কল্পতরু দলের নাটক। নিজস্ব চিত্র
কেওড়াতলা মহাশ্মশানে সমাজের বিভিন্ন পেশার মৃত মানুষদের আনা হয়েছে সৎকারের জন্য। হঠাৎ মৃত মানুষেরা জীবন্ত হয়ে উঠে একে একে বলতে থাকলেন, তাঁদের মৃত্যুর কারণ। তার সূত্র ধরেই উঠে আসতে থাকে সমাজের নানা সমস্যা, দগদগে ঘা। মুখোশ খুলে যেতে থাকে সভ্য সমাজের।
সম্প্রতি এমন বিষয় নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাগদার সিন্দ্রাণী এলাকার নাট্যদল ‘কল্পতরু।’ নাট্যকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা, ‘ সত্যম শিবম সুন্দরম ’ নাটক।
এলাকার শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, কলেজ পড়ুয়াদের নিয়ে তৈরি নাট্য দল ‘কল্পতরু।’ নাটকে যাঁরা অভিনয় করছেন, কেউ-ই পেশাদার নাট্যশিল্পী নন।
সম্প্রতি সিন্দ্রাণী সাবিত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে কল্পতরু সংস্থা আয়োজন করেছিল নাট্য উৎসবের। সেখানে উদ্যোক্তা সংস্থা ছাড়াও বিধাননগর, হাবরা, মধ্যমগ্রাম থেকে আমন্ত্রণ করে আনা হয়েছিল নামকরা বিভিন্ন নাট্যদলকে। নাট্য উৎসব এ বার পড়ল ষষ্ঠ বর্ষে।
সিন্দ্রাণী এলাকায় যাত্রা ও নাট্যচর্চার ইতিহাস বহু পুরনো হলেও এখনও এখানে কোনও স্থায়ী নাট্যমঞ্চ নেই। ‘কল্পতরু’ নাটক নিয়ে চর্চা করলেও তাদের প্রশিক্ষণের কোনও স্থায়ী ঘর নেই। তবুও এলাকার কিছু মানুষ এলাকার নাট্য চর্চার ঐতিহ্য, পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের গাঁটের টাকা খরচ করেই। স্রেফ নাটককে ভালবেসে।
প্রতি বছর নাট্য উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে তাঁরা এলাকায় নাট্যচর্চার প্রচার ও প্রসার বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানালেন ‘কল্পতরু’র সম্পাদক সমর রায়। এলাকায় সুস্থ সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়াও তাঁদের লক্ষ্য। নাট্য উৎসবের মাস দু’য়েক আগে থেকে সংস্থার ২৫ জন সদস্য কাজে লেগে পড়েন। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ, বাইরের নাট্যদগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা, এলাকায় ব্যানার-পোস্টার-হোর্ডিং লাগিয়ে প্রচার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। সেই সঙ্গে নিজেদের নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য চলে নিবিড় অনুশীলন।
এলাকায় কোনও অডিটোরিয়াম বা স্থায়ী নাট্যমঞ্চ না থাকায় উদ্যোক্তাদের সিন্দ্রাণী সাবিত্রী উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে অস্থায়ী মঞ্চ করে উৎসবের আয়োজন করতে হয়। খরচ হয় প্রচুর। সংস্থার সদস্য তথা নাট্যকর্মী শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘এ বার দু’দিনের নাট্য উৎসব করতে আমাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। টিকিট বিক্রি, বিজ্ঞাপনের টাকা বাদ দিয়েও প্রতি বছর আমাদের ঘাটতি থাকে। সেটা সদস্যরা নিজেদের গাঁটের থেকে দিই। এলাকায় অডিটোরিয়াম থাকলে অনেক কম টাকা খরচ হত। বছরভর নাট্যচর্চার সুযোগও পেতাম আমরা।’’
প্রতি বছর নাট্য উৎসবের মঞ্চ থেকে স্থায়ী নাট্য মঞ্চের দাবি তোলা হয়। কিন্তুও আজও তা বাস্তবায়িত না হওয়ার হতাশ এলাকার নাট্যকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। অডিটোরিয়াম না থাকায় বেশি মানুষকে উদ্যোক্তারা নাটক দেখার সুযোগও করে দিতে পারেন না। দু’দিনের উৎসবে নাটক দেখতে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে।
তবে কিছুটাও হলেও আশার কথা শুনিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক দুলাল বর। তিনি বলেন, ‘‘সিন্দ্রাণী নাট্যচর্চার কথা জানি। স্থায়ী নাট্য মঞ্চ বা অডিটোরিয়ামের জন্য যদি জায়গা পাওয়া যায়, তা হলে আমি বিধায়ক তহবিল থেকে টাকা দেব। তা ছাড়া, রাজ্য সরকারের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলব।’’