এক ছবিতে আর মাধবনের সঙ্গে দেখা যাবে সাহেব চট্টোপাধ্যায়কে, কলকাতায় চলছে শুটিং। ছবি: সংগৃহীত।
নভেম্বরের শেষেই সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের সমাজমাধ্যমে ভেসে উঠেছিল কিছু পোস্ট। তা থেকে ইঙ্গিত মিলেছিল, মুম্বইয়ে কাজের জন্য যাচ্ছেন বাঙালি অভিনেতা। শুধু তা-ই নয়, তিনি লিখেছিলেন— এটা পঞ্চম পর্যায়। অর্থাৎ আগে থেকেই সেখানে কাজ করছেন তিনি। ভাইফোঁটার সময়ও আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। জানিয়েছিলেন, মুম্বইয়ে রয়েছেন। তবে ঘুণাক্ষরেও জানতে দেননি কী কাজ করছেন, কার সঙ্গে কাজ করছেন। ১১ ডিসেম্বর সাহেবকে পাওয়া গেল কলকাতায়। শীতের কুমোরটুলিতে।
সকাল থেকেই উত্তর কলকাতার ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল শুটিংয়ের প্রয়োজনীয় গাড়ি। ধীরে ধীরে ভিড় বেড়েছে। কলকাতার কোনও সংবাদমাধ্যমকেই খবর দিতে চায়নি ছবি নির্মাতা সংস্থা। তবু ইতিউতি ক্যামেরা তাক করেছেন কেউ কেউ। কারণ, শুধু সাহেব নন। কুমোরটুলির ভিতরে দেখা মিলেছে আর মাধবনের। গাঢ় বাদামি চেক শার্ট আর হালকা বাদামি ট্রাউজ়ারে রীতিমতো ফর্মাল লুকে দেখা গিয়েছে মাধবনকে। চোখে পাতলা ফ্রেমের চশমা, ছোট করে ছাঁটা চুল, মুখে দাড়ি-গোঁফের লেশমাত্র নেই। ‘শয়তান’ ছবির প্রতিনায়ক মাধবন যেন ইনি নন, ভুবনভোলানো হাসি নিয়ে কলকাতায় যেন হাজির প্রায় ২৩ বছর আগে ‘রহনা হ্যায় তেরে দিল মে’ ছবির মাধবন। বয়স বাড়েনি একটুও!
দু’একটি দৃশ্যের শুটিং হয়েছে। জানা গিয়েছে, আগামী ক’দিনে আরও কিছু দৃশ্যের শুটিং হবে কলকাতায়। আগামী কয়েক দিন এখানেই থাকবেন মাধবন । এ দিন ফাঁকা কুমোরপাড়ায় উত্তুরে হাওয়া লেগে উড়েছে গঙ্গামাটি শুকিয়ে যাওয়া ধুলো। কী ছবি, কেমন চরিত্র, ক’দিন থাকবেন কলকাতা— এ সব জানতে আনন্দবাজার অনলাইন ফের যোগাযোগ করেছিল সাহেবের সঙ্গে। কিন্তু এ বারও মুখে কুলুপ অভিনেতার। ছবির বিষয়ে একটি শব্দও খরচ করবেন না তিনি। জানিয়েছেন, এ দিন যাঁরা কুমোরপাড়ায় ছবি তুলেছিলেন দু’একটি, প্রায় সকলের ছবি বা ভিডিয়ো মুছে দেওয়া হয়েছে মোবাইল থেকে। নির্মাতা সংস্থার কড়া নির্দেশ রয়েছে, আসন্ন ছবি নিয়ে কোনও কথা বলা যাবে না।
তবে আর মাধবনের সঙ্গে যে পর্দা ভাগ করছেন সাহেব, তা তো স্পষ্ট। কেমন লাগছে মাধবনকে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন সাহেব। বললেন, “খুব ভাল অভিজ্ঞতা। আমি দেখেছি, যাঁরা খুব বড় শিল্পী তাঁরা খুব বিনয়ী হন। একেবারে বন্ধুর মতো মেশেন। মাধবন যে অত বড় একজন তারকা, তা বোঝাই যায় না। যে ভাবে আমার সঙ্গে কাজটা করেছেন, তাতে আমার মনে হয়েছে যেন বন্ধুর সঙ্গে কাজ করছি। বিষয়টা সহজ করে দিয়েছেন নিজেই।”
সাহেব মনে করেন, এটা তাঁর জীবনের একটি বড় প্রাপ্তি। ২০০৬ সালে তিনি গুফি পেন্টালের সঙ্গে প্রথম হিন্দি ছবিতে কাজ করেছিলেন। কিন্তু তেমন প্রচার পায়নি সে ছবি। সেই অর্থে সাহেবকে হিন্দিতে প্রথম চোখে পড়েছে বিরসা দাশগুপ্তের সিরিজ় ‘ব্ল্যাক ইউডো’তে, ২০২০ সালে। তার পর তিনি কাজ করেছেন, ২০২৩-এর হিন্দি সিরিজ় ‘মিসেস আন্ডারকভার’-এ। এ বার প্রথম এত বড় একটা কাজ করছেন সাহেব। স্বাভাবিক ভাবেই খুশি তিনি।
মাধবনের সঙ্গে কলকাতা নিয়েও নানা বিষয়ে কথা হয়েছে, জানিয়েছেন সাহেব। তিনি বলেন, “কলকাতায় আমরা এখন কী কী কাজ করছি, সেই বিষয়ে কথা হল। আমার শেষ ছবি ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’র পোস্টার দেখালাম ওঁকে। তা ছাড়া, গান নিয়ে কথা হল। আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারি জেনে মাধবন খুব খুশি হয়েছেন।”
শুধু তা-ই নয়, কুমোরটুলিতে এসে শুটিং করে আপ্লুত মাধবন। সাহেব এবং অন্যদের কাছ থেকে খুব ভাল ভাবে বুঝে নিয়েছেন, কী ভাবে প্রতিমা তৈরি হয় এখানে। কী ভাবে মণ্ডপের উদ্দেশে পাড়ি দেয় সেই প্রতিমা— সব কিছুই।
সাহেবের কথা থেকে বোঝা গিয়েছে, মুম্বই অংশের শুটিং শেষ করে কলকাতা অংশের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে ছবিতে শহরের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু ছবির নাম বা পরিচালকের নাম কোনও ভাবেই বলতে রাজি নন সাহেব।
অন্য এক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ছবির নাম ‘আপ জ্যায়সা কোই’।