বিশেষ সংখ্যা

ইডেন কর্ণকে জেতায়, অর্জুনের রথের চাকা বসিয়ে দিয়ে

রেকর্ডে টইটম্বুর। ক্রিকেট কীর্তিতে গরীয়ান এমন আভিজাত্যে ইডেন দুনিয়ার প্রথম পাঁচে আসে না। অথচ দেড়শো বছরের মাঠে এমন অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে, যার স্কোর লেখা ক্রিকেট স্ট্যাটিস্টিশিয়ানের সাধ্যের বাইরে। গৌতম ভট্টাচার্য-র তেমনই বিশ্লেষণ।তারা ক্রিকেটের কী বোঝে, যারা শুধুই ক্রিকেট বোঝে! হোয়াট ডু দে নো অব ক্রিকেট হু ওনলি ক্রিকেট নো! বহু বছর আগে লিখেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লেখক সিএলআর জেমস। ইডেনের দেড়শো বছরে জেমস-য়ের কালজয়ী লাইনটা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ানো উচিত—তারা ক্রিকেট মাঠের কী বিচার করবে যারা শুধু সেই মাঠের রেকর্ড বইতে মুখ গুঁজে থাকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share:

মুস্তাক আলি

তারা ক্রিকেটের কী বোঝে, যারা শুধুই ক্রিকেট বোঝে! হোয়াট ডু দে নো অব ক্রিকেট হু ওনলি ক্রিকেট নো!

Advertisement

বহু বছর আগে লিখেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লেখক সিএলআর জেমস। ইডেনের দেড়শো বছরে জেমস-য়ের কালজয়ী লাইনটা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ানো উচিত—

তারা ক্রিকেট মাঠের কী বিচার করবে যারা শুধু সেই মাঠের রেকর্ড বইতে মুখ গুঁজে থাকে।

Advertisement

বামপন্থী মনোভাবসম্পন্ন জেমস থাকতেন টেমস নদীর ওপারে লন্ডনের অপেক্ষাকৃত মধ্যবিত্ত এলাকায়। তাঁর বাড়ি থেকে লর্ডসের অনেক কাছে পড়ত ওভাল। সেই মাঠের কৌলীন্যের যা রেকর্ড, ইডেন তার ধারেকাছেও নেই। ওভালে অ্যাশেজের জন্ম। ওভালেই ব্র্যাডম্যানের শেষ টেস্ট ইনিংস। ওভালেই হাটনের ৩৬৪। দু’নম্বরে আসবে এমসিজি। মেলবোর্ন ক্রিকেট মাঠেই না পৃথিবীর প্রথম টেস্ট। প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ। চরিত্রে যার সঙ্গে ডনের দেশে একমাত্র পাল্লা দিতে পারে ভিক্টর ট্রাম্পারের সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড। স্টিভ ও’র বিদায়ী টেস্টের মোহগ্রস্ততা বাদ দিয়েও সিডনিতে একটা অপার্থিব ক্রিকেট শ্যাম্পেনের বোতল খোলা থাকে সব সময়। কথাই আছে, টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিন নাকি এখানে ট্রাম্পারের বিদেহী আত্মা নেমে আসে মাঠের ওপর আর তাঁর সম্মানে দুটো টিমকে রৌদ্রকরোজ্জ্বল ক্রিকেট খেলতে হয়! পার্থ কৌলীন্যে এমন গরীয়ান না হয়েও তার বা বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালের আছে পুরুষকারের ইতিহাস। আজও পার্থ-এর জনপ্রিয় লোকগাথা হল লিলি-থমসন একসঙ্গে খেলার সময় ওয়াকা মাঠের নিকটবর্তী হাসপাতালে বিদেশি ব্যাটসম্যানদের জন্য বেড বুক করা থাকত!

উপমহাদেশে যদি ফেরা যায়, সেখানেও ইডেন অগ্রবর্তী কোথায়? ব্রেবোর্ন আছে। বম্বে জিমখানা আছে যেখানে এ দেশে প্রথম টেস্ট হয়েছিল। অবশ্যই ওয়াংখেড়ে আছে যা ভারতকে ধোনির হাত ধরে বিশ্বকাপ জিততে যেমন দেখেছে, তেমনই দেখেছে ট্র্যাজেডির খসে যাওয়া দুটো করুণতম পাতাও। গাওস্কর এবং তেন্ডুলকরের বিদায়ী আন্তর্জাতিক ইনিংস। নিছক ক্রিকেট কীর্তিতে আবার ভারতে সবার ওপরে আছে চিপক। অধুনা চিদম্বরম স্টেডিয়াম। গাওস্কর প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দশ হাজার আর কপিলের সর্বোচ্চ উইকেটপ্রাপ্তির বিশ্বরেকর্ড যতই মোতেরা প্রত্যক্ষ করুক, চেন্নাইয়ের রেকর্ড-বাহারের সঙ্গে তার কোনও তুলনাই হয় না। সহবাগের তিনশো, গাওস্কর ডাবল। তেন্ডুলকরের ওয়ার্ন-নিধন। স্টিভ ও’র টিমকে সিরিজ হারানো। ফুলঝুরির মতো চিপকে জ্বলেছে ভারতীয় ক্রিকেটের এক একটা শিখা।

ইডেন তার পাশে নেহাতই গোবেচারা যে ভাল ছাত্র। লেটারও পেয়েছে। কিন্তু ক্রিকেট কীর্তিতে মোটেও পঁচানব্বই প্লাস কৃতীদের মধ্যে পড়ে না!

অথচ ১৫০ বছরে ঐতিহাসিক ভাবে সম্মানিত হওয়ার অসংখ্য সুযোগ ইডেন পেয়েছে। সীমিত সুযোগ সে নিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশই নেয়নি। আশি বছর আগে এখানে হওয়া প্রথম টেস্ট যেমন। সদ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে বডিলাইন সিরিজ জিতে ফেরা ডগলাস জার্ডিন বনাম ভারতীয় ক্রিকেটের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিকে নায়ডু। তত দিনে আবার লালা অমরনাথ নামক প্রতিভারও আবির্ভাব ঘটে গিয়েছে। বম্বে জিমখানায় হওয়া প্রথম টেস্ট তো অমরনাথ চিরস্মরণীয় করে দিয়ে গিয়েছেন তাঁর আবির্ভাব সেঞ্চুরিতে। ইডেনে এ বার কত কিছু ঘটার সুযোগ। কে বলতে পারে জার্ডিন এ বার অমরনাথের উপর বডিলাইন প্রয়োগ করেন কি না?

কে বলতে পারে ইডেনের উদ্বোধনী জমিয়ে দেবেন না স্বয়ং নায়ডু মহানাটকীয় কোনও ইনিংসে? হ্যাঁ, যাঃ, বাস্তবে কিছুই ঘটল না। ম্যাচটা ক্রিকেট ইতিহাসে থেকে গেল নিছকই নিয়মরক্ষার আরও একটা টেস্ট হিসেবে। আর যেন উদ্ভাবন থেকেই একটা ধারা গোড়াপত্তন করে দিয়ে গেল এ মাঠে যা আশা করা হবে, তা পাওয়া যাবে না। বরং এ মাঠে রুটিন হওয়ার উপায়ই থাকবে না। যা ঘটবেটটবে সব প্রচলিত ছকের বাইরে!

ইডেনের নায়কেরা তাই প্রকৃতিগতভাবে অর্জুন বা ভীম নন। এ মাঠের অদৃশ্য বিধানে সেটা হওয়ার অন্তত ধারাবাহিক কোনও উপায় নেই। অর্জুনের মতো ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী যোদ্ধাকে রাজ্যপাট জয় থেকে রোখা মুশকিল! অর্জুনরা ইডেনের বাইশ গজে গিয়ে দ্রুতই আবিষ্কার করে এটা কর্ণের পৃথিবী। এই স্বয়ম্বরসভায় পাঞ্চালকন্যাকে কর্ণই জিতে নেবে। অর্জুনকে সেটা দ্বিতীয় সারিতে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে।

ইডেন তাই মার্চেন্ট নয়, মুস্তাক আলির।

ওরেল নয়, কানহাইয়ের।

সুভাষ গুপ্ত নয়, সেলিম দুরানির।

ইয়ান বথাম নয়, টোনি গ্রেগের।

ম্যাকগ্রা নয়, শোয়েবের।

ওয়ার্ন নয়, হরভজনের।

গাওস্কর নয়, বিশ্বনাথের।

সৌরভ নয়, দ্রাবিড়ের।

সচিন নয়, লক্ষ্মণের।

বেদী নয়, চন্দ্রশেখরের!

ইডেন যেন বাড়াবাড়ি একটা ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পতাকা উড়িয়েছে। বাকি ক্রিকেটপৃথিবীতে যা হয়ে যাক— আমার অন্য ব্যাকরণ! অন্য ম্যানুয়াল। অন্য এক্সামিনেশন বোর্ড। তাই অন্য সার্টিফিকেট।

ইডেনের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হল শহরের উত্তপ্ত অংশগ্রহণ আর গ্যালারির মাদকতা ম্যাচটাকে এমন ভুবনে নিয়ে যায় যেখানে স্কোরবোর্ড নিছকই একটা সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ম্যাচের রাজমুকুট চলে যায় পুরো অভিজ্ঞতার ওপর। স্মৃতিতে চিরন্তন থাকে সেই অভিজ্ঞতাগুলোই। নিছক রান আর উইকেট নয়। রেকর্ডও নয়।

কারও মনে পড়ে এ মাঠে তাঁর বিদায়ী ম্যাচে আসিফ ইকবাল কত করেছিলেন? সবার সংবর্ধনাটা মনে আছে রান আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার পর রানটা নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার পুনরাবির্ভাবের ম্যাচটাতে কে কত করেছিল, কারও খেয়াল নেই। অ্যালান ডোনাল্ডরা আজও শুধু মনে করতে পারেন গ্যালারি আর গোটা শহরের স্বাগত মনোভাবের কথা! বাংলার রঞ্জি ট্রফি জয় এই মাঠেই। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীর মতে আরও বরণীয় বাংলা-হায়দরাবাদ ম্যাচে উন্মত্তপ্রায় গিলক্রিস্ট বনাম পঙ্কজ রায়! সোবার্সের সেঞ্চুরির চেয়েও বেশি জ্বলন্ত তো স্টেডিয়ামের ছাদ থেকে কনরাড হান্ট-য়ের জাতীয় পতাকা উদ্ধার করে ছোটা। মার্চেন্টের স্কোয়ার কাটের চেয়েও মাঠের বাইরের পঁয়ষট্টি বছরের পুরনো পোস্টার মনে রাখা— নো মুস্তাক, নো টেস্ট।

ইডেন মানে আসলে বরাবরই বাইশ গজকে কেন্দ্র করে এমন সব ঘটনা যে ব্যাট-বল-স্ট্যাম্প থেকে আচমকা সে ভোঁ ভোঁ দৌড় দেয় কালো কালো সব মাথায়। জনতার মনোভাব আর মাঠের স্কোর মিলিয়ে এমন ককটেল তৈরি হয়ে যায় যা বিশ্বের আর কোনও মাঠে ঘটে না। লর্ডস বা এমসিজি ক্রিকেটের অনেক কাছাকাছি। ইডেন হল ক্রিকেট অন্তর্যামীর সবচেয়ে কাছাকাছি! যেখানে স্কোর নয়, তাকে ছাপিয়ে ক্রিকেটকেন্দ্রিক ঘটনা বড় হয়ে যায়! আর সেটা থেকেও যায় সেই জন্ম থেকে জন্মান্তরে।

ছিয়াত্তরে টোনি গ্রেগের টিমকে যেমন শেষ দিনে নিতে হবে ভারতের মাত্র দু’টো উইকেট। হয় ভারত ইনিংসে হারবে। নইলে দশ উইকেটে। এই দিনে খেলা দেখতে যে সত্তর হাজার মানুষ এসেছিল আজও ব্রিটিশ ক্রিকেট প্রেস বারংবার সশ্রদ্ধে লেখে। আজও কোটলায় দশ উইকেট নেওয়া কুম্বলে বলেন ইডেনে বিপক্ষের দু’-তিনটে উইকেট ফেলে দিলে বাকি কাজটা আমাদের হয়ে জনতাই করে দেয়। সিডনির এককালে ছিল সেই সিডনি হিল। যেটা ক্রিকেট প্রোলেতারিয়েতের গ্যালারি। লর্ডসের আছে অভিজাত এমসিসি সদস্য গ্যালারি। জামাইকার আছে খাঁচাওয়ালা স্ট্যান্ড। কিন্তু ইডেনের শব্দব্রক্ষ্মাণ্ড বিশ্বের কোথাও নেই। অন্যগুলো ক্রিকেট মাঠ হিসেবে উচ্চাঙ্গের। ইডেন উচ্চাঙ্গের অ্যাম্ফিথিয়েটার হিসেবে।

গাওস্কর সেই চুরাশিতে কিছুতেই ভারতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করছেন না। তাঁকে ড্রেসিং রুমে চিরকুট পাঠালেন সর্বোচ্চ ক্রিকেট কর্তা। পুলিশ বলছে আর দেরি করলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। বিরক্তিতে আউটফিল্ডে দাঁড়িয়ে কাগজ পড়তে শুরু করে দিলেন ফিল এডমন্ডস্‌।

ক্রিকেট ইতিহাসে এ রকম একটাই ঘটনা রয়েছে—অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং বহু বছর আগে এমনই তাচ্ছিল্যে কাগজ পড়েছিলেন আউটফিল্ডে। ইংল্যান্ড এ মাঠেই কাপ ফাইনাল হারল।

সে তো হারতেই হবে যে কোনও একটা দলকে। কিন্তু ইডেন বলে কথা। গ্যাটিংয়ের রিভার্স সুইপ শটটা হঠাত্‌ই বাড়তি দৃষ্টিকোণ আমদানি করে দিল। ইডেন মানে কখনও বোঝার উপায় নেই কোন কালিতে রং হবে। ক্যানভাস হঠাত্‌ করে যে কোনও তুলির দিকে ঢলে পড়তে পারে। অনিশ্চয়তাই যে ইডেনের সবচেয়ে ফেভারিট পেন। অন্য অনেক ক্রিকেট মাঠ স্রেফ ক্রিকেটীয় লোকগাথার জন্য প্রসিদ্ধি পেয়ে গিয়েছে। যেমন ব্রিস্টল। যেমন হেডিংলে। যেমন টনটন। জবাবে ইডেনের আছে গণগাথা

ইডেনের রোমান্স


টাইগার তখন ক্যাপ্টেন।


গ্যালারিতে শর্মিলা ঠাকুর।

ইডেনের বিশেষত্বই হল দু’টো উইকেট তৈরি থাকে এখানে আর দু’টো মিলিয়ে প্লেয়ারের অ্যাগ্রিগেট হিসেব হয়। একটা পিচ প্রস্তুতকারকের তৈরি। আর একটা ইডেন বায়ুমণ্ডলের তৈরি। অনেক প্রবাদপুরুষের স্কিল প্রথমটা যদি বা সামলাতে পেরেছে, দ্বিতীয়টার সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এ জন্যই হয়তো ইডেনের স্কোরে উইম্বলডনের দু’নম্বর কোর্টের মতো ঐতিহ্য মেনে অঘটন ঘটে যায়। যেমন বাছাইরাও তাঁদের র্যাঙ্কিং নিয়ে নিরাপদ নন।

কী কী সব চিত্রকল্পই বা তৈরি হয়েছে হাইকোর্ট, গঙ্গা আর প্যাগোডা অধ্যুষিত উদ্যানের ক্রিকেট ঘিরে। সৌরভকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ওয়ান ডে খেলতে নেমেছে দ্রাবিড়ের ভারত। তা এমন বিরুদ্ধতার সম্মুখীন হয়েছে যে সচিন আউট হতে চাঁদনি চকে কি না বাজি পুড়েছে। আবার বছর দু’য়েক আগে ৫ মে-র কলকাতা উত্তাল করে দেওয়া আইপিএল দুপুরে যখন সৌরভ খেলতে নেমেছেন তাঁর শহরের বিরুদ্ধে, বাঙালি প্রত্যক্ষ করেছে অধুনিক বঙ্গভঙ্গ। ইডেন সহ গোটা বাংলা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছে কাকে আগে বসাবে— ভালবাসার মানুষ, না নিজের শহর?

এ সবেরই মধ্যে ক্রিকেট দেবতার মিনি আশীর্বাদের মতো ইডেন দেখেছে ভারতের মাঠে তর্কাতীত ভাবে সর্বকালের সেরা টেস্ট জয়। আর ভিভিএস লক্ষ্মণ নামক এক সূতপুত্রের খেলা। কোনও ভারতীয়ের সর্বকালীন চ্যালেঞ্জিং ইনিংস। মতি নন্দী বেঁচে থাকলে নির্ঘাত আজ সকালেই ফোন করতেন। কী হে, বিশ্বনাথের ১৩৯ ভুলে গেলে? ম্যাকগ্রা তো আর সেরা ফর্মের অ্যান্ডি রবার্টস ছিল না! ওই ম্যাচটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেল অমর সেই ক্রিকেট কাহিনি। রাত্রি দু’টোয় হুইস্কির শেষ পেগটা ঢালতে ঢালতে সঙ্গী সাংবাদিককে ইশারা করলেন পটৌডি, প্যাডটা টানো। তারপর দ্রুত লিখলেন চন্দ্রা, কাল ওকে দিয়ে শুরু করাচ্ছি।

পরের দিন ল য়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ চন্দ্রাহতই হল! আর বাড়িয়ে দিয়ে গেল ক্রিকেট উদ্যানের রূপকথার ঝুলি!

যে ঝুলিতে শুধু প্লেয়ারদের স্ট্যাটিস্টিক্স নেই গোটা শহরের ক্রিকেট গর্জন বারবার ধরা পড়েছে। বহু বছর আগে এবিপি ক্রিকেট ক্রোড়পত্রের জন্য ইমরান খানকে ইন্টারভিউ করার সময় শেষ দিকে ইমরান খানকে একটা প্রশ্ন করি।

কলকাতা শহর সম্পর্কে আপনার কী ধারণা?

সামনে বসা ইমরানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাকিস্তানি ভাষ্যকার ইফতিকার আহমেদ। ইফতি সত্তর দশকের একজন উচ্চশিক্ষিত পাক ইন্টেলেকচুয়ালও। ইমরান তাঁকে বললেন, “ইফতি বলো কলকাতার সঙ্গে কী শব্দটা যায়? অনেক বনেদি শহরের যা থাকে! কী বলে যেন। আরে মনে আসছে, মুখে আসছে না।”

ইফতি বললেন, “হামড্রাম?”

“না, হামড্রাম নয়।”

ইফতি বললেন, “তা হলে বাজ হবে। বাজ।”

“না, বাজ নয়।”

“ক্যারেকটার, ক্যারেকটার,” এতক্ষণে ইমরান নিজেই মনে করতে পেরেছেন, কলকাতা শহরটার একটা অদ্ভুত ক্যারেকটার আছে। আর এ জন্যই আলাদা।

ইডেন নিয়ে লিখতে বসে ইমরানের কথাটা মনে পড়ে গেল। ইডেনের একটা ক্যারেকটার আছে। শহরের আত্মা আর মাঠের উইকেট সেখানে দেড়শ বছর ধরেই অভিন্ন। বিশ্বের আর কোনও ক্রিকেটমাঠে এই রোমান্স নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement