Tollywood

শুটিং বন্ধের সমর্থনে টলিউড?

প্রথম লকডাউনের ক্ষতির জের এখনও টানছে ইন্ডাস্ট্রি। তার মধ্যেই দ্বিতীয় ধাক্কা

Advertisement

 ঈপ্সিতা বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২১ ০৭:৪৫
Share:

গঙ্গারাম ধারাবাহিকের দৃশ্য।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে বিনোদন দুনিয়াও বিপর্যস্ত। জিৎ, শুভশ্রী, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় থেকে দিতিপ্রিয়া রায়, ভরত কল, শ্রুতি দাস — বড় পর্দা ও ছোট পর্দার একাধিক শিল্পী, কলাকুশলী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্টুডিয়োপাড়ায় কোভিড সতর্কতা বিধির শিথিলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। তার জেরেই গত ৩ মে থেকে নয়া সুরক্ষাবিধি চালু করে ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া। কিন্তু শনিবার থেকে রাজ্যে আগামী ১৫ দিনের লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় ফের শুটিং বন্ধের পথেই হাঁটতে হল বাংলার বিনোদন জগৎকে।

Advertisement

গত বছর লকডাউনের জেরে হওয়া আর্থিক ধাক্কাই এখনও অবধি সামলে উঠতে পারেনি বিনোদন দুনিয়া। বহু ছবির শুটিং স্থগিত। বাতিল হয়েছে ছবিমুক্তি। এখানে বেশির ভাগ কলাকুশলীই ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ সিস্টেমে কাজ করেন। সেখানে ফের পনেরো দিনের লকডাউন ঘোষণা হওয়ায়, নতুন করে আর্থিক সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা তাঁদের কপালে ভাঁজ ফেললেও লকডাউনের পক্ষেই কথা বলছে ফেডারেশন। সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শুটিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সরকারি সিদ্ধান্তকে আমরা মেনে নিয়েছি।’’ আবার সিনে আর্ট ডিরেক্টর্স গিল্ডের সম্পাদক সুদীপ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘কলাকুশলীর পাশে ফেডারেশন রয়েছে। আমরা কি ৩৬৫ দিনই কাজ পাই? এই ক’টা দিন কাজ না করা নিয়ে বেশি না ভেবে, বরং আগামী দিনে যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারি আর কোনও সহকর্মীকে হারাতে না হয়, তার চেষ্টা থাক।’’

লকডাউন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন বহু শিল্পী। ‘‘লকডাউনের ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু এই দায় নিজেকেই নিতে হবে। সুরক্ষাবিধি না মানা, নির্বাচনী প্রচার, পারিবারিক অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই চলছিল। কাজ হারাতে পারি, তখন কারও মনে হয়নি। সচেতনতার অভাব ও সুরক্ষাবিধি না মানার মাসুল গুনতে হচ্ছে আজ,’’ বললেন অভিনেতা শুভ্রজিৎ দত্ত। তিনি ‘ওগো নিরুপমা’তে অভিনয় করছিলেন। একই সুর শোনা গেল ‘গঙ্গারাম’ ধারাবাহিকের অভিনেত্রী সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়ের কথাতেও, ‘‘শুটিং বন্ধ হলে আমাদের আয় বন্ধ হয়ে যায় ঠিকই। কিন্তু তার চেয়েও দুর্ভাগ্যজনক অসংখ্য মানুষের মৃত্যু।’’

Advertisement

পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকায়, প্রযোজনা সংস্থা ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ধারাবাহিকের বেশ কিছু পর্ব আগাম ব্যাঙ্কিং করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই অন্তত বেশ কয়েকদিন ধারাবাহিকগুলোর নতুন পর্বই দর্শক দেখতে পাবেন। এই প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি চ্যানেলের ক্লাস্টার হেড (ইস্ট) সম্রাট ঘোষ বললেন, ‘‘দর্শক যাতে নতুন পর্ব দেখা থেকে বঞ্চিত না হন, তার জন্য এ মাস টেনে দেওয়ার মতো ফুটেজ রয়েছে। কিন্তু লকডাউন ৩০ মে-র পরও চললে চাপের মুখে পড়তে হবে চ্যানেলকে।’’ তবে ব্যাঙ্কিং করার কারণে, ভিউয়ারশিপ দেখে ধারাবাহিকের গল্পে পরিবর্তন বা আলাদা কোনও ট্র্যাকে গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব নয় বলেই মেনে নিলেন তিনি। এ ধরনের সমস্যা নন-ফিকশনে নেই বলে ‘রান্নাঘর’, ‘দিদি নং ওয়ান’ ইত্যাদি শোয়ের যথেষ্ট ব্যাঙ্কিং করা রয়েছে। প্রযোজক স্নিগ্ধা বসু বললেন, ‘‘পরিস্থিতি বুঝে ধারাবাহিকের ব্যাঙ্কিং করে রাখা হয়েছে। বাকিটা চ্যানেলের সিদ্ধান্ত।’’ আর একটি চ্যানেলের হেড ঈশিতা সুরানার বক্তব্য, ‘‘একমাত্র ‘গুডমর্নিং আকাশ’ ছাড়া সব ক’টি ধারাবাহিকের ব্যাঙ্কিং ৩০ মে অবধি করা আছে। ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে, আরও কয়েক দিন নতুন পর্ব দেখাতে পারব।’’ আরও একটি চ্যানেল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদেরও বেশির ভাগ ধারাবাহিকের ব্যাঙ্কিং করা রয়েছে। তবে ডাবড ধারাবাহিকগুলোর কী হবে তা নিয়ে ভাবনা চলছে।

লকডাউন সমর্থন করলেও শিল্পী ও টেকনিশিয়ানদের আর্থিক অনিশ্চয়তা নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠাচ্ছে ফেডারেশন। চিঠিতে পরিস্থিতি ভাল হলে বা কিছুটা পরিবর্তন হলে শর্তসাপেক্ষে শুটিংয়ের অনুমতি চাওয়া হবে। স্বরূপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘৭৫৬ জন কলাকুশলীর র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়ে গিয়েছে। তাতে ৩৪ জনের কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়ে। রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েছি। পুনরায় শুটিং শুরু হলে বাকিদের টেস্ট হবে। বিনামূল্যে টিকাকরণের পরিকল্পনাও রয়েছে। গত বছর শুটিং বন্ধের সময়ে কলাকুশলীর পারিশ্রমিকের কিছুটা অংশ দেওয়া হয়েছিল। এ বারও তার ব্যবস্থা নিচ্ছি, সঙ্গে ফুড কুপন দেওয়ার জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement