মানালি
মেগা ধারাবাহিকের মুখ হিসেবে যে ক’জন শিল্পীর নাম বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে, মানালি দে তাঁদের একজন। ‘বউ কথা কও’ থেকে ‘ধুলোকণা’—মেগার দুনিয়ায় এক দশক পার করে ফেলেছেন অভিনেত্রী। এর আগে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রযোজনায় ‘নকশি কাঁথা’ মানালির অন্যতম জনপ্রিয় সিরিয়াল। লীনার ‘ধুলোকণা’ কতটা মাইলেজ দিল অভিনেত্রীকে? শুটিংয়ের ফাঁকে ব্যস্ত মানালি ফোনে বললেন, ‘‘ফুলঝুরিকে মানুষ পছন্দ করেছেন। লালন-ফুলঝুরির জুটিকে দর্শক ভালবেসেছেন। এখানে বিভিন্ন শ্রেণির গল্প তুলে ধরা হচ্ছে। বড় বাড়ির গল্প রয়েছে, বস্তিরও আছে।’’
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের ‘গোত্র’ বা ছোট পর্দায় মানালি অভিনীত চরিত্রগুলিকে পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় স্পষ্ট, মাটির কাছাকাছি চরিত্রে দর্শক তাঁকে দেখতে পছন্দ করেন। অভিনেত্রী কি সেই ভাবে চরিত্র বাছেন? ‘‘কোনও চরিত্র দেখে যদি দর্শকের মনে হয়, এটা তাঁর বা তাঁর পাশের বাড়ির মেয়ের গল্প, তবেই তো সেটা কাছের মনে হবে। ‘বউ কথা কও’ ধারাবাহিকের পরে দর্শক আমাকে চিনতে শুরু করেছিলেন। তবে এই ক’বছরে নানা ধরনের চরিত্র করেছি,’’ বলছেন তিনি। এই ইমেজ ভাঙার ইচ্ছে নেই? মানালি যুক্তি দিলেন, ‘‘বারো-চোদ্দো বছরের কেরিয়ারে একই চরিত্র দু’বার আসতে পারে। তবে ম্যাচিয়োরিটির দিক থেকে প্রতিটা চরিত্রই আলাদা। ‘গোত্র’র ঝুমা এবং ফুলঝুরি একই ধাঁচের নয়। আবার ‘সখী’ এবং ‘মহানায়ক’ ধারাবাহিকে সাংবাদিকের চরিত্রে ছিলাম। তবে দুটো চরিত্রের এসেন্স একেবারেই আলাদা। ধারাবাহিকের গল্পে নারীচরিত্রের বিয়ে হবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বৌ চরিত্র মানেই সব এক নয়।’’
২০২০ সালে অতিমারি আবহে পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উপস্থিতিতে পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছেন মানালি। স্বামী পরিচালক হলে কি শুধু সুবিধে পাওয়া যায়? ‘‘আমাদের সম্পর্কের শুরু ‘নিমকি ফুলকি’ থেকে। তবে অভিমন্যুর ছবিতে কাস্ট হওয়ার জন্য আমি শেষ বিকল্প। ওর পরিচালনায় ‘লকডাউন’ করেছি। একই পেশায় আছি বলে সুবিধে আছেই। কখনও ক্লান্ত হয়ে পড়লে ও-ই আমাকে মোটিভেট করে। একদিন আমার শুটিংয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না। ও বলল, কত লোকের কাজ গিয়েছে এই লকডাউনে! আর তুই বলছিস কাজে যাবি না? আবার আমার ধারাবাহিকের ভাল-মন্দ নিয়ে সেরা ফিডব্যাক অভিমন্যুই দেয়।’’ চুপিসারে বিয়ে করার পরে ইন্ডাস্ট্রির কাছের বন্ধুরা কিছু বলেননি? ‘‘লকডাউন বলে তখন খরচ বাঁচানোর সুযোগ ছিল। আসলে আমার আর অভিমন্যুর মনে হয়েছিল, ওটাই ঠিক সময় বিয়ে করার। আমার বন্ধুরা খুব বুঝদার। খুব বেশি অভিযোগ তাদের নেই। খাওয়াদাওয়া তো চলতেই থাকবে,’’ হাসতে হাসতে বললেন মানালি।
তৃণমূল সমর্থক হিসেবে মঞ্চে-প্রচারে নিয়মিত দেখা যায় মানালিকে। রাজনৈতিক মতাদর্শের জায়গা থেকে কি তিনি ঘাসফুলের মঞ্চে থাকেন? ‘‘দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি। আমার মা মারা যাওয়ার পরে উনি আমার পাশে ছিলেন। জীবনের যে কোনও ক্রাইসিসে যিনি পাশে থাকেন, তাঁর পাশে থাকব না-ই বা কেন? লোকে বলে, সুবিধে পাই বলে সঙ্গে আছি। এখনও অবধি রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমার নেই। ভবিষ্যতে কিছু হলে জানতে পারবেন।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনে টলিউড যে ভাবে দু’টি রঙে ভাগ হয়ে গিয়েছিল, তা নিয়ে মানালির কী মত? ‘‘অভিনেতাদের রাজনীতিতে আসা নতুন নয়। আগেও হয়েছে। তবে কে কী ভেবে আসছেন, সেটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। এটা প্রত্যেকের চয়েসের ব্যাপার।’’
মেগার ব্যস্ত শিডিউল থেকে সময় বার করে ছবি-সিরিজ়ের কাজও করতে চান মানালি। আপাতত ফুলঝুরি হিসেবে তিনি ছোট পর্দা মাতাচ্ছেন।