সোনিকা থাকবেন বন্ধুদের মনে

চার ঘন্টার ফারাক। বন্ধু ওলট-পালট। ‘ফ্রাইডে পার্টি’-র নাচ, একলা নিয়নের সেলফি-রাত নিমেষে মৃত্যুকে ছুঁয়ে গেল। ফোন ধরে কথা বলতে পারছিলেন না ফ্যাশন ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য। তাঁর আদরের ‘সোনু’কে ছিনিয়ে নিল ভোরের প্রথম আলো!

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০০:৫১
Share:

সোনিকা

চার ঘন্টার ফারাক। বন্ধু ওলট-পালট। ‘ফ্রাইডে পার্টি’-র নাচ, একলা নিয়নের সেলফি-রাত নিমেষে মৃত্যুকে ছুঁয়ে গেল।

Advertisement

ফোন ধরে কথা বলতে পারছিলেন না ফ্যাশন ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য। তাঁর আদরের ‘সোনু’কে ছিনিয়ে নিল ভোরের প্রথম আলো!

এত নিষ্ঠুর ভোর বুঝি আসেনি আগে। গত পাঁচ বছরে তাঁর সব কাজের অনুপ্রেরণা ছিলেন মডেল সোনিকা সিংহ চৌহান। প্রথম দিন থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর কাজ করার অদম্য ইচ্ছে সকলের নজর কেড়েছিল। ছোট হোক বড় হোক, আজ অবধি কাজের ক্ষেত্রে কাউকে ফেরাননি সোনিকা। অথচ নিজে কেমন সবাইকে ফাঁকি দিয়ে ফিরে গেলেন। স্তব্ধ তাঁর কলকাতার বন্ধু মহল। ‘‘নিজে দুর্দান্ত ড্রাইভ করতে পারত। গাড়ি চালাতে খুব ভালবাসত, সেই গাড়িই ওকে কেড়ে নিল! কী অদ্ভুত সমাপতন!’’ বলছেন পরিচালক উৎসব মুখোপাধ্যায় যাঁর সঙ্গে প্রথম বাংলা ছবি করার প্ল্যান করছিলেন সোনিকা।

Advertisement

দেশ-বিদেশে ফ্যাশন শ্যুট। নামী চ্যানেলের হয়ে স্পোর্টস্ শো হোস্ট করা। এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াতেন কলকাতার এই মেয়ে। মডেলিং দুনিয়ায় রাজ করতেন নিজের যোগ্যতায়। একটানা ১২-১৪ ঘন্টার শ্যুট হলেও কেউ কখনও সোনিকাকে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখেনি। কাজই ছিল ওঁর প্রাণ। ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কেউ নেই যে সোনিকার স্বভাব নিয়ে অন্য রকম মন্তব্য করবে। এমনই মিশুকে, খোলামেলা স্বভাবের মেয়ে ছিল সোনু। মুহূর্তের জন্য বাঁচত সোনিকা। আর মুহূর্তই ওঁকে নিয়ে গেল। সকলের মধ্যেও হঠাৎ একা হয়ে যেতেন তিনি। বেশ কিছু দিন আগে যেমন ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘‘কেউ কারও নয়। ‘হিউম্যান রেস’ মাত্রই স্বার্থপর। আমাদের সকলকে নিজেদের খুঁজে বের করতে হবে। নিজেদের আনন্দ। নিজেদের শান্তি…’’ যদিও স্মৃতি হাতড়ে বললেন উৎসব, ‘‘কাজ করতে গিয়ে এত কথা হয়েছে কিন্তু কোনও দিন মৃত্যু নিয়ে কিছু বলেনি সোনিকা।’’ বন্ধুরা দেখেছে কোনও কারণে ভেঙে পড়লে সোনিকা চুপ করে বসে থাকতেন, আবার নিজেই ঠিক হয়ে যেতেন।

সদ্যই মায়ের জন্মদিন পালন করে ফুকেত থেকে ‘ফ্যামিলি হলিডে’ সেরে ফিরেছিলেন সোনিকা। মে মাসে অনেক দিনের জন্য মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল, তাই প্রাণের শহর কলকাতায় বন্ধুদের নিয়ে পার্টিতে মেতেছিলেন তিনি। সঙ্গে বন্ধু বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। সে দিন সাহেব ভট্টাচার্য তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। শুক্রবারের পার্টিতেও হাসিতে, নাচে বরাবরের মতোই সোনিকা উচ্ছ্বল, বর্ণিল। সোনিকার বাবা-মা মেয়ের কাজ নিয়ে বরাবরই খুশি ছিলেন। সোনিকাও নিজেকে বলতেন তিনি ‘লাকি চাইল্ড’। ইন্ডাস্ট্রিতে সকলেই জানতেন অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে সোনিকার বিয়ে হবে।

চোখ গেল সোনিকার শেষ ভিডিয়োর দিকে। সেখানে সোনিকা বসন্তের বার্তা নিয়ে আসছেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে, ‘‘নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু পাছে পাছে তাতা থৈথৈ’’ এমন অসম্ভব মৃত্যুনাচ এই শহর আগে দেখেছে কি কোনও দিন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement