Sudhir Mishra

প্রতিবাদের ভয়ে আমরা চুপ থাকলে নতুন প্রজন্ম সাহস হারাবে! কলকাতায় এসে বললেন সুধীর

এক দিনের ঝটিকা সফরে কলকাতায় পরিচালক সুধীর মিশ্র। উপলক্ষ, তাঁর নতুন ছবি ‘আফওয়া’র বিশেষ প্রদর্শন।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৩ ২৩:৫২
Share:

রবিবার শহরে বলিউড পরিচালক সুধীর মিশ্র। নিজস্ব চিত্র।

সমাজমাধ্যমের নজরদারিতে আজকে সত্যের তুলনায় ‘গুজব’ অনেক বেশি দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ৫ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল সুধীর মিশ্র পরিচালিত হিন্দি ছবি ‘আফওয়া’। শব্দটির বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘গুজব’। গুজব কী ভাবে একজন নিরীহ মানুষের জীবনে বিপদ ডেকে আনে, সেটাই নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি এবং ভূমি পেডনেকর অভিনীত এই ছবির মূল উপজীব্য। ছবির বিশেষ প্রদর্শন উপলক্ষে রবিবার শহরে এসেছিলেন পরিচালক। প্রদর্শনের পর দর্শকদের উপস্থিতিতে অংশ নিলেন আলোচনায়। বাংলা থেকে সুধীরকে সঙ্গ দিলেন গৌতম ঘোষ এবং অঞ্জন দত্ত। এক ফাঁকে সুধীর সময় দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।

Advertisement

রাজনৈতিক ছবি আগেও তৈরি করেছেন সুধীর। কিন্তু এই ছবি তৈরির পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য কী ছিল? ‘হাজারোঁ খোয়াইশে অ্যায়সি’র পরিচালক বললেন, ‘‘একটা গুজব কী ভাবে একজন মানুষের জীবন তছনছ করে দেয়, সেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। এই বিষয়ে আমি শুধু কথা বলতে চেয়েছিলাম। এ বার কে কী বলল, তা নিয়ে আমার কোনওরকম মাথাব্যথা নেই।’’ ইদানীং যে কোনও শিল্পের ক্ষেত্রে শিল্পীর কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সুধীর বলেন, ‘‘একবার নিউ ইয়র্কে আমাকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যে আমি কি ভারতে ছবি তৈরি করতে ভয় পাচ্ছি? আমি বলেছিলাম, আমি দেশে ফিরে গিয়ে আমার কাজের মাধ্যমে উত্তর দেব। কারণ আমি আমার দেশকে নিয়ে গর্বিত।’’

শহরের একটি মাল্টিপ্লেক্সে ‘আফওয়া’ প্রদর্শনের আগে অঞ্জন দত্ত এবং গৌতম ঘোষের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সুধীর মিশ্র। নিজস্ব চিত্র।

আসলে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে কোনও শিল্পের ক্ষেত্রে যে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সুধীর তা একশো শতাংশ মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের সংবিধানের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। সেটা মাথায় রেখেই আমি ছবি তৈরি করি। ছবির মাধ্যমে ঘৃণা বা বিষ ছড়িয়ে দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়।’’ সম্প্রতি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি নিয়ে দেশ জুড়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। সুধীর বলেন, ‘‘ছবির ক্ষেত্রে আমি যে কোনও রকম নিষেধাজ্ঞার বিরোধী। পছন্দ না হলে ছবির সমালোচনা করা যায়। কিন্তু তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যায় না।’’ এই প্রসঙ্গেই ছবির সেন্সরশিপ নিয়ে মুখ খুললেন সুধীর। তাঁর কথায়, ‘‘ছবি নিয়ে আপত্তি থাকলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যায়। তা বলে চুপ থাকা চলবে না। আমাদের মত সিনিয়ররা চুপ করে গেলে তো নতুন প্রজন্ম সাহস হারাবে!’’ এই প্রসঙ্গেই পরিচালক মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘বিবেক অগ্নিহোত্রী যখন আমাকে ওঁর পডকাস্টে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, আমি তো গিয়েছিলাম। ও আমার ছোট ভাইয়ের মত। আমাদের মতপার্থক্য থাকতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, আমরা কথা বলা বন্ধ করে দেব।’’

Advertisement

‘আফওয়া’ তৈরির সময় তাঁকে কি কোনও রকম চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল? সুধীর হেসে বললেন, ‘‘প্রত্যেক বার এক জন পরিচালক নতুন ছবি তৈরির আগে একটাই প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করেন। সেটা হল ‘মধ্যমেধা’! প্রত্যেক বার তাঁর একটাই ভয় মাথায় কাজ করে, এ বারে আমার খামতিগুলো দর্শকদের থেকে আড়াল করতে পারব তো? না কি ধরা পড়ে যাব!’’ এই প্রসঙ্গেই তাঁর সংযুক্তি, ‘‘ছবি তৈরির ক্ষেত্রে আমার লড়াইটা কিন্তু নিজের সঙ্গে অনেক বেশি, সরকারের সঙ্গে নয়।’’

সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত ছবি ‘কেনেডি’। ছবিটি উৎসবে বিশিষ্টদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তার থেকেও বড় কথা, ছবিটি পরিচালক সুধীরকে উৎসর্গ করেছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে সুধীর বললেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। ও আমাকে নিজের দাদা মনে করে। ওর ‘দেব ডি’ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। ও আমাকে সাহস জোগায়।’’

এই মুহূর্তে সত্তরের দশকের ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একটি ওয়েব সিরিজ় তৈরির কাজে ব্যস্ত সুধীর। ৪০ বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল সুধীরের প্রথম ছবি ‘জানে ভি দো ইয়ারো’। সুধীরের চর্চিত কমেডি ছবি। সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করতেই জানালেন, কমেডি ছবি নিয়েও তিনি চিন্তাভাবনা করছেন। আর কলকাতা? সুধীর বললেন, ‘‘কলকাতায় আসতে সবসময়েই ভাল লাগে। কারণ ছাত্রাবস্থায় এই শহরে একটা বড় সময় কাটিয়েছিলাম। আপাতত আমার এই ছবিটা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রদর্শন করার ইচ্ছা রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement