চেহারা, ব্যক্তিত্ব এবং অভিনয়— সব দিক দিয়েই অমিতাভ বচ্চনের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিনোদ খন্না। এমনকি, এক সময় তো মনে করা হচ্ছিল বিগ বি-কে ছাপিয়ে যাবেন বিনোদ। কিন্তু আচমকাই পাল্টে গেল সব কিছু।
সুদর্শন বিনোদকে বলা হচ্ছিল সবথেকে সম্ভাবনাময় সুপারস্টার। কিন্তু তাঁর কেরিয়ারের সবথেকে উজ্জ্বল মুহূর্তেই এমন এক ব্যক্তিত্ব এলেন তাঁর জীবনে, এক ধাক্কায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল। তারকাবৃত্ত থেকে বহু দূরে সরে গেলেন তিনি।
বিনোদের জীবনকে তোলপাড় করে দেওয়া সেই ব্যক্তিত্ব ছিলেন মহেশ ভট্ট। নিজের কেরিয়ারের শুরুতে মহেশ ভট্টর পরিচয় ছিল ‘ব্যর্থ পরিচালক’। সে সময় বিনোদ অবশ্য প্রথম সারির তারকা। বিপরীত অবস্থানে থাকার সময়েই প্রথম পরিচয় দু’জনের।
১৯৭৯ সালে মহেশের পরিচালনায় ‘লহু কে দো রং’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বিনোদ। ছবির শুটিংয়ের মাঝে দু’জনের মধ্যে জীবন ও জীবনদর্শন নিয়ে বহু আলোচনা হত।
বলিউডের বাকি তারকাদের তুলনায় বিনোদ অন্যরকম ছিলেন। বলা হয়, মানুষ হিসেবে তিনি অনেক উঁচু ও খোলা মনের ছিলেন। অন্যের প্রয়োজনে সবসময় পাওয়া যেত তাঁকে।
মহেশ ভট্টের প্রথম সন্তান পূজার তখন জন্ম হয়ে গিয়েছে। এ দিকে পরিচালক হিসেবে কেরিয়ার তখনও টলমল। কিছুটা আর্থিক অসঙ্গতিতে থাকা মহেশ মুগ্ধ হয়ে যেতেন বিনোদের বিলাসিতা দেখে।
পুণের ওশো রজনীশের আশ্রমে সে সময় নিয়মিত যেতেন মহেশ ভট্ট। তাঁর সঙ্গে রজনীশের কাছে যান বিনোদও। মা এবং অন্যান্য কয়েক জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে হারিয়ে সে সময় মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন বিনোদ।
তা ছাড়া বিনোদ জীবনের অর্থ জানতে চাইতেন। কী ভাবে জীবন কাটানো উচিত, সেই আদর্শ জীবনদর্শনের পথও খুঁজে পেতে চাইতেন তিনি। সে সব জানার জন্য তিনিও ওশো রজনীশের শরণাপন্ন হন।
প্রথমে সপ্তাহে এক দিন করে দু’জনে ওশোর আশ্রমে যেতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁরা ওশোর মতবাদ এবং আশ্রমের পরিবেশে আবিষ্ট হয়ে পড়লেন। থাকতে লাগলেন ওখানেই।
কিন্তু একটা সময়ের পরে মহেশের মনে হতে লাগল, ওশোর মতবাদে তাঁর জীবনে কোনও পরিবর্তন আসেনি। দুঃখ কষ্ট যেখানে যা ছিল, সব তেমনই আছে।
মহেশ ঠিক করেন আশ্রম ছেড়ে তিনি ফিরে আসবেন বলিউডে। ফিরেও এলেন। কিন্তু বিনোদ তাঁর সঙ্গে ফিরলেন না।
এর পর ওশোর সঙ্গে আমেরিকা পাড়ি দিলেন বিনোদ। ফলে ইন্ডাস্ট্রি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন তিনি।
মহেশ ভট্ট কিন্তু ফিরে এসে ব্যক্তিগত জীবন ও কেরিয়ার, দু’দিকেই ফের থিতু হলেন।
বিনোদও ফিরলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু পাঁচ বছর পরে। তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে বলিউডের চালচিত্র। অমিতাভ তখন সুপারস্টার। এসে গিয়েছেন আরও নতুন অভিনেতা ও স্টারকিড। ফলে বিনোদ খন্নার কামব্যাক সফল হল না।
কিছু বছর পরে বিনোদ অভিনয় ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। ইন্ডাস্ট্রিতে ফেলে যাওয়া সিংহাসন তিনি আর ফিরে পাননি। সেখানে তখন আসীন অমিতাভ বচ্চন।