হাঁসখালির ঘটনাটি আদতে ধর্ষণ কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আপনি রেপ বলবেন, না কি প্রেগনেন্ট বলবেন, না কি লাভ অ্যাফেয়ার বলবেন... না কি শরীরটা খারাপ ছিল, না কি কেউ ধরে মেরেছে? আমি পুলিশকে বলেছি ঘটনাটা কী? ... মেয়েটার না কি লভ অ্যাফেয়ার ছিল শুনেছি।’’
হাঁসখালির ঘটনা নিয়ে তৃণা-রণিতার বক্তব্য
হাঁসখালির ঘটনার প্রতিবাদে সরব সাধারণ মানুষ থেকে খ্যাতনামীরা। আঙুল তোলা হচ্ছে শাসকদলের দিকে।
সোমবার বিশ্ববাংলা প্রাঙ্গণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাঁসখালির ঘটনা প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাটি আদতে ধর্ষণ কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনি রেপ বলবেন, না কি প্রেগনেন্ট বলবেন, না কি লাভ অ্যাফেয়ার বলবেন... না কি শরীরটা খারাপ ছিল, না কি কেউ ধরে মেরেছে? আমি পুলিশকে বলেছি ঘটনাটা কী? ... মেয়েটার না কি লভ অ্যাফেয়ার ছিল শুনেছি।’’
সৃজিত মুখোপাধ্যায়-সহ একাধিক শিল্পী ফেসবুকে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। সৃজিতের মতে, মমতার বক্তব্য ‘অসংবেদনশীল’ এবং ‘আপত্তিকর’।
কিন্তু তৃণমূলের সমর্থক এবং টেলিপাড়ার নায়িকা তৃণা সাহা এবং রণিতা দাস মমতার বক্তব্য নিয়ে কী ভাবছেন? উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন। তৃণা এবং রণিতা দু’জনেরই দাবি, তদন্ত হওয়া দরকার। যাঁরা এই অন্যায় করেছেন, তাঁদের দ্রুত শাস্তি হওয়া উচিত।
তৃণার কথায়, ‘‘তৃণমূলের সমর্থক হিসেবে কোনও বক্তব্য আমার নেই। এক জন মহিলা হিসেবে আমার একটাই দাবি, খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত হয়ে শাস্তি হওয়া দরকার দোষীদের। কারণ আমরা তো জানি না, ঘটনাস্থলে ঠিক কী কী ঘটেছিল। সেটা জানার জন্য যত দ্রুত সম্ভব আইনি পথে যেতে হবে। তা ছাড়া, দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কী বলেছেন, তা নিয়ে যদি মানুষ হইহই করা শুরু করে, তা হলে আসল তদন্ত এবং বিচারে দেরি হবে। কথায় সময় যাবে। আর তাতে বিচার পেতে দেরি হবে। সেটি কাম্য নয়।’’
তৃণার মতে, দোষীদের ভয় দেখানো উচিত। আগের একাধিক ধর্ষণের ঘটনার পরে ফাঁসি বা এনকাউন্টারেও মানুষ ভয় পায়নি। তাই পর্দার ‘গুনগুন’-এর মতে, দোষীদের ততটাই কষ্ট দেওয়া উচিত, যতটা তারা নির্যাতিতাকে দিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটির কোনও অ্যাফেয়ার থাকতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, তাঁর প্রেমিক ধর্ষণ করবে! শাস্তি চাই অপরাধীদের!’’
কিন্তু মমতার মন্তব্য নিয়ে তৃণার কোনও বক্তব্য নেই। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, তাঁরা আমার থেকে অনেক সিনিয়র। তাঁরা এই বিষয়টি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, অনেক বেশি জ্ঞানী তাঁরা। আমি করিনি। তাই আমার মন্তব্য করা উচিত নয়।’’
নদিয়ার এই ঘটনাকে ‘ছোট ঘটনা’ বলে মন্তব্য করায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন নির্যাতিতার বাবা। একই সঙ্গে অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। নির্যাতিতার বাবার বক্তব্য, ‘‘উনি এক জন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এই কথা কী করে বললেন?’’ তিনি অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিও জানিয়েছেন। ঘটনার কথা জানার পর রণিতা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দ্রুত বিচারের অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। মেয়েটির বাবা এখন কোন মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তা আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারব না। অপরাধীরা শাস্তি পেলে হয়তো উনি খানিক স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবেন। আমি যে দলেরই সমর্থক হই না কেন, সবার উপরে মানুষ সত্যি। তাই সব সময়ে চাইব, নির্যাতিতা সুবিচার পাক।’’
মমতার মন্তব্য নিয়ে পর্দার ‘বাহামণি’র বক্তব্য, ‘‘কে কী মন্তব্য করেছেন, কেন করেছেন, কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কী বলছেন, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। হতেই পারে, দিদি আরও কিছু তথ্য পেয়েছেন, যা আমরা জানি না। কিন্তু আমার বিশ্বাস, এক জন মহিলা হিসাবে দিদিও অপরাধীদের শাস্তি দিতে চাইছেন।’’