ব্যাঙ্ককর্মী বাবা, শিক্ষিকা মা এবং ছোট দুই ভাইবোনের ঘেরাটোপে নিশ্চিন্ত মধ্যবিত্ত পরিবার। সেখানে অভিনয়ের নামগন্ধও ছিল না। নিজেও পড়াশোনার ফাঁকে ভালবাসতেন ব্যাডমিন্টন খেলতে। রাজ্যস্তরের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় অঙ্কিতা লোখন্ডেই হয়ে উঠলেন অভিনেত্রী।
অঙ্কিতার জন্ম ১৯৮৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর। মধ্যপ্রদেশের ইনদওর শহরে। ছোটবেলায় পড়াশোনা, ব্যাডমিন্টনের পাশাপাশি শখ ছিল অভিনয়ের। কিন্তু সেটাই পরবর্তী জীবনে পেশা হবে, সে ভাবনা ছিল না।
কিন্তু কলেজে পড়ার সময় থেকে অঙ্কিতার বাকি সব শখ চাপা পড়ে যায় অভিনয়ের আড়ালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্ব শেষ হলে রুপোলি দুনিয়ার টানে তিনি ইনদওর থেকে চলে আসেন মুম্বই।
২০০৬ সালে অঙ্কিতা অংশ নেন বেসরকারি চ্যানেলের একটি ট্যালেন্ট হান্ট রিয়েলিটি শো-এ। তিন বছর পরে ওই চ্যানেলেই তাঁর প্রথম অভিনয়। একতা কপূরের সিরিয়াল ‘পবিত্র রিশতা’য়।
সিরিয়ালের পাশাপাশি ঘরে ঘরে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন অঙ্কিতাও। তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন দর্শকদের বৈঠকখানায়।
২০০৯ থেকে ২০১৪ অবধি সম্প্রচারিত হয়েছিল ‘পবিত্র রিশতা’। শেষ দিন অবধি ধারাবাহিকের অন্যতম সেরা আকর্ষণ ছিলেন অঙ্কিতা।
এই সিরিয়ালে প্রথম দু’বছর অভিনয় করেছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। এটা ছিল তাঁরও কেরিয়ারের প্রথম কাজ। সুশান্ত অভিনীত মানব দেশমুখ চরিত্রটিও খুব জনপ্রিয় হয়। সুশান্ত-অঙ্কিতা জুটি ছিল দর্শকদের খুবই পছন্দের।
পর্দার বাইরেও সম্পর্কে বাঁধা পড়েন সুশান্ত-অঙ্কিতা। ২০১১ সালে সিনেমায় অভিনয় করবেন বলে এই সিরিয়ালের ইউনিট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সুশান্ত। তাঁর আর অঙ্কিতার প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল ছ’বছর। একসঙ্গে থাকতেনও দু’জনে।
২০১৬ সালে তাঁরা সম্পর্ক থেকে সরে যান। বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ-ই। তবে শোনা যায়, পর্দায় মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বায়োপিকে অভিনয়ের সাফল্য পাল্টে দিয়েছিল সুশান্তকে।
তাঁদের সম্পর্কের মাঝে কৃতী স্যানন চলে এসেছিলেন বলেও শোনা যায়। বিচ্ছেদের পরে অঙ্কিতা আবেগঘন পোস্ট করলেও সুশান্ত বাইরে অনেকটাই নিরুত্তাপ ছিলেন।
এর পর টেলিভিশনে ‘এক থি নায়িকা’, ‘শক্তি—অস্তিত্ব এহসাস কি’ সিরিয়ালেও দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন অঙ্কিতা।
রিয়েলিটি শো ‘ঝলক দিখলা যা’-এ তিনি অংশ নেন সুশান্তের সঙ্গে। বিগ বস এবং কপিল শর্মার শো-এও দেখা গিয়েছে অঙ্কিতাকে।
নিজের কেরিয়ারের সেরা সময়ে অঙ্কিতা ছিলেন টেলিভিশনের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম। অনেক দিন ধরেই তাঁর সিনেমায় অভিনয় করা নিয়ে জল্পনা শোনা যাচ্ছিল।
২০১৯ সালে ‘মণিকর্ণিকা’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেন ঝলকারি বাঈ-এর চরিত্রে। পরের বছর তাঁকে দেখা যায় ‘বাগী থ্রি’ ছবিতে। এখনও পর্যন্ত এই দু’টি ছবিতেই অভিনয় করেছেন তিনি।
টেলিভিশনে অভিনয় বেশ কয়েক বছর ছেড়ে দিয়েছেন অঙ্কিতা। আগের তুলনায় কমিয়ে দিয়েছেন কাজের পরিমাণ। শোনা গিয়েছে, সম্প্রতি তাঁর এনগেজমেন্ট হয়েছে বন্ধু ভিকি জৈনের সঙ্গে। ভিকি পেশায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তবে এনগেজমেন্টের খবর অঙ্কিতা স্বীকার করেননি।
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে আলোচিত হচ্ছে তাঁদের প্রেমপর্ব। তবে অঙ্কিতা প্রকাশ্যে এখনও শোকবার্তা দেননি। একটি সংবাদমাধ্যমের তরফে ফোন করে তাঁকে খবরটা জানানো হয়।
অঙ্কিতা শুনে শুধু বলেছিলেন ‘হোয়াট!’ তার পর আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিয়েছিলেন। এর পর স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিলেন অন্তরালে। দু’দিন পরে তিনি সুশান্তের বান্দ্রার ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁর পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন। এখন সেখানেই আছেন সুশান্তের অত্মীয় স্বজন। সাদা পোশাক, অবিন্যস্ত চুলে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল অঙ্কিতা শোকে বিধ্বস্ত।
জল্পনা উঠেছে, সুশান্ত কি জানতে পেরেছিলেন বিয়ে করতে চলেছেন অঙ্কিতা? প্রথম প্রেমের স্মৃতি কি তাঁকে আরও অবসাদগ্রস্ত করে তুলেছিল? প্রশ্নগুলির উত্তর হয়তো অধরাই থেকে যাবে।