নায়কের কাঁধে গোটা আর্মি

‘বাগী’র গল্প শুরু হয়েছিল নায়িকার অপহরণকে ঘিরে। ‘বাগী টু’তে পরিচালক বদলে গেলেও গল্পের শুরু খানিকটা যেন একই রয়ে গিয়েছে।

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০০:০১
Share:

টাইগার ফিরে এলেন। তবে এ বার প্রমাণ করলেন, তিনি একাই গোটা আর্মি। রনি ওরফে রণবীর প্রতাপ সিংহের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই জ্যাকি-পুত্র বুঝিয়ে দিলেন, অ্যাকশন ছাড়াও এ বার অভিনয়ের পাঠ নেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। অন্তত সেই সম্ভাবনা জিইয়ে রাখলেন।

Advertisement

‘বাগী’র গল্প শুরু হয়েছিল নায়িকার অপহরণকে ঘিরে। ‘বাগী টু’তে পরিচালক বদলে গেলেও গল্পের শুরু খানিকটা যেন একই রয়ে গিয়েছে। গুরুতর মারণরোগের অজুহাত দিয়ে নেহা (দিশা পাটনি) আর রনির (টাইগার শ্রফ) কলেজজীবনের দুরন্ত, মিষ্টি প্রেমকে নিজের দায়িত্বে ভেঙে দেয় নায়িকার বাবা। নায়িকা অগত্যা বাধ্য হয়ে বাবার দেখা ধনী ছেলেকে বিয়ে করতে পিঁড়িতে বসে। মনের দুঃখে নায়ক বনে, অর্থাৎ কাশ্মীরে চলে যায় দেশের হয়ে লড়াই করবে বলে। চার বছর পর হঠাৎ প্রাক্তন প্রেমিকার ফোনে কাতর হয়ে গোয়ায় ফেরে নায়ক। জানতে পারে, নায়িকার নাকি ছোট্ট একটি মেয়ে রয়েছে। কিন্তু সেই মেয়ের অপহরণ হয়েছে। আর অপহৃত মেয়ে রিয়াকে ফিরিয়ে আনতে মেয়ের বাবা, কাকা, প্রতিবেশী, পুলিশ— সকলেই নারাজ। অগত্যা নায়িকা প্রাক্তন প্রেমিকের সাহায্যপ্রার্থী হয়। অনুসন্ধানে নেমে নায়কের পরিচয় হয় নায়িকার মাদকাসক্ত দেওর সানি সালগাঁওকর (প্রতীক বব্বর), পুলিশের উঁচুতলার কর্মকর্তা শেরগিল (মনোজ বাজপেয়ী) আর ধুতি প্যান্ট পরা, চুলে ক্লিপ লাগানো ‘পাঙ্ক’ পুলিশ অফিসার এলএসডি-র (রণদীপ হুডা) সঙ্গে। ঘটনা এগোতেই নায়ক জানতে পারে, রিয়া নামে নাকি আদৌ কোনও ছোট মেয়েই নেই! তা হলে নায়িকার জরুরি তলবের কারণ কী? নায়িকা কি আদৌ সুখে নেই? না কি সেই গভীর অ-সুখের পিছনে দায়ী তার স্বামী? আরবসাগরের পাড়ে গোয়ার পটভূমিতে পুলিশের চোখের আড়ালে কী কী হয়ে চলেছে? একটা জাল গোটাতে গিয়ে হাজারোটা জালে জড়িয়ে পড়ে নায়ক!

ছবিতে হালকা প্রেম ছিল, সেই প্রেমে প্রত্যাশা ছিল, প্রেমের টানে বিরহক্লান্ত প্রেমিকের প্রত্যাবর্তন ছিল। বিশ্বাসঘাতকতা, সুন্দরী নায়িকার চাবুক চেহারা, গোয়াকে ঘিরে মাদকের অন্ধকার দুনিয়ায় পাড়ি, এমনকী ছবির শুরুতে কাশ্মীরের উত্তপ্ত রাজনীতি... সবই ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ছিল মারদাঙ্গা। তাই টাইগার একা জল থেকে লাফিয়ে উঠে বিরোধীপক্ষকে দুরমুশ করতে পারে, নায়িকার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার প্রতিবাদে এক ঘুষিতে পুলিশের চোয়াল ফাটিয়ে দাঁত ভেঙে দিতে পারে, শয়তানদের একে একে হাত-পা ভেঙে শায়েস্তা করতে পারে, গুলির বর্ষণ তোয়াক্কা না করে মাটি থেকে লাফিয়ে সোজা হেলিকপ্টারে উঠে পড়তে পারে! তবে অ্যাকশন দৃশ্যের ঘনঘটায় কোথাও কোথাও হাঁপ ধরলেও হলের সিট ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না শুধু মাত্র টানটান গল্পের কারণেই। দিশার মিষ্টি হাসি আর সুন্দর চেহারা ছাড়া ছবিতে স্বাভাবিক ভাবেই কিছু করার ছিল না। কিন্তু টাইগার লড়তে লড়তে হাঁপিয়ে উঠেছেন। সেই রণক্লান্ত নায়ক থেকে প্রতিহিংসার আক্রোশ... সবটাই ফোটানোর চেষ্টা করেছেন সাধ্য মতো। মাদকাসক্তের ভূমিকায় প্রতীক এক কথায় দাপিয়ে অভিনয় করেছেন। মনোজ বাজপেয়ীও বরাবরের মতোই চমৎকার। তবে রণদীপ হুডাকে দেখে আশ যেন মিটল না। তাঁর মতো অভিনেতাকে আর একটু বেশি সময়, সুযোগ এবং চরিত্রের বলিষ্ঠতা দিতেই পারতেন পরিচালক। দীপক ডোব্রিয়াল (ওসমান) ও দর্শন কুমার (নেহার স্বামী শেখর) অত্যন্ত সাবলীল। তবে টানটান গল্পের মাঝে যে হঠাৎ করে বিয়েবাড়িতে ঘাঘরা-চোলি পরা নায়িকার নাচ না ঢোকালেও চলে, সেটা বোধহয় পরিচালকের এ বার বোঝা দরকার।

Advertisement

বাগী টু

পরিচালনা: আহমেদ খান
অভিনয়: টাইগার, দিশা, মনোজ, রণদীপ, প্রতীক, দীপক, দর্শন

৫.৫/১০

চিত্রনাট্যে বিশেষ নতুনত্ব না থাকলেও তা অ্যাকশন ড্রামার জন্য চলনসই। গোয়ার অলি-গলি, চার্চের ধার, শহরের পরিধির বাইরের দৃশ্য ক্যামেরায় ভাল ফুটিয়ে তুলেছেন চিত্রগ্রাহকেরা। তবে একা নায়কের কাঁধে গোটা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব না চাপিয়ে দিলে পরিচালক আহমেদ খান ছবিটাকে হয়তো বা ‘মাইন্ডলেস’ অ্যাকশন ছবির তকমা থেকে বের করে আনতে পারতেন।

সব শেষে, আমরা যারা নব্বইয়ে বেড়ে উঠেছি, তারা ‘এক দো তিন...’এ মাধুরী দীক্ষিতের নাচেই আজও মুগ্ধ। তাই জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের বিভঙ্গের মাঝে অ্যাবস দেখা গেলেও লালিত্যের অভাবটাই কিন্তু চোখে ঠেকেছে বেশি। আর ঠিক এই কারণেই ‘মোহিনী’তে কোমর দোলালেও জ্যাকলিন মন হরণ করতে পারলেন কই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement