সোহিনীর পথচলার কমরেড সপ্তর্ষি
দেখতে দেখতে বিয়ের ৯ বছর পার! ভাবতেই পারছেন না সোহিনী সেনগুপ্ত। মঙ্গলবার সপ্তর্ষি মৌলিক কাছে না থাকলেও মনে পড়ে যাচ্ছে ঝটিকা সফরের বছরগুলো। আনন্দবাজার অনলাইনকে ফোনে জানালেন, কথার প্রেমে পড়েছিলেন সপ্তর্ষি। সোহিনীর জ্ঞান, দক্ষতা, শব্দচয়ন মুগ্ধ করেছিল তাঁকে। ১৪ বছর বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও, ভাবনার সুতোয় বাঁধা পড়েছিলেন দুই অভিন্নহৃদয় তারকা। সোহিনীর কথায়, “আমি সপ্তর্ষিকে নিয়ে মুগ্ধ। অনেকে ভাবেন, বয়সে ছোট বলে আমি হয়তো সপ্তর্ষিকে সব শেখাই। সেটা একেবারেই নয়। আমি আসলে ওর থেকে শিখি, প্রতিনিয়ত। সপ্তর্ষি আমার থেকে অনেক বেশি বিচক্ষণ, পরিণত, শক্তিশালী। আমি ওর থেকে বেঁচে থাকা শিখি।”
যদিও শুধু কাজ আর কাজ। বিশেষ দিনটিতেও একসঙ্গে হওয়ার জো নেই। তবু অনর্গল কথা ভিতরে ভিতরে জমা হয়। কখন পরস্পরকে বলতে পারবেন, সেই অপেক্ষায়। আর অপেক্ষারও কি শেষ আছে? সকাল থেকে ‘এক্কাদোক্কা’-র ফ্লোরে ব্যস্ত সপ্তর্ষি। নতুন নাটকের মহলা-সহ বিভিন্ন কাজে দম ফেলার ফুরসত নেই সোহিনীরও। কিন্তু এই বিরহ আসলে সবুরে মেওয়া ফলার মতোই। শ্যুটিংয়ের ব্যস্ততার ফাঁকে ছবি পোস্ট করে সপ্তর্ষি তাঁর প্রিয়তমাকে লিখলেন, ‘শুভ বিবাহবার্ষিকী’।
বেগুনি শাড়ি, সাদা লেসের ব্লাউজ। ছবিতে রাজেন্দ্রাণীর মতো দাঁড়িয়ে অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত। বন্ধু, প্রেমিকা তথা স্ত্রীকে সেই আসনেই রাখেন সপ্তর্ষি। আর ‘ইচ্ছে’-র নায়িকা সোহিনী? কী চলছে তাঁর মনে? সোহিনী জানালেন, ঘর সারাইয়ের কাজ চলছে। বাড়িতে তিনি একা। একটু পরেই বেরোবেন নাটকের রিহার্সালে। নান্দীকারের নতুন নাটক ‘এক থেকে বারো’-র দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তিনি আর সপ্তর্ষি। আজ তাঁর পালা।
সপ্তর্ষির চোখে রাজেন্দ্রানী, সোহিনী
এ দিকে হৃদয় উদ্বেল। জানালেন, আজ তো বেরোনো হবে না একসঙ্গে। সামনেই কোনও এক ছুটির দিনের জন্য তুলে রাখলেন সব পরিকল্পনা। কী করবেন সে দিন? সোহিনীর জবাব, “হয় খেতে যাব, না হলে সিনেমা দেখতে। আবার হয়তো চলে যেতে পারি বইয়ের দোকানে। আর আড্ডা তো রোজই চলে।”
একসঙ্গে কোন ছবি দেখার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের? সোহিনী বললেন, “অবশ্যই ‘ধর্মযুদ্ধ’। আমার মায়ের অভিনীত শেষ ছবি। সপ্তর্ষি আছে, শুভশ্রী আছে। ঋত্বিক আমার খুব প্রিয় অভিনেতা, ও আছে। তা ছাড়া রাজের ছবি। আগে নন্দনে দেখেছি আমি, তবে একসঙ্গে দেখতেই হবে এটা আর একবার।” স্বাতীলেখা-কন্যা সপ্তর্ষির মতো এক জন মানুষেরই অপেক্ষায় ছিলেন কি না জানতে চাইলে অভিনেত্রীর জবাব, “সপ্তর্ষি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতাম না। একা থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার ওর সঙ্গে সব কিছু ঠিক মনে হয়। আমাদের কথার শেষ নেই। পুরোদমে চলছে। একসঙ্গে নাটক লেখার স্বপ্ন থেকে শুরু করে পোষ্যপ্রেম, বিশ্বনিরীক্ষা...সবেতেই আমরা একসঙ্গে পা ফেলি।”
হয়তো অনেক ঝগড়া হয়, খুব বকুনি দেন সপ্তর্ষি। তবে কথা ফুরোয় না। বকুনি না খেলে বরং মন খারাপ হয়। সোহিনী বলে চলেন, “ও কিছুতে আসক্ত নয়। এইটুকু বয়সে নিরামিষাশী। জামা-জুতো যা-ই ভাল লাগুক, তা নিয়ে বাড়াবাড়ি দেখিনি। ও যে ভাবে সংগঠনকে দেখে, বন্ধুদের দেখে, সে সব কিছুই খুব ভিতর থেকে। সবার ভাল চায় ও। তাই সপ্তর্ষি কেবল বন্ধু নয়, আমার একসঙ্গে চলার কমরেড।”
আর জেনারেশন গ্যাপ? সোহিনী হেসে বললেন, “একেবারেই না। আমি আসলে আমার জেনারেশনের তুলনায় শিশু, আর ও অ্যাডভান্স। দুটো মিলিয়ে এক হয়ে গিয়েছে ব্যাপারটা। সপ্তর্ষিই আমায় আগলে রাখে। ওর মতো মানুষ হয় না।”