কাশ্মীর নিয়ে সোচ্চার উদয়প্রতাপ সিংহ, মনীষা মণ্ডল, স্বস্তিকা দত্ত, অভিষেক বসু, হিয়া মুখোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দৃশ্যটা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না কেউই! বিয়ের মাত্র সাত দিন পার,স্বামী আততায়ীদের বন্দুকের গুলিতে উপত্যকাতেই লুটিয়ে প়ড়েছেন। হতবাক স্ত্রী হাঁটু গেড়ে মৃতদেহের পাশে! নববধূর অসহায় অবস্থা দেখে বাকিদের মতো বাকরুদ্ধ বাংলা টেলিপাড়াও।
অভিষেক বসু, হিয়া মুখোপাধ্যায়, উদয় প্রতাপ সিংহ, মনীষা মণ্ডল। এঁরা যথাক্রমে ধারাবাহিক ‘ফুলকি’, ‘গীতা এলএলবি’, ‘পরিণীতা’, ‘রাঙামতি তিরন্দাজ’-এর নায়ক-নায়িকা। এঁদের কেউ কেউ কাশ্মীর ঘুরে এসেছেন। কারও স্বপ্ন কাশ্মীর বেড়াতে যাওয়ার। মঙ্গলবার রাতে যে ভাবে রক্তাক্ত হল উপত্যকা, এর পরেও কি তাঁরা আর যাবেন সেখানে?
প্রশ্ন ছিল আনন্দবাজার ডট কমের। ‘ফুলকি’ ধারাবাহিকের নায়ক অভিষেক জানিয়েছেন, ঘটনা অবশ্যই তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। আবার ছোট থেকে কাশ্মীরকে এ ভাবেই চিনেছেন তিনি। নায়কের কথায়, “আমি তো সন্ত্রাসমুক্ত কাশ্মীর দেখলামই না কোনও দিন! যত বার কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠেছে তত বার সেখানে রক্তের দাগ। এটাই আমার চেনা কাশ্মীর। তাই শান্ত পরিবেশ ফিরে এলেও পুরনো স্মৃতি মুছে যায়নি " তার পরেও অভিষেক কাশ্মীরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ। ইচ্ছে, দেখতে যাবেন ভূস্বর্গকে।
অভিষেকের ঠিক বিপরীত কথা শোনা গেল ‘গীতা এলএলবি’র নায়িকা হিয়ার মুখে। “আমার মায়ের খুব কাশ্মীর ঘোরার শখ। বছর তিনেক আগে মাকে ঘুরিয়ে এনেছি সেখান থেকে। তখন পরিবেশ খুবই শান্ত। মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস ভালয় ভালয় ঘুরে এসেছি!” সেই কাশ্মীরের সঙ্গে মঙ্গলবারের রাতের অশান্ত কাশ্মীরের মধ্যে কতটা ফারাক? অভিনেত্রীর দাবি, আকাশ-পাতাল পার্থক্য। সেই সময় তিনি কাশ্মীরিদের আতিথেয়তা, নানা স্বাদের লোভনীয় খাবার, প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার পর মনে করেছিলেন, আবার সুযোগ পেলে আসবেন। বুধবার সাফ জানিয়ে দিলেন, “আর যাব না”। ছোট পর্দায় ‘গীতা’ বড় বড় সমস্যা মিটিয়ে দেয় যুক্তির প্যাঁচে, কব্জির জোরে। সুযোগ পেলে কাশ্মীর সমস্যাও মেটাতে পারবেন? জবাবে হিয়া বললেন, “গীতার সব দাপট ছোট পর্দাতেই সীমাবদ্ধ। এত বড় সমস্যা মেটানো তার ক্ষমতায় নেই।”
এখনও কাশ্মীর দেখা হয়নি ‘রাঙামতী তিরন্দাজ’-এর নায়িকা মনীষার। মঙ্গলবার রাতের কাশ্মীর দেখে আপাতত বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে বাতিল করেছেন তিনি। কারণ, “মা-বাবা, পরিবারকে নিয়েই তো বেড়াতে যাব। তার পর সেখানে এ রকম কিছু ঘটলে সকলকে হারাব!” তাঁর চোখে এখনও ভাসছে, আগের রাতের তাণ্ডবলীলা। শট দিতে দিতে দলের প্রত্যেকে সেই চর্চায় ব্যস্ত।
তখনও অনামিকা চক্রবর্তীর সঙ্গে বিয়ে হয়নি তাঁর। হবু বৌ আর বন্ধুরা মিলে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন উদয়প্রতাপ সিংহ। সেই শান্ত পরিবেশের কথা মনে করে খুবই মনখারাপ তাঁর। বললেন, “মেলাতে পারছি না। অত শান্ত পরিবেশ এত ভয়ঙ্কর হতে পারে?” এও প্রশ্ন রেখেছেন, নিরীহ পর্যটকেরা কী দোষ করেছিল? অকারণে প্রাণ হারালেন তাঁরা। অভিনেতার আফসোস, “এ ভাবে ধরে ধরে মেরে ফেললে তো আগামীতে কেউ আর উপত্যকায় পা রাখবেন না! পর্যটন শিল্প ফের ধসে পড়বে আগের মতো।”
স্বস্তিকা দত্ত ভেবে পাচ্ছেন না, এত সৌন্দর্য যেখানে সেখানে কী করে এত রক্তপাত হয়! তিনিও কাশ্মীরে মুগ্ধ। তিনিও যেতে চান সেখানে। বলা ভাল, যেতে চাইতেন। এখন আর চাইছেন না। স্বস্তিকার কথায়, “এখন মনে হচ্ছে, যাওয়া হয়নি ভালই হয়েছে। নয়তো এ ভাবেই হয়তো বিপদের মুখে পড়তাম।”