ঊষসী চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ দিন রাজনীতির ময়দানে রয়েছেন। প্রার্থী হওয়ার পরিকল্পনা নেই? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নে অভিনেত্রীর উত্তর, “এই সেরেছে! রাজনীতি ও অভিনয়, দু’টি বিষয়ই ভালবাসি।” রাজনীতি করতে গেলে প্রার্থী হতেই হবে, এমনটা মনে করেন না অভিনেত্রী। “সবাই যদি প্রার্থী হতে চায়, প্রচার কে করবে?” প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ঊষসী।
প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নন, মত অভিনেত্রীর। প্রার্থী হওয়ার পরে নির্বাচনে জয়ী হলে দায়িত্ব বেড়ে যায় অনেকটা। কেন্দ্রে কোনও সমস্যা হলে সব কিছু ছেড়ে ছুটে যেতে হবে, এই মনোভাব জরুরি। বললেন, “ধরুন, আমি প্রার্থী হলাম। তার পরে নির্বাচনে জয়ী হলাম। পাঁচ বছর ধরে রাজনৈতিক ভাতা নিলাম। তার পরে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিয়ে নিলাম। তাতে তো কোনও লাভ নেই!”
রাজনীতির ময়দানকে অবসর পরবর্তী জীবন হিসাবে বেছে নিচ্ছেন অভিনেত্রীরা? প্রশ্নের জবাবে অভিনেত্রী বললেন, “অনেক অভিনেত্রী রাজনীতির ময়দানে এসে হনিমুন পিরিয়ড কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। অনেকে আবার পরখ করে দেখে, ‘দেখি, রাজনীতির ময়দানে কত দূর কী করতে পারি।’ তার পরে যখন তারা দেখেছে, তাদের আর কিছুই পাওয়ার নেই, তখন রাজনীতির ময়দান থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে।”
রাজনীতি তাঁর কাছে বিকল্প পেশা নয়। অভিনয়ের কাজ কম পড়লে রাজনীতিতে যোগ দেবেন, এমন ভাবনাও নেই। তাঁর কথায়, “রাজনীতি থেকে আমার রোজগারের আশা নেই। অভিনয় আমার পেশা। কিন্তু রাজনীতি আমার কাছে উপার্জন করার ক্ষেত্র নয়।” তিনি আরও বললেন, “বরং রাজনীতিতে অনেক কিছু দিতে হয়। আমি বাকিদের কথা বলছি না। আমরা যে রাজনীতি করি, তাতে সৎ পথে রাজনীতি করলে টাকা রোজগারের কোনও সুযোগ আছে বলে জানি না।”
অভিনেত্রীর বাবা শ্যামল চক্রবর্তী সাংসদ থাকাকালীন যে পারিশ্রমিক পেতেন, তার পুরোটাই দলকে দিয়ে দিতেন। সক্রিয় রাজনীতির জন্য জেলে গিয়েছিলেন। তখন দু’টো ফুসফুসই অকেজো হয়ে গিয়েছিল, স্মৃতিতে ডুব দিলেন ঊষসী। অভিনেত্রীর মা-ও জেলে গিয়েছিলেন, জানালেন ঊষসী। কখনও অভিনয় থেকে অবসর নিলে বই লেখার ইচ্ছে রয়েছে অভিনেত্রীর। ইতিমধ্যেই তাঁর একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।
কথায় কথায় আবারও সৃজনের প্রসঙ্গ উঠে এল। সৃজনের তিন প্রজন্ম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। “ইতিহাসের ভাল ছাত্র, পড়াশোনা নিয়েই থাকতে পারত। এ রকম বাগ্মী সাংসদ হলে এলাকার মানুষের কথা সংসদে আরও বেশি করে উঠবে। সৃজন সৎ মানুষ, রাজনীতিতে ও অনেক দূর যাবে”, বললেন অভিনেত্রী। তিনি মনে করেন, সৃজন কখনও প্রলোভনে পা দেবেন না, দল বদলও করবেন না। “সৃজন সংসদে গিয়ে শিক্ষিত মানুষের মতো কথা বলবে। এটা তো আর পাড়ার নির্বাচন নয়”, যোগ করলেন ঊষসী। বিরোধী দলের প্রার্থী সায়নী ঘোষ এক সময়ের সহকর্মী। সেই সুবাদে ভাল বন্ধুত্বও ছিল ঊষসীর সঙ্গে। রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও, শুভেচ্ছা জানাতে ভুললেন না অভিনেত্রী।
অভিনেত্রী জানালেন, যে কোনও বামপন্থী দল তিন ভাবে কাজ করে। দলের কেন্দ্রে থাকেন সদস্যেরা, আর চারপাশে সমর্থকেরা। দলকে দাঁড় করিয়ে রাখে বৃহত্তর প্রভাব-বলয়। সেই প্রভাব-বলয়ের সঙ্গে দলের যোগাযোগ কমে গিয়েছে, স্বীকারোক্তি অভিনেত্রীর। তবে সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধর, প্রতীক উর রহমান, শতরূপ ঘোষ প্রত্যেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, মত অভিনেত্রীর। প্রচারে গিয়ে মীনাক্ষীর বক্তব্য শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি রাস্তায় বার না হলে আমার আত্মগ্লানি হত। এরা এত লড়াই করছে, বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে আমি বাড়িতে বসে আছি কেন!”