কোয়েল।ছবি: দেবর্ষি সরকার
জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন কোয়েল মল্লিক। মা হতে চলেছেন তিনি। মল্লিক ও সিংহ পরিবার নতুন অতিথির অপেক্ষায়। আবার সার্বিক ভাবে দেখলে সময়টা বড্ড জটিল। নামীদামি থেকে সাধারণ, করোনার আতঙ্কে সকলেই ঘরবন্দি।
এমনিতে কোয়েলের দিনের প্রতিটি ঘণ্টাই ব্যস্ততায় মোড়া। কিন্তু এখন অখণ্ড অবকাশ। কী ভাবে কাটছে তাঁর সময়? প্রশ্নটা করতেই হাসলেন, ‘‘বাড়িতে থাকতে আমি এমনিতেই ভালবাসি। যখন শুট থাকে না, তখন এ বাড়িতে (বালিগঞ্জের বাড়ি) থাকি, নয়তো মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে চলে যাই। এখন অবশ্য পরিস্থিতির কারণে যেতে পারছি না। তাই কিছুটা মিস করছি তো বটেই।’’ সময় কাটানোর জন্য বই পড়া, ওয়েব সিরিজ়, সিনেমা দেখা তো চলছেই। ‘‘আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমাকে একটা বই দিয়েছে। সৌকর্যর (ঘোষাল) স্ত্রী পূজা খুব ভাল একটা বই গিফ্ট করেছে। ‘মেড ইন হেভেন’, ‘দ্য কমিনস্কি মেথড’, সিরিজ়গুলো দেখলাম, খুব ভাল লাগল। সিনেমাও দেখছি প্রচুর।’’
এ সময়ে ফিট থাকাটাও ভীষণ জরুরি। কোয়েল মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, শরীর ফিট থাকলে মনও ভাল থাকে। তাঁর মা হওয়ার খবর জানানোর পর থেকে যে শুভেচ্ছাবার্তা ও ভালবাসা সকলের কাছ থেকে পেয়েছেন, তাতে তিনি অভিভূত। ‘‘তাই আমার মন এখন পজ়িটিভ এনার্জিতে ভরপুর,’’ নায়িকার গলায় আবেগ। কিন্তু ফিটনেসের সঙ্গে একটু হলেও কম্প্রোমাইজ় করতে হচ্ছে। এখন যেহেতু জিমে যাওয়া কিংবা কমপ্লেক্সের নীচে লনে হাঁটা সবই বন্ধ, তাই যোগব্যায়াম আর মেডিটেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছেন নিজের ফিটনেস রুটিন।
তবে খাওয়াদাওয়া করছেন চুটিয়ে, নিজেই জানালেন সে কথা। কোয়েল খেতে ভালবাসেন, এটা মানতে কি মন চায়? মনোভাব বুঝতে পেরেই বোধহয় নিজে আর একটু বিস্তারিত হলেন, ‘‘আমি সত্যিই খেতে খুব ভালবাসি। কিন্তু পেশার খাতিরে রেস্ট্রিকশন তো রাখতেই হয়। এখন অবশ্য সেটা আর নেই। প্রচুর চকলেট, কেক, ব্রাউনি... খাচ্ছি। আমার আর রানের (নিসপাল সিংহ) দু’জনেরই চিজ় কেক ভীষণ প্রিয়। আমরা যখনই বিদেশে বেড়াতে যাই, নানা জায়গা থেকে বিভিন্ন রকম চিজ় কেক ট্রাই করি।’’এখন অবশ্য নিজেই রকমারি খাবার বানাচ্ছেন কোয়েল। ‘‘আমার এক বন্ধু রাধিকা ফ্যান্সি খাবার বানাতে খুব ভালবাসে। ও আমাকে অনেক রেসিপি পাঠায়। সেখান থেকেই মেক্সিকান ফ্রায়েড রাইস, স্পিনাচ, ব্রকোলি ক্রেপ বানিয়েছি। আমার রান্না খেতে রানেও ভালবাসে। মনে আছে, ওকে প্রথম নিজে বানিয়ে খাইয়েছিলাম কেক।’’
এ সবের মাঝেও এই যে ঘরবন্দি থাকা, এতে কোথাও একাকিত্ব বা একঘেয়েমি কি চেপে বসে না? করোনা ভীতি কি গ্রাস করেনি তাঁকে? একটু থেমে বললেন, ‘‘যে কোনও পরিস্থিতিতেই একটা পজ়িটিভ দিক খুঁজে বার করতে চেষ্টা করি। এই সময়টায় আমরা পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটানোর যে সুযোগটা পাচ্ছি, সেটা সহজে মেলে না। আমার সবচেয়ে বেশি চিন্তা, যারা দিন আনে দিন খায় তাদের নিয়ে, আর বয়স্ক মানুষদের নিয়ে। আমরা যেমন শ্বশুরমশাই ও শাশুড়িমা-কে বাড়ি থেকে একদম বেরোতে দিচ্ছি না। বাবাও ক’দিন আগে মল্লিকবাড়িতে যাওয়ার কথা বলেছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে বারণ করে দিয়েছি। রানেও ওর অফিসের সবাইকে ওয়র্ক ফ্রম হোম করতে বলেছে। বাড়িতেও যাঁরা কাজে আসেন, সকলকে ছুটি দিয়েছি।’’
কর্তা-গিন্নি দু’জনেই যখন বাড়িতে, তখন সময়টা ভালই কাটছে। ব্যস্ত দম্পতি এমন সুযোগ তো সচরাচর পান না। কথাটা বলতেই কোয়েলের ঠোঁটে মিষ্টি হাসির আভাস ফোনের অন্য প্রান্ত থেকেও অনুভব করা গেল। বললেন, ‘‘একটু আগে বারান্দায় বসে ইভনিং স্ন্যাক্স খাচ্ছিলাম আর আড্ডা মারছিলাম। সময়টা নষ্ট করতে চাই না।’’