তিনটি ফুড সিরিজের প্রধান তিন নারী চরিত্র। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
বিরিয়ানির গন্ধে যদি পুরনো সম্পর্ক ফিরে যায়?
ডাব চিংড়ি যদি হারিয়ে যাওয়া মায়ের হাতের গন্ধ আচমকা এনে হাজির করে?
পাটিসাপ্টা আর ধোসা যদি বন্ধু হয়?
ভাবছেন তো, রেসিপিটা কী? কোথায় পাওয়া যায়?
বাড়িতে বসেই অনলাইনে এ ছবির ডেলিভারি হচ্ছে। কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
জি ফাইভের এই রসনা-ছবি দেখতে দেখতে মনে হয়, প্রেম সুখের হয় রান্নার গুণে।
এক নতুন রেসিপি, যা দেখালেন পরিচালক দেবারতি গুপ্ত তাঁর ‘ফিল্টার কফি লিকার চা’ ছবিতে।
‘ফিল্টার কফি লিকার চা’ ছবিতে ঊষা উত্থুপ এবং প্রিয়ঙ্কা সরকার।
মান-অপমান রঙিন ইডলি বা পাটিসাপ্টায় মিলেমিশে কেমন করে ফিউশন প্রেমের জন্ম দেয়? দেবারতি তাঁর ছবিতে সেই কথাই বলতে চেয়েছেন। তাঁর এই গল্প বলার পথে সঙ্গী হয়েছেন প্রিয়ঙ্কা সরকার। চনমনে মেজাজি ভাবুক এক ফিল্মমেকার। যে রোজগারের জন্য চ্যানেলে রান্নার শো করতে বাধ্য হয়। ইচ্ছে যদিও তার ফিল্মমেকার হওয়ার।
রান্নার স্বাদ আর গন্ধের সন্ধানে তার মশলায় টক যোগ করে তামিল ছেলে নিশান কেপি নানাইয়াহ। এ ছবির নায়ক। রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবে তাঁকে বেশ মানিয়েছে। তাঁর সহজ অভিনয় বাংলা ছবিতে আরও এক নতুন নায়ককে যোগ করল। প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে বেশ জমে ওঠে তাঁদের কেমিস্ট্রি। প্রিয়ঙ্কাও প্রাণবন্ত, খামখেয়ালি, ভাবুক কখনও প্রেমে পড়ে অস্থির এক চরিত্র! প্রত্যেকটা আবেগেই তাঁর সহজ অভিনয়। চমকে দিয়েছেন ঊষা উত্থুপ। ছবির নায়ক ‘সুব্বু’-র আম্মা হয়ে এক জন তামিল মহিলার চরিত্রে তিনি যথাযথ। রূপসা গুহও প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। এ ছবির মজার দৃশ্য ধরে রাখেন তিনি।
খুব চেনা গল্পকে রাগে-অনুরাগে রোজ দিনের ঘটনা দিয়ে বলেছেন দেবারতি। যেমন, আমাদের জীবনে ফিল্টার কফি আর লিকার চা। রোজের সঙ্গী। আরামের আনন্দ।
তবে ছবিতে আর একটু সংলাপ হলে ভাল হত! বিশেষ করে নায়কের চলে যাওয়া আর নায়িকার ক্রমশ তার প্রেম খুঁজে পাওয়ার অংশে।
চা আর কফির সকাল রাত থেকে একটু ইতিহাসে ফেরার পালা।
প্রেমকে গন্ধের মৌতাতে মজিয়ে দেখা। একটু দারচিনি। কয়েকটা গোলমরিচ... সুগন্ধী চাল আর মাংসের নিটোল মজলিসে ধীরে ধীরে সম্পর্ক কেমন করে পোক্ত হয়? সেই জায়গা ছবিতে এনেছেন অদিতি রায় আর নীল মিত্র। ‘দাওয়াতে বিরিয়ানি’। গায়ে লেগে থাকা চাল মাংস আর ভাতের মতোই এক প্রেম ধর্মকে ছাড়িয়ে, লেগে আছে এই ছবির শরীরে। এই প্রেমের জন্য খোয়া গিয়েছে বন্ধুতার বিশ্বাস। আত্মীয়-পরিজন। আর হারিয়ে গিয়েছে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের হেঁশেলের বিরিয়ানির রেসিপির খাতা! ভাল লাগে সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়কে অতিথি শিল্পী হিসেবে।
‘দাওয়াতে বিরিয়ানি’ ছবিতে সৌরসেনী মৈত্র ।
গল্পে চাইলেও সুহাসিনী মুলে তাঁর স্বামী চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর জন্য ওয়াজেদ আলি শাহ ঘরানার বিরিয়ানির স্বাদ আর আনতে পারেন না! পারবেই বা কেমন করে? এই বিরিয়ানি তৈরি হতে হতে গড়ে উঠেছিল অনেক মিঠা সুতোর সম্পর্ক। আজ সেই সুতো ছিঁড়ে খান খান। তাই বিরিয়ানিও আর দমে বসতে চায় না। সেই বিরিয়ানির খোঁজে লখনউ পৌঁছে যায় সুহাসিনী আর চিরঞ্জিতের নাতনি সৌরসেনী মৈত্র। বিরিয়ানি? নাকি হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক? কী পেলেন তিনি? ছবি বলবে সে কথা। সুহাসিনী আর চিরঞ্জিতের যৌবনের প্রেমকে সৌরসেনীর চোখ দিয়েই বার বার ফিরিয়ে আনার জায়গাটা যদি ছবিতে কম থাকত, তবে বিরিয়ানির গন্ধ আরও ছড়িয়ে যেত বলে মনে হয়।
বাংলা ছবিতে আরও কাজ করুন সৌরসেনী। তাঁর স্বাভাবিক ঝরঝরে অভিনয় মনকাড়া। ঊর্দু শায়েরির নেশা আছে অনুরাধা মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়ে। বাংলা ছবিতে বেশ আকর্ষণীয় সুহাসিনী আর চিরঞ্জিতের জুটি। সঙ্গে দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত পরিচালনা এই ছবির নেশা একটু একটু করে বাড়িয়ে তুলেছে। ‘ধীরে ধীরে প্যার হোতা হ্যায়’ গান ছবি শেষের পরেও কানে বাজতে থাকে। সম্পর্কের খোঁজে প্রেম ছুঁয়ে থাকা অদিতির এই দাওয়াত এক কথায় লা জবাব।
সম্পূর্ণ ভিন্ন রাস্তায় হেঁটেছেন পরিচালক সুদীপ দাস। যাঁরা আমাদের সৃষ্টি করলেন তাঁরাই আজ সবচেয়ে বিপন্ন। বয়স্ক মানুষের অধিকাংশের জায়গা আজ বৃদ্ধাশ্রম। সময়ের এই ক্ষতকে নিয়ে সুদীপ সম্পূর্ণ এক নতুন আঙ্গিকে গল্প বললেন ‘ডাব চিংড়ি’-কে নিয়ে। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিৎ গুহ, সুমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে সন্ধ্যা রায়ের অভিনয় এ ছবির সম্পদ। ভিন্ন চরিত্রে সাহেব ভট্টাচার্য মানানসই। প্রাণবন্ত ইশা সাহাকে বেশ লাগে। তাঁর অভিনয় মেলাতে মেলাতে চলে ডাবের জল আর চিংড়িকে। তবে ছবি দেখতে দেখতে মনে হয় অনেক চরিত্রের কথা কম সময়ে বলতে গিয়ে গল্পের গভীরতা খানিক বাঁধনহীন হয়েছে।
‘ডাব চিংড়ি’ ছবির একটি দৃশ্য সন্ধ্যা রায় এবং ইশা সাহা ।
বাস্তব জীবনের শূন্যতাকে বয়সকালেও মানুষ নিজের আত্মবিশ্বাসে কেমন করে আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারে তার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সুদীপের এই ছবি।
ওয়েব দুনিয়ার ছবির পরিসর ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। জি ফাইভ প্রিমিয়াম কাজ করছে বাংলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। ওয়েব প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে এই ছবি। এক ঝাঁক নতুন মুখ এই সিরিজের সম্পদ।
ধন্যবাদ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে যিনি এই ধারার ছবি প্রযোজনা করলেন ওয়েব প্ল্যাটফর্মে।
ছোট চিত্রনাট্যে মানুষের মন ঘিরে থাকা স্মৃতির রান্না বা রোজের লিকার চায়ে ভিজে যাওয়া ফিরে আসা আকাশ মুক্তির নানা গল্প জি ফাইভের প্ল্যাটফর্মে বিনোদন হয়ে উঠছে। এই তিন ছবি সেই কথাই বলে যায়।
আরও পড়ুন:মধ্যরাতে পার্টিতে একসঙ্গে, ভিকি কৌশলকে ডেট করছেন ক্যাটরিনা?
আরও পড়ুন:দীপাবলি উদযাপন করে কট্টরদের রোষের মুখে শাহরুখ, পাশে দাঁড়ালেন শাবানা