টুসি দাস ও ছন্দা গায়েন
বছর আড়াই আগের কথা। এভারেস্টের বেসক্যাম্পের একটু উপরে খুম্বু হিমবাহে ধসের সময়ে কাছাকাছিই ছিলেন কেন্ট হার্ভি ও তাঁর দলবল। হলিউডের ২০১৫-র ব্লকবাস্টার ছবি এভারেস্ট-এর প্রস্তুতি-পর্বে ফুটেজ জোগাড় করতে তখন ওই তল্লাটে ঘাঁটি গেড়েছে দলটা।
সেই বিপর্যয়ে ১৬ জন পর্বতারোহী হারিয়ে গেলেও পিছু হটেনি হলিউডের ইউনিট। বেসক্যাম্প থেকে খানিকটা উপরে উঠে প্রয়োজনীয় ছবি তুলে এনেছিলেন তাঁরা। যা পরে সিনেমায় ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটারে ফুটেজের আকার বাড়িয়ে রুপোলি পর্দায় উঠে আসে সর্বোচ্চ শৃঙ্গের ছবি।
কলকাতায় বসে তখন মিডিয়ার মাধ্যমে পাহাড়ের ঘটনাবলির দিকে তাকিয়ে ছিলেন টালিগঞ্জের এক পরিচালক জুটিও। হলিউড যেখানে গিয়েছিল, এ বার সেখানে যাওয়ার মতলব ভাঁজছেন তাঁরা। হলিউডের সঙ্গে বাজেটে পাল্লা দেওয়া মুশকিল! তবু নতুন ছবির পটভূমির জন্য এভারেস্টের বেসক্যাম্প পাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর ছবির নির্মাতারা।
সব কিছু ঠিক থাকলে, এ বছরের গ্রীষ্মেই বেসক্যাম্পে যাবে চিত্রপরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায় ও প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরীর ইউনিট। ইচ্ছেটা চারিয়ে উঠছিল গত তিন-চার বছর ধরেই। যখন টুসি দাস এবং ছন্দা গায়েনদের এভারেস্ট ও কাঞ্চনজঙ্ঘা জয় কাগজের শিরোনাম হয়ে উঠেছে। ভেতো বাঙালি ঘরের মেয়েদের অসাধ্য সাধনের গল্প চিত্রনাট্যবন্দি করার তাগিদটা তখন থেকেই শিবু-নন্দিতাদের তাড়া করছিল।
আরও পড়ুন:‘আমার পুরুষ বন্ধুরাও বলেছে, পর্নোগ্রাফিতে ডিজায়ারটাই মরে যায়!’
‘‘কিন্তু এভারেস্ট-কাঞ্চনজঙ্ঘার পটভূমি সিনেমায় তুলে ধরা তো চাট্টিখানি কথা নয়। বাংলা ছবির পুঁচকে বাজারে কোটি কোটি টাকার ছবিতে হাত দিতে সাহস হচ্ছিল না,’’ বলছেন শিবপ্রসাদ। সাম্প্রতিক অতীতে টালিগঞ্জ অবশ্য আফ্রিকা বা আমাজনের অরণ্যে শ্যুটিং করেছে। তবু সার্বিক ভাবে বাংলা ছবির যা হাল, তাতে বেশি উচ্চাকাঙ্খা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। ছবির বাজেট কোটি টাকা ছাড়ালেই নির্মাতাদের হৃৎকম্প বাড়ে। তবু পরপর কয়েকটা হিট শিবপ্রসাদদের সাহস জুগিয়েছে।
এ ছবির ডিজাইনিংয়ে বড় ভূমিকা থাকবে শিল্পনির্দেশক নীতিশ রায়ের। কম্পিউটার গ্রাফিক্স, পাহাড়ে আউটডোরও মস্ত ঝক্কি। পর্বতারোহীদের চোখেমুখে এভারেস্টের দগদগে আদরের দাগ ‘ফ্রস্টবাইট’ ফুটিয়ে তুলতে হলিউডি মেকআপম্যানের দ্বারস্থ হওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। অতনুবাবু বলছিলেন, ‘‘এ যাত্রা বাজেট ছ’কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’’ যা এই টিমের গত বছরের হিট ‘প্রাক্তন’-এর তিন গুণ।
ফিল্ম ব্যবসার অঙ্ক কিন্তু বলছে, ছ’কোটি টাকার ছবি হিট করাতে কমপক্ষে ১৫ কোটির ব্যবসা করতে হবে। বাংলা ছবির পক্ষে কাজটা এভারেস্টে চড়ারই সামিল। সেটা কি আদৌ সম্ভব?
অধুনা এ দেশে সফল ক্রীড়াবিদদের নিয়ে বায়োপিক-এর জয়জয়কার দেখেই শিবু-নন্দিতারা সাহস পাচ্ছেন। বলিউডে হরিয়ানভি কুস্তিগির বোন জুটি গীতা-ববিতা বা ধোনির গল্প সদ্য সিনেমা হয়েছে। মণিপুরের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মেরি কমের গল্পও সেলুলয়েড-বন্দি। শিবপ্রসাদদের আশা, টুসি বা ছন্দার লড়াইটা বাংলার চৌহদ্দি ছাড়িয়েও সর্বজনীন আবেদন তৈরি করবে।
ছন্দা অবশ্য এখন তুষারেই সমাহিত। গরিব ডিম-বিক্রেতার মেয়ে টুসি এখনও পাহাড়ের সঙ্গে রোম্যান্স জারি রেখেছেন। ভিন্ন পরিণতির দু’টি কাহিনি নিয়েই বোনা হবে চিত্রনাট্য। কারা অভিনয় করবেন, তা এখনও ভাঙছেন না পরিচালকেরা। ছন্দার পরিজন এবং টুসির সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁদের। ছন্দা-টুসিদের পাহাড়ের ডায়েরি, ছবির অ্যালবাম নিয়ে বসে চলছে চিত্রনাট্য তৈরির কাজ। আর সেই সঙ্গে পাহাড়-অভিযানের প্রস্তুতিও। এই গ্রীষ্মেই চড়াই ভাঙা শুরু করবে টলিউড।