। সেই সঙ্গীই ছবিতে কাজ করার জন্য পারিশ্রমিকের হার কত হবে তা নাকি ঠিক করে দেন। এই নিয়ে প্রযোজক মহলে চাপা অসন্তোষ আছে। এই কারণেই নাকি নামীদামি প্রযোজক-পরিচালকেরা তাঁর থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে অবশ্য ইন্ডাস্ট্রির লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা মুখে কুলুপ আঁটতে চান।

‘কাট-মুণ্ডু’ ছবির প্রযোজক গ্রিন টাচ এন্টারটেনমেন্টের শ্যামসুন্দর দে বললেন, ‘‘আমরা কখনও অন্য কারও সঙ্গে শ্রাবন্তীর রেমুনারেশন নিয়ে কথা বলিনি। সরাসরি শ্রাবন্তীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাই বলতে পারব না তিনি অন্য কাউকে দিয়ে রেমুনারেশন ঠিক করান কি না।’’

প্রযোজকেরা মুখে কুলুপ আঁটলেও শ্রাবন্তীর নতুন পুরুষ সঙ্গী লাচুঙে ‘কাট মুন্ডু’র আউটডোর শ্যুটিংয়ে গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে। এবং বেশ কয়েক দিন সেখানে ছিলেন, তা এখন সকলেরই জানা। শ্রাবন্তী অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি এই নিয়ে কোনও আলোচনা চাই না। দারুণ ভাবে কাজে ফোকাসড থাকতে চাই। এই মুহূর্তে কাজ ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাবছি না।’’

প্রশ্ন থেকে যায় একটাই। দু’ধরনের ছবির দর্শকের মন জয় করতে চাইলেও শ্রাবন্তী কি পারছেন তাঁর আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে? দু’জন নতুন পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করছেন এই বছর। নতুন পরিচালকদের বক্স অফিস সাফল্য কতটা হবে তা নিয়ে তো সংশয় থেকেই যায়। কিন্তু শ্রাবন্তী বলছেন, ‘চ্যাম্পিয়ন’ ছবিতে যখন তিনি অভিনয় করেন তিনিও নতুন ছিলেন। বিশ্বাস করে তাঁকে প্রযোজক-পরিচালক ছবিতে নিয়েছিলেন। “বরং আমি খুশি এই ভেবে যে নতুন পরিচালকদের আমাকে নেওয়ার কথা মনে হয়েছে। আমরা যদি নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ না করি, তা হলে তাঁরা আগামী দিনে জায়গা করবেন কী করে? নতুন নাম না-জানা পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করাটা আমাদের দায়িত্ব,” সাফ জবাব তাঁর।

অথচ ‘বিন্দাস’-এর পর ইদানীং মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতেও তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। কেন এই অনুপস্থিতি? শ্রাবন্তীর উত্তর, “যেমন যেমন কাজ আসবে করব। হুড়মুড় করে একের পর এক ছবি সই না হলে পাগল হয়ে যাব এমন মেয়ে আমি নই, আমি খুব চুজি। ঠান্ডা মাথায় বুঝেশুনে কাজ করি।”

শ্রাবন্তী যা-ই বলুন, ইন্ডাস্ট্রির আনাচে-কানাচে শোনা যাচ্ছে একটাই কথা, তিনি কেরিয়ারটাকে কেমন যেন ভাসিয়ে দিয়েছেন। কিছুতেই সামাল দিতে পারছেন না। এই অভিযোগের উত্তরে নায়িকা বললেন, “আমি এই সব আলোচনাকে পজিটিভ ভাবে নিই। ইন্ডাস্ট্রিতে যখন এই সব আলোচনা হচ্ছে, তার মানে বুঝতে হবে লোকে আমাকে নিয়ে ভাবছে। আমার যোগ্যতার প্রতি তাঁদের আস্থা আছে। আমি যদি কেরিয়ার না-ই সামলাতে পারতাম, তা হলে টুইটারে আমার এক লক্ষ ছাব্বিশ হাজার ফলোয়ার হত না।”

শ্রাবন্তীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে পড়ল ‘বুনো হাঁস’ ছবির গান,
‘‘কোন দিকে মন দৌড়াবি
জিন্দেগি কভি থামতি নহি
ছুটছে দ্যাখ শহর নদী
জিন্দেগি কভি থামতি নেহি…
।’’

এই কথাগুলোই হয়তো ২০১৫-র শ্রাবন্তীর মনের কলার টিউন।

আনাচে কানাচে

কহো না ‘বসন্তি’ হ্যয়: ‘শোলে’র পর আবার তিনি টাঙ্গায়। রামগড় নয়। এ বার ভিক্টোরিয়ায়।
হেমা মালিনির সঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়। ছবি: কৌশিক সরকার।

‘গ্ল্যামার’-আস: শীতের দুপুরে পরমব্রত-পার্নো। নতুন ছবির প্রচারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement