—ফাইল চিত্র।
সর্বদা মুখে হাসি লেগে থাকত ছেলেটির। সে কী করে এমন কাজ করল? সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুতে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে মায়ানগরীর অন্দরে। পরিচয় থাকা সত্ত্বেও দুঃসময়ে তাঁকে সাহস জোগাতে না পারা নিয়ে প্রকাশ্যে আক্ষেপও করেছেন অনেকে। কিন্তু এ সবই লোক দেখানো বলে এ বার তীব্র আক্রমণ করলেন সেলিব্রিটি হেয়ার স্টাইলিস্ট স্বপ্না ভাবনানি। তাঁর অভিযোগ, বলিউডে কেউ বন্ধু হয় না। তাই সুশান্ত খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন জেনেও, কেউ তাঁর পাশে দাঁড়াননি।
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির হেয়ার স্টাইলিস্ট স্বপ্না এক সময় রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস’-এও অংশ নিয়েছিলেন। ধোনির বায়োপিক ‘এম এস ধোনি: দ্য আনডোল্ট স্টোরি’-তে অভিনয় করার সময়ই স্বপ্নার সঙ্গে পরিচয় গড়ে ওঠে সুশান্তের। এক সঙ্গে কাজও করেন তাঁরা। রবিবার সুশান্তের মৃত্যুর খবরে সোশ্যাল মিডিয়া যখন শোকবার্তায় ভেসে যাচ্ছে, সেইসময় তা নিয়ে মুখ খোলেন স্বপ্না। সুশান্তের এই পরিণতির জন্য বলিউডকেই কার্যত কাঠগড়ায় তোলেন তিনি।
সুশান্ত এবং ধোনির সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করে ইনস্টাগ্রামে স্বপ্না লেখেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে সুশান্ত যে খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে কথা কারও কাছেই গোপন ছিল না। তা সত্ত্বেও ইন্ডাস্ট্রির কেউ ওর পাশে দাঁড়াননি, সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দেননি কেউ। আজ ওকে নিয়ে যে হারে পোস্ট হচ্ছে, তাতেই বোঝা যায় বলিউড কতটা ফাঁপা। এখানে কেউ কারও বন্ধু হয় না।’’
A post shared by 𝕭𝖚𝖒𝖇𝖆𝖎 𝕶𝖎 𝕽𝖆𝖓𝖎 (@sapnamotibhavnani) on
স্বপ্নার পোস্ট।
আরও পড়ুন: সুশান্তের শেষকৃত্য সম্পন্ন, শ্রদ্ধা জানাল বলিউড
তবে শুধু স্বপ্নাই নন, সুশান্তের মৃত্যুতে বলিউডের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন পরিচালক অনুভব সিন্হাও। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘রাতে বিষয়টি নিয়ে গভীর ভাবে ভাবা উচিত বলিউডের সুবিধাভোগীদের। এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে চাইবেন না।’’ এ দিন সকালে সুশান্তকে নিয়ে টুইট করেন তিনি। লেখেন, ‘‘ওকে একেবারেই জানতাম না। মনে হয় না, কখনও আলাপও হয়েছে বলে। কিন্তু সারারাত ঘুমাতে পারিনি। পটনাও দেখেছি, বান্দ্রাও দেখেছি। ৩৪ বছরের একটা লম্বা যাত্রা। কীসে এত আঘাত পেল বুঝে উঠতে পারছি না। এ বার শান্তিতে ঘুমোও।’’
অনুভব সিন্হার টুইট।
নাম না করে প্রযোজক-পরিচালক কর্ণ জোহরকে এক হাত নেন অভিনেতা নিখিল দ্বিবেদীও। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রির ভণ্ডামি দেখলে এক এক সময় প্রচণ্ড রাগ হয়। ক্ষমতাশালীরা এখন বলছেন, সুশান্তের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত ছিল তাঁদের। কিন্তু আপনারা তো যোগাযোগ রাখেননি! ওর কেরিয়ার নীচের দিকে যাচ্ছিল বলেই না! মুখ বন্ধ রাখুন। ইমরান খান, অভয় দেওল এবং বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন কি? রাখেননি। যখন ওঁদের সময় ভাল ছিল, তখন রেখেছিলেন।’’
নিখিল দ্বিবেদীর টুইট।
শাহরুখ থেকে সলমন, কর্ণ জোহর থেকে সচিন তেণ্ডুলকর, গতকাল থেকে সুশান্তের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রায় সকলেই। তাতে সুশান্তের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার জন্য আক্ষেপ করেন কর্ণ জোহর। ইনস্টাগ্রামে তিনি লেখেন, ‘‘শেষ এক বছর তোমার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার জন্য আমি নিজেকেই দোষ দিই। কখনও কখনও মনে হয়েছিল, জীবনে হয়ত কাউকে দরকার তোমার, যার সঙ্গে সব কিছু ভাগ করে নিতে পারো। কিন্তু সেই মনে হওয়া নিয়ে আর এগোইনি আমি। আর কখনও এই ভুল হবে না।’’
A post shared by Karan Johar (@karanjohar) on
করণ জোহরের পোস্ট।
আরও পড়ুন: ‘ধার মেটাতে হচ্ছে, বেতন দিতে পারব কি না জানি না’, পরিচারককে বলেছিলেন সুশান্ত
তিনি আরও লেখেন, ‘‘ব্যস্ততার মধ্যে বাস করলেও আসলে আমরা খুব একাকী। এই নিস্তব্ধতায় কেউ কেউ হারিয়ে যান। সম্পর্ক গড়লেই হয় না, সেটাকে বাঁচিয়েও রাখতে হয়। সুশান্তের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু আমাকে সতর্ক করল। এ বার থেকে সমস্ত সম্পর্কগুলি আগলে রাখব আমি। আশআকরি সকলেই তেমনটা করবেন। তোমার মন ভোলানো হাসি এবং আলিঙ্গন খুব মিস করব।’’
আলিয়ার টুইট।
সুশান্তকে নিয়ে আলিয়া ভট্ট ইনস্টাগ্রামে লেখেন, ‘‘আমি স্তম্ভিত। বিষয়টি নিয়ে ভেবেই চলেছি, কিন্তু কথা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি ভেঙে পড়েছি। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে তুমি। আমরা প্রত্যেকে তোমাকে খুব মিস করব। সুশান্তের পরিবার, প্রিয়জন এবং অনুরাগীদের গভীর সমবেদনা জানাই।’’
কিন্তু কর্ণ এবং আলিয়ার এই পোস্ট ভাল ভাবে নেননি নেটিজেনরা। গত বছর কর্ণ জোহরের প্রযোজনা সংস্থার অধীনে তৈরি ‘ড্রাইভ’ ছবিটি বিরূপ সমালোচনার মুখোমুখি হয়। তার পর থেকেই সুশান্তের সঙ্গে কর্ণ যোগাযোগ রাখেননি বলে অভিযোগ তোলেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে ‘কফি উইদ কর্ণ’ অনুষ্ঠানকেও টেনে আনেন কেউ কেউ। তাঁরা বলেন, ওই অনুষ্ঠানে সুশান্তকে কখনও আমন্ত্রণই জানাননি কর্ণ।অনুষ্ঠান চলাকালীন একাধিক বার সুশান্তকে নিয়ে প্রশ্ন উঠে এলেও, তাঁকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি আলিয়া। এমন ভাব দেখান, যেন সুশান্তকে তিনি চেনেনই না। তাই মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে শোকপ্রকাশ করা সাজে না তাঁর।