R.D.Burman

পঞ্চমে মেলোডি, জন্মান্তরের সুরসাধক আরডি বর্মন

‘নাইন্টিন ফরটি টু আ লভ স্টোরি’র পর আর ডি-র হাতে কোনও কাজ ছিল না। সেই নব্বইয়ের দশকে রাহুল দেব বর্মনকে কোনও কাজ দেওয়া হত না! বলা হত, উনি সুর করলে ছবির গান হিট হবে না! ভাবুন তো সেই সময় ও রকম একটা পর্যায়ের মানুষের এই অবস্থা!

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ১৬:৫৮
Share:

সুরের আকাশের ভিন্ন এক ধ্রুবতারা তিনি। রাহুল দেব বর্মন।

সে দিন রোজের মতোই মর্নিং ওয়াক করতে বেরিয়েছিলেন শচীনকর্তা। বাড়ি ফিরে রাহুলকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। সে দিনের রাহুল তো অবাক। পরে বাবার মুখে শুনলেন, আজ রাস্তায় বেশ কিছু মানুষ তাঁকে রাহুল দেব বর্মনের বাবা বলে চিহ্নিত করায় তিনি বেজায় খুশি। সুরের আকাশের ভিন্ন এক ধ্রুবতারা তিনি। রাহুল দেব বর্মন। আজ সারা দেশের গানের সুরে পঞ্চমের উচ্ছ্বাস! কিন্তু নেওয়ার ভাণ্ডারে কতটাই বা তাঁকে আমরা দিতে পেরেছি?
‘নাইন্টিন ফরটি টু আ লভ স্টোরি’র পর আর ডি-র হাতে কোনও কাজ ছিল না। সেই নব্বইয়ের দশকে রাহুল দেব বর্মনকে কোনও কাজ দেওয়া হত না! বলা হত, উনি সুর করলে ছবির গান হিট হবে না! ভাবুন তো সেই সময় ও রকম একটা পর্যায়ের মানুষের এই অবস্থা! আজ ওঁর জন্মদিনে আমার ওই কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে আর কষ্ট হচ্ছে...’’
আসলে শিল্পের বাজারে ক্ষণিকের ব্যর্থতা কি এতটাই দাগ রেখে দেয় শিল্পের সেই কারিগরের জীবনে?
‘‘এক বার কোনও কারণে গাইতে না পারলে, ছবি, গান ফ্লপ হলেই সে ব্রাত্য! আসলে এই পাবলিক বিষয়টা ভয়ঙ্কর! তাঁরা কখন ফিশ ফ্রাই খাবেন আর কখন চাউমিন সেটা বোঝা প্রায় অসম্ভব!’’ গানের রিহার্সাল করতে করতেই আজকের জন্মদিনের পঞ্চমের জন্য তিনি যেমন সবাক তেমনই খানিক হতাশ। তাঁর মনে হয় তারিখটা ২৭ থেকে ২৯ হলেই লোকে রাহুল দেব বর্মনের সমালোচনা করতে বসে যাবেন। যেমন সম্প্রতি ফেসবুকে রূপঙ্কর দেখেছেন, রাহুল দেব বর্মণ কোন ইংরিজি গান থেকে টুকেছেন বেশ কিছু মানুষ সেই নিয়ে আলোচনা করছেন! চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন রূপঙ্কর, ‘‘এই টেকনোলজির যুগে আর ডি থাকলে আজ অনেক সঙ্গীত পরিচালকের ভাত মারা যেত!’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

দেখুন, ‘শব্দকল্পদ্রুম’-এর ট্রেলার, এ বার মুক্তির অপেক্ষা

Advertisement

কাল বিয়ে করছেন এই বলি নায়িকা, হয়ে গেল মেহেন্দি

সুরকার, গায়ক এই মানুষটি তখনকার ইন্ডাস্ট্রির চেয়ে একশো ভাগ এগিয়েছিলেন বলে মনে করেন রূপঙ্কর। ‘‘শোলে ছবিতে হেমা মালিনীকে গব্বরের গুন্ডারা যখন তাড়া করেছে তখন একমাত্র রাহুল দেব বর্মণের পক্ষেই সম্ভব ওই টেনশনের সিচুয়েশনে তবলার ব্যবহার করা! পারকাশনের ব্যবহার ওঁর মতো আর কেউ পারবেন না।’’ তাঁর মুগ্ধতার মানুষকে নিয়ে আবেগে ভাসলেন রূপঙ্কর।
অন্য দিকে সঙ্গীত পরিচালক জয় সরকার বললেন, ‘‘সত্তরের দশক ছিল আর ডি-র দশক। ওই সময় আমার জন্ম হয়েছিল ভাগ্যিস! তাই ওঁর গান শুনে বড় হতে পেরেছিলাম! আজ গানবাজনার জগতে আমরা যে যা করছি তাঁর সবটাই ওঁর জন্য! এটা স্বীকার করতে কোনও দ্বিধা নেই আমার।’’ এই কৃতজ্ঞতার সুর খানিক কঠোরও হল।’’ এখন বলিউডে যে মানের গানবাজনা হয় তা শুনে মনে হয় এই ইন্ডাস্ট্রিতেই আর ডি বর্মন এমন সব চমকে দেওয়া, মাতিয়ে রাখা কাজ করে গেছেন। খুব খারাপ লাগে দেখে যে পরম্পরা কেমন করে আজকের সুরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে!’’
আর ডি বর্মন মানে যেমন এক মুঠো ঝলমলে উচ্ছ্বাস তেমনই আর ডি বর্মন মানে সংযম, যা কৃতি সুরকারের অন্যতম পরিচয়। মনে করিয়ে দিলেন জয়। ‘‘দেখুন ‘মুসাফির হু ইয়ারো’ গানটির সুর করছেন যখন আর ডি তখন সারা রাত গাড়ি করে মুম্বইয়ের পথে পথে ঘুরে বেরিয়েছিলেন তিনি। তার পর যে গান হল তাতে রিদিমের একটাই প্যাটার্ন থাকল। ইন্টারলিউডে গানের মুখড়া বাজলো। ব্রেক করে অন্য কোনও যন্ত্র এনে গানের মেলোডি নষ্ট করতে চাননি আর ডি। এই সংযম কিন্তু শিক্ষার,’’ যোগ করলেন জয় সরকার।
আসলে যত এক্সপেরিমেন্টই আর ডি বর্মন করে থাকুন তার সবটাই মেলোডির জন্য! মেলোডিকে ছাপিয়ে কোনও কম্প্রোমাইজ তিনি করেননি। এমনকি শোনা যায়, ‘ছোটে নবাব’ ছবিতে সুর করার সময় এই মেলোডিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বাবা শচীন দেব বর্মনকে কিছুই না বলে তিনি লতা মঙ্গেশকরকে ‘ঘর আয়ি’ ক্ল্যাসিকাল গায়কী নির্ভর গানটি গাইতে বলে দেন। জিজ্ঞেস করার প্রসঙ্গ এই কারণেই উঠেছিল, কারণ সে সময়ে বেশ কিছু দিন শচীন দেব বর্মনের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের ঝগড়া চলছিল। শচীন দেব বর্মন তাঁর কোনও ছবিতেই লতা মঙ্গেশকরকে গাওয়াচ্ছিলেন না। কিন্তু ও রকম ধ্রুপদী মেজাজের গানের জন্য রাহুল দেব বর্মনের লতা মঙ্গেশকরকেই চাই। ব্যস! উনি ফোন করলেন। লতাজি গানের কম্পোজিশন শুনে আনন্দের সঙ্গে গান রেকর্ড করলেন শুধু নয়, শচীনকর্তা সেই গান শুনে ‘বন্দিনী’ ছবিতে আবার লতা মঙ্গেশকরকে গাওয়ালেন! মেলোডির জয় হল!
এমনই ছিলেন রাহুল দেব বর্মন। এক সময়ে বছরে সতেরোটা ছবির জন্য গান তৈরি করেছেন তিনি। কিন্তু আত্মবিশ্বাস, গান নিয়ে পড়াশোনার ফলে নিজের মধ্যে যে ক্ষমতার বলয় তৈরি করেছিলেন তিনি, সেই বলয় তাঁকে বরাবর বাজারি নিয়মকে ভেঙে অন্য রাস্তায় গান বাঁধার স্বপ্নকে সুরে ভাসিয়েছিল।

সেই সুরে দিকদিগন্ত আজও পঞ্চমমুখর!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement