সুমন
ভাবনাচিন্তা চলছিল সেই ২০০৮ সাল থেকে। কিন্তু উপন্যাসের স্বত্ব এবং বাজেট সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ নিয়ে সিনেমা করার ইচ্ছে তখন বাস্তবায়িত হয়নি। নতুন বছরে সেই ইচ্ছেকেই রূপ দিতে চলেছেন পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়। পাঁচ বছর পরে ফের বাংলা ছবি পরিচালনা করতে চলেছেন তিনি। ছবিতে মূল উপন্যাসের নামটাই রাখছেন পরিচালক। প্রধান চরিত্রে দেখা যাবে আবীর চট্টোপাধ্যায়, জয়া আহসান, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে। অন্য দুই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় এবং অনন্যা চট্টোপাধ্যায়।
সুমনের কথায়, ‘‘এই ছবিটার জন্য দুটো জিনিস খুব জরুরি ছিল। দক্ষ অভিনেতা এবং বড় বাজেট। ভাল অভিনেতা নির্বাচনের পাশাপাশি ছবির বিপণনের দিকটাও মাথায় রাখতে হয় এখন। আবীর, জয়া, পরম সেই ব্যালান্সটা করতে পারবে। প্রযোজক সমীরণ দাস (ক্যালাইডোস্কোপ) বাজেটের বিষয়ে আমাকে নির্ভার করেছেন। এই ছবির শুটিং শিডিউল ২৫ দিনের, যেটা বাংলা ছবিতে এখন দেখা যায় না।’’ ছবির আবহসঙ্গীতের দায়িত্বে থাকছেন প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়কে ফ্রেমবন্দি করবেন সুমন। তিরিশের দশকের শেষের দিক থেকে চল্লিশের দশকের শুরু পর্যন্ত... ‘‘মূল উপন্যাসে সময়টা আরও পিছনে ছিল, আমি খানিকটা এগিয়ে এনেছি। তা ছাড়া উপন্যাসের সব কিছু ছবির চালচিত্রে ধরানো সম্ভব নয়। দুটো মাধ্যমের চলন আলাদা। আমি চারিত্রিক রসায়নের উপরে বেশি জোর দিয়েছি,’’ ছবির ব্যাখ্যায় বললেন সুমন। তাঁর বাবা অরুণ মুখোপাধ্যায় ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ মঞ্চস্থ করেছিলেন। সেই নাট্যরূপ ছিল সুমনের এই ছবি তৈরির পিছনে প্রথম অনুপ্রেরণা।
উপন্যাসের শশীর চরিত্রে রয়েছেন আবীর। জয়াকে দেখা যাবে কুসুমের ভূমিকায়। কুমুদের চরিত্রটি করছেন পরমব্রত। সুমন স্পষ্ট করে দিলেন তাঁর ছবিতে শশীর অংশটা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ‘‘আমার মতে, মানিকবাবুর সৃষ্টির মধ্যে শশী অসম্ভব জোরালো একটা চরিত্র,’’ মন্তব্য তাঁর।
কলকাতায় পড়াশোনা করা শশী গ্রামে আটকে পড়ে। লন্ডনে গিয়ে ডাক্তারিতে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছেপূরণ হয় না তার। শশীর এই আটকে পড়া, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার সমস্যা... এই দিকগুলো ভাবিয়েছে সুমনকে। বলছিলেন, ‘‘গত শতাব্দীতে আমাদের একটা ইন্টেলেকচুয়াল ফেলিয়োর আছে। যার ফলস্বরূপ আমরা এখন এই ভয়ঙ্কর ধর্মীয় উন্মাদনা, স্বৈরতন্ত্রের উত্থান দেখছি। বুদ্ধিজীবী শিক্ষিত মানুষের যেখানে যা বলার, সেখানে তাঁরা সেটা বলেননি। কম্প্রোমাইজ় করেছেন। শশীর চরিত্রটা এই ইন্টেলেকচুয়াল ফেলিয়োরের একটা প্রতীক আমার কাছে। মানুষকে কিছু নির্মম সিদ্ধান্ত নিতে হয় জীবনে। অনেকে সেটা পারে না।’’
কলকাতা ছেড়ে মুম্বই যাওয়াটা কি সুমনের কাছে নির্মম সিদ্ধান্ত ছিল? ‘‘খানিকটা তো বটেই। নিজের চাষ করা জমি ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে নতুন ইনিংস শুরু করেছি। তবে আমি মুম্বই গিয়েছিলাম হাতে কাজ নিয়েই।’’
ওয়েব মাধ্যমের জন্য ‘পোশম পা’ করেছেন। তাঁর ছবি ‘নজ়রবন্দ’ বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলা সিনেমায় না ফিরলেও বাংলার মঞ্চে সুমন ফিরেছেন। ‘ডন, তাকে ভাল লাগে’তে অভিনয় করেছেন পঁচিশ বছর পরে। নতুন ভাবে ‘মেফিস্টো’ মঞ্চস্থ করেছেন। সুমন স্পষ্ট করলেন, বাংলা সিনেমা-মঞ্চ দুই মাধ্যমেই কাজ করে যাবেন তিনি।