ফাইল চিত্র
আনলক ফেজে শুরু হয়েছে ধারাবাহিকের শুটিং। তৈরি হয়েছিল সুরক্ষাবিধি, নির্দেশিকা অনুযায়ী চার ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কথা। গত কয়েক মাসে নীল ভট্টাচার্য, দেবযানী চট্টোপাধ্যায়-সহ ধারাবাহিকের একাধিক অভিনেতা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুরক্ষাবিধির মাঝে ফাঁক থেকে যাচ্ছে না তো? অভিনয় করতে গিয়ে কি আদৌ মেনে চলা যাচ্ছে সব বিধিনিষেধ?
টিভির চ্যানেল ঘোরালে সিরিয়ালের দৃশ্যে চোখে পড়ছে একে অপরকে স্পর্শ করে অভিনয়। একই দৃশ্যে দশ-বারো জনের উপস্থিতিও। ‘এখানে আকাশ নীল’-এ চিত্রনাট্য অনুযায়ী বিবাহ-পরবর্তী অংশের ট্র্যাক চলছে। সদ্য বিয়ে হয়েছে উজান ও হিয়ার। শন বন্দ্যোপাধ্যায় (উজান) বললেন, ‘‘আমাদের ট্র্যাক অনুযায়ী সোশ্যাল ডিসট্যান্স মেনে চলা মুশকিল। ক্লোজ় প্রক্সিমিটিতে কাজ করতে হয়। একটু টেনশন তো হয়ই। বাকি যা সুরক্ষা নেওয়ার তা নেওয়া হচ্ছে।’’ এ বিষয়ে ‘কাদম্বিনী’র ঊষসী রায়েরও এক মত, ‘‘অত দূরত্ব মেনে কাজ করতে গেলে অভিনয় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাই হাত ধরা, কাঁধে হাত রাখা... এ ধরনের স্পর্শ করছি। দর্শক যখন সিরিয়ালটা দেখবেন, তখন সেখানে আবেগ আছে কি না, দৃশ্যটা ভাল লাগছে কি না সেটাই ফাইনাল। কাজ করার সময়ে, শট দেওয়ার সময়ে মনোযোগ থাকে দৃশ্যে। দূরত্ববিধি বা অন্য কিছু তখন মাথায় থাকে না।’’
একই দৃশ্যে চার থেকে দশ জনের উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে। দিনকয়েক আগে ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকের একটি এপিসোডে একই দৃশ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রায় আট-দশ জন। একটু উপর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অভিনেতাদের দাঁড় করিয়ে শট নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্পর্শ চোখে পড়ছে। এ বিষয়ে ধারাবাহিকের গুনগুন অর্থাৎ তৃণা সাহা বললেন, ‘‘সেট থেকে মেকআপ রুম সব রোজ স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। কিন্তু কিছু দৃশ্যের ডিমান্ড অনুযায়ী স্পর্শ করতে হচ্ছে বা কাছে যেতে হচ্ছে। না হলে দর্শকের কাছে দৃশ্যটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে না। মেকআপ করার পরে মাস্ক পরাও যাচ্ছে না। কিন্তু সেটে পরিচালক থেকে ক্রু মেম্বাররা মাস্ক, ফেসশিল্ড পরে থাকছেন।’’ কাজের স্বার্থে এটুকু ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত তৃণা। সেটের অন্য ছবিও পাওয়া গেল জিতু কামালের কাছ থেকে। একটি চ্যানেলের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানে তিনি অভিনয় করেছেন রামের চরিত্রে। সেই শুট প্রসঙ্গে জিতু বললেন, ‘‘পুরো শুট করা হয় ক্রোমাতে। কোনও অভিনেতার মুখোমুখি হতে হয়নি। নবনীতাও (দাস) ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ করছে। সেখানে ওর অংশের শুটও ক্রোমাতে করা হচ্ছে। তবে ওর মেকআপ নিয়ে প্রথমে চিন্তা থাকলেও এখন নিশ্চিন্ত।’’ ধারাবাহিকে নবনীতার মুখের চারপাশে লাল রঙের মেকআপ করতে হয়। এখন নবনীতা নিজেই মেকআপ করছেন। সুরক্ষার জন্য রঙের বদলে নিজস্ব লিপস্টিক ব্যবহার করছেন। জিতুর সহাস্য উত্তর, ‘‘রোজ একটা করে লিপস্টিক শেষ। খরচ বেড়েছে। সুরক্ষাও বাড়তি পাওনা।’’
আরও পড়ুন: সুশান্তের মূর্তি বানালেন সুশান্ত
ক’দিন আগেই করোনায় আক্রান্ত হন ‘যমুনা ঢাকি’ ধারাবাহিকের দেবযানী চট্টোপাধ্যায়। এখন তিনি সুস্থ। শুক্রবার থেকে সেটেও ফেরার কথা। সেটের সুরক্ষাবিধি বিষয়ে তিনি বললেন, ‘‘সেট স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে কি না সেটা বলা মুশকিল। সেটা তো দেখতে পাচ্ছি না। মেকআপ রুম আমাদের সামনেই স্যানিটাইজ় করা হয়। তবে শিল্পী হিসেবে বলব, শুট চলাকালীন দূরত্ব বজায় রেখে অভিনয় করা যায় না। তাই তা মানা সম্ভব হচ্ছে না।’’ এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্য করতে চায়নি। যে সুরক্ষাবিধি মেনে ধারাবাহিকের শুটিং শুরু হয়েছিল, সেই নিয়মের রশি যে আলগা হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। শুটিংয়ের সময়ে দূরত্ব মানা বা মেকআপের পরে মাস্ক পরা হয়তো সম্ভব নয়। শিল্পীদের সুরক্ষার্থে তৈরি হবে কি নতুন নিয়ম? সে উত্তর সময়ই দেবে।
আরও পড়ুন: আবার প্রথম ‘কৃষ্ণকলি’, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ‘মোহর’, ‘রাণী রাসমণি’