ফেলুদার ভূমিকায় টোটা রায় চৌধুরী।
‘ফেলুদা’র চরিত্রে প্রথমবার, কেমন লাগছে?
(উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে) মঙ্গলবার সকালবেলা সৃজিত যখন জানাল যে তুমি মনোনীত হয়েছ তখনও প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। মনে হচ্ছিল সন্ধ্যেবেলা গিয়ে হয়তো সৃজিত বলবে যে না না, আমি ভুল বলেছি। তোমায় নেওয়া হয়নি (হাসি)।
নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারানোর পর কী অনুভূতি হয়েছিল?
হ্যাঁ, এরপরটাই আসল। এরপর বুঝলাম যে একটা বিশাল দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়েছে। আসলে এত দিন ধরে এত জনের নাম সামনে আসছিল, প্রত্যেকেই হয়তো আমার থেকে ভাল করতে পারতেন, কিন্তু তা-ও এর মধ্যে থেকে আমাকে বেছে নেওয়া হল। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের প্রত্যাশাও বেড়ে গেল অনেকটা। ঠিক করি, একদম মন দিয়ে কাজটা করতে হবে যাতে তাঁদের ফ্যানরাও বলতে পারেন যে, ‘না, টোটা সত্যিই কাজটা ভাল করেছে।’
ফেলুদা মানেই তো নস্টালজিয়া, বাঙালির রক্তে মিশে যাওয়া একটা চরিত্র। কী ভাবে গ্রুম করবেন নিজেকে?
দেখুন, ‘চোখের বালি’-র সময় ঋতুদা কে যখন জিজ্ঞাসা করি যে কীভাবে তৈরি হব? উনি আমাকে প্রথমেই বলে দেন, “যেটা আমি বলব সেটাই করবি। নিজে থেকে কিচ্ছু তৈরি হতে হবে না।” তাই এ ক্ষেত্রেও আমি সৃজিতের উপরেই সেই ভারটা দিয়ে দিয়েছি। ও কী চাইছে, ওর কী ভিশন...আমি সেটাকেই পূর্ণ করতে চাইব। ওর সঙ্গে বসে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করে নেব, কীভাবে ও আমায় দেখতে চাইছে। আর সত্যি কথা বলতে কি, আমি সৃজিতের গুণমুগ্ধ ভক্ত। ওর প্রত্যেকটা ছবিই আমার দেখা। কিন্তু ওর সঙ্গে এটাই আমার প্রথম কাজ। তাই সবার আগে যেটা দরকার তা হল ওর সঙ্গে সিটিং।
আরও পড়ুন-‘দয়া করে শুনুন, আমার সঙ্গে কিন্তু জুনের বিয়ে হচ্ছে না!’
ফেলুদা ফেরত' নিয়ে প্রথমবার ওয়েবসিরিজে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ছবি-ফেসবুক।
‘ফেলুদা’ শুনলে সবার আগে কী মাথায় আসে?
‘ফেলুদা’ তো ইমোশন। সেই যখন থেকে ‘দেশ’ পত্রিকায় ফেলুদা প্রকাশিত হত তখন থেকে ফেলুদার পাঠক আমি। বাড়িতে যখন দেশ পত্রিকা আসত তখন রীতিমতো কাড়াকাড়ি লেগে যেত। আর আমি সন্দীপ রায়ের ফেলুদাতেও কিন্তু কাজ করেছি, যদিও সেটা ফেলুদার চরিত্রে নয়। ‘ফেলুদা’-র একটা ইমেজ সবার কাছে আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাইনা সেই ইমেজটাই ধরে রাখতে। ওই জন্যই নিজেকে পুরো জলের মতো ছেড়ে দিয়েছি। সৃজিত যেভাবে চরিত্রটাকে নিয়ে যাবে সেভাবেই যাব।
আরও পড়ুন-লাল শাড়ি, ভারী গয়নায় দীপিকা, ম্যাচিং সাজ রণবীরের, প্রথম বিবাহবার্ষিকীতেই সুপারহিট দীপবীর
এখনও পর্যন্ত যাঁরা যাঁরা ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাঁদের মধ্যে আপনার চোখে সেরা কে?
মূলত বড় পর্দায় তিনজন ফেলুদা হয়েছেন—সৌমিত্রবাবু, বেণুদা(সব্যসাচী চক্রবর্তী)এবং আবীর। এবং তিনজনই নিজের মতো করে অনবদ্য। সৌমিত্রবাবুর মধ্যে সেই বুদ্ধিদীপ্ত বাঙালিয়ানা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, হাঁটাচলার মধ্যে অদ্ভুত এক দৃঢ়তা...সব মিলিয়ে আলাদাই একটা ব্যাপার ছিল। বেণুদার মধ্যেও সেই টাফনেসটা দেখা গিয়েছে। ধরুন, শন কনারি অভিনীত জেমস বন্ড বা হালফিলে ড্যানিয়েল ক্রেগ অভিনীত বন্ডের চরিত্রের মধ্যে যে পার্থক্যটা, সেটাই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং সব্যসাচী চক্রবর্তী অভিনীত ‘ফেলুদা’ চরিত্রের মধ্যেকার পার্থক্য।
কিছু দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কে ফেলুদা হবে তা নিয়ে যে পোল হয়েছিল তাতে কেউ আপনাকে পছন্দ করেছেন, আবার কেউ করেননি। দর্শকদের কিছু বলবেন?
যাঁরা আমার উপর আস্থা রাখতে পেরেছেন তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কিছুটা অবাকও বটে। ভেবেছিলাম, আমি দর্শকদের মন থেকে বুঝি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তাঁরা যে আমাকে মনে রেখেছেন তার জন্যই বোধহয় আমার দায়িত্বটা আরও হাজারগুণ বেড়ে গেল। চেষ্টা করব নিজের সবটুকু দিয়ে ‘ফেলুদা ফেরত’-কে সাকসেসফুল করতে। আর বাকি যারা ফেলুদারূপে অন্য কাউকে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের উদ্দেশে বলছি, হয়তো আপনারা ঠিক। আমার চেয়েও যোগ্য ফেলুদা হওয়ার ক্ষমতা হয়তো ওঁদের রয়েছে। এটাই বলব, আমায় একটা সুযোগ দেবেন। কাজটা ভাল লাগলে হাততালি দেবেন, না ভাল লাগলে মনের সুখে গালাগালি দেবেন না হয়।