‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’র কুলজিতকে মনে আছে? কাজল অর্থাৎ সিমরনের সেই দাম্ভিক বাগদত্তের ভূমিকার অভিনয় করেছিলেন পরমীত সেঠী।
ছোট এবং তুলনামূলক ভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেও নজর কেড়েছিলেন নবাগত পরমীত।
এই ছবির মাধ্যমে আদিত্য চোপড়া পরিচালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন বলিউডে। একই সঙ্গে পরমীতেরও বড় পর্দায় হাতেখড়ি হয় ডিডিএলজে-র সঙ্গেই।
১৯৬১ সালের ১১ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে জন্ম পরমীতের। মুম্বইয়ের সিডেনহাম কলেজ অফ কমার্স এন্ড ইকোনমিক্স থেকে স্নাতক।
মন দিয়ে পড়াশোনা শেষ করলেও নিজের জন্য চিরাচরিত কোনও পেশা বেছে নিতে চাননি পরমীত। অভিনয় জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছে নিয়ে স্ট্রাগল শুরু হয় তাঁর।
১৯৯২ সালে একটি টেলিভিশনে একটি বড় কাজের সুযোগ আসে তাঁর কাছে। কিন্তু তখনও নিজের পায়ের তলার জমি শক্ত করতে উঠতে পারেননি পরমীত।
এ ভাবেই টানা কয়েক বছর স্ট্রাগলের পর অবশেষে ১৯৯৫ সালে মনের মতো সুযোগ দরজায় কড়া নাড়ে অভিনেতার। যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’ ছবিতে অভিনয় করেন পরমীত।
তবে নায়কের চরিত্রে নয়, পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। কাজলের বাগদত্তের ভূমিকায় অভিনয় করেও এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা আরও প্রশস্ত করেন পরমীত।
এরপর তিনি ‘দিলজলে’, ‘ধড়কন’, ‘মেলা’, ‘ঝঙ্কার বিটস’-এর মতো একের পর এক জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেন।
পরমীতের অভিনয় দক্ষতার কথা শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ২০০৪ সালে ইজরায়েলি ছবি ‘টার্ন লেফট অ্যাট দ্য এন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।
এ ছাড়াও বড় পর্দার সঙ্গেই ছোট পর্দাতেও চুটিয়ে কাজ করেন পরমীত। ‘দস্তান’, ‘কুরুক্ষেত্র’, ‘পাহারাদার’, ‘সুজাতা’-র মতো বিখ্যাত ধারাবাহিকের চেনা মুখ হয়ে উঠেছিলেন অভিনেতা।
একই সঙ্গে ছোট পর্দায় এবং বড় পর্দায় সাফল্যের পরে লেখক এবং পরিচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন পরমীত। ২০১০ সালে যশ ব্যানারের ‘বদমাশ কোম্পানি’ ছবিটি পরিচালনা করেন তিনি। ছবির মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন শহিদ কপূর এবং অনুষ্কা শর্মা।
ছবিটির স্ক্রিপ্ট এবং সংলাপ মাত্র ৬ দিনের মধ্যে লিখে শেষ করেছিলেন পরমীত। বক্স অফিসেও সাফল্য পায় ‘বদমাশ কোম্পানি’। সেই সময় প্রায় ৩৫০ মিলিয়নের ব্যবসা করে এই ছবি।
এ ছাড়াও টেলিভিশনের জন্য ‘সুমিত সামহাল লেগা’ এবং ‘হর মর্দ কা দর্দ’ শীর্ষক দু’টি ধারাবাহিক পরিচালনা করেন।
পেশাগত জীবন যতটা মসৃণ ছিল, ব্যক্তিগত জীবন ছিল ঠিক তাঁর উল্টো। অভিনেত্রী অর্চনা পূরণ সিংহের সঙ্গে সুখের সংসার গড়ে তুললেও, তাঁদের শুরুর দিকের যাত্রাটা ছিল বেশ কঠিন।
বয়সে বড় অর্চনাকে প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে যায় পরমীতের। তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে অর্চনার সঙ্গে আলাপ হয় অভিনেতার। অর্চনা সেই সময় বলিউডের নাম করা অভিনেত্রী। পরমীত তাঁর তুলনায় তখনও তাঁর মতো জনপ্রিয়তার স্বাদ পাননি।
ধীরে ধীরে কথা শুরু হয় তাঁদের। এরপর ভাল লাগা ভালবাসায় পরিণত হতে বেশি সময় নেয়নি। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হলেও, বিয়েতে মত ছিল না অর্চনার। অগত্যা তাঁরা দু’জন লিভ ইন করতেন।
১৯৯২ সালে ধারাবাহিকে বড় অফারটি পাওয়ার পরেই অর্চনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পরমীত। এ বার আর পরমীতকে ফেরাতে পারেননি অর্চনা।
তবে ডিভোর্সি এবং বয়সে বড় অর্চনার সঙ্গে বিয়েতে সায় ছিল না পরমীতের মা বাবার। কিন্তু প্রেমিকার হাত ছাড়তে নারাজ পরমীত নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে পুরোহিত ডেকে বন্ধুদের উপস্থিতিতে চুপিসারে বিয়ে সারেন সেই সময়। চার বছর তাঁদের বিয়ের কথা লুকিয়ে রেখেছিলেন অর্চনা এবং পরমীত।
দুই দশকেরও বেশি সময় পরমীত কাটিয়ে ফেলেছেন বলিউডে। নিজের শর্তে, নিজের মতো করে এগিয়েছেন তিনি। কেরিয়ারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে নিটোল সংসার গুছিয়েছেন পরমীত।