তিয়াসার সঙ্গে দাম্পত্য নিয়ে মুখ খুললেন সুবান রায়।
‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিক খ্যাত তিয়াসা এবং সুবান রায়ের চার বছরের দাম্পত্যে নাকি ছেদ পড়েছে! এমনই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে টেলিপাড়ায়। তিয়াসা যদিও সেই গুঞ্জন এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। সুবান এ বার মুখ খুললেন আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে।
প্রশ্ন: একই পেশায় স্বামী-স্ত্রী, তার ভাল দিক যেমন রয়েছে, খারাপ দিকও তো রয়েছে। কখনও মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়েছে একে অপরের সঙ্গে?
সুবান: তিয়াসার সঙ্গে কোনও দিন সে ভাবে সংসার ধর্ম পালন করতেই পারিনি। বিয়ের পর তিয়াসা কাজের জন্যই গোবরডাঙা থেকে টালিগঞ্জে আমার সঙ্গে থাকতে শুরু করে। আমি আগে থেকেই সেখানে থাকতাম। সেই ভাবে গুছিয়ে সংসার করতে পারিনি আমরা কারণ কাজের ধারাটাই এমন ছিল। এ রকমও হয়েছে, একই ছাদের তলায় থেকে প্রায় এক মাস একে অপরের মুখ দেখতে পাইনি। এক জন শ্যুটে বেরোতাম, অন্য জন শ্যুট থেকে বাড়ি ঢুকত। বা উল্টোটা।
প্রশ্ন: আপনি তো রান্না করতে ভালবাসেন, তিয়াসা কী বলেন আপনার রান্না খেয়ে?
সুবান: তিয়াসার তো আমার কিছুই ভাল লাগে না। আমি নাকি ভাল রান্না করি না। আমি নাকি কিছুই পারি না। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে গোটা মুরগি রান্না করেছি। নানা রকম রান্না করে শ্বশুরবাড়ির লোককে খাইয়েছি। তাঁরা অবশ্য ভাল বলেছেন। কত রকম স্যালাড তৈরি করেছি...
তিয়াসা ও সুবান
প্রশ্ন: আপনি নাকি খুব ‘ডমিনেটিং’?
সুবান: আমি নিয়মে থাকতে পছন্দ করি। যে সময়ে যেটা করা উচিত, সেটাই করি। তাই কখনও কখনও তিয়াসার কোনও কথায় রাজি না হওয়াটাকে ‘ডমিনেটিং’ বা ক্ষমতার প্রকাশ হিসেবে দেখতে পারে কেউ কেউ। তবে একটা ছেলে হিসেবে কম দুষ্টুমি করিনি ছোটবেলায়। কিন্তু আমার সামনে কেউ খারাপ কিছু করলে আমি প্রতিবাদ করি। এক কথায় বললে, আমি খুবই প্রতিবাদী ছেলে। সেটাকে কেউ ‘ডমিনেটিং’ বললে সেটা তাঁর ব্যাখ্যা।
প্রশ্ন: অভিনয় জগতে তিয়াসা অন্য পুরুষের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করে জনপ্রিয়। খারাপ লাগে?
সুবান: কাজের জায়গায় আমি অন্য নায়িকার সঙ্গে কাজ করি। তিয়াসা তেমনি অন্য নায়কের সঙ্গে কাজ করে। এটা স্বাভাবিক। তবে তিয়াসার পছন্দের পুরুষ যে কেমন, তা আমি আজও জানি না। তাকে দেখতে কেমন হবে, তার কী পছন্দ, এ সব কিছুই আমি জানি না।
প্রশ্ন: আপনার পছন্দের নারী?
সুবান: ক্যাটরিনা কইফ। দারুণ লাগে। তবে এখানে একটা কথা প্রথম বলতে চাই। এ বারের জি বাংলা সোনার সংসারে তিয়াসা সাদা শাড়ি পরেছিল, ওর ওই শাড়ি পরা, ভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ করেছে। ক্যাটরিনার মতোই দেখাচ্ছিল ওকে।
সুবান-তিয়াসার বিয়ের ফোটোশ্যুট
প্রশ্ন: আপনাদের প্রেমটা হল কী ভাবে?
সুবান: মঞ্চে অভিনয় করা থেকেই তিয়াসার সঙ্গে প্রেম। আমাদের নাটকের দলে নতুন নায়িকার দরকার ছিল। তখন থেকেই সবাই আমাকে আর ওকে নিয়ে মশকরা করত। পাত্তা দিইনি তখন। কিন্তু এক সময়ে বন্ধুত্ব বাড়ে। আমি তিয়াসাকে বলি বাড়িতে জানিয়ে রাখতে। কিন্তু আমার পরিকল্পনা ছিল, তারও এক বছর বাদে বিয়ে করব। কিন্তু দুম করে এক রাতে বিয়ে হয়ে যায় আমাদের।
প্রশ্ন: চার দিকে আপনার আর তিয়াসার বিচ্ছেদের গুঞ্জন…
সুবান: বিয়ে-এর পর শুরুর কয়েক দিনের মাথাতেই শুনতে পাই, আমাদের নাকি বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। কেবল ঝগড়া হয়েছিল সেই বার। তাতেই লোকে এই সব খবর রটিয়েছিল। কারওর যেন ঝগড়া হয় না। সম্প্রতিও বিচ্ছেদ নিয়ে চর্চা শুনছি। এত নেতিবাচক খবর ভাল লাগে না। কিছু যায় আসে না, এমন কথাও জোর দিয়ে আর বলতে পারব না আমি। ‘ডিভোর্স ডিভোর্স’ শুনতে শুনতে কোন দিন না সত্যি সত্যিই ‘ডিভোর্স’ হয়ে যায় আমাদের। প্রচুর মানুষ আমাদের খারাপ চায়। আর তাদের জন্যই বোধহয় আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। এই ভয়টা করে আমার। তবে ভবিষ্যতে কী হবে, তা কে বলতে পারে! তিয়াসার জন্য তাই আমার একটিই বার্তা, সম্পর্ক না থাকলেও তিয়াসার জন্য চির কাল ভাল চাইব আমি। সম্পর্ক যদি নষ্টও হয়, ওর কী ভাবে ভাল হয় সে দিকে সারা জীবন খেয়াল রাখব।
প্রশ্ন: পর্দায় খলনায়কের অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন, বাস্তবে কেমন সুবান?
সুবান: বাস্তব জীবনে আমি খুবই মিষ্টি, আবেগপ্রবণ ছেলে। ১৫ বছরের অভিনয় জীবনে বেশির ভাগ সময়ে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। ‘দুর্গা’ ধারাবাহিকে অভিনয় করার সময়ে আমার অভিনয় দেখে আমাকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও লাইনে দাঁড়িয়েছি কোনও কাজের জন্য, সেখান থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। ভাল লাগত। আমার অভিনয় গুণেই তো দর্শক খলনায়ক ভাবছেন আমায়। অভিনয় ভাল করেছি বলেই তো এ সব হচ্ছে।
প্রশ্ন: শুধু খলনায়কের চরিত্র। একঘেয়ে লাগে না?
সুবান: একেবারেই না। ভাল লাগে। আর এ বার তো জি বাংলায় আসছে ‘আমি তুমি আর মালতী’।
প্রশ্ন:সেটা কী?
সুবান: ‘কুলের আচার’-এর পর ফের জি বাংলার ছোট ছবিতে অভিনয় করছি। ‘আমি তুমি আর মালতী’ আমার দ্বিতীয় ছবি। এ বারে খলনায়ক নয়। মালতীর প্রেমে পড়া এক রোম্যান্টিক চরিত্র। পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় মজাদার চিত্রনাট্য লিখেছেন। কাটা কাটা সংলাপ। একেবারে অন্য স্বাদের চরিত্র। অভিনয় করে খুব ভাল লেগেছে। ২৫ জুলাই জি বাংলায় ছবিটি দেখা যাবে। আমি নিশ্চিত দর্শকেরা উপভোগ করবেন এই ছবি।
প্রশ্ন: বাকি নায়কদের মতো আপনাকে তেমন ভাবে নেটমাধ্যমে দেখা যায় না কেন?
সুবান: মফস্সল থেকে আসা একটি ছেলে ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিয়েছে পরিশ্রম করে। সে জানে কী ভাবে দিন কাটাতে হয়। তাই সম্ভবত টেলিপাড়ার বাকি নায়কের মতো পার্টি করা, আড্ডা মারা আমার পছন্দ নয়। নিজের মতো থাকতেই ভালবাসি আমি। নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে জীবন যাপন করাই আমার ধর্ম। পড়াশোনা করে, গিটার বাজিয়ে, নাটক বা ছবির জন্য লেখালেখি করেই অবসর সময় কাটাই। যা ভাল লাগে, তার ছবি তুলে পোস্ট করার কারণ খুঁজে পাই না।