‘শঙ্কু হিসেবে ধৃতিমান ফার্স্ট চয়েস’

বড় পরদায় শঙ্কু। ছবির ভাবনা, গল্প নিয়ে আনন্দ প্লাসের সামনে সন্দীপ রায় শঙ্কুর ভূমিকায় দেখা যাবে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়কে। নকুড়বাবুর চরিত্রে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। আর পরিচালনায় সত্যজিৎ-পুত্র খোদ সন্দীপ রায়।

Advertisement

রূম্পা দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৩৪
Share:

সন্দীপ। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

যে অকুতোভয় আত্মভোলা বৈজ্ঞানিক, আবিষ্কারক ও খাঁটি বাঙালিটিকে নিয়ে মানুষের উন্মাদনার শেষ নেই, সে স্বয়ং প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু! এ হেন শঙ্কুকে বড় পরদায় দেখার ইচ্ছে বহু মানুষের। এত দিন পর সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বড় পরদায় আসছে স্বয়ং শঙ্কু! সঙ্গে নকুড়বাবুও। সত্যজিৎ রায়ের ‘নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো’ থেকে তৈরি হচ্ছে ছবিটি। শঙ্কু ফ্র্যাঞ্চাইজির এটি প্রথম ছবি। তাই নামটাও বদলে করা হয়েছে ‘প্রফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’। শঙ্কুর ভূমিকায় দেখা যাবে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়কে। নকুড়বাবুর চরিত্রে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। আর পরিচালনায় সত্যজিৎ-পুত্র খোদ সন্দীপ রায়।

Advertisement

Advertisement

প্র: ছবির জন্য ‘নকুড়বাবু...’র গল্পটাই বাছলেন কেন?

উ: প্রাথমিক ভাবে দুটো গল্প ভেবেছিলাম। ‘নকুড়বাবু...’ এবং ‘একশৃঙ্গ অভিযান’। ‘একশৃঙ্গ...’তে অবিনাশবাবু আছে আর অন্যটায় নকুড়বাবু। শঙ্কুর ছবি একটা সময়ের পর পুরোপুরি ইংরেজি হয়ে যাবে, সেটা মনঃপূত হচ্ছিল না। ‘একশৃঙ্গ...’র ক্লাইম্যাক্স বিদেশ ছাড়া অ্যাচিভ করা সম্ভব নয়। এতটাই জটিল। বাজেটটাও অসম্ভব বেড়ে যেত। নকুড়বাবু ব্যক্তিগত ভাবে আমার ভীষণ পছন্দের। বাবার করা ইলাস্ট্রেশনেও শুভাশিসের চেহারার মিল পেলাম। আর শঙ্কু হিসেবে ধৃতিদাই আমার ফার্স্ট চয়েস।

প্র: ধৃতিমানকে বাছার পিছনে চেহারা ছাড়া কি অন্য ভাবনা ছিল?

উ: চেহারা তো অবশ্যই। আমি চেয়েছিলাম যে লোকটা খুব ভাল ইংরেজি বলুক। শঙ্কুর হয়তো অন্য কাস্টিং করা যেত। কিন্তু ধৃতিদার ইনটেনসিটি, গঠন... সব মিলিয়ে কাস্টিং একদম ঠিকঠাক হয়েছে। এখন শুধু দাড়িটাকে ঠিকঠাক করা বাকি (হেসে)।

প্র: আর অন্যান্য চরিত্র?

উ: প্রহ্লাদ, নিউটন থাকছেই। ব্রাজিলের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে কিছু অভিনেতা নেওয়ার কথা আছে। তবে শঙ্কু-নকুড়বাবু ঠিক হয়ে যাওয়ায় অনেকটা কাজই হয়ে গিয়েছে। এর পর বাকি ভাবনাচিন্তা।

প্র: বইয়ের পাতার শঙ্কুকে পরদার ভাষায় তুলে ধরা কতটা কঠিন?

উ: গল্পটা এখনকার সময়ে নিয়ে এসেছি। পুরনো সময়টা রিক্রিয়েট করলে বাজেট ছাড়িয়ে যেত। এখন তো আশির দশকও আমাদের কাছে পিরিয়ড। যদিও শঙ্কুটা ওই ধরনের পিরিয়ড নয়। তবে সাও পাওলোর ১৯৮০-র চেহারাটা তো এখন পাব না। কাজেই এখনকার সময়ে গল্প আনার জন্য যতটুকু অদল-বদল করা উচিত, ততটুকুই করেছি। একটা গল্পকে কতটা ট্যামপার করছি, সেটা ইমপর্ট্যান্ট। আসলে কিছু গল্প তো ক্ল্যাসিকের পর্যায়ে চলে যায়। সেগুলোকে বেশি নাড়াঘাঁটা করলে মুশকিল। আর শঙ্কু প্রথম আসছে বড় পরদায়। ফলে চিত্রনাট্য লেখার সময়ে ভীষণ কেয়ারফুল থাকতে হয়েছে।


‘শঙ্কু’ ধৃতিমান, ‘নকুড়’ শুভাশিসের সঙ্গে পরিচালক

প্র: একটা সময়ে বলেছিলেন যে, শঙ্কু ইংরেজিতে বানাতে চান। এখন ডাবিংও হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কী রকম দাঁড়াচ্ছে?

উ: এখন শহর আর মফস্সলের সীমারেখাটা সে ভাবে নেই। তবে চাই যে, বেশি পরিমাণে দর্শক যেন ছবিটা দেখেন। যাঁরা ইংরেজি বুঝবেন না, তারা বাংলাটা দেখবেন। এরিয়াটা কী ভাবে ভাগ করা হবে, সেটা মোটামুটি প্রযোজকরাই দেখবেন।

প্র: এখানে ভিএফএক্স তো একটা বড় অংশ...

উ: এই বিষয়টাতেও খুব কেয়ারফুল থাকতে হয়েছে। বাচ্চাদের স্যাটিসফাই করাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীটা ছোট হয়ে গিয়েছে আর ওরা এত ভাল ভাল কিছু দেখে ফেলছে...ওই লেভেলটায় নিয়ে যাওয়াটা চ্যালেঞ্জিং। ভিএফএক্সের ক্ষেত্রে শুধু কলকাতার কথা ভাবছি না। এখানে ভাল ভাল কাজ হচ্ছে। তবু চেন্নাই ও মুম্বইতেও কাজ করা হবে।

প্র: আপনার লেখা গল্পে ছবি তো বেশ কম পাই!

উ: এখন শুধুই শঙ্কু। এটা ছাড়া অন্য কোনও ভাবনাও নেই। ওয়ান ট্র্যাক মাইন্ড হয়ে আছি সকলে।

প্র: আপনার ফেলুদার ছবিগুলো তো মোটামুটি দু’-আড়াই কোটির মধ্যেই থাকে। এ ক্ষেত্রে কি বাজেটটা বেশ বেড়ে যাচ্ছে?

উ: ‘আমাজন অভিযান’ হয়ে গিয়েছে। প্রযোজকরা সেই অনুযায়ী বাজেটটা আগে ঠিক করুন। সুবিধে এটাই, গল্পটা এখনকার। তবে যতটা স্ট্রিমলাইন করা যায়, তার চেষ্টা হবে। নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে টেকনিক্যাল লুকটা যেন ঠিকঠাক হয়।

প্র: ফেলুদা পরদায় আনতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে?

উ: সব সময়ে এটাই চেষ্টা করি, ফলোয়াররা যেন হতাশ না হন। বাবা তো ছবিগুলো এঁকে রেখে গিয়েছেন (হেসে)। মানে যতটা ম্যাচ করানো যায় আর কী! আর বাবা যেহেতু সাহিত্যিক ও ফিল্মমেকারও, সে ক্ষেত্রে তো একটা উপরি পাওনা আছেই। গল্পগুলোর চিত্রনাট্য করা খুব একটা কঠিন নয়। কিন্তু দেখতে হবে কতটা রাখব, কতটা বদলাব। সেই ব্যালান্স করাটা জরুরি।

আরও পড়ুন: আমাকে ফিরে আসতেই হবে

প্র: এই অসহিষ্ণু সময়ে শিল্পীদের ক্রিয়েটিভিটিতেও কাঁচি পড়ছে। আপনার কী মনে হয়?

উ: আগে ছবিটা দেখুন, তার পর বিচার করুন। আমার তো মনে হয়, সেটা না দেখে বিচার করার অধিকার কারও নেই। উচিতও না।

প্র: ‘সন্দেশ’কে ডিজিটালি আনার কথা ভাবছেন?

উ: ইচ্ছে তো রয়েছে। তবে তার জন্য একটা ডেডিকেটেড গ্রুপ দরকার। এতে কনস্ট্যান্টলি আপডেট করতে হবে। সেই সামর্থ্য এখনও আমার নেই। সেটা করতে পারলে আইডিয়াল হয়। লোকে তো ই-বুক, কিন্ডল পড়ছে। কী ভাবে পড়ছে সেটা যদিও আমি জানি না (হেসে)।

প্র: বিশাল ভরদ্বাজ আপনার নাম করে শঙ্কুর স্বত্ব ছাড়তে বলেছিলেন। অনেকেই হিন্দিতে ফেলুদা বানাতে চান। কিছু ভেবেছেন?

উ: ফেলুদা যদি হিন্দিতে হয়, আমার সমস্যা নেই। তবে বাংলা রাইট বিগ স্ক্রিনে ছাড়ার প্রশ্ন ওঠে না। শঙ্কু তো নয়ই। শঙ্কুটা আগে আমরা করি।

প্র: ‘একশৃঙ্গ...’র কথা বলেছিলেন। তা হলে কি কোথাও শঙ্কুর দ্বিতীয় ছবির ভাবনাটাও ঘুরপাক খাচ্ছে?

উ: সবই নির্ভর করছে, এটা শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াচ্ছে, তার উপর। যা ভাবছি, তার ৭৫-৮০ শতাংশও যদি করতে পারি, তা হলে করাই যায়। বিশেষ করে আমার ‘একশৃঙ্গ...’ করার ইচ্ছে আছে। এত মাল্টি-ট্র্যাক গল্প। শেষে অদ্ভুত ক্লাইম্যাক্স!

প্র: আর আপনার সবচেয়ে প্রিয় ফেলুদার গল্প কোনটা?

উ: যেগুলো প্রিয়, সবই করে ফেলা হয়েছে। একটা বাকি আছে। ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’। আমার মনে হয় করলে খুব জমবে ছবিটা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement