এই প্রথম কোনও তারকার সঙ্গে দেখা করার জন্য একটা অদ্ভুত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। মধ্যরাতে মাত্র ৭ মিনিট!
৭ কি আমির খানের লাকি নম্বর?
৫ মিনিট। ১০ মিনিট। ১৫ মিনিট হতে পারে। কিন্তু ৭ মিনিট? এমনটা হয় নাকি? তা-ও আবার মধ্যরাতে?
আমির কি তা হলে স্টপওয়াচ নিয়ে বসবেন? থার্টি সেকেন্ডস্ টু গো। টোয়েন্টি সেকেন্ডস্ টু গো, বলে কেউ পিছন থেকে তাড়া দেবেন নাকি?
কৌতূহল রয়ে গেল সেই মধ্যরাত পর্যন্ত। যশরাজ স্টুডিয়োতে আমিরের ‘আনরিলিজড্ ছবি’র টেলিভিশন প্রিমিয়ার। আমির খান, কিরণ রাও, জাভেদ আখতার, কর্ণ জোহর-সহ ‘লগান’ টিমের সবাই এক স্টেজে বসে। সবাই বসে বললে ভুল হবে। ছবির তিন মহারথী পরিচালক আশুতোষ গোয়াড়িকর, অভিনেত্রী গ্রেসি সিংহ আর আমিরের প্রাক্তন স্ত্রী, তথা ‘লগান’য়ের এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসর রিনা দত্ত অনুপস্থিত। আশুতোষ ছিলেন নো নেটওয়ার্ক জোনে। তাই ওঁকে ফোনে ধরা যায়নি বলে আমিরের দাবি। তবে বারবার পর্দায় তিনি উপস্থিত। রিনার কথা উঠে আসে নানা প্রসঙ্গে। অল্পবয়সি আমির-রীনা ও তাঁদের দুই সন্তানের ছবি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আমির নিজেও বারবার বলেন রিনাকে খুব মিস করছেন। পাশে চুপ করে বসে কিরণ। মাঝে মধ্যে মাথা নাড়ছেন। একটু লজ্জাও পাচ্ছেন। আমির অবশ্য সাফ জানিয়ে দেন যে ‘লগান’য়ের সেটে কিন্তু তাঁর আর কিরণের প্রেম হয়নি। আর তা শুনে দর্শক, মিডিয়াও বেশ উত্তেজিত। হা করে সেই ডকুমেন্টারি ছবির লাইভ টেলিকাস্ট দেখলেন।
আর তার পর শুরু হল সেই ৭ মিনিটের কথোপকথন।
কিন্তু না, ৭ মিনিটে আটকে থাকলেন না। টানা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত চলেছে। হয়তো আমির পুরনো ছবি দেখে ঘড়ির দিকে তাকাতে ভুলে গিয়েছিলেন। তখন যা যা জিজ্ঞেস করা হয়েছে, উত্তর দিয়ে গিয়েছেন।
তবে এটাও কি হতে পারে না যে, এই ৭ মিনিট বলার মধ্যে একটা ‘আমিরিয়ানা’ রয়েছে। সবার থেকে আলাদা একটা মনোভাব। আলাদা একটা স্ট্র্যাটেজি। এমন কিছু করা যাতে কৌতূহলটা শেষ পর্যন্ত থেকে যায়। হতেই পারে। আবার না-ও হতে পারে।
কিন্তু হওয়াটা যে অসম্ভব তা-ও বলা যায় না। কারণ যে তারকা একটা মুক্তি পেয়ে যাওয়া ডকুমেন্টারিকে এ ভাবে প্রমোট করতে পারেন, যা দেখে টার্কি থেকে টালা পর্যন্ত সবাই রবিবার সন্ধেবেলা ৪ ঘণ্টা টানা &পিকচার্স চ্যানেলের সামনে বসে থাকে, তাঁর কাছে অভিনব কিছু বলাটা ব্যতিক্রম নয়। সেটাই স্বাভাবিক।
আমির, আপনি যে মার্কেটিং জিনিয়াস এটা সকলেরই জানা। গত একমাস যাবত্ শুধু শুনেছি যে আপনার ‘আনরিলিজড’ একটা ছবি দেখানো হবে। কিন্তু কাউকে নামটা বলা হয়নি। কীসের এত গোপনীয়তা?
ক্রিয়েটিভ মানুষ হিসেবে আলাদা আলাদা ক্রিয়েটিভ জিনিস করার চেষ্টা করি। সেগুলো নিয়ে কাজ করি, যেগুলোতে আমার ভরসা আছে। কিন্তু অনেক সময় সেগুলো এমন জিনিস হয়, যা সাধারণ মানুষ দেখেন না। এই ধরুন হঠাত্ যদি আমি কাউকে বলি কন্যাভ্রূণহত্যা নিয়ে সোশ্যালি রেলেভ্যান্ট শো বানাচ্ছি, দেখবেন? কেউ দেখবেন না। কিন্তু যদি আমি বলি ‘সত্যমেব জয়তে’ বানাচ্ছি, কিন্তু তার টপিক কী বলব না, তা হলে লোকে দেখতে আসবে। কারও ভাল লাগলে সে গোটাটাই দেখবে। কারও ভাল না লাগলে সেটা দেখবে না। এক সেকেন্ডে টিভি বন্ধ করে দিয়ে চলে যাবে। আমি মনে করি এমন ভাবে ইনভিটেশন দেব যাতে দর্শক প্রোগ্রামের সঙ্গে নিজেদের জড়াতে চাইবে। ইনভিটেশনের ঢংটাই অন্য রকম হওয়া দরকার। ডকুমেন্টারি ফিল্ম দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে দেখার কোনও কালচার নেই। আমি চাই এই কালচার তৈরি হোক। এই প্রথম গোটা ভারতবর্ষ টিভিতে একটা ডকুমেন্টারি এ ভাবে দেখল। এটা না হয় ‘লগান’য়ের গল্প। কাল অন্য কিছু হতে পারে। এটা আমার তরফ থেকে দর্শককে ডকুমেন্টারি ফিল্মে ইন্ট্রোডিউস করার একটা উপায়।
টেকনিক্যালি সত্যজিত্ ভাটকলের ‘চলে চলো’ আনরিলিজড্ ছবি নয়। এটা ‘অশ্বত্থামা’ হত, ‘ইতি গজ’ হয়ে গেল না?
(হেসে) সেটা তো স্ক্রিনিংয়ের আগেই বলেছিলাম। এত ছোট ভাবে রিলিজ হয়েছিল যে, খুব কম লোক দেখেছে ছবিটা। মাত্র দুটো হলে রিলিজ হয়েছিল। আমাদের দেশে ১২০ কোটি লোক। আমি চাইব সবাই এটা দেখুক।
ভবিষ্যতে আরও ডকুমেন্টারি করার প্ল্যান আছে? কোনও লংটার্ম প্ল্যান?
না, আই হ্যাভ ওনলি শর্টটার্ম প্ল্যানস।
প্রায় চোদ্দো বছর পর ‘লগান’ দেখলেন। কেমন লাগল?
দারুণ। লাইভ রেসপন্ড করলাম দর্শকের সঙ্গে। এটা আগে হয়নি। ছবিও দেখেছি দর্শকের সঙ্গে। ট্যুইটের উত্তর দিচ্ছি। দারুণ অভিজ্ঞতা।
ছবি প্রদর্শনের এ রকম আইডিয়া কী করে মাথায় এল?
আমার প্রত্যেকটা ছবির মেকিংটা শুট করা হয়। কিন্তু সব ক’টাকে এই ভাবে ডকুমেন্টারিতে রূপান্তর করা হয় না। জানেন, এই ডকুটা অনেকটাই শু্যট করেছে ভুজ-এর এক ভিডিয়োগ্রাফার, যে ওখানে বিয়ের ভিডিয়ো তুলত।
‘চলে চলো’ দেখে মনে হয়েছিল এমন কিছু করি, যাতে লোকে সেটা দেখে উত্সাহী হয়। চ্যানেলকে ডকুটা দেখানোর পর ওদের ভাল লাগে। তার পর আমি বলি এটার মার্কেটিং পার্ট নিয়ে আমি ভাবব। কথা বলতে গিয়ে এই ইন্ট্যার্যাকটিভ সেশনের কথা মাথায় আসে।
মুক্তি পায়নি এমন কোনও ছবি আছে আপনার?
শুধু ‘টাইম মেশিন’।
এখন শেষ করবেন সেটা?
না, ২৫ বছর হয়ে গিয়েছে। ওটা আমার জীবনের একমাত্র অসম্পূর্ণ ছবি। সব তো আর আমাদের হাতে থাকে না! কোনও ছবি না করার জন্য আমার কোনও আক্ষেপ নেই। অন্য কোনও তারকা সেই ছবিটি করে হিট হলেও আমার তা নিয়ে অনুশোচনা থাকে না। কারণ আমি জানি ওটা যেহেতু প্রথম থেকেই আমার করার ইচ্ছে ছিল না, সেটা করলে কাজটা ভাল হত না।
ফিল্ম-এর মেকিং নিয়ে অনেক ছবি হয়েছে। এই ট্রেন্ডটা সম্পর্কে আপনার কী মত?
এই ধরনের অনেক ছবি হয়েছে ঠিকই। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো হয়ে দাঁড়ায় প্রোমোশনাল মেটিরিয়াল। সবাই বলে তাতে শ্যুটিং করে খুব মজা হয়েছিল। কিন্তু ‘চলে চলো’ সেই ধরনের ছবি নয়। কোনও পিঠ চাপড়ানো নেই। ব্যক্তিগত ভাবে জিজ্ঞেস করলে বলব আমার ‘মুঘল-এ-আজম’-এর মেকিং দেখতে ইচ্ছে করে। কে আসিফ ওয়েন্ট থ্রু আ লট অব টেনশন। ১০-১১ বছর লেগেছিল ছবিটা তৈরি করতে। আজ ওয়াকি টকি ব্যবহার করে কাজ করি আমরা। তখন ও সব কোথায়! আর ভেবে দেখুন একবার, তখন হাতি ছিল। যুদ্ধ দেখানো হয়েছে। ঝান্ডা ব্যবহার করে সিগন্যাল দেওয়া হত। ভাবুন তো, কী ভাবে হাতিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত যাতে তারা প্রয়োজনে
ঘুরে দাঁড়ায়, এগিয়ে যায়, পিছিয়ে আসে। সবটাই শুট্যিংয়ের প্রয়োজনে! ওই ছবিটার মেকিং দেখতে খুব ইচ্ছে করে আমার।
এটার মেকিং দেখে মনে হচ্ছিল যে, আপনারা একটা অসম্ভব সম্ভব করেছেন। সে রকম কাজ কি আবার করার কথা ভাবছেন?
‘লগান’য়ের পরেও তা করেছি। চিত্রনাট্য আমি ইন্সটিংক্ট দিয়ে চুজ করি। ‘থ্রি ইডিয়টস্’ আমার কাছে অভিনেতা হিসেবে যথেষ্ট ডিম্যান্ডিং ছিল। আমার বয়সে এসে এক কলেজপড়ুয়ার চরিত্র। ‘ধুম থ্রি’তেও স্কেলটা বড় ছিল। ‘লগান’য়ে অবশ্য আমি অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযোজনাও করেছি। এর পরে যদি আবার আমার ওই মাপের কোনও চিত্রনাট্য পছন্দ হয়, আমি নিশ্চয়ই করব। ‘লগান’য়ের সময় বলা হয়েছিল কোরো না। প্রথমে আমিও পিছিয়ে গিয়েছিলাম। আশুর স্ক্রিপ্ট শুনে প্রথমে হতবাক হয়েছিলাম। ছবিটা কত মিথ ভেঙেছে। বিষয়টা গ্রামকেন্দ্রিক। হিরো ধুতি পরে। এ ছবিতে ক্রিকেট একটা বড় পার্ট। তার উপর পিরিয়ড ফিল্ম। শুধু তাই নয়, অমিতাভ বচ্চন সূত্রধরের কাজ করলে সেগুলো চলেনি। এমনকী জাভেদ আখতার (যিনি গানগুলো লিখেছিলেন) আমাকে কত বুঝিয়েছিলেন যাতে আমি ছবিটা না করি। তবু সাহস করে মিথগুলো ভেঙেছিলাম।
২০০১-এ ‘লগান’ তৈরি হয়। এত দিন পরেও ‘টিম লগান’-এর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন?
তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক দিওয়ালিতে ‘টিম লগান’-এর সবাই আমার বাড়িতে মিট করে। আজ এটা দেখে খুব নস্টালজিক লাগছে। শু্যটিংয়ের সময় আশুর স্লিপ-ডিস্ক হয়। ও শুয়ে শুয়ে শুট করত। এ কে হাঙ্গল স্ট্রেচারে করে এসেও শট দিয়েছেন। কত স্মৃতি!
ক্রিকেট নিয়ে ছবি বানালেন। আইপিএল নিয়ে এত শোরগোল চারিদিকে। কোনও দিন আইপিএল টিম কেনার কথা ভেবেছেন?
না, ক্রিকেট ভালবাসি। সচিন, রবি শাস্ত্রীকে ‘লগান’ মুক্তির আগে ছবিটা দেখিয়েছিলাম। কিন্তু আইপিএল টিম কেনা একদম অন্য ব্যাপার। সিনেমা-প্যাশন থেকে দূরে সরে যেতে হবে।
তা আমি চাই না।
যদি কিনতেন তবে কী নাম দিতেন?
এখন কেনার কথা ভাবতে পারছি না। তবে কিনলে, নাম দিতাম লগান।
‘লগান’-এর শ্যুটিংয়ের সময় তো আপনার কিরণের সঙ্গে প্রথম দেখা...
প্রথম দেখা। হ্যাঁ। খুব বন্ধুত্ব ছিল না আমাদের মধ্যে তখন। কিরণ তো আশুর (আশুতোষ গোয়াড়িকর) অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর ছিল। শুটিংয়ের সময় ভুজ-এর একটা বাড়িকে আমরা হোটেলের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিলাম। তখন এত মোবাইলের চল ছিল না। বোর্ড থেকে ফোন করে একে অপরের সঙ্গে কথা বলত। আর যিনি এই লাইনগুলো ট্রান্সফার করতেন, উনি কারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন, সেটা রিনাকে বলে দিতেন। তাই খুব গোপনীয়তার ব্যাপার ছিল না।
রিনা আমাকে এসে কে কার সঙ্গে বেশি কথা বলছে, সেই গল্পগুলো করত। মনে হয় কিরণ কার সঙ্গে কথা বলত, রিনা সেগুলোও আমাকে বলে দিত (হাসি)। শুটিংয়ের আগে আমার পোশাক তৈরি। কিন্তু কানের দুল যেমনটা দরকার, তেমন পাচ্ছিলাম না। হঠাত্ একদিন দেখি কিরণের কানের দুলগুলো। বেশ মোটা মোটা কানের দুল। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো ধার দেবে? পরতে পারি? ও দিল। সেগুলোই পরেছিলাম।
কর্ণ জোহর আপনার শো হোস্ট করলেন। উনি কি আপনার পরের ছবিটা প্রযোজনা করছেন? বা কিরণের পরের ছবি?
নো ওয়ে। কিরণের ছবি আমি থাকতে অন্য কেউ কেন প্রযোজনা করবে? আমিই করব।
আপনি নিজেই কি ডকুমেন্টারি প্রেজেন্ট করার জন্য কর্ণ জোহরের নাম সাজেস্ট করেছিলেন?
হ্যাঁ, আমিই বলেছিলাম। কর্ণ দারুণ ভাল হোস্ট।
আপনি কি কর্ণের ‘শুদ্ধি’ করছেন?
না ভাই, আমাকে তো ‘শুদ্ধি’ অফারই করা হয়নি। আমার একটাই ছবি সামনে। সেটা ‘পিকে’।
রোজ লেখালিখি হচ্ছে যে আপনি ওয়েট লস করেছেন। টেনিস খেলছেন...
‘ধুম থ্রি’ খুব সাফল্য পেয়েছিল। তার পর অনেক খাওয়াদাওয়া হয়েছে। এক্সারসাইজ করিনি। এখন ডায়েট করছি। ওয়ার্কআউটও। টেনিসও খেলছি। তিন মাস পর দেখবেন, অনেকটা ওজন ঝরিয়েছি।
‘সত্যমেব জয়তে’ বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। এর পর কী?
দেখুন, ওই অনুষ্ঠানে রাজনীতি ছুঁইনি। ব্যক্তিগত জীবনেও পলিটিক্স থেকে দূরে থেকেছি। আমি ইস্যুভিত্তিক কাজ করি। যেগুলো মানুষকে ছুঁয়ে যায়।
মানেকা গাঁধী তাঁর নতুন বিভাগের অফিশিয়ালদের বলেছেন ‘সত্যমেব জয়তে’-তে ধর্ষণের উপর যে এপিসোডটা করেছিলেন, সেটা সবাইকে দেখতে...
আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি উইথ দ্যাট। এটার পর মানেকাজির সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে।
দিলীপকুমারের বই নিয়ে অনেক কৌতূহল রয়েছে। ওঁর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
আমি মনে করি ইউসুফ সাব আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ওয়ান অব দ্য বেস্ট অ্যাক্টর্স। উনি এত বড় স্টার ছিলেন যে, এক সময় ওঁর সঙ্গে কথা বলতে বেশ ভয়ই করত। তবে ‘লগান’ প্রসঙ্গে ওঁর সঙ্গে কথাও বলেছি। ‘গঙ্গা যমুনা’ বলে একটা ছবিতে উনি ভোজপুরী বলেছিলেন। আমি ইউসুফ সাবকে বলেছিলাম যে ‘লগান’-য়ে আমাকে অওধি ভাষায় কথা বলতে হবে।
কোনও দিন আত্মজীবনী লিখবেন ভেবেছেন?
হ্যাঁ, মনে হয় লিখলে মন্দ হত না।
দর্শক বানাও। ভাল তথ্যচিত্র দেখাও
“আমার বন্ধু আমির বলেছিল ‘লগান’য়ের একটা পার্ট হতে। রাজি হয়ে যাই প্রোডাকশনে সাহায্য করতে। ছবির মেকিংটা তুলে ‘চলে চলো’ তৈরি করি। যদিও ‘সত্যমেব জয়তে’ করার পর, আমি অন্য একটা চ্যানেলের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথাবার্তা বলি। তথ্যচিত্র প্রদর্শন নিয়ে যদিও কোনও কথা হয়নি। মনে হয়, আমির প্রথম স্টেপটা নিয়েছে। ব্রডকাস্টারদের উচিত উত্সাহ নিয়ে ভাল ডকুমেন্টারি দেখানো।”
সত্যজিত্ ভাটকল
‘চলে চলো’র পরিচালক
“আমার মনে হয় না ‘চলে চলো’ দেখানোর পর তথ্যচিত্রর প্রতি মানুষের সাঙ্ঘাতিক উত্সাহ বাড়বে। বা ব্রডকাস্টাররা ডকু দেখানোর জন্য এগিয়ে আসবেন। কমার্শিয়াল ব্রডকাস্টাররা অন্য ভাবে প্রোগ্রামিং করেন। যেগুলো চলে, সেগুলোই তাঁরা দেখান। কিন্তু আমরা যখন ডকুমেন্টারি বানাই, আমাদের দর্শনটাই অন্য রকম থাকে। তারকা নিয়ে তো ডকুমেন্টারি করি না। তা ছাড়া ‘চলে চলো’-কে আমি সে অর্থে ডকুমেন্টারিও বলব না। ওটা তো মেকিং অব আ ফিল্ম।
অডিয়েন্স যা চাইছে, সেটাই ব্রডকাস্টাররা দেখান। আমাদের দেশে অডিয়েন্স তৈরি করার কথা ভাবা হয় না।”
কিউ
‘লে পচা’, ‘সুসান’, ‘লভ ইন ইন্ডিয়া’ ডকুমেন্টারির পরিচালক
“ যখন আমি একটা চ্যানেলকে আমার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ডকুমেন্টারি ‘সেলুলয়েড ম্যান’ দেখানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমাকে বলা হয়েছিল ছবিটা ছোট করতে। আর একজন তারকাকে দিয়ে সেটাকে এনডর্স করাতে! আমি কোনওটাতেই রাজি হইনি। আমাদের দেশে ভাবা হয় এনিথিং হুইচ ইজ নন-ফিকশন, ইজ ডকুমেন্টারি। সেটা তো ঠিক নয়। আমার মনে হয় আমিরের এই প্রোগ্রামের পর হয়তো অন্য তারকাদের নিয়েও ডকুমেন্টারি দেখানোর চল শুরু হবে। বা হয়তো বলিউড ছবির মেকিংটা দেখানোর একটা ট্রেন্ড। কিন্তু সামাজিক বিষয় নিয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে তথ্যচিত্র দেখানোর রেওয়াজ তৈরি হতে দেরি আছে। দারুণ খুশি হব যদি অন্য ধরনের ডকুমেন্টারি দেখানোর চ্যালেঞ্জটা ব্রডকাস্টাররা নেন। ডকুমেন্টারি কেমন ভাবে তৈরি হবে, সেই সিদ্ধান্তটা মার্কেটের ওপর নির্ভর করলে, তথ্যচিত্র বানানোর স্বাধীনতাটাই তো খর্ব হয়ে যায়।”
শিবেন্দ্র সিংহ দুঙ্গারপুর
‘সেলুলয়েড ম্যান’-এর পরিচালক
“আমি এই ডকুমেন্টারিটা দেখিনি। তবে একটা বিজ্ঞাপন দেখেছি। আমার ‘গুলাবি গ্যাং’ ডকুমেন্টারি নিয়ে একটা ‘বাজ’ রয়েছে বলে হয়তো সেটা নিয়ে চ্যানেলে গেলে তাঁরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেবেন। তবে সেটাও হবে কি না, জানি না। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে ডকুমেন্টারি বানালেও সেটা মার্কেট করার জন্য বলিউডের উপর নির্ভরশীলতার কথা বলা হয়। কত ভাল ভাল ডকুমেন্টারি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সবাই চায় বলিউডের ছাপ্পা। আমিরের এই উদ্যোগে যদি অন্য ধরনের ডকুমেন্টারি দেখার কালচার তৈরি হয়, তা হলে আমি খুশিই হব।”
নিষ্ঠা জৈন
‘গুলাবি গ্যাং’ ডকুমেন্টারির পরিচালক