স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।
নিজের জন্মদিনে সবচেয়ে বড় আক্ষেপ ‘রাবেয়া’ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের? মা গোপা মুখোপাধ্যায় থাকলে এক সপ্তাহ আগে থেকে রান্নার জোগাড় শুরু হেয় যেত। বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায় বাচ্চাদের মতো হইহই জুড়ে দিতেন বড় মেয়ের জন্মদিন নিয়ে। কেমন কাটালেন, সারা দিন কী করলেন তিনি? এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানালেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে।
সকালে চোখ মেলেই কী মনে হল?
স্বস্তিকা: (হেসে ফেলে) আমারও ৪০ হয়ে গেল! স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ৪০ বছরে পা দিয়ে দিল? ১২ ডিসেম্বরের রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত এই ভেবেই আনন্দে কাটিয়ে দিচ্ছিলাম, আমার এখনও ৩৯। নিজেরই কেমন অবাক লাগছে যতবার নিজের বয়স মনে পড়ছে।
৪০ বছরের জন্মদিনে স্পেশ্যাল উদযাপন কী হচ্ছে?
স্বস্তিকা: ২৪ ডিসেম্বর হইচইয়ে ‘চরিত্রহীন ৩’-এর স্ট্রিমিং। জন্মদিনের দুপুর, বিকেল, সন্ধে এসভিএফ অফিসে। প্রচারের জন্য। সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেব বলে। রাতে বোনের বাড়ি খাওয়াদাওয়া। মেয়ে সকালেই চলে গিয়েছে। নিশ্চয়ই আমার পছন্দের কিছু না কিছু করবে ওরা সবাই মিলে। পুরোটাই সারপ্রাইজ রেখেছে। জানতে পারিনি। সারাদিন ব্যস্ততা। সন্ধেটুকুই ছুটি। রোজ আমি যখন কাজে বের হই পরিবার ঘুমোয়। আবার ওরা যখন ঘুমোতে যায় তখন আমি বাড়ি ফিরি। কী আশ্চর্য জীবন!
মা-বাবা থাকলে নিশ্চয়ই অনেক বড় আয়োজন হত?
স্বস্তিকা: এ বছর বলে নয়। প্রতি ১৩ ডিসেম্বরের এক সপ্তাহ আগে থেকে মা বলতে শুরু করতেন, ভেবলি তোর জন্মদিন আসছে। আমার জন্য ভালমন্দ রান্নাও করতেন নিজের হাতে। আমার মা তো খুব গোছানো, সংসারী। কত রকমের রান্না জানতেন। আমি একেবারেই রান্না পারি না। মা থাকলে আজ পাতে কলার বড়া, তিল ভাজা পড়ত। চালের পায়েস রান্না হত। বাবাও ছেলেমানুষের মতো হইহই করতেন। ঠিক আছে, একটা না একটা দিন তো সবাইকেই বড় হতে হয়।
২০২০ স্বস্তিকার জীবনে মাইলস্টোন? দু’হাত ভরে পেয়েছেন। স্বজন হারানোর ব্যথাও সহ্য করেছেন।
স্বস্তিকা: খুব অবাক হয়েছি আমিও। ভীষণ কঠিন একটা বছর। সেই বছরেই জাতীয় স্তরে আমার এতগুলো কাজ মুক্তি পেল। এই বছরেই আমি আবার ‘চরিত্রহীন’ হলাম! (হাসতে হাসতে) পার্ট অফ এ জোক। কেরিয়ারের দিক থেকে এত গুরুত্বপূর্ণ বছর হয়ে দাঁড়াবে ২০২০, ভাবতেই পারিনি। বরং, অন্য বছরের তুলনায় এই বছর বেশি কাজ করলাম। ৬ মাস কাজ না করেও। এক এক সময় মনে হচ্ছে, বাবা উপরে গিয়ে নির্ঘাৎ কলকাঠি নাড়িয়েছেন। তাই সব কাজ ঝরঝরিয়ে আমার ঝুলিতে এসে পড়ছে।
সবাই আরও একটা কথা বলছে। আবার হইচই। আবার স্বস্তিকা। আবার বোল্ড...
স্বস্তিকা: আমি বলব, সুদীপ্ত রায়ের ‘তাসের ঘর’ আরও বেশি বোল্ড, সাহসী। ওখানে আমি একা একটা ছবি টেনে নিয়ে গিয়েছি। ভাল-মন্দ সব আমার ঘাড়ে ছিল। সারাক্ষণ ক্যামেরার সঙ্গে আমাকে কথা বলে যেতে হয়েছে। যা আমরা একেবারেই করি না। বিষয়টাও সাহসী। এটা বেশি সাহসিকতার না ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করা? সত্যিই খুব কঠিন ছিল জার্নিটা। আসলে এখনও মানুষ ‘সাহস’ আর ‘সেক্স’কে গুলিয়ে ফেলেন। একটা চুমু খেলেই সাংঘাতিক সাহসী। আসলে, ‘চরিত্রহীন’-এর সঙ্গে যেহেতু একটা শরীরী গন্ধ আছে চিত্রনাট্যের খাতিরে, লোকে তাই এ কথাই বলবেন। ভাববেনও।
‘সুজাতা’ করার পর ‘রাবেয়া’ কেন টানল?
স্বস্তিকা: কারণ, এর আগে আমি সাইকিয়াট্রিস্টের ভূমিকায় অভিনয় করিনি। একটা চরিত্রে এত স্তর, রং—ভাল লেগেছে। ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ রাবেয়া। প্রচুর ঘটনা আছে বলে অভিনয়ের সুযোগও অনেক। প্লাস দেবালয় ভট্টাচার্য আমার ভীষণ পছন্দের একজন পরিচালক। অবশ্যই আবারও ‘হইচই’-এর সঙ্গে কাজ। এর আগে টিম ‘চরিত্রহীন’-এর সঙ্গে কাজ করিনি। সেটাও একটা কারণ। এবং সব শেষে বলব, এই সিরিজের একটা আলাদা ফ্যান বেস আছে। সেটার লোভও ছাড়তে পারিনি।
‘চরিত্রহীন ৩’-এ অনুভূতিপ্রবণ রাবেয়ার ভূমিকায় দেখা যাবে স্বস্তিকাকে
সৌরভ দাস এই প্রথম আপনার বিপরীতে। ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে আপনার মতোই সাবলীল?
স্বস্তিকা: প্রথম কাজ হলেও একবারও সেটা সৌরভ মনে করতে দেয়নি। ভীষণ পরিশ্রমী, আন্তরিক। কোনও দৃশ্যের আগে কোনও সাজেশন দিলে সেটা পরে মনে রেখে কাজে লাগিয়েছে। সৌরভ ওর সেরাটা দিয়েছে বলেই আমি এত প্রাণবন্ত। ও ছড়ালে আমি মাখাতাম!
‘চরিত্রহীন’-এর প্রায় সব চরিত্র শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস থেকে নেওয়া। একমাত্র রাবেয়া ২১ শতকের প্রতিনিধি। দর্শকের প্রতিক্রিয়া নিয়ে টেনশন হয়েছিল?
স্বস্তিকা: একেবারেই না। আমি আজ পর্যন্ত কোনও বিষয় নিয়ে টেনশন করি না। না চরিত্র নিয়ে, না অভিনয় নিয়ে। যার জন্য ওয়র্কশপ করি না। ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়ার ৫ মিনিট আগে অবধি আমি নিজেই জানি না কী অভিনয় করব! কত জায়গায় মায়ের হাবভাব কপি পেস্ট করে চালিয়ে দিই। অবশ্যই চরিত্র বুঝে। চিত্রনাট্য যদি সেটা দাবি করে তবেই। ক্যামেরার সামনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যেটা আসে সেটাই করি। তাই সহ অভিনেতাদের আগে থেকেই সাবধান করি, চেঁচিয়ে উঠলে ভয় পেয়ে যেও না। আমার সঙ্গে শুধু তালে তাল মিলিয়ে যেও।
আরও পড়ুন: ১১ কেজি ওজন কমিয়েছেন কপিল, কিন্তু কী তাঁর ফিটনেস মন্ত্র
৪০ বছর কী শেখাল স্বস্তিকাকে?
স্বস্তিকা: আরও বেশি করে নিজেকে ভালবাসতে। প্যাম্পার করতে। নিজের প্রেমে পড়তে। আরও অনেক অ-নে-ক কাজ করতে। যেটা করলে সবচেয়ে বেশি ভাল থাকি আমি।
চল্লিশোর্ধ্ব স্বস্তিকা আস্তে আস্তে ‘সুজাতা’, ‘মোহ মায়া’র মতো চরিত্রের দিকে ঝুঁকবেন? নাকি ‘রাবেয়া’ও উঁকি দেবে?
স্বস্তিকা: শুধু দেখে যান, আরও কত, কে উঁকি দিয়ে যাবে! আমি এক রকমের চরিত্র কিছুতেই করব না। যে চরিত্রে যত শেড থাকবে, যত স্তর থাকবে, যত ভাঙতে পারব নিজেকে, সেই চরিত্রে এ ভাবেই অভিনয় করে যাব। আগামী দিনেও।
আরও পড়ুন: জীবনে অনেক ভুল করে দেউলিয়া, আক্ষেপ রাখির