রান্নায় ব্যস্ত সম্পূর্ণা.
অনেক সময় আমার হাতে এখন। চলছে লকডাউন। সারা দিন ল্যাদ আর ল্যাদ। কখনও ওয়েব সিরিজ দেখছি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। আমার দুই পোষ্য আছে, মালাই আর চমচম। চমচম একটু একা থাকতে পছন্দ করে। মাঝে মাঝে এসে আদর খায় আর চলে যায়। কিন্তু মালাই সব সময় আমার সঙ্গে থাকে। আমি ল্যাপটপে কাজ করলেও আমার দেখাদেখি মালাই কিবোর্ড প্রেস করে।
ছোট থেকেই আমি রান্না করতে খুব পছন্দ করি। কিন্তু কাজের চাপে সবসময় হয়ে ওঠে না। বোঝেনই তো, টাইট শিডিউল। আপনাদের অনেকেরই নিশ্চয়ই রান্নার ঝোঁক রয়েছে? লকডাউনের অবসরে আমার কিচেন থেকে তিনটে রেসিপি শেয়ার করলাম আপনাদের সঙ্গে।
তবে মাথায় রাখবেন, পদগুলি সব একই দিনে রান্না করার জন্য নয়। এখন খাবার রেশন করার সময়।
দই চিকেন
• প্রথমে চিকেন ভালো করে ধুয়ে সামান্য অলিভ অয়েল বা সাদা তেল, এক চিমটে হলুদ আর দু'কাপ দই, পরিমাণ মতো নুন মেশাতে হবে। দই চিকেনে মেশানোর আগে ফেটিয়ে তরলের মতো করে নিতে হবে। ভাল করে মিশিয়ে চিকেন ম্যারিনেট করে রাখতে হবে অন্তত আধ ঘণ্টা।
• গরম কড়াইয়ে অলিভ অয়েল বা সাদা তেল দিন। আমি সাদা তেল ব্যবহার করেছি। তার সঙ্গে দু'চামচ ঘি। আমার বাড়ির ট্রেন্ড হল তেলের মধ্যে একটু চিনি দেওয়া। আমিও সামান্য পরিমাণ চিনি দিয়েছি। তেল গরম হলে শুকনো লঙ্কা, জিরে, গরম মশলা, তেজপাতা তেলে ছাড়তে হবে। সব গোটা। তারপর কুচোনো পেঁয়াজ তেলের মধ্যে দিয়ে দিন। এগুলো ভাজা ভাজা হয়ে এলে দু'চামচ করে আদা ও রসুন বাটা তেলের মধ্যে দিতে হবে। অনেকটা সময় ধরে কষাতে হবে। আমি যে কোনও বাঙালি পদ অনেকক্ষণ করে কষিয়ে নিয়ে রান্না করতে ভালবাসি। কষাতে কষাতে যখন মশলা থেকে তেল বেরোতে শুরু করবে তখন ম্যারিনেট করা চিকেন ওর মধ্যে ঢেলে দিতে হবে। ধীরে ধীরে নেড়ে দিতে হবে। চিকেনের মধ্যে মশলা মিশে যাবে আর চিকেন থেকে জল বেরবে। এই জলেই চিকেন সেদ্ধ হবে। চিকেন থেকে কতটা জল বেরচ্ছে, তার উপরেই নির্ভর করবে আলাদা করে জল দিতে হবে কিনা। আমাকে যেমন আলাদা করে জল দিতে হয়নি। চিকেন সেদ্ধ হয়ে গেলে ঢাকনা খুলে দিলে অপ্রয়োজনীয় জল কমে গিয়ে মাখা মাখা হয়ে যাবে। কেউ ঝোল রাখতে চায়লে রাখতে পারেন। তবে আমি এই পদটা মাখা মাখা পছন্দ করি। রান্না হয়ে গেলে চিকেনের গা থেকে তেল ছাড়বে। তখন কাঁচা লঙ্কা চিরে উপরে ছড়িয়ে দিতে হবে। যদি কসুরি মেথি পাওয়া যায়, নামানোর আগে চিকেনের উপর অল্প ছড়িয়ে দিন। ছড়ানোর আগে হাতের তালুতে রগড়ে নিন। তাতে পাতাগুলো আরও গুঁড়ো গুঁড়ো হবে। আমার কাছে ধনেপাতা ছিল না। আপনারা যদি জোগাড় করতে পারেন তো ধনেপাতা কুচি চিকেনের উপর ছড়িয়ে দিতে পারেন।
চিলি চিকেন
• অল্প আদা, দেড় চামচ রসুন, স্বাদ মতো নুন, সামান্য সয়া সস, সামান্য ভিনিগার, পরিমাণ মতো গোলমরিচ গুঁড়ো, কর্ন ফ্লাওয়ার, দুটো ডিম দিয়ে খুব ভাল করে চিকেনের সঙ্গে মেশাতে হবে। এ বার এই মিশ্রণ এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে।
• এক ঘণ্টা পর কড়াইয়ে তেল গরম করে চিকেনের প্রত্যেকটা টুকরো পকোড়ার মতো আলাদা আলাদা করে ভেজে তুলে রাখতে হবে।
• তেলের মধ্যে এক দেড় চামচ মতো রসুন কুচি, খুব অল্প পরিমাণ আদা বাটা দিতে হবে। জিঞ্জার চিকেন ছাড়া চাইনিজ রান্নায় আদা বেশি দেওয়া পচ্ছন্দ করি না। পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম-বেলপেপার, সঙ্গে কতকগুলো কাঁচা লঙ্কা চিরে দিলাম। পুরোটা কষতে কষতে যখন একটু নরম হয়ে আসবে তখন টম্যাটো সস, চিলি সস, সয়া সস দিয়ে খানিকটা নেড়েচেড়ে চিকেনগুলো ঢেলে দিতে হবে। তার মধ্যে খানিকটা জল আর পরিমাণ মতো নুন দিতে হবে। ঝোলটা বেশি তরল যাতে না হয় সেজন্য খানিকটা জলের মধ্যে কর্ন ফ্লাওয়ার গুলে ঝোলটা ফুটে গেলে কড়াইয়ে ঢেলে দিতে হবে। গ্রেভি ঘন হয়ে এলে চিলি চিকেন তৈরি।
ডিম কষা
• এটা খুবই সাধারণ রান্না। মাঝে মাঝে সবাই এই পদ রান্না করেন। তবু জিনিসপত্রের যা দাম বেড়েছে, এখন ডিম অনেকটাই ভরসা আমাদের সবার কাছে।
• আমার রান্নার প্রসেস একটু আলাদা। ডিম সেদ্ধ করে, খোসা ছাড়িয়ে, নুন-হলুদ মাখিয়ে লাল করে ভেজে নিই। তেলে ছাড়ার আগে অবশ্যই ডিমগুলোর কয়েকটা জায়গায় কাঁটা চামচ দিয়ে ফুটো করি। না হলে গরম তেলে ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম ফেটে সমস্যা হতে পারে।
• আমরা ঘটি। আমাদের সব রান্নাতেই একটু মিষ্টি পড়ে। কড়াইয়ে তেল গরম হলে একটু চিনি দিই তেলের মধ্যে। চিনিটা নাড়তে নাড়তে গলে যায়। তখন গরম মশলা ফোড়ন দিই। একটু নেড়ে নিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিই। পেঁয়াজ যখন লালচে হয়ে আসে তখন টম্যাটো কুচি দিই। তারপর আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, অল্প লঙ্কা গুঁড়ো আর হলুদ দিই। এই পুরো ব্যাপারটা অনেকক্ষণ ভাল করে কষতে কষতে যখন মশলা থেকে তেল বেরোতে শুরু করবে, মশলা আর তেল প্রায় আলাদা হয়ে যাবে তখন ভাজা ডিমগুলো কড়াইয়ে দিয়ে দিই। তারপর খুব অল্প জল, স্বাদ মতো নুন এবং কাঁচা লঙ্কা দিই। যেহেতু কষা, জলের পরিমাণ খুব অল্প হবে। কাঁচা লঙ্কা কষার সময়ও দেওয়া যেতে পারে, কেন না শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো খুব কম ব্যবহার করি। কিছুক্ষণ ফুটিয়ে আঁচ বন্ধ করি। তারপর উপর থেকে গরম মশলার গুঁড়ো ছিটিয়ে দিলেই তৈরি ডিম কষা।
তা হলে কবে ট্রাই করছেন বাড়িতে? কেমন লাগল জানাবেন কিন্তু।