আর কী কী কাজ করতে চান সুমন মুখোপাধ্যায়?
নাটক, সাহিত্য, চলচ্চিত্র। এই তিন শিল্প প্রাঙ্গণে অনায়াস বিচরণ সুমন মুখোপাধ্যায়ের। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ আড্ডা ‘অ-জানাকথা’য় বারবারই উঠে এল সেই সব পরিসরের কথা। উঠে এল তাঁর ‘হার্বার্ট’ বা ‘তিস্তা পারের বৃত্তান্ত’- এর মতো উচ্চপ্রশংসিত ছবি ও নাটকের কথাও। আগামীতে দর্শকদের নতুন কী উপহার দিতে চান সুমন? দর্শকদের এমন প্রশ্নে অকপট জবাব দিলেন খ্যাতনামী পরিচালক।
নবারুণ ভট্টাচার্যের অনুরাগী হিসেবে তাঁর সাহিত্য নিয়ে আরও অনেক কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে সুমনের। ইতিমধ্যেই ‘হার্বার্ট’ ও ‘কাঙাল মালসাট’ নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। পরিচালকের কথায়, ‘‘নবারুণদার প্রায় সব উপন্যাস, গল্প নিয়ে কাজ করার বাসনা জাগে। একটি উপন্যাস নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি। কিন্তু তা নিয়ে এখনই কোনও তথ্য আমি দেব না। তবে তার পরে ‘ভোগী’ উপন্যাস নিয়ে কাজ শুরু করব।’’
নিজের অবচেতনে ভরসা রাখেন সুমন। তাই কোনও সাহিত্য পড়ার সময়ে তাঁর মনের ভিতরে কী ভাবে তার ছবি জারিত হয়, তার উপর নির্ভর করেই তিনি হয় মঞ্চরূপের পথে হাঁটেন, অথবা চোখ রাখেন ক্যামেরায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমার অবচেতনে কোন রসায়ন কাজ করছে, সেটাই দেখার। ‘হার্বার্ট’-এর সময়ে যেমন পড়তে পড়তেই তা যেন চলচ্চিত্রের আকার নিচ্ছিল। তেমনই ‘তিস্তা পারের বৃত্তান্ত’ মঞ্চের রূপ নিয়েছিল আমার মনের ভিতরে। অবচেতনের উপর নির্ভর করা উচিত এক জন শিল্পীর।’’
২০০০ সালে সুমন মুখোপাধ্যায় মঞ্চস্থ করেন দেবেশ রায়ের ‘তিস্তা পারের বৃত্তান্ত’। সেই নাটক আজও চর্চায়। কিন্তু সুমন জানালেন, আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে বাঘারুদের প্রাসঙ্গিকতা আগের মতোই থাকলেও, নতুন করে তা আর মঞ্চায়ন করতে চান না তিনি। সুমনের ব্যাখ্যা— যে প্রক্রিয়ায় গোটা নাটকটি তৈরি হয়েছিল, তা আর করা সম্ভব নয়। ৫০ জন লোককে নিয়ে এক বছর ধরে আর মহড়া দেওয়ার সুযোগ নেই। তার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা-ও নেই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চতুরঙ্গ’ এবং ‘শেষের কবিতা’ নিয়ে ছবি বানিয়েছিলেন সুমন। জোরদার তর্ক-বিতর্ক-সমালোচনাও ঘিরে ধরেছিল তাঁকে। তাঁর হাত ধরে ফের কি পর্দায় বা মঞ্চে রবীন্দ্রনাথকে দেখতে পাবেন দর্শক? সুমনের স্পষ্ট দাবি, ‘‘আর সাহস পাচ্ছি না। প্রত্যেক বাঙালি তাঁর নিজের মতো করে রবীন্দ্রনাথকে বোঝেন, প্রত্যেকটি ব্যাখ্যাকে ছবির মধ্যে তুলে ধরা অসম্ভব হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজ করে দেখেছি, ভয়ানক বিপত্তি ঘটে।’’ এই প্রসঙ্গে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের উদাহরণ টেনেছেন সুমন। তাঁর মতে, ব্রিটিশদের বা গোটা বিশ্বের সঙ্গে শেক্সপিয়ারের যে ঐতিহাসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা অনেকখানি। তার ফলেই শেক্সপিয়ার নিয়ে নানা রকমের ভাঙচুর হয়েছে পরবর্তী কালে। তাঁর সাহিত্য নিয়ে তাই নানা রকমের কাজ সৃষ্টি হয়েছে। ‘এটা আমাদের’- এই মনোভাব থেকে সরে এসেছেন মানুষ। কিন্তু রবি ঠাকুরের সঙ্গে সেই দূরত্ব ঘটেনি। সুমনের কথায়, ‘‘আমরা রবীন্দ্রনাথকে আঁকড়ে থেকেছি। তাই তাঁর সাহিত্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও সাহস হয় না। দেখেছি, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজ করলে বাঙালি আর শিল্পটা নিয়ে কথা বলে না। কেবল কতটা রবীন্দ্রনাথ হল, তা নিয়েই আলোচনা করতে থাকে।’’
তাই নবারুণের সাহিত্য নিয়ে কাজ করলেও রবীন্দ্রনাথকে আপাতত পরিকল্পনা থেকে বাদই রেখেছেন সুমন।