২১ দিনের লকডাউনের সময়ে একটা বিষয়ে সমস্ত ভারতবাসীই খুশি। ভারতের সবচেয়ে আইকনিক টিভি সিরিয়াল মহাভারতের পুনঃসম্প্রচার এই খুশির কারণ। ২৮ মার্চ থেকে প্রতিদিনই তা সম্প্রচার হতে শুরু করেছে।
এক সময় এই সিরিজের জন্যই রবিবারের সকালে টিভির পর্দায় চোখ আটকে থাকত মানুষের। প্রযোজক বিআর চোপড়ার টিভি সিরিজ মহাভারত। বিপুল জনপ্রিয় এই সিরিজ সম্বন্ধে এই তথ্যগুলো জানেন কি?
৩২ বছর আগে মহাভারতের প্রথম এপিসোড সম্প্রচার হয়েছিল দূরদর্শনে। সে়টা ছিল ১৯৮৮ সালের ২ অক্টোবর। মোট ৯৪টা এপিসোড সম্প্রচার হয়েছিল। ফিল্ম, টেলিভিশন রেটিং সংস্থা আইএমডিবি-র মতে ১০-এর মধ্যে ৮.৯ পেয়ে ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল মহাভারত।
বেদব্যস রচিত এই মহাকাব্য থেকে টিভি সিরিজ বানিয়েছিলেন পরিচালক রবি চোপড়া এবং প্রযোজক ছিলেন বিআর চোপড়া। এমন একটা সাহিত্যের সম্প্রচার করার আগে বিস্তর রিসার্চ করতে হয়েছিল। সেই কাজটা করেছিলেন সতীশ ভাটনগর এবং তাঁর দল।
টিভি সিরিজটা বানানতে সে সময় খরচ হয়েছিল ৯ কোটি টাকা। বিআর চোপড়ার টিম মহাভারতের ফাইনাল স্টোরি লাইন দূরদর্শনের কাছে ১৯৮৬ সালে জমা দেয়। সেই স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী মোট ১০৪টি এপিসোড ছিল তাতে। কিন্তু পরে সেটা কাটছাঁট হয়ে ৯৪ এপিসোডে দাঁড়ায়।
এই সিরিজের স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন উর্দু ও হিন্দি ভাষার প্রখ্যাত কবি ও কথাসাহিত্যিক রহি মাসুম রাজা। মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন ১৫ হাজারেরও বেশি লোকজন। তাঁদের থেকে মাত্র দেড় হাজার জনকে শর্টলিস্ট করা হয়েছিল।
মামা শকুনি যিনি হয়েছিলেন, সেই গুফি পেন্টালই আবার ছিলেন ওই সিরিজের কাস্টিং ডিরেক্টর। দ্রৌপদীর চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু জানেন কি এই চরিত্রের জন্য প্রথমে ভাবা হয়েছিল জুহি চাওলাকে! কিন্তু ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ ছবির কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য জুহি এই চরিত্রে অভিনয় করেননি।
শুটিংয়ে সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। অত্যন্ত গরমের মধ্যে সারা গায়ে ভারী ধাতব বর্ম পরে রাজস্থানের জয়পুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শুটিং করতে বিপুল কষ্ট করতে হয়েছিল অভিনেতাদের। না ছিল কোনও মেক আপ ভ্যান, না ছিল আলাদা কোনও টয়লেটের ব্যবস্থা। সারা দিন তাঁবুর মধ্যেই কাটাতে হত সকলকে।
অঙ্গরাজ কর্ণ হয়েছিলেন পঙ্কজ ধীর। শুটিংয়ে গুরুতর জখম হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তিনি যে রথে চেপে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে গিয়েছিলেন। শুটিংয়ের মাঝেই তা মাঝখান থেকে ভেঙে যায় আর দুটো ঘোড়া দু'দিকে ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। সে সময় একটা তীরও তাঁর চোখের কাছে বিঁধে যায়।
প্রথমে নাকি অভিমন্যুর জন্য গোবিন্দা এবং চাঙ্কি পাণ্ডেকে বেছেছিলেন পরিচালক। কিন্তু তাঁরা দুজনের কেউই এই চরিত্র শেষ পর্যন্ত পাননি। অভিমন্যু হয়েছিলেন মাস্টার ময়ূর নামে এক অভিনেতা।
যমজ ভাই নকুল এবং সহদেব হয়েছিলেন সমীর চিত্র এবং সঞ্জীব চিত্র। বাস্তবেও তাঁরা যমজ ভাই ছিলেন। অর্জুন হয়েছিলেন ফিরোজ খান। কিন্তু প্রথমে নাকি জ্যাকি স্রফ এর জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে অডিশনে বাদ চলে যান জ্যাকি।
দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ দৃশ্যের জন্য কত বড় মাপের শাড়ির প্রয়োজন পড়েছিল জানেন? ২৫০ মিটার লম্বা শাড়ি লেগেছিল এই দৃশ্যের জন্য।