২০১৫ সালে যখন ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ মুক্তি পাচ্ছে, তখন থেকেই সম্পর্কের শুরুয়াত। —ফাইল চিত্র
গল্পের নায়ক থাকেন দক্ষিণ কলকাতার কালিকাপুর, নায়িকা বিরাটিতে। দেখা হয়েছিল সিনেমার সেটে। প্রাথমিক আড়ষ্টতা কাটিয়ে কাজ করতে করতে আলাপও গড়াল। তবে প্রেম হতে তখনও দু’বছর দেরি। নায়িকা ইতিমধ্যে অন্য এক জনের প্রেমে পড়লেন। নায়কের জীবনেও রয়েছেন অন্য কেউ। তবে নায়ক বুঝলেন, তাঁর মন অন্যত্র মজেছে। সেই মেয়েকেই তাঁর চাই। সিনেমার সেট থেকে বেরিয়েও বাকিটা সিনেমার মতো।
আট বছর আগের এক দিন, পরস্পরের প্রতি প্রেম কবুল করেছিলেন ঋদ্ধি সেন এবং সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪৩০ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ, খাঁটি বাঙালির মতো প্রেমের বর্ষপূর্তির কথা ঘোষণা করলেন ঋদ্ধি। সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, “প্রথম দেখা আট বছর আগে। তবে এই অন্তহীন শেষের জন্মভূমিতে ‘আজটাই প্রথম’। প্রত্যেক দিন নতুন সূচনা খুঁজে পাই।”
কী ভাবে শুরু এই পথ চলার? আনন্দবাজার অনলাইনকে ঋদ্ধি বললেন তাঁর প্রেমের কাহিনি। সুমন মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘আজকের সাজাহান’ নাটকের প্রথম শো ছিল শনিবারই, দেখতে গিয়েছিলেন সুরঙ্গনা। সেখানেই হয়েছে প্রেমের উদ্যাপন। ঋদ্ধি জানালেন, তাঁদের প্রতিটি দিন এমনই কাটে— মঞ্চে, সেটে কিংবা বাড়ির ভিতরেই। দু’জনে মেতে থাকেন আদানপ্রদানে, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে।
২০১৩ সালে 'ওপেন টি বায়োস্কোপ' ছবিটি করতে গিয়ে তাঁদের প্রথম দেখা। ছবির পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ঋদ্ধিকে সুরঙ্গনার ছবি দেখিয়েছিলেন। ঋদ্ধির কথায়, “ঢাকা কালীবাড়ির কাছে একটা জায়গায় আমাদের লুক সেট হয়েছিল। খুব গম্ভীর মুখ করে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছবি তুলেছিলাম।” কিন্তু প্রেম হয়নি সেই সময়ে। কথাবার্তা হত, ভাল বন্ধুত্ব ছিল। ঋদ্ধির জীবনে বান্ধবীও ছিলেন তখন। ২০১৫ সালে যখন ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ মুক্তি পাচ্ছে, তখন থেকেই সম্পর্কের শুরুয়াত। ঋদ্ধির কথায়, “সুরঙ্গনার তখন বয়ফ্রেন্ড হল। আমি বুঝতে পারলাম, এটা হওয়াতে মনে কষ্ট হচ্ছে আমার। তার আগে বুঝতে পারিনি যে, সুরঙ্গনার প্রতি আমার অন্য রকম ভাললাগা রয়েছে।”
মাঝে ঘটকালি করলেন বন্ধু, অভিনেতা ঋতপ্রভ মুখোপাধ্যায়। সুরঙ্গনার সেই প্রেমিকের সঙ্গেও ঘটনাচক্রে সম্পর্কটা ভেঙে গেল। শাপে বর হল ঋদ্ধির। অকপটে বললেন, “সামনাসামনি আমি দুঃখপ্রকাশ করলাম ঠিকই, কিন্তু মনের ভিতরে একটা প্রচণ্ড আনন্দ হল!”
অনেক সাহস করে দু-আড়াই পাতার একটা লম্বা চিঠি লিখলেন তিনি। চিঠিটা একটা বইয়ের ভিতরে ঢুকিয়ে বিরাটিতে সুরঙ্গনার টিউশন ক্লাসে দিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য উত্তর পাননি। ঋদ্ধির কথায়, “থ্রিলার ছবির মতো দীর্ঘ অপেক্ষার পর মোবাইলে ও ‘হ্যাঁ’ বলে। আমরা দু’জনেই খুব লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলাম।” তখন তাঁরা দুজনেই দ্বাদশ শ্রেণিতে। ঋদ্ধি জানান, সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হয়েছে তাঁদের বন্ধুত্বও। কোনও ইগোর দ্বন্দ্ব, ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া এত দিন সম্পর্কে থেকে যাওয়াটা বড় ব্যাপার বলেই মনে করেন ঋদ্ধি। একে অপরের স্বভাব পাল্টাতে চান না তাঁরা। পরস্পরের প্রতি রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা। আট বছর সম্পর্ক টিকে থাকার মূলে রয়েছে সেই প্রগাঢ় আস্থা এবং বন্ধুত্ব।
বিয়ে করার কথা ভাবছেন কি? ঋদ্ধি জানালেন, কিছু দিন আগেই কথা হচ্ছিল এ নিয়ে। তাঁর কথায়, “সুরঙ্গনা বলল, বিয়েটার মানেটা কী? এটা কি একটা এনজেগমেন্ট রিং, সই, মালাবদল? এতে কী প্রমাণ হয়? আমরা যে একসঙ্গে আছি, এটাই কি যথেষ্ট নয়?”
ঋদ্ধির দাবি, তিনিও সহমত। যে কোনও এক সময় ব্যাপারটা আনুষ্ঠানিক ভাবে করা যাবে। তাঁর কথায়, “একসঙ্গেই তো থাকি। এত বছর আছি। এখনও যে সম্পর্কটা অফিশিয়াল নয়, সেটাই বা কে বলতে পারে?”