কর্ণ জোহর। ছবি: সংগৃহীত।
বলিউড কনটেন্ট নিয়ে যতই ভাঙা-গ়ড়ার খেলা খেলুক প্রেমের হাত থেকে নিস্তার নেই। কত রকম ভাবে প্রেমের আদি-অকৃত্রিম গল্পটা বলা যেতে পারে? সেই গল্প বলিয়ের তালিকায় কর্ণ জোহর, সঞ্জয় লীলা ভংসালী, ইমতিয়াজ আলি, আদিত্য চোপড়া থাকবেনই।
কর্ণ জোহর
বলিউড লভ স্টোরির মেরুদণ্ড বলা যেতে পারে কর্ণ জোহরকে। আবেগ থরথর প্রেমে গত তিন দশক ধরে দর্শককে মজিয়ে রেখেছেন। প্রেমের আসল রসায়ন যে বন্ধুত্বের মধ্যে লুকিয়ে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’তে সেই পাঠ পড়িয়েছিলেন। ‘পেয়ার দোস্তি হ্যায়’ ফমুর্লা তিনি তাঁর পরিচালনাতে দেখিয়েছেন, তাঁর প্রযোজিত ছবিতেও সেই বাঁধাগত। ত্রিকোণ প্রেম কর্ণের আর একটা স্টাইল। ‘কুছ কুছ...’, ‘কভি অলবিদা না কহেনা’, ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ এবং হালের ‘অ্যায় দিল মুশকিল’এও প্রেমের ত্রিভুজ। সেই তুলনায় ‘মাই নেম ইজ খান’ খানিক আলাদা। ‘‘আমি যে শুধু মিষ্টি প্রেমের ছবি বাইরে সিরিয়াস কিছু বানাতে পারি, সেটা দেখানোর জন্যই এই ছবিটা করেছিলাম,’’ অটোবায়োগ্রাফিতে পরিচালকের স্বীকারোক্তি ।
আরও পড়ুন: আমার ফিগার কিন্তু এখনও পারফেক্ট নয়, বলছেন ভূমি
বলিউডি নাচ-গানের অন্ধভক্ত কর্ণ। দারুণ লোকেশন, ঝাঁ চকচকে সেট, কেতাদুরস্ত পোশাক না দেখালে তাঁর মন ভরে না। তাঁর চরিত্রদের প্রেম-বন্ধুত্ব-নাচ-গান দেখাতে গিয়ে অনেক সময়েই ছবির প্লট খেই হারিয়ে ফেলে। তাতে অবশ্য থোড়াই কেয়ার পরিচালকের। আর গল্পের শেষে ‘আসল’ প্রেমিক-প্রেমিকাকে মেলাতে গিয়ে অনায়াসে ত্রিভুজের তৃতীয় কোণটি রোগে আক্রান্ত করে সরিয়ে দিতে পারেন!
সঞ্জয় লীলা ভংসালী
সঞ্জয়
বাকি তিনজন যদি আরবান প্রেম কাহিনি দেখিয়ে থাকেন, তা হলে সঞ্জয় লীলা ভংসালী একেবারেই পিরিয়ড ভিত্তিক। তবে তাঁর ছবি দেখলে সেটা আসলে কোন সময়ের, তা বোঝা দুষ্কর হয়! যেমন ‘সাওরিয়াঁ’ কিংবা ‘গুজারিশ’। আধুনিক সময়ে দেখালেও তিনি এমন ভাবে গল্পের জমি তৈরি করেন যাতে চরিত্রদের সাজপোশাকে আড়ম্বর থাকে।
‘হম দিল দে চুকে সনম’ থেকেই সঞ্জয় বিশালত্বের ভক্ত। তাঁর সব ছবিকে যে কারণে ‘ম্যাগনাম ওপাস’ বলে দেগে দেওয়া হয়। বড় ক্যানভাসে তাঁর তুলির আঁচড় যেন বেশি খোলতাই হয়। ভংসালীর বিদেশি লোকেশনের ভক্ত নন। তাঁর ছবির সেট দেখেই চক্ষু চ়়ড়ক হওয়ার উপক্রম। ভংসালীর প্রেমিক-প্রেমিকারা তুমুল প্যাশনেট। সে বাজিরাও-মস্তানি হোক কিংবা রাম আর লীলা। ত্রিকোণ প্রেম থাক বা না-থাক ভংসালীর গল্পে স্যাড এন্ডিং প্রত্যাশিত। বলা হচ্ছে, ‘পদ্মাবতী’তে তিনি নাকি গ্র্যা়ঞ্জারকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। সেখানেও সমাপ্তিতে বিচ্ছেদের সম্ভাবনা প্রকট।
ইমতিয়াজ আলি
ইমতিয়াজ
প্রেমের ছবিতে নতুন হাওয়া এনেছিলেন ইমতিয়াজ। নন স্টোরিকে শুধু পরিচালনার মুনশিয়ানায় উপভোগ্য সিনেমা বানিয়ে ফেলতে পারেন। ‘জব উই মেট’ তার আদর্শ উদাহরণ। ‘লভ আজ কাল’, ‘রকস্টার’, ‘তমাশা’— ইমতিয়াজের সব ছবিতেই প্রেমের বাড়বাড়ন্ত। পরিচালক নিজেও বলে থাকেন, ‘‘প্রেম ছাড়া বানানোর মতো কিছু আছে নাকি?’’
ইমতিয়াজের ছবিগুলো লক্ষ করলে একটা সূত্র পাওয়া যায়। ছেলেটি এবং মেয়েটি আদৌ প্রেমে পড়েছে কি না, সেটা নিয়ে দর্শকের সন্দেহ না থাকলেও চরিত্রেরা সেটা উপলব্ধি করতেই দিশেহারা হয়ে যায়! আর বুঝতে পেরে গেলে প্রত্যাশিত সমাপ্তি ঘটে। এই মশলা ইমতিয়াজের প্রায় প্রতিটি ছবিতেই। তার মধ্যেও ব্যতিক্রম ‘হাইওয়ে’। এ ছবির চলন-ভঙ্গি স্বতন্ত্র। ইমতিয়াজের ছবি মানেই একটা ট্রাভেলগ। সেটা দেশ কিংবা বিদেশ দুই হতে পারে। ভাল ভাল গান থাকবে। যদিও অনেক ছবিতে সেগুলো প্রায় জবরদস্তির পর্যায়ে পৌঁছয়।
আদিত্য চোপড়া
আদিত্য
আমজনতাকে ‘কিঙ্গ অব রোম্যান্স’ শাহরুখ খান উপহার দিয়েছিলেন আদিত্য চোপড়া। প্রেমের সম্পর্ক বুনতে তাঁর বাবা যশ চোপড়া সিদ্ধহস্ত ছিলেন। উত্তরসূরী আদিত্যও কম যান না। তাঁর ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ হিন্দি সিনেমায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। তবে ৩২ বছরের কেরিয়ারে আদিত্য চারটি ছবিরই নির্দেশনা দিয়েছেন।
‘ডিডিএলজে’র মতো ম্যাজিক অবশ্য আর কোনও ছবিতে দেখাতে পারেননি। তবে বরাবরই প্রেমকে নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাতে পছন্দ করেন আদিত্য। তাই ‘মহব্বতেঁ’তে অমিতাভ-শাহরুখের টক্করের মাঝে তিন জোড়া ছেলেমেয়ের প্রেমের ককটেল ছিল। আদিত্যর প্রেমকাহিনি কখনও বোল্ড, কখনও আবার সংস্কারের বর্মে ঢাকা। ‘মহব্বতেঁ’র ঐশ্বর্যা তাই বাবার অনুমতি ছাড়া প্রেমিকের হাত ধরতে পারে না। ‘ডিডিএলজে’র শাহরুখ প্রেিমকার বাবার সায়ের অপেক্ষায় থাকে। ‘বেফিকরে’ দিয়ে আদিত্য প্রেমকে লাগামছাড়া করার চেষ্টা করলেও বিষয়টা উতরোতে পারেননি। কারণ ততদিনে ক্যাজুয়াল লভ স্টোরির প্লট ক্লিশে হয়ে গিয়েছে!