একা এবং কয়েকজন

মানুষের একা হয়ে যাওয়ার কাহিনি। যিশু অবশ্য একা নন। সঙ্গে কমলেশ্বর।আঠারো বছর পর এ বছরটা তাঁর। শুধু মাত্র জি সারেগামাপার অ্যাঙ্কর হিসেবেই যে তিনি বাজি মাত করেছেন তা নয়, সামনে আছে আরও নানা চমক। এ বার ঈদে মুক্তি পাচ্ছে দেব, অঙ্কুশের সঙ্গে রাজা চন্দের ছবি (নাম এখনও ঠিক হয়নি)। আসছে ‘হেমন্ত’। পুজোয় ‘ব্যোমকেশ’। ‘জুলফিকর’। পুজোর পরে ‘হেডলাইন’। কাজ শুরু হচ্ছে অঞ্জন দত্তের ‘বংস এগেন’য়ের। তা হলে সময়টা তো আপনারই?

Advertisement

লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০০:৩৬
Share:

যিশু সেনগুপ্ত ও কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

আঠারো বছর পর এ বছরটা তাঁর।

Advertisement

শুধু মাত্র জি সারেগামাপার অ্যাঙ্কর হিসেবেই যে তিনি বাজি মাত করেছেন তা নয়, সামনে আছে আরও নানা চমক।

এ বার ঈদে মুক্তি পাচ্ছে দেব, অঙ্কুশের সঙ্গে রাজা চন্দের ছবি (নাম এখনও ঠিক হয়নি)। আসছে ‘হেমন্ত’। পুজোয় ‘ব্যোমকেশ’। ‘জুলফিকর’। পুজোর পরে ‘হেডলাইন’। কাজ শুরু হচ্ছে অঞ্জন দত্তের ‘বংস এগেন’য়ের। তা হলে সময়টা তো আপনারই? ‘‘নিজের মুখে কী আর বলি?,’’ তৃপ্তির হাসি হাসলেন যিশু।

Advertisement

পার্টি বা কোনও প্রিমিয়ারে তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায়নি। অথচ প্রায় দু’বছর আগে সম্পর্ক নিয়ে চিত্রনাট্য লিখতে বসে তাঁর নায়কের চরিত্রে মনে মনে যিশুকেই ভেবেছিলেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। কমলেশ্বর বলতেই মনে হয় প্রসেনজিৎ, দেব। কিন্তু এই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে গেল যিশু সেনগুপ্ত-র নাম।

কী ভাবে হল এই যোগাযোগ?

কমলেশ্বর বললেন, ‘‘যিশুকে দেখতে এত ভাল! ছবিতে নিজেকে বার বার ভাঙছে। সেই সাহসটা ওর মধ্যে আছে। একজন জাত অভিনেতা। সেই কারণেই ওকে ভেবেছিলাম।’’

চিত্রনাট্য লেখা হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু কোনও প্রযোজক পাচ্ছিলেন না কমলেশ্বর।
‘‘সম্পর্ক নিয়ে আজকের বাংলা ছবি যে ভাবে গল্প বলে এ ছবি তা নয়। ছবিতে কোনও নির্দিষ্ট স্পেস বা টাইমও নেই। স্টাইলটা আলাদা হওয়ায় অনেক প্রযোজকই ছবিটা প্রযোজনা করতে চাননি,’’ বলছিলেন পরিচালক।

এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলেন ফিরদৌসল হাসান। কিন্তু কেন?

‘‘গল্পটা দারুণ। বাংলা সিনেমায় এ বার অন্য ধরনের টেকনিক ব্যবহার হবে। যা মানুষকে নিশ্চয়ই হলমুখী করবে। ভাল ছবির জন্য আমি রিস্ক নিতে প্রস্তুত,’’ উত্তর দিলেন হাসান।

চিত্রাঙ্গদা’র পর সম্পর্ক নিয়ে এত সেনসেটিভ স্ক্রিপ্ট তাঁর কাছে আর আসেনি। ‘‘কমলেশ্বরদা আমায় একটা বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল, ভয় আর চিন্তা দুটোই হচ্ছে’’ বলছিলেন যিশু।

প্রেম-বন্ধুত্ব-সম্পর্ক ফুরিয়ে আসছে সব...প্রেমের জন্য একা, সম্পর্কের জন্য একা, কাজের জন্য একা...

বউয়ের দেওয়া হেলথ ব্যান্ডের লেটেস্ট মডেল নাড়াচাড়া করতে করতে যিশু সেনগুপ্ত বুঝিয়ে দিলেন আজকাল এমনটাই মনে হয় তাঁর।

উল্টোদিকেই চায়ের কাপ হাতে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ‘মুখোমুখি’র স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাচ্ছিলেন যিশুকে। থেকে থেকেই চমকে উঠছেন যিশু। বললেন, ‘‘এই স্ক্রিপ্টটা শুনতে শুনতে মনে হল আমি যেন নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেখছি। এ তো আমারই কথা!’’

কিন্তু ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের পরিচালক হঠাৎ সম্পর্ক নিয়ে ছবি করছেন? বাংলা ছবিতে এখন সম্পর্কই তা হলে হট কেক?

‘‘মানুষ তো নিজেকে খুঁজতেও এখন ছবি দেখে। এই ছবিটায় আমি নিজেকে দেখতে পাব। যিশু নিজেকে খুঁজে পাবে, দর্শক নিজেকে চিনতে পারবে—এটাই এই ছবির মজা,’’ হাসলেন কমলেশ্বর।

‘চাঁদের পাহাড় টু’ নিয়ে ব্যস্ত তিনি। প্রথমে মুম্বই শ্যুট। তার পরেই সোজা আমাজনে শ্যুট করতে চলে যাবে তাঁর টিম। ফিরে এসে সেপ্টেম্বরে শুরু হবে, অস্কার ওয়াইল্ডের ‘দ্য পিকচার অব দ্য ডোরিয়ান গ্রে’র আদলে তৈরি ফ্রেন্ড কমিউনিকেশনের ‘মুখোমুখি’।

ছবির নায়ক শৌনকের কাছে আজকের শহর নিতান্তই ‘খেলনানগর’। সে এই পুতুল-ঘর ভেঙে বেরোতে চায়। কিন্তু নিরাপদ জীবনের পিছুটান তাঁকে নিজের কাছে নিজেকে বন্দি করে রাখে।

‘‘এই গল্প এক সন্ধ্যায় মানুষের একা আয়নার সামনে দাঁড়ানোর গল্প,’’ বলছিলেন কমলেশ্বর। নিজের সঙ্গে নিজের দ্বন্দ্ব থেকেই তিনি তৈরি করেছেন ‘মুখোমুখি’র নানা মুখ।

যিশু ছাড়াও ‘মুখোমুখি’র আর এক মুখ পায়েল সরকার। পরিচালক বাঙালি দাম্পত্যের কথা ভাবতে গিয়ে পায়েলকেই ভেবেছিলেন। বললেন, ‘‘ওর মধ্যে বেশ একটা বাঙালি বউয়ের ভাব আছে। আর যিশু-পায়েলের কেমিস্ট্রিটাও জমবে।’’
অন্য দিকে পায়েলও উচ্ছ্বসিত—‘‘একজন অভিনেত্রী সারা জীবন অপেক্ষা করে থাকে এই রকম একটা চরিত্রের জন্য। কমলদার ছবি এই সুযোগটা নিয়ে এলো।’’

ভালবাসার জন্য সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া এক জীবন।
এই জীবনের গল্পটা যে বাড়িতে ঘটবে সেখানে কোনও দেওয়াল নেই! তাই দর্শকের ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হতে পারে এ বাড়ি তাঁদেরও। ‘‘কমলদা তো এখন পুরোটা বলবে না। এটা কিন্তু থ্রিলার,’’ কথাটা বলেই পাশ থেকে রহস্যের হাসি হাসলেন যিশু।

গল্পটাই ছবির নায়ক। ‘মুখোমুখি’তে এক লেখিকার চরিত্রে অভিনয় করছেন গার্গী রায় চৌধুরী। হঠাৎ এই ছবিতে গার্গী রায় চৌধুরী কেন? ‘‘লেখিকার যে ডিগনিফায়েড চরিত্র এ ছবিতে আসে তার সঙ্গে গার্গীর লুকটা খুব মানায়,’’ বলছিলেন পরিচালক।

তিনি কি তবে অরুন্ধতী রায়? নাকি তসলিমা নাসরিন? প্রশ্নটা করতেই গার্গী বললেন, ‘‘দুটোর কোনওটাই নয়। হয়তো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। এই ছবি সিনেমা নয়, প্রসেনিয়াম থিয়েটারের মতো। লম্বা লম্বা দৃশ্য...সেখান থেকেই চরিত্র বদলাচ্ছে। তবে ছবিটা একেবারেই আঁতেল নয়,’’ জানাতে ভুললেন না গার্গী।

দেবজ্যোতি মিশ্র রয়েছেন সঙ্গীতের দায়িত্বে। আর আছেন রজতাভ দত্ত। গল্পে তিনিও লেখকের ভূমিকায়। চিত্রনাট্য শুনে বুঝেছেন যে-প্যাটার্নে ছবিটা তৈরি হবে সেটা বাংলা ছবিতে সম্পূর্ণ নতুন।

‘ব্যোমকেশ’ হয়ে অপরাধীকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ‘রাজকাহিনী’তে ভাড়াটে খুনি সেজেছেন। ‘চিত্রাঙ্গদা’য় বন্ধুকে ফেলে চলে গিয়েছেন। আর ‘মুখোমুখি’তে তিনি নিজেই নিজের ক্রিটিক। ‘‘ছবিটা দেখার পর মানুষ নিজেকে প্রশ্ন করতে শিখবে,’’ বলছিলেন যিশু।

আলোতে নয়, অন্ধকারেই বুঝি মানুষ নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement