ভি পি সিংহকে আপনি ক্ষমা করে দিয়েছেন?
আমার ক্ষমা করে দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপার নয়। শুধু ভি পি সিংহ একা নন, অনেকেই চেষ্টা করছিল ওই সময় আমার মুখে কালি মাখাতে। আমাকে যত পারা যায় বেইজ্জত করতে। প্রতিদিন কাগজে আমার সম্পর্কে যা তা বের হত।
ভিপি যেমন বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে পরের দিনই আমাকে জেলে পুরবেন। তা উনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঠিক পরেই আমি অভিনন্দন জানিয়ে ওঁকে একটা চিঠি লিখি। তাতে বলি, আপনি বলেছিলেন ক্ষমতায় এলে আমাকে পরের দিন জেলে পুরবেন। তিন মাস আপনাকে আমি দিলাম। ক্ষমতা থাকে তো আমায় জেলে পুরে দেখান। হায়, (ব্যঙ্গাত্মক দীর্ঘশ্বাস ফেলে) সেই চিঠির আর কোনও জবাব পেলাম না।
ছবি: সাত্যকি ঘোষ।
ঐতিহাসিক ভাবে আপনি আক্রান্ত হলেও প্রতিআক্রমণে যাননি। কেন যাননি সেটাও এই ইন্টারভিউয়ের শুরুতে বোঝাচ্ছিলেন। তা হলে ভিপির বেলায় পাল্টা আক্রমণে এত সুর চড়িয়েছিলেন কেন?
কারণ অভিযোগের প্রকৃতিটা মারাত্মক ক্ষতিকারক ছিল। অত্যন্ত ড্যামেজিং। আমাকে এটার উত্তর দিতেই হত।
আজও কি মনে হয় টার্গেট হিসেবে আপনি খুব ভঙ্গুর? যখন তখন আক্রমণ করা যায়।
ইয়েস আই অ্যাম। যে কোনও সময় দুমদাম কেউ না কেউ আমাকে আক্রমণ করে দিচ্ছে। বাট আমি কী করতে পারি? এটাই জীবন। জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।
আপনি এত মানুষের জীবনের আইডল। জানতে ইচ্ছে করে আপনার জীবনের হিরো কারা?
আমার হিরো আমার বাবা-মা। মনে আছে বাবা মারা যাওয়ার কিছু দিন আগেও ওঁকে আমি বলেছিলাম বাবুজি, আর পারা যাচ্ছে না। লাইফে কী অসম্ভব স্ট্রাগল। উনি শোনামাত্র অসুস্থ শরীরেও বললেন, জীবন যত ক্ষণ আছে তত ক্ষণ তো সংগ্রাম থাকবেই। ওঁর কবিতার একটা লাইন আছে:
জিন্দেগি অগর আপনা মন কা হো জায়ে তো আচ্ছা
না হো জায়ে তো জাদা আচ্ছা
আপনার বাবা শোনা যায় মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মগডালে চড়ার জন্য আপনাকে একটা মোক্ষম পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, কোনও বাড়িতে ঢোকার আপ্রাণ উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়েও ঢুকতে গিয়ে যদি দ্যাখো ফ্রন্ট গেটে তালা, তা হলে পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়বে। আপনি তো তাই করেছেন! রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তখনকার শাসক সুপারস্টারের।
ধুর্, আমি কোনও রাজত্বটাজত্ব ছিনিয়ে নিইনি। আর বাবা আমাকে কথাটা বলেছিলেন অনেক আগে। যখন সদ্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি সেই সময়। যখন সাফল্যের মুখ না দেখার যন্ত্রণা ক্রমাগত আঁচড়াচ্ছে। কিছুতেই দরজা খোলা যাচ্ছে না।
লতা মঙ্গেশকর আনন্দplus-এ সদ্য গত মাসের ইন্টারভিউতে বলেছেন, ‘ডেসপাইট অ্যাচিভিং সো মাচ সাকসেস অমিতাভজি নেভার গট ক্যারিড অ্যাওয়ে।’ আপনার কী মনে হয়?
ক্যারিড অ্যাওয়ে মানে কী?
মানে! ইংরেজিতে একটা কাছাকাছি এক্সপ্রেশন আছে রেস্টিং অন ইয়োর লরেলস্।
রেস্টিং অন ইয়োর লরেলস্ মানে কী? আমি তো টার্মটাই জানি না।
পরিষ্কার বাংলায় বলছি। মাথা ঘুরে যাওয়া। লতাজির মতে, আপনার মাথা কখনওই ঘোরেনি।
(বাংলাতেই) মাথাউথা ঘুরে যাওয়া বলতে কী! আমি তো জানিই না। মাথা ঘুরবেটাই বা কেন? তুমি ভাই একটা কাজ করতে চেয়েছ, সেটায় হয়তো উতরেছ। ভাল কথা। তো তাতে নাচানাচি করার কী আছে? এ বার বসে পরের লক্ষ্যটা স্থির করে ফেলো।
আপনার বরাবরের তাই নীতি? কিন্তু এত কষ্ট করে পাওয়া সাফল্যের পর লোকে একটু আহ্লাদে আটখানা হবে না?
কেন হবে? সাকসেস তো খুব ক্ষণস্থায়ী একটা জিনিস। এই আছে। এই যে কোনও সময় অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
আপনার ব্লগে একটা উদ্ধৃতির উল্লেখ আছে: ‘ইফ ইউ ওয়ান্ট টু ফ্লাই উইথ দ্য ইগলস্/ স্টপ সুইমিং উইথ দ্য ডাকস্’। এটা কি আপনার টিপস যে, ভাই-বোনেরা যদি ঈগলের সঙ্গে উড়তে চাও হাঁসেদের সঙ্গে জলকেলি বন্ধ করো...
জীবনে সফল হতে চাইলে দ্রুতই আপনাকে বুঝে নিতে হবে কোন জিনিসটা আপনি করতে পারেন। কোন কোন জিনিস আপনার করা উচিত নয়। আর লক্ষ্য সব সময় উঁচুতে রাখতে হবে।
আপনার এই যে অসাধারণ গলার স্বর, সেটা ভারতবন্দিত। অনেকেরই কৌতূহল, আপনি কার কার গলার স্বরে মুগ্ধ?
আরে সে তো অনেকেই আছে। গলার স্বরটর অত কিছু ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট কণ্ঠস্বর আর তার মাদকতা আছে।
আপনার ডিপ ব্যারিটোন আর কার আছে?
আছে আছে (আলোচনাটাই যেন লজ্জিত করছে)। শাহরুখ, সলমন ওদের প্রত্যেকের গলা আলাদা আলাদা। আর তার প্রচুর আবেদন।
অমিতাভ বচ্চন কাল্টের আর এক বৈশিষ্ট্য—হেয়ার স্টাইল। আসমুদ্রহিমাচল সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে বহু বছর আপনার মতো করে চুল কাটাত। আমরা তো টিনএজে ওই রকম কানের উপর চুলঢাকা স্টাইল অন্ধ নকল করতাম।
(হাসি) এটা হয়েই থাকে। প্রত্যেক জেনারেশন তার সময়কার হিরোদের হেয়ার স্টাইলে আকৃষ্ট হয়।
আপনার বেলায় ব্যাপারটা আলাদা ছিল। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী মোটামুটি সবাই শুধু ওই স্টাইলে চুল কাটাত না, আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরাও দ্রুত কান ঢেকে ফেললেন। এটা অভূতপূর্ব যে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজেশ খন্না, শশী কপূরও একই স্টাইল অনুকরণ করলেন।
ইট হ্যাপেনস, এগুলো সময়ের সঙ্গে হয়ে থাকে। বললাম তো শাহরুখ, আমির, সলমন ওদের হেয়ারস্টাইলগুলোও খুব জনপ্রিয়। এগুলো এক একটা ফেজ যায়। যখন যার সময় (খুব অপ্রস্তুত)। ইট হ্যাপেনস।
শুনেছি হেয়ারস্টাইলিস্ট হাকিম আপনাকে নতুন স্টাইলটা ধরিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, হাকিম ছিল তাজের হেয়ারড্রেসার। আমি ওর কাছে নিয়মিত চুল কাটতে যেতাম। একদিন আমরা বসে নাড়াচাড়া করছিলাম কী এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। তখনই এই স্টাইলটা তৈরি। হাকিম মারা যাওয়ার আগে অবধি আমাদের সম্পর্ক অটুট ছিল।
ছবি: সাত্যকি ঘোষ।
আপনার জীবনে জয়াজির অবদান নিয়ে কিছু বলবেন?
জয়া আমার জীবনে একটা বিরাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তা হল, বাড়িটাকে তৈরি করা। যাকে বলে ‘হোম’। আমি এমনিতে বিয়ের পর মেয়েদের নতুন দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারটা সম্পর্কে খুব সশ্রদ্ধ। একটা অন্য বাড়ি ছেড়ে তাদের চলে আসতে হয় আর একটা বাড়িতে। এত দিনকার চেনা পরিবেশ বদলে যায়। পরিস্থিতি বদলে যায়। পদবি বদলে যায়। এতগুলো বদলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কি চাট্টিখানি কথা নাকি? জয়া শুধু এগুলো সবই করেনি, একটা গৃহকোণও আমাদের জন্য তৈরি করেছে। তাই ওর অবদান অপরিসীম।
প্লাস অমিতাভ বচ্চন নামক বটগাছ-কে ২৪x৭x৩৬৫ ম্যানেজ করা।
সেটা খুব একটা কঠিন কিছু নয়। আমরা যে প্রোফেশনে আছি, তাতে সবাই কমবেশি পাবলিক ফিগার। আমরা যেহেতু এক পেশায় সেটা একটা প্লাস পয়েন্ট। তা ছাড়া জয়া যখন কাজ করছিল তখন ও আমার চেয়ে পাবলিক ফিগার হিসেবে বড় ছিল!
যুবরাজ-মনীষারা বারবার বলেন মৃত্যুর কয়েক সেন্টিমিটারের কাছে পৌঁছে যাওয়ার উপলব্ধি তাঁদের জীবনবোধটাই বদলে দিয়েছে। আপনিও তো ‘কুলি’র সেটে দুর্ঘটনার পর মৃত্যু থেকে কয়েক সেন্টিমিটার দূরেই ছিলেন। অনুভুতিটা কি বদলে দিয়েছে আপনার জীবনবোধও?
আমি এই উত্তরটা ওদের মতো ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে পারিনি কোনও দিন। আমার বারেবারেই যেটা মনে হয়, আমার বেলা ভাগ্যের প্রসন্নতার হাতটা বিরাট ছিল। মেডিক্যাল প্রোফেশনালদের অবশ্যই প্রচুর কৃতিত্ব ছিল। আর ছিল দেশজুড়ে আমার ভক্তদের আকুল প্রার্থনা। আমি এ সবের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ। আমি হসপিটাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে বাড়ি আসার দিনটা সেকেন্ড জন্মদিন হিসেবে ট্রিট করি।
২ অগস্ট?
ইয়েস সেকেন্ড অগস্ট।
কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম উত্সবে তো আপনি এই নিয়ে পরপর তৃতীয়বার আসছেন। আর ঠিক পরের দিন ১১ নভেম্বর কলকাতা শহরে সুজিত সরকারের ছবিতে আপনার শ্যুটিং শুরু।
দ্যটস্ রাইট। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এ বারও আমি থাকছি।
গত দু’বছরের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আপনার বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবাই শুনেছে। স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গিয়েছে উচ্ছ্বসিত। আবার নন্দনের দীনহীন সাংস্কৃতিক কর্মীও। প্রচুর হোমওয়ার্ক করেছিলেন না বক্তৃতা তৈরির আগে? প্লিজ আপনার ট্রেডমার্ক উত্তরটা দেবেন না, ইট হ্যাপেনস্।
হা হা হা হা। আমি শুধু ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ঐশ্বর্যের মধ্যে বাংলার পূর্বসূরিদের অবদান খোঁজার চেষ্টা করেছি। আর কেউ যদি খুঁটিয়ে দেখে সে দেখবে বাংলা ও বাঙালিদের কী অসামান্য কন্ট্রিবিউশন। তার অসাধারণ ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোষাগার ভর্তিতে বাংলার ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। আমি শুধু ভূমিকাটুকু খোঁজার চেষ্টা করেছি মাত্র। আর সেটা দুরন্ত কিছু নয়। বরং সেটাই তো স্বাভাবিক। সত্যি বলতে কী, এই প্রজন্মের বাঙালি সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধ্যানধারণা নেই। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন প্রত্যেকটা বাঙালি বাড়িতে সংস্কৃতি আর কৃষ্টির একটা অবিরত ধারা বইত। রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখানো। ছবি আঁকার সঙ্গে অভ্যস্ত করানো। নাচ প্র্যাকটিস করানো। বিভিন্ন ভাষা শেখানো।
নতুন পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করানো। মিডল ক্লাস মরাঠি ফ্যামিলিতেও এটা হতে দেখেছি। দক্ষিণ ভারতে হয়। বাচ্চাবয়স থেকে নানা রকম ইন্সট্রুমেন্ট শেখানো হয়। এগুলো সবই হয় যখন কোনও জাতির একটা ইস্পাত কঠিন মেরুদণ্ড থাকে। বাঙালির যা আছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সংস্কৃতির শুদ্ধতায় খুব বিশ্বাসী। আমার বাবা লিখেছিলেন, কোনও মানুষেরই তার সংস্কার থেকে খুব দূরে চলে যাওয়া উচিত নয়।
কলকাতা শহরে আপনি সেই ষাট-সত্তরের দশকে চাকরি করতেন। শহরটায় এলে নস্ট্যালজিক লাগে না?
অসম্ভব নস্ট্যালজিক লাগে। চোখের সামনে বছরগুলো চলে গেল যখন এই শহরের সর্বত্র আমি ঘুরে বেড়াতাম। মনেই হয় না বেশি দিন আগেকার কথা। আমি তো সুজিতকে অলরেডি বলেই রেখেছি কয়েকটা রাত্তিরে আমাকে খোঁজার চেষ্টা কোরো না। আমি স্রেফ হারিয়ে যাব।
দেখবেন আবার। ইট হ্যাপেনস্ বলে আবার একা বেড়িয়ে পড়বেন না। তুলকালাম বেধে যাবে।
আরে না না (হাসি) আমি যাব রাতের অন্ধকারে চুপচাপ। বাট ক্যালকাটা হ্যাজ চেঞ্জড সো মাচ ওভার দ্য ইয়ার্স। জানি না সেই জায়গাগুলো কতটা বদলে গিয়েছে।
এমনিতেও শুনি রাত্তিরে আপনি ঘুমোন নাকি মাত্র তিন-চার ঘণ্টা।
না না ভালই ঘুমাই।
এই যে আপনি প্রতিদিন সকাল আটটায় উঠে কাছাকাছি হোটেলের জিমে চলে যান।
তার আগে ঘুমিয়ে নিই ভাল রকম।
(এই জায়গায় সঙ্গী ফোটোগ্রাফার সাত্যকি ঘোষ আর থাকতে না পেরে বলে ফেলল কী করে আপনি ভাল ঘুমোন? আমি তো নিয়মিত আপনার ব্লগ ফলো করি। কোনও কোনও দিন রাত তিনটেতে আপনি ব্লগ পোস্ট করেন)
(অমিতাভ এ বার খুব লজ্জিত হয়ে পড়েন) আমার আসলে ফ্যানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়। ওদের আমি বলি ‘ইএফ’। এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি। সারা পৃথিবী জুড়ে এরা রয়েছে। আমার সঙ্গে এদের সবার খুব নিবিড় যোগাযোগ। কোনও দিন বিচ্ছিন্ন হলেই ওরা জিজ্ঞেস করে কী হল। দেশে বিদেশে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। অথচ ওদের নিজেদের মধ্যে কী অদ্ভুত যোগাযোগ। কাল রাতে ব্লগ লিখে পোস্ট বাটনটা প্রেস করা হয়নি। সকাল থেকে সবার জিজ্ঞাসা, কী হল? নিশ্চয়ই আপনি পোস্ট বাটনটা পুশ করেননি। এখন থেকেই সবাই হুঙ্কার দিচ্ছে আপনার জন্মদিনে আমরা মুম্বই এসে পড়ছি কিন্তু।
এমনি তো প্রতি রোববার আপনি ফ্যানদের সঙ্গে দেখা করেন?
হ্যাঁ, সেই বিরাশি সালের পর থেকে মুম্বই থাকলে প্রতি রোববার বাইরে আসি একটা নির্দিষ্ট সময়ে।
সেই সময়টা ক’টা বলুন তো? একদিন গিয়ে দেখতে হবে।
সন্ধে ছ’টা নাগাদ (একটু অপ্রস্তুত হাসি)।
প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেল আপনার সঙ্গে কথা বলছি। ইন্টারভিউয়ের শুরুতে বলেছিলেন নৈনিতালের বোর্ডিং স্কুল আপনাকে শিখিয়েছে শৃঙ্খলা আর সৌজন্য। জানার কৌতূহল হচ্ছে কলকাতা আপনাকে কী শিখিয়েছে?
ওহ্, কলকাতা আমার অস্তিত্বের ভীষণ জরুরি বিশাল একটা অংশ। ওটাই প্রথম শহর যেখানে গ্র্যাজুয়েশনের পর সোজা আমি নোঙর গাড়ি। কলকাতা আমাকে জীবনের প্রথম চাকরি দিয়েছে। কলকাতা আমাকে প্রথম বেতন দিয়েছে। কলকাতা আমাকে প্রথম সিগারেট খেতে শিখিয়েছে। কলকাতা আমায় প্রথম ড্রিংক করতে দেখেছে। কলকাতা আমায় প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছে। শিখিয়েছে কী ভাবে নিজের মতো করে থাকতে হয়। এগুলো সব মিলিয়ে তো একটা ইতিহাসই।
তাই?
ইয়েস (বেশ আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন)। মজার কথা হল সব কিছুই বাড়িকে জানিয়ে। আমি বাবা-মায়ের কাছ থেকে হয়তো শারীরিক ভাবে দূরে ছিলাম কিন্তু মানসিক ভাবে কখনও খুব দূরে ছিলাম না। নিয়মিত যোগাযোগ থাকত। বাবা বন্ধুর মতো ছিলেন। আমিও অভিষেকের সঙ্গে বাবার মতো মিশি না। ওকে বন্ধু হিসেবে ধ রি। মনে আছে প্রথম ড্রিঙ্ক করে বাড়িতে জানিয়েছিলাম। জীবনে প্রথম সিগারেট খেয়েও বাবাকে ফোনে জানাই। উনি শুধু বলেছিলেন, কী ব্র্যান্ড খাচ্ছ? বললাম চারমিনার। উনি তখন বললেন, খেতেই যদি হয় বেস্ট ব্র্যান্ডের সিগারেট খাও। চারমিনার কেন?
বাবার কথা শুনে ব্র্যান্ড চেঞ্জ করলেন?
না না, পয়সা কোথায় ছিল দামি ব্র্যান্ড খাওয়ার! সেই চারমিনারেই থাকলাম!