শ্যুটিং নিয়ে চলতে থাকা টানাপড়েনে সাময়িক দাঁড়ি।
স্বস্তি ফিরল টলিউডে। প্রযোজক-ফেডারেশন-আর্টিস্ট ফোরামের মধ্যে শ্যুটিং নিয়ে চলতে থাকা টানাপড়েনে সাময়িক দাঁড়ি। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পরিচালক ও রাজ্যের সংস্কৃতি সেলের সম্পাদক রাজ চক্রবর্তী, পরিচালক-প্রযোজক-অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় নিয়মিত শ্যুটিং শুরু টেলিপাড়ায়। প্রযোজক-পরিচালক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, যে ২০টি ধারাবাহিকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ফেডারেশন সে গুলোর পাশাপাশি বাকি সমস্ত ধারাবাহিকের নিয়মিত শ্যুটিং শুরু হয়েছে শুক্রবার সকাল থেকেই।
বুধবার সন্ধেয় প্রযোজক-ফোরাম-ফেডারশনের বৈঠক স্থায়ী কোনও মীমাংসা দেখাতে পারেনি। ফলে, বৃহস্পতিবারেও কাজে যোগ দেননি কলাকুশলীদের একটা বড় অংশ। রাতারাতি সেই সমস্যা মিটে গিয়ে কী করে অচলাবস্থা কাটল? পরমব্রত জানিয়েছেন, ‘‘২ সংগঠনের মতানৈক্যের কারণে লকডাউন ওঠার পরেও শ্যুটিং থমকে ছিল। কাজ বন্ধ মানেই উপার্জন বন্ধ। এতে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। সেই জায়গা থেকেই আমি, রাজ চক্রবর্তী, অরূপ বিশ্বাস সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসি। ঠিক হয়, আপাতত জীবন-জীবিকার স্বার্থে সমস্ত ক্ষোভ, অভিযোগ সরিয়ে রেখে আগের আগের মতোই কাজ করবেন সবাই।’’ পাশাপাশি পরমব্রত এও জানান, কাজ শুরু হল মানেই ম্যাজিকের মতো যাবতীয় ক্ষোভ মুছে গিয়েছে সবার মন থেকে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। এবং সংগঠনগুলির অভিযোগ একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। ফলে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আরও কয়েকটি বৈঠক হবে। ধাপে ধাপে আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে।
খুশির ছোঁয়া শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও। তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একই সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, ফেডারেশন যাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সেই অনুরোধ জানানো হয়েছিল মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি মধ্যস্থতার জন্য রাজ, পরমব্রত এবং মন্ত্রী অরূপকে বলেন। ওঁদের উপস্থিতিতে ডাকা বৈঠকে ঠিক হয় টেলিপাড়ার স্বার্থে আপাতত সব বিভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আবার আগের মতো কাজ করবেন সবাই। পাশাপাশি, কঠোর ভাবে মানা হবে যাবতীয় কোভিড নিরাপত্তার নিয়মকানুন।
ফের কাজের পরিবেশ ফিরতেই স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন পরিচালক রাজেন্দ্র প্রসাদ দাস। তাঁর পরিচালনায় ২টি ধারাবাহিক দর্শকেরা দেখছেন। ‘মিঠাই’ এবং ‘রাণী রাসমণি’। পরিচালকের দাবি, ২ দিন আগেই ‘রাণী রাসমণি’-এর শ্যুটিং শুরু হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার থেকে ফ্লোরে ফিরেছে ‘মিঠাই’। কেমন লাগছে? নিশ্চিন্ততার ছোঁয়া তাঁর গলাতেও। স্পষ্ট জানালেন, ‘‘আমিও ফেডারেশনের সদস্য। কিন্তু এই অচলাবস্থা দেখতে ভাল লাগছিল না। তাই আন্তরিক ভাবেই চেয়েছিলাম, সব যেন মিটে যায়। আমার সেটের সমস্ত কলাকুশলী, অভিনেতা, অভিনেত্রীর করোনা প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে। সবাই উৎসাহের সঙ্গে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।’’
ফোনে পাওয়া যায়নি ফেডারেশনের সভাপতি অরূপ বিশ্বাসকে। পরমব্রত-র কথার সুর আর্টিস্ট ফোরামের যুগ্ম সহ সম্পাদক দিগন্ত বাগচীর কথাতেও। তিনিও জানালেন, আপাতত শ্যুটিং শুরু হওয়াটাই সবার কাছে মুখ্য বিষয়। ২৪ তারিখ ফের সবাইকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। যাতে আগামী দিনে নতুন করে কোনও সমস্যা মাথাচাড়া না দেয়। শ্যুটিংয়ে আর যেন তার ছাপ না পড়ে।
খুশি, স্বস্তি ছড়িয়ে পড়েছে স্বস্তিকা দত্ত, সৌমিতৃষা কুণ্ডু, তথাগত মুখোপাধ্যায়, শ্রুতি দাস, উদয় প্রতাপ সিং, গৌরব রায় চৌধুরী সহ টেলিপাড়ার সমস্ত অভিনেতাদের মনেও। শ্যুটিংয়ের ফাঁকেই সবাই জানিয়েছেন, এই দিনটির প্রত্যাশাতেই তাঁরা এত দিন ছিলেন। পুরনো পরিবেশে ফিরতে পেরে যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।