ফাইল চিত্র।
আসরে নামার চল্লিশ দিন পরে মুখ খুলল সিবিআই। জানাল, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে নেমে তারা এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি। আজই এমস-এর তরফে চিকিৎসকেরা সুশান্তের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে এবং ভিসেরা পরীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন সিবিআইকে। চিকিৎসক দলের প্রধান সুধীর গুপ্ত জানিয়েছেন, সুশান্তের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সিবিআই এবং চিকিৎসকরা একমত। কিন্তু আইনের সব দিক খতিয়ে দেখে তবেই তাকে আইনসিদ্ধ সিদ্ধান্তে রূপ দেওয়া হবে।
গত শুক্রবার সুশান্তের পারিবারিক আইনজীবী বিকাশ সিংহ অভিযোগ করেছিলেন, মৃত্যু-তদন্ত ঠিক পথে চলছে না। সিবিআই এত দিনে কেনও কোনও তদন্ত-রিপোর্ট প্রকাশ করল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। তার পরেই আজ এক বিবৃতি জারি করে সিবিআইয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘‘শ্রী সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুতে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। প্রতিটি দিক খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও বিষয় বাদ দেওয়া হচ্ছে না।’’ মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখও আজ সিবিআইকে বিঁধে বলেন, ‘‘মুম্বই পুলিশ যথেষ্ট দক্ষ ভাবে তদন্ত চালাচ্ছিল। সুশান্ত আত্মহত্যা করেছিলেন, নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, তা জানতে হঠাৎই সিবিআইকে তদন্তের ভার দেওয়া হল। এখন কিন্তু সেই প্রশ্নটি পিছনে চলে গিয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ অন্য একটি বিষয়কে।’’ সিবিআই বিবৃতি দেওয়ার আগেই সুশান্তের কিছু আত্মীয়-বন্ধু টুইটারে জানিয়েছিলেন, তদন্তের গতি-প্রকৃতি সম্বন্ধে সিবিআই না জানালে ২ অক্টোবর থেকে তাঁরা প্রতীকী অনশনে বসবেন।
এ দিকে শুধু মোবাইল ফোন নয়, বলিউডের চার তারকা দীপিকা পাড়ুকোন, সারা আলি খান, রকুল প্রীত সিংহ এবং শ্রদ্ধা কপূরের ক্রেডিট কার্ডও বাজেয়াপ্ত করেছে এনসিবি। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে তাঁরা মাদক কিনেছিলেন কি না, তা দেখতে চান গোয়েন্দারা। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টও খতিয়ে দেখা হবে। কোনও মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁদের আর্থিক লেনদেন হয়েছিল কি না, দেখতে চান তদন্তকারীরা। ধর্মাটিক এন্টারটেনমেন্টের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী প্রযোজক ক্ষিতিজ রবি প্রসাদকে শনিবার গ্রেফতার করেছিল এনসিবি। আজ তাঁর আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে দাবি করেছেন, এনসিবির গোয়েন্দারা ক্ষিতিজকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে লাগাতার ‘হেনস্থা ও ব্ল্যাকমেল’ করে গিয়েছেন। আইনজীবী লিখিত বিবৃতিতে দাবি করেন, ‘‘সমীর ওয়াংখেড়ে নামে এনসিবি-র এক অফিসার ক্ষিতিজকে হুমকি দেন, কর্ণ জোহর ও তাঁর বন্ধু-বান্ধবেরা যে মাদক নিতেন, সেই মর্মে এক বিবৃতিতে সই করতে হবে। ক্ষিতিজ সেই গোয়েন্দাকে জানান, তিনি এদের ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন না, ফলে এঁদের সম্পর্কে এ ধরনের বিবৃতি দিতে পারবেন না। যা শুনে রেগে গিয়ে ওয়াংখেড়ে ক্ষিতিজকে বলেন, ‘তোকে দেখে নেব’ এবং তাঁকে শারীরিক ও মানসিক হেনস্থা করেন।’’
আরও পড়ুন: ‘কোভিডের সঙ্গে যুদ্ধের অস্ত্র, প্যানিক না করা’
পাঁচ প্রশ্ন
• ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ নাকি ‘খুন’, কী নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই? ৪০ দিন পরে কোথায় দাঁড়িয়ে তদন্ত?
• আর্থিক তছরুপের তদন্ত চালাচ্ছিল ইডি। সে তদন্তের কী হল?
• রিয়ার বাড়িতে মাদক মেলেনি, রক্ত পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে তিনি মাদক নিতেনও না। তা হলে তাঁকে গ্রেফতার কেন?
• সুশান্তের সহ-অভিনেতা সারা ও শ্রদ্ধা সুশান্তের পার্টিতে যেতেন, সারা তাঁর সঙ্গে তাইল্যান্ড বেড়াতেও গিয়েছিলেন। রকুল রিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু সুশান্তের সঙ্গে দীপিকার কোনও ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না। তা হলে কেন জিজ্ঞাসাবাদ দীপিকাকে?
• কর্ণ জোহরের ‘মাদক পার্টি’ নিয়ে কেন তদন্ত করবে না এনসিবি?
সুশান্তের এক বন্ধু, যুবরাজ সিংহ আবার এরই মধ্যে দাবি করেছেন, প্রয়াত অভিনেতার প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ানের মৃত্যুর তদন্ত হলেই সুশান্তের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তাঁর দাবি, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে এটা জোড়া হত্যাকাণ্ড। সুশান্তকে মাদক খাইয়ে আচ্ছন্ন করে রাখা হত, তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দেওয়া হত না, তার টাকাপয়সাও হাতিয়ে নেওয়া হত।’’ যুবরাজের অভিযোগের আঙুল দিশার বয়ফ্রেন্ড রোহন রাইয়ের দিকে। রোহন অবশ্য এখন মুম্বইয়েই রয়েছেন। তাঁর আইনজীবী আগে জানিয়েছিলেন, মুম্বই পুলিশ যত দিন তদন্ত চালিয়েছে, রোহন পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।। তবে সিবিআইয়ের তরফে তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: এক ছবিতে একসঙ্গে রণবীর কপূর, দীপিকা পাড়ুকোন, আলিয়া ভট্ট