বিদ্যা বালন ….ছবি: শৌভিক সাহা
প্র: ‘বেগমজান’ যখন কথা বলবেন না, তখন আপনিই বলুন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের চেয়ে এই নতুন বেগমজান কত আলাদা?
উ: এটা যে ‘রাজকাহিনি’ নয়, তা আশা করি ট্রেলার দেখেই বুঝেছেন। এখানে সম্পর্ক নিয়ে নানারকম ছবি আঁকা হয়েছে। জাতীয়বাদের প্রসঙ্গটা কমই আছে। সম্পর্কের গভীরতায় পৌঁছতে চেয়েছে ‘বেগমজান’।
প্র: যেমন…
উ: জমি কেড়ে নেওয়ার সম্পর্ক, বন্ধুতার বিরোধী সম্পর্ক, প্রেম পাওয়া না-পাওয়ার সম্পর্ক। কোথাও আবার জমির টানেই সব বিরোধিতা ভুলে সকলেই এক জোট হয়ে লড়াই করেছে। ‘রাজকাহিনি’-র সময়ে ঋতুকে অনেক তৈরি করতে হয়েছিল। গলার স্বর থেকে লুক। ‘বেগমজান’ ছবিতে বিদ্যা সেটে বেগমজান হয়েই আসত।
প্র: মহেশ ভট্ট তো বলেছেন ‘বেগমজান’ ছবির মধ্য দিয়ে তাঁদের প্রোডাকশনের পুনর্জন্ম হচ্ছে…
উ: অনেক বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন মহেশজি আমার ওপর। উনি যখন বলেন ‘সারাংশ’, ‘অর্থ’, ‘ড্যাডি’র মতো ছবির ধারায় ‘বেগমজান’-কে দেখছেন, তখন অবাক লাগে! উনি বলেন, মহেশ ভট্টের যৌবন নাকি আমার মধ্যে ধরা আছে, আমি তো বলি তা’হলে আমি ওঁর জাতিস্মর (হাসি)!
প্র: অনেকে বলেন, আপনি নিজেকে বিশাল ফিল্মমেকার মনে করেন…
উ: একেবারেই না। আমি নিজেকে কথক বলি। মানুষকে গল্প শোনাই। মানুষের আমার গল্প দেখতে ভাল লাগে। ব্যস! হিসেবটা পরিষ্কার। আজ পর্যন্ত আমি ন’টা ছবি করেছি। যার প্রত্যেকটাই হিট!
প্র: সমালোচকদের ‘জুলফিকার’ কিন্তু ভাল লাগেনি…
উ: হ্যাঁ ঠিক। কিন্তু গত বছর ‘প্রাক্তন’-এর পর দ্বিতীয় বাংলা হিট ছবি ‘জুলফিকার’ই। শুনুন, ইন্ডাস্ট্রিতে তিন ধরনের ছবি হচ্ছে।
প্র: একটু উদাহরণ দিয়ে বোঝাবেন।
উ: ‘প্রাক্তন’ হল বক্স অফিস হিট ছবি। সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত নয়। ‘বেলাশেষে’ বক্স অফিস হিট, আবার সমালোচকদেরও পছন্দের। ঠিক যেমন ‘চতুষ্কোণ’। অন্য দিকে ‘নির্বাক’ কিন্তু হিট ছবি নয়। কিন্তু সমালোচকদের ছবিটা ভাল লেগেছিল। দেখুন, আমি সাফল্য পেয়েছি বলেই ঝুঁকি নিতে পেরেছি। তবে আমি কিন্তু পরের পর একই ধারার ছবি করে যেতে পারব না।
প্র: মানে?
উ: মানে গোয়েন্দা হিট হল তো শুধু গোয়েন্দাই করে গেলাম। সম্পর্কের ছবি বাজারে চলল তো সম্পর্কের ছবি করে গেলাম। ও আমার দ্বারা হবে না। আমি খুব প্র্যাক্টিকাল। দর্শকের যদি আমার ছবি ভাল না লাগে, তখন আমি অন্য কিছু করব।
প্র: কী করবেন?
উ: ক্রীড়া সাংবাদিক হব। দারুণ এনজয় করে কাজ করব। আমি তো চ্যালে়ঞ্জ নিতে ভালবাসি।
আরও পড়ুন: সানিকে নিয়ে এ কী টুইট করলেন রামগোপাল!
উ: আমি ‘পোস্ত’, ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ খাব। ভাল তো! আরে কাউকে তো খেতেও হবে...
প্র: পয়লা বৈশাখ আপনার ছবির সঙ্গে বিরষা দাশগুপ্তরও ছবি আসছে। মানে সেই বিরষা-সৃজিত লড়াই!
উ: (প্রচণ্ড হাসি) এখন আর কোনও লড়াই নেই, সব পাল্টে গেছে।
প্র: কী পাল্টাল?
উ: আরে ‘বেগমজান’ তো হিন্দি ছবি। এখন তো ক্ষেত্রই বদলে গেল। ওই দিন কিন্তু আরও একজন বড় পরিচালকের ছবি আসছে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বিসর্জন’।
প্র: কালিকাপ্রসাদের খবর নিশ্চই পেয়েছেন?
উ: এখনও ভাবতে পারছি না। বাংলা গানের প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল। কী মর্মান্তিক! কৌশিকদা বলছিল, গতকাল শ্মশানে সব মানুষের চোখে জল। এই যে সব ধরনের মানুষের কাছে পৌঁছনো, কালিকাপ্রসাদই পেরেছিল।
প্র: একটু ‘বেগমজান’-এ ফিরি। শুনেছি শ্যুট করতে করতেই আপনি নাকি আপনার এই বেগমজানের প্রেমে পড়েছিলেন?
উ: লোকে বলে বেশ্যালয়! আসলে কিন্তু ওই হাভেলি বেগমজানের বাড়ি, ওখানেই ওর ‘দিল’ আছে। ওই দিলের প্রেমে তো সবাই পড়বে।
প্র: আমি তো আপনার কথা জানতে চাইছি…
উ: আমিও বেগমজানের প্রেমে পড়েছি। আরে! যে নারী রানির মতো ভিটে আঁকড়ে মরতে চায়, তার প্রেমে পড়াটা কি আস্বাভাবিক?
(স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়)